স্বপ্ন
স্বপ্ন
ছোটবেলা থেকেই রুমির ভীষণ ইচ্ছে সে এই পৃথিবীটাকে ঘুরে দেখবে, দেখবে সেই সমস্ত জিনিস যা আগে কখনও কেউ দেখেনি, সে জানবে সেই সব যা মানুষের এখনও জানা বাকি থেকে গেছে।
ছোটবেলায় ভূগোল বইতে পড়েছিলো গঙ্গার উৎস গোমূখ গুহা, সে জানেনা তা কতটা দূরে কিন্তু নিজের চোখে দেখার খুব ইচ্ছে। রোজ রাতে তার স্বপ্নে সেই রূপকথার পরি বা রাজকুমার আর রাজকুমারী আসে না আসে শুধু নানা জায়গার ছবি, রুমির মন কল্পনার ডানায় ভর করে চলে যেতে চায় সেই সমস্ত জায়গায় হয়তো বা স্বপ্নের মাঝেই দেখে নেয় সবকিছু যা কিছু রয়ে গেছে অদেখা!
তবে কি শুধু রাতে?
না, না, তাও নয় ভোরের সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত তাকে নিয়ে চলে যায় স্বপ্নের দেশে। চলে যায় দূর-দূরান্তে। সন্ধ্যের হালকা আলোর আভায় যখন স্বাধীন এক শঙ্খচিল উড়ে বেড়ায় আকাশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে রুমির মন ও চলে যেতে চায় তার ইচ্ছেডানায় ভর করে। কখনো কখনো দূর থেকে ভেসে আসা মন উদাস করা বাউলের সঙ্গীতের টানে রুমির মন টাও যে কোথায় চলে যায় তা খোঁজাই বড়ো দায় হয়ে পড়ে। তবে হ্যাঁ পড়ার কোনো বিষয়ই তার ভালো লাগে না শুধু ভূগোল ছাড়া। এই নিয়ে কতবার সে বকা খেয়েছে তার অভিভাবকদের কাছে কিন্তু সে কিছুই শোনেনি।
একটু একটু করে রুমি এগিয়ে যাচ্ছিলো তার স্বপ্নের দিকে কিন্তু হায়! ভাগ্য সত্যি বুঝি সবসময় সবার সঙ্গ দেয় না, রুমির ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হলো না।
একদিন সাইকেল চালিয়ে ভূগোল পড়তে গিয়ে একটা বড়ো দূর্ঘটনা ঘটে গেলো।
চোখ মেলে রুমি প্রথমেই নিজেকে খুঁজে পেলো হাসপাতালের বিছানায় অন্য রোগীদের মধ্যে। তারপর রুমি জানতে পারলো সেদিনের ঘটনা…
সেদিন পড়তে যাওয়ার সময় লরির সাথে ধাক্কা লাগায় ঘটলো এই দুর্ঘটনা তারপর হাসপাতাল, শুনতে শুনতে রুমির চোখের ধার বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অজস্র অশ্রুবিন্দু।
তবে কি তার স্বপ্ন এখানেই শেষ! সত্যি কি থমকে দাঁড়িয়ে গেলো সবকিছু? সত্যি কি এখানেই হার মানতে হবে রুমিকে?
না, সে থেমে থাকবে না, ভাগ্যের এই নিষ্ঠুর পরিহাস সে কিছুতেই মেনে নেবে না। তার লক্ষ্য জড়িয়ে আছে যে স্বপ্নে তা সে পূরণ করেই ছাড়বে…
কিন্তু নিয়তির লিখন! খন্ডানো কি এতই সোজা? ডাক্তার বলেই দিলো যে রুমি নাকি তার হাঁটার ক্ষমতা হারিয়েছে।
তবে কি হবে তার একটু একটু করে সাজানো স্বপ্নের…
রুমি থেমে থাকলো না, তাকে যে তার স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে।
তাই আস্তে আস্তে রুমি নিজের থেকেই চলার অভ্যেস করতে লাগলো, যদিও প্রথম প্রথম সে অনেকবার পড়ে গিয়েছে, তার আঘাত লেগেছে কিন্তু সে থেমে থাকেনি, একটু একটু করে আবার এগিয়ে গেছে নিজের স্বপ্নের লক্ষে। স্বপ্ন পূরণ এর এই বিশাল লড়াইতে জয়ী হলো রুমি। একদিন সে ভ্রমণ করলো এই গোটা পৃথিবী।
নিজের চোখে দেখলো যা কিছু ছিলো অদেখা! জানার চেষ্টা করলো যা ছিলো অজানা। সেই ছোট্ট রুমির স্বপ্ন আজ সফল হলো তার নিজেরই জন্য।
বিধির বিধান কেও খন্ডানো যায় যদি মনে থাকে অদম্য জেদ যেটা রুমির ছিল, আর সেই কারণেই সে সফলতার স্বাদ পেলো।
নীতিকথা-
নিজের স্বপ্ন সফলের জন্য ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে হবে না, স্বপ্ন সফলের জন্য নিজেই নিজের ভাগ্যকে পথ দেখাতে হয়।