STORYMIRROR

Sanghamitra Roychowdhury

Abstract Tragedy Classics

4  

Sanghamitra Roychowdhury

Abstract Tragedy Classics

লাবণ্য মিত্র

লাবণ্য মিত্র

3 mins
287


-


ছন্দা প্রমিতের সংসার জীবনের অভিধানে ঢুকে পড়েছে নতুন একটি শব্দ... অটিজম!


ওদের বিয়ের বয়স সবে সাত,


এরমধ্যেই অনুপ্রবেশ করেছে সীমালঙ্ঘনকারী এক অদৃশ্য হাত!


দুজনের মাঝখানে বিছানায় দুর্লঙ্ঘ্য এভারেস্টের চূড়ার বরফের জমাট শীতলতা,


দুর্ভেদ্য অ্যামাজন জঙ্গলের স্যাঁতসেঁতে নিরেট অসভ্য বুনো অন্ধকার,


দুরতিক্রম্য সাহারার উষ্ণ মরুঝড়ের পরের পরাধীন মৃত্যুর স্তব্ধতা,


প্রশান্ত মহাসাগর আর আটলান্টিকের মিলিত লোনাও ওদের লবণাক্ততার তুলনায় কম।


মধ্যযৌবনেই ছন্দার গালে কপালে বলিরেখার ভাঁজ,


প্রমিত হিমালয়প্রমাণ গুরুভারে ন্যুব্জ।




চারটি অক্ষর... একটি শব্দ... বাংলা হরফে...


অটিজম... তাই থেকে অটিস্টিক...


ওদের একমাত্র সন্তান... কন্যাসন্তানটি অটিস্টিক।


কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে গলা বন্ধ করে দিয়েছে...


চোখ থেকে তারা আর বৃষ্টি ঝরায় না।


ছন্দা এখন অটিস্টিকের মা,


প্রাক্তন সেনাকর্মী প্রমিত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে বন্দুক হাতে ব্যাঙ্কের দরজায়,


নির্বিকার দুই চোখের পেছনে লুকোনো আগ্নেয়গিরি,


বুকের ভেতর সর্বক্ষণের লাভাক্ষরণ।


সব পরিচয় এখন গৌণ...


এখন প্রমিত কেবলই এক অটিস্টিক কন্যাশিশুর হতভাগ্য বাবা।


কাঁধের রাইফেলটায় লোকদেখানো ভয়ের অনুভূতি,


ও দিয়ে না মারা যায় অটিজম, না মারা যায় করোনা ভাইরাস।




ছন্দার নামেই ছন্দ...


একসময় কবিতা পড়তে বড়ো ভালোবাসতো।


রবীন্দ্রপ্রেমী মেয়েটা নার্সিংহোমের বেডে শুয়ে... নির্ভীক সেনাকর্মী প্রমিতের হাতে হাত ছুঁইয়ে...


সদ্যোজাত ফুটফুটে মেয়ের নামকরণ করেছিলো 'লাবণ্য'!


রবীন্দ্রনাথের 'শেষের কবিতা'র নায়িকা...


কী মিষ্টি নাম, তাই না?


প্রমিত ছন্দার হাতে পাল্টা চাপ দিয়েছিলো মৃদু।


দুজনে অতীতে অবগাহন করেছিলো...


সেই খোয়াই, সেই সোনাঝুরি, সেই অকালবর্ষণ, সেই প্রথম দেখা!

<

p>

প্রেম পরিণতি পেলো পরিণয়ে।


আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার ছন্দে বাঁধা সেনাকর্মীর নিটোল সুখী সংসার।




সেই সংসারের নতুন অতিথি লাবণ্য...


রাবীন্দ্রিক ছন্দার লাবণ্য, লেফটেন্যান্ট প্রমিতের লাবণ্য...


ওদের দুজনের ভালোবাসার সংসারের লাবণ্য।


বয়স মাস আট নয়েক হতেই ধরা পড়লো ব্যাপারটা,


কেমন যেন অস্বাভাবিক না চাউনিটা?


হাত পা চুল হাবভাব সব... একটু যেন খাপছাড়া না?


তারপর ডাক্তার, স্পেশালিস্ট, হসপিটাল, থেরাপিস্ট।


ছন্দা প্রমিত জানে লড়াইটা অসম,


হলাহলপূর্ণ ফলাফল বিষম।




তবু ছোটে ছন্দা লাবণ্যকে বুকে আঁকড়ে থেরাপিস্টের চেম্বার থেকে স্পেশাল স্কুলে।


প্রমিত যান্ত্রিক অভ্যাসে বন্দুককাঁধে দাঁড়ায় রোজ ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা রক্ষায়।


মাঝখানে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো মারণব্যাধি করোনা...


বিশ্বজোড়া ভয়ানক ফলশ্রুতিতে।


বিস্তীর্ণ লকডাউনে লাবণ্যর থেরাপি বন্ধ।


সবেই বলতে শিখেছিলো নামটা 'আঁবুন্ন্যো ইঁত্তো'...


সেটুকুও আবার হারিয়ে যাবে নাতো?


ঘুমন্ত লাবণ্যর মুখের দিকে তাকিয়ে... 


ছন্দার হৃদস্পন্দন টের পায় প্রমিত ব্যাঙ্কের কোলাপসিবল গেট টানার ঘড়ঘড়ে আওয়াজে।




ছন্দা প্রমিত দুজনে মিলে একটা কবিতা লিখেছিলো 'লাবণ্য'... অসম্পূর্ণতার পংক্তিতে...


সত্যিই কী সে কবিতা ওদের জীবনের শেষের কবিতা হয়ে যাবে?


ছন্দা প্রমিতের হাহাকার শুষে নিচ্ছে করোনাবিধ্বস্ত লকডাউন।


সোশ্যাল ডিসটান্সিং... সেতো ওদের পাঁচ বছরের সঙ্গী,


কমিউনিটিও আছে... অটিস্টিক পরিবারের কমিউনিটি, তবে সংক্রমণ নেই।


চাপা পড়ে যাচ্ছে অটিস্টিকের বাবা মায়ের করুণ দীর্ঘশ্বাস...


'আঁবুন্ন্যো ইঁত্তো' কি তবে লাবণ্য মিত্র হবার স্বপ্নটা ভুলে যাবে?


নাকি অটিস্টিকের লড়াইটা থামবে অন্তিম শ্বাসে শেষপর্যন্ত?


ছন্দা প্রমিতের জীবনের ছন্দহীনতার দায় বাড়িয়ে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে...


শুধুমাত্র অটিজম, করোনা আর লকডাউন!




Rate this content
Log in