পুতুলের যুদ্ধ.....
পুতুলের যুদ্ধ.....
দুম...... ফটাস.... দ্রুম......!
ও মা ভয় পেলে নাকি? ভয় পেয়ো না কিন্তু।কিছু না বাইরে বাজি ফাটানো হচ্ছে ।আজ কালীপুজো কিনা তাই আর কি ।তিতলিদের বাড়ির সামনেও পূজো হচ্ছে ।
যা বলতে ভুলেই গেছি। তোমরা তো তিতলিকে চেনোই না, তিতলি তো তোমাদেরই বন্ধু সে তো তোমাদেরই মতোন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তবে পড়াশোনার থেকে সে তার পুতুলদের নিয়ে থাকতেই ভালোবাসে। তবে সে কিন্তু বড্ড ভীতু। এই যে বাইরে বাজি ফাটানো হচ্ছে, সে কী করছে জানো?সে তো বাড়ির কোণে তার পুতুলদের নিয়ে চুপটি করে বসে আছে।
আজ তিতলির বাবা আর মা একটা বিশেষ কাজে বাইরে যাবেন। তাই শুনে তিতলি তো কেঁদেই ফেললো বোধ হয়। সে তো কিছুতেই তার বাবা আর মাকে ছাড়া থাকতে রাজি নয়। শেষ পর্যন্ত তাকে একটা পুতুল কিনে দিতে হবে এই শর্তে রাজি করানো গেলো।
তারপর তিতলির বাবা আর মা সেখান থেকে চলে গেলো আর তিতলি বেচারি তার কাজের মাসির সাথে একা একা বাড়িতে থেকে গেলো।
তিতলির অবশ্য অনেক পুতুল আছে বাড়িতে তবে তাদের মধ্যে দুটো পুতুলকে সে বেশি পছন্দ করে। একটা কাঠের পুতুল আর অপরটি নরম তুলো দিয়ে তৈরী। কাঠের পুতুলটার নাম মিকাই, আর তুলো নির্মিত পুতুলটির নাম তুলি। সে যখনই ভয় পায় তখনই সেই দুটো পুতুলকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।
তিতলির বাবা মা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর হঠাৎ বাড়ির দরজাতে একটা জোরে শব্দ শোনা গেলো। ঠক.... ঠক... ঠকাস্.....! তিতলি দেখলো কেউ দরজাটা খুলছেই না তাই সে নিজেই গেলো দরজাটা খুলতে। ও মা দরজা খুলতে সে কি দেখলো জানো? সে দেখলো একদম তার মিকাই এর মতোন দেখতে আরো একটা পুতুল শুধু তার সাজ পোশাকটা একটু আলাদা। কেমন সৈনিকের মতোন সাজ পোশাক তার।তিতলির হাতে সে একটা চিঠি দিয়ে বললো তাতে সই করে দিতে। তিতলিও তার ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে সই করে সেই কাঠের পুতুলটার হাতে দিয়ে দিলো। তারপর তিতলি সেই চিঠিটা ঘরে আনতেই মিকাই সেটা কোনো রকমে তিতলির হাত থেকে নিয়ে নিলো আর সেটা পড়তে শুরু করলো আর সেটা পড়া শেষ হতেই তার চোখটা ছলছল করে উঠলো। আর হঠাৎ করে বলে উঠলো-" আমাকে যুদ্ধে যেতে হবে" । তিতলি কাঁদতে কাঁদতে মিকাইকে বললো - "তুমি তো পুতুল তোমার আবার কিসের যুদ্ধ?"
মিকাই তখন তিতলিকে বললো-" আমাকে যুদ্ধে যেতেই হবে এ যে আমাদের রাজার আদেশ।" মিকাই কোনো রকমে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। তিতলি তাকে জিজ্ঞাসা করলো - "তোমাদের যুদ্ধ হবে কাদের সাথে?" মিকাই বললো-" আমাদের যুদ্ধ হবে তুলোর রাজ্যের রাজার সাথে।"মিকাই তুলির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে কেঁদে উঠলো এবং সেখান থেকে চলে গেলো।
তখন তুলিও কোনো রকমে উঠে দাঁড়ালো এবং বললো - "আমাদের সাথে যখন যুদ্ধ তখন তো আমাকেও যেতেই হবে নাহলে আমাদের রাজা তো রেগে যাবেন।"
তারপর তুলিও সেখান থেকে চলে গেলো আর আমাদের তিতলি তখন তো বাড়িতে একা পড়ে গেলো। তখন সেও উঠে তাদের পেছন পেছন ছুটলো। শব্দে যেনো আর কান খোলা রাখার জো নেই, তাই তিতলি কানে হাত দিয়ে কোনো রকমে দৌড়াতে লাগলো। চারিদিকে বন্দুকের শব্দ, গোলা বারুদ এই সমস্ত শব্দ।
একদিকে কাঠেরা বলছে -
"আমরা হলাম কাঠ,
করব সব লাট,
তুলোদের হবেই পরাজয়।"
আর একদিকে তুলোরা বলছে -
"তুলো দিয়ে তৈরী মোরা,
করবোই আমরা জয়
বন্দুক হাতে লয়ে।"
তখন তিতলি আর কী করে? মনের দুঃখে যেতে যেতে সে হঠাৎ করে একটা কাঠের পুতুলকে দেখতে পেলো। সে ভালো করে চিনতে পারলো তার নিজের পুতুলকে। কিন্তু মিকাই যেনো একদম বদলে গেছে সে তো তিতলিকে চিনতেই পারলো না। বরং তাকেও তাদের শত্রু ভেবে বন্দি করতে গেলো।
তখন তুলি এসে মিকাইকে বোঝাতে গেলো, বললো - "ও তো আমাদের বন্ধু, তিতলি, তুমি চিনতে পারছো না?"
কিন্তু এ কী? এ কী দেখছে তিতলি? মিকাই তুলি কে হঠাৎ করে আক্রমন করলো এবং তুলি মুহূর্তের মধ্যেই তিতলির সামনে মারা পড়লো কিন্তু তিতলি কিছুই করতে পারলো না।
তখন মিকাই সেখান থেকে চলে গেলো এবং তিতলি তখন তুলিকে কোলের মধ্যে নিয়ে সেখানেই বসে পড়লো। সে কী করুন দৃশ্য!
হঠাৎ তুলি বলে উঠলো-"মিকাই তো কাঠের পুতুল, কাঠের পুতুলের যে প্রাণ নেই তাই তাদের মনে মায়া বা দয়াও নেই । তুমি চিন্তা করো না তিতলি দিদি, আমি মারা যাওয়ার পর এখানে আমার তুলো পড়বে আর এক সময়ে এখানেই আরো অনেক তুলোর গাছ হবে, তুলোর বীজ ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে, সেখান থেকেই আরো অনেক তুলি তৈরী হবে, তখন অনেক বাচ্চা আনন্দ পাবে, তারাও আমাকে নিয়ে খেলা করতে পারবে। তিতলি তখন খুব কাঁদলো। আর সেখান থেকে চলে গেলো।
হঠাৎ ঠক ঠক শব্দে তিতলি উঠে বসলো, সে দেখলো তার বাবা মা ফিরে এসেছে।
মা বলে উঠলেন - "কি রে তিতলি আমরা এই আধ ঘণ্টার জন্য বাইরে গিয়েছিলাম আর তার মধ্যেই তুই ঘুমিয়ে পড়লি?"
তখন তিতলি বুঝতে পারলো যে সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো। আর তার পাশে তাকিয়ে দেখলো তুলি শুয়ে আছে। সে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
আর তার বাবা মাকে তিতলি জিজ্ঞাসা করলো - "তোমরা কি আমার জন্য পুতুল এনেছো? "তখন তিতলির মা তিতলিকে একটা তুলোর পুতুল উপহার দিলো আর তিতলি, সে তো খুব খুব খুব খুশি। সে তার পুতুলদের জড়িয়ে ধরে তখন খুব আদর করলো।
বাইরে বাজি ফাটানো হচ্ছে এখনো, তিতলি তার বাবা মা এর সাথে কালী ঠাকুর দেখতে গেলো।