NISHA KAMILA

Tragedy Inspirational

4.0  

NISHA KAMILA

Tragedy Inspirational

স্বাধীনতা

স্বাধীনতা

3 mins
404


আমরা জানি, ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। তবে মনের মধ্যে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন জাগে সত্যি কি আমরা স্বাধীন? 

একজন মানুষ রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষে করে দিন অতিবাহিত করে, স্বাধীনতার আগেও সেই মানুষটা প্রতীক্ষা করেছিলো ভারত কবে স্বাধীন হবে কবে তার এই দুর্দশার অবসান হবে! কিন্তু কি লাভ হলো?

 একটা ছোট্ট বাচ্চা যে তার ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে স্বাধীনতার আগেও কাজ করে গেছে অত্যাচারের বশবর্তী হয়ে, আর স্বাধীনতার পরে খিদে নিরসনের জন্য।

সেই সমস্ত অত্যাচারিত নিপীড়িত নারী যারা অপেক্ষা করেছিলো নিজেদের স্বাধীনতার জন্য যারা চেয়েছিলো নারী আর পুরুষের সমতা তৈরি করার। কি লাভ হলো এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার? 

স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি ঠিকই কিন্তু বাস্তবে নয়। স্বাধীনতা পেয়েছি ইতিহাস বইতে আর পেয়েছি লোকমুখে। 

একদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরত রমা দেখলো কয়েকজন লোক এক বৃদ্ধাকে বিরক্ত করছে তাই রমা দৌড়ে গেলো সেই বৃদ্ধার কাছে সাহায্য করতে। লোক গুলো সরে তো গেলোই না উল্টে বললো - "একজন অবলা নারী আর একজন অবলাকে সাহায্য করতে এসেছে। এই যে মাসিমা পরের দিন বাড়ি ভাড়ার টাকাটা আদায় করেই ছাড়বো।" 

সেদিন রমা নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছিলো এই কি তবে মানবিকতা এই কি তবে স্বাধীনতা? 

১ সপ্তাহ পর…

আবার একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে কান্নার শব্দ শুনে ছুটে গেলো রমা। এটা সেই বৃদ্ধার কান্না। তাকে লোকগুলো বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। হৃদয় বিদীর্ণ করা সেই উদাস কান্না ছুঁয়ে গেলো রমার মনকে। সে দৌড়ে গেলো, মিটিয়ে দিলো সেই বৃদ্ধার ভাড়া। 

সেদিনও সে নিজের কাছে প্রশ্ন করেছিলো শুধু কয়েকটা টাকাই কি তবে বেঁচে থাকার অধিকার? 

আরো একটি ঘটনা, এক বছর ১৫ ই আগস্ট একটা বাচ্চা ছেলে যার পরনে এক ছেঁড়া বস্ত্র কিন্তু তার হাতে জ্বলজ্বল করছে আমাদের জাতীয় পতাকা। বাচ্চা টি সবার কাছে গিয়ে বলতে লাগলো - "শুভ স্বাধীনতা দিবস।" 

কিন্তু কেউ তা গ্রাহ্য করলো না সবাই ভাবলো বাচ্চাটা হয়তো তা বিক্রি করছে। পার্কের বেঞ্চে এক বুদ্ধ ভদ্রলোক খবরের কাগজ পড়ছিলেন। তার কাছে গিয়েও বাচ্চাটা একই রকম ভাবে অভিবাদন জানালো। বৃদ্ধ তাকে পয়সা দিতে গেলে বাচ্চাটি বললো - "জাতীয় পতাকা কি পয়সা দিয়ে কিনতে আছে?" বুদ্ধ অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন বাচ্চা ছেলেটির দিকে। 

এইদিকে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি গাড়ির সাথে বাচ্চাটির দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। সেই বৃদ্ধ ছুটে এলো দেখলো বাচ্চাটি জাতীয় পতাকা বুকে জড়িয়ে ধরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। মৃত্যুর পরেও তার মুখে প্রশান্ত হাসি। চোখে জল চলে এলো সকলের। 

একদিন এক শিক্ষক তার শ্রেণীর সকল ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করলেন - বলো তো পতাকার কটি রং? 

সকলেই এক বাক্যে উত্তর দিলো - "৩ টি", একজন বাদে। শিক্ষক তাকেও জিজ্ঞাসা করতেই সে বললো - "৫ টি।" 

সারা ক্লাস অট্টহাস্যে ফেটে পড়লো। 

শিক্ষক হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন - "বোঝাও কি ভাবে?" 

ছাত্রটি বলতে শুরু করল-"স্যার, পতাকার একদম ওপরে গেরুয়া রঙ, মাঝখানে সাদা আর নীল আর একদম নিচে সবুজ রঙ।" 

শিক্ষক বললেন - "তা হলেও তো মোট চারটে রঙ হলো, আর একটা?"

ছাত্রটির চোখ থেকে দুই এক ফোঁটা জল মাটিতে পড়লো। সে বলতে শুরু করলো-" ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, যখন আমার বাবাকে ওরা কফিনবন্দী করে নিয়ে আসলো তখন বাবার কফিনের ওপর যে পতাকা ছিলো তাতে শুকনো রক্তের দাগ জ্বলজ্বল করছিলো।" 

ছেলেটি আর বলতে পারলো না, তার কান্না যে আর বাঁধ মানছিল না। 

আমরা সকলেই জন্ম থেকে কারোর না কারোর অধীনে থাকি। ছোটবেলায় বাবা মা থেকে শুরু করে স্কুল এ শিক্ষক শিক্ষিকা আর তারপর চাকরির প্রতিষ্ঠানে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান এর অধীনে। 

তবে কিনা তবু একটা কথা আছে - "আশায় মরে চাষা।" তাই মানুষ ও আশা নিয়ে বেঁচে থাকে নতুন করে নিজেদের মনের মতোন করে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য।এ স্বাধীনতা শুধুই হবে নিজেদের।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy