Dalia Wadhwa

Romance Tragedy Classics

4.2  

Dalia Wadhwa

Romance Tragedy Classics

প্রতীক্ষা

প্রতীক্ষা

4 mins
841


আমার কতই বা বয়স তখন  , নয় কি দশ

হাফ পান্ট পরি , গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি ।

পথে ঘাটে দৌড়া দৌড়ি করে বেড়াতাম সারা টা দিন।

ব্যানার্জী দের পুকুর পাড়ে , যেখানে ছোট্ট একটা কৃষ্ণচূড়ার চারা পুঁতেছিলাম, তার পিছনের বস্তি তে আমার ঘর।


তখন প্রথম দেখেছিলাম তোমাকে।


পাঁচ কি  ছয় বছরের ছিলে তুমি তখন।

একটা নীল ফ্রক পরে বাবার হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলে, 

হাথে একটা পুতুল। 

পিছন ফিরে তাকালে একবার,

তোমার কালো চোখে ধ্যেবরে যাওয়া কাজলের মাখামাখি,

কপালে ছোট্ট কালো টিপ।

চোখে মুখে শিশুর সরলতা।


সেই আমার অপেক্ষা র শুরু।

ভেবেছিলাম, যদি তোমার হাতের পুতুল টা হতে পারতাম।



হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট ধরলাম, গায়ে সেই ছেঁড়া গেঞ্জি।

তুমি ফ্রক ছেড়ে সালওয়ার কামিজ।

কৈশোরের উন্মাদনায় তোমার বুকে দুই অদ্রি র মাঝে হৃদয়ের গহ্বর,


তখন দেখেছিলাম তোমাকে।


কমলা  রঙের সালওয়ার কামিজ পরে তুমি পড়তে যাচ্ছিলে , 

বুকের কাছে বই গুলো জাপটে ধরে ।

পিছন ফিরে তাকালে একবার।

তোমার চোখে নিখুঁত কাজলের টান, চোখের পাতায় মাসকারা,

কপালে ছোট হলুদ টিপ।

গালের ব্রণ টগবগ করে ফুটছে।


অপেক্ষার আগুনে আমার  কৃষ্ণচূড়ায় তখন গোলাপি হলুদের  রঙ্গীন দাবানল।

সেই আগুনে জ্বলতে জ্বলতে ভেবেছিলাম , যদি তোমার বুকের কাছে  ধরা বই টা  হতে পারতাম। 



খিদের ক্রীতদাস আমি তখন।

মনিব কে খুশি করতে পথ ভোলা পথিকের  মতন ছুটে চলেছি , একটু সুযোগের সন্ধানে,

গায়ে সেই ছেঁড়া গেঞ্জি, পায়ে হাওয়াই,

খিদের জ্বালায় যৌবনের নগ্ন, বীভৎস রূপ।


তোমার চোখে তখন উজ্জ্বল  ভবিষ্যতের রঙ্গীন স্বপ্ন।

যৌবনের উচ্চলতায় গা ভাসিয়ে ছুটছ সুখ পাখির সন্ধানে।


তখন দেখেছিলাম তোমাকে।


লাল বেনারসী পরে পূর্ণ নারী হওয়ার পথে তুমি।


পিছন ফিরে তাকালে একবার।

তোমার চোখের বহমান  কাজলে কুমারীত্বর জলাঞ্জলি।

সিঁথি তে সিঁদুর , কপালে বড় লাল রক্তের টিপ।

হাথে গাছকৌটো।


 দক্ষিণ জানলা দিয়ে আসা হিম শীতল হওয়ার দাপটে, আমার কৃষ্ণচূড়া তখন পাতা ঝরে প্রায় ন্যাড়া। 


আর আমি, জীবনের মরীচিকার পিছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত, উদ়্ভ্রান্ত।

আমার সেই নেতিয়ে পড়া দেহটাকে টেনে হিঁচড়ে তুলতে তুলতে ভেবেছিলাম,

যদি তোমার হাতের গাছকৌটো টা  হতে পারতাম।



বেগার খাটতে অক্ষম আমার শিথিল দেহ তখন।

নিজেরই ভার বহন করতে করতে মুমূর্ষু।

গায়ে সেই ছেঁড়া গেঞ্জি , চোখের দৃষ্টি ঝাপসা ।


তুমি তখন ক্যান্সারের সাথে লড়তে লড়তে, হার মানা সিপাহীর মতন বিধ্বস্ত ।


তখন দেখেছিলাম তোমাকে।


কেমোথেরাপি তে তোমার দুধ সাদা দেহ ,শেষ বিকেলে ঘনিয়ে আশা আষাঢ়ের মেঘের চেয়েও কালো,

সাদা থান  দিয়ে  সেই কালো চামড়া ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা।  

শুয়ে ছিলে তুমি,

তোমার কপালে চন্দনের ফোটা,

তোমার কাজল বিহীন বন্ধ চোখের ওপর রাখা  তুলসী পাতা, আলতো হওয়ায় বোধহয় একটু নড়ছিল।


অপেক্ষার ভারে নেতিয়ে পড়ে, আমার কৃষ্ণচূড়া তখন  জরাগ্রস্ত।

সেই কৃষ্ণচূড়ার ভস্মের তলায় পরে থাকা শুকনো ফুল,জীর্ণ মুঠোয় ভরে মনের মধ্যে ভেবেছিলাম,

যদি তোমার চোখের ওপর রাখা তুলসী হতে পারতাম।


আচ্ছা, সেদিন  শেষবারের মতন  যেতে যেতে তুমি কি পিছন ফিরে তাকিয়েছিল একবার?

কি জানি, হবে হয়তো।



আমার সেই মরা কৃষ্ণচূড়ায় আজ একটাও পাতা অবশিষ্ট নেই ,

শেষ ফুলটাও ঝরে গেছে কবে যেন।

আমার অপেক্ষার কিন্তু মৃত্যু নেই।


আজও নিষ্প্রাণ ডালগুলোর নীচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে থাকি,

জানি, আবার ঠিক দেখতে পাবো তোমাকে,


কোনো দিন ……. কোনো খানে …...


Rate this content
Log in