NISHA KAMILA

Horror Crime Children

4.5  

NISHA KAMILA

Horror Crime Children

।।ভৌতিক পুতুল।।

।।ভৌতিক পুতুল।।

5 mins
536


আমি মিষ্টি…  

মানে আমার ডাক নামটা মিষ্টি।পুতুল খেলা আমার খুব প্রিয়। তাই এবার রথের মেলায় আমার মা আমাকে একটা সাদা ভেলভেটের মতোন লোম যুক্ত কুকুর উপহার স্বরুপ দিলেন।

কিছুদিনের মধ্যেই পুতুলটা আমার এত প্রিয় হয়ে উঠলো যে নাওয়া-খাওয়া ভুলে পুতুলকে নিয়েই থাকতাম সারাদিন।কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আমার একটা অন্য রকম অনুভূতি হতে লাগলো, কেনো জানি না পুতুল টা আমার কাছে থাকলেই মনে হতো কুকুরটা হয়তো পুতুল নয়, আসল। 

তারপর নিজেকেই বলতাম-"ধুর!পুতুল আবার কখনো আসল হয় নাকি?" হয়তো আমারই মনের ভুল।

কিছুদিন পর কেনো জানি না আমার কেমন যেনো অস্বস্তি হতে লাগলো, পুতুলটা কাছে থাকলেই মনে হতো সত্যি যেনো আমার পাশে একটা কুকুর বসে আছে। তবু নিজেকে শান্ত রেখেছিলাম এই ভেবে- যাই হোক, তবু তো এটা একটা পুতুল। 

সত্যি বলতে কি আমি ভূতে বিশ্বাস করি কিন্তু ভূতের ওপর আগ্রহ থাকলেও ভয় পাই না। তাই ভূতের গল্প লিখতেও দ্বিধা বোধ করি না। তবু আমার এই অভিজ্ঞতার পর আগ্রহ বৃদ্ধির সাথে সাথে ভয়ের পরিমাণ কমে গেলো বললেও চলে। 

যাই হোক আবার গল্পে ফিরে আসি। 

তখনও আমি বাড়ির অভিভাবকদের কিছুই জানাইনি এই ব্যাপারে। আর জানালেও কেউ যে বিশ্বাস করবেন না সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত। 

একদিন আমার এই ধারণা কিছুটা হলেও সত্যি মনে হলো। 

একদিন রাতে হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। একদিকে তো ভীষণ গরম আর একদিকে অজানা একটা অস্বস্তি ঘিরে ধরতে লাগলো তাই বাইরে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াতেই শিঁরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। 

ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলাম আমার পুতুলটা পাশে নেই, তবে আমার তো মনে আছে আমি পাশে নিয়েই ঘুমিয়েছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়ে গেলো ঘরের কোণে অন্ধকারের মধ্যে একটা ছায়া নড়ে উঠলো কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনে হলো এটা আমার পুতুলের ছায়া। কিন্তু হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে আসায় ছায়া দেখতে পেলাম না। খাটে শুতে গিয়েই দেখি - একি! আমার পুতুল তো আমার পাশেই আছে তবে হঠাৎ চোখে পড়লো পুতুলটার চার পায়ে ধুলো লেগে আছে। 

তবু নিজের মনকে সান্ত্বনা দিলাম কারণ ভয় আমি মোটেই পাই না। তা সে ভূত হোক বা পেতনী। তবু আমার চঞ্চল মনের অনুসন্ধিত্সা রয়েই গেলো। 

তাই সেইদিন রাতে রোজকার মতোন পুতুলটাকে পাশে নিয়ে ঘুমাতে যাই, কিন্তু ঘুমানোর আগে সবার অজান্তেই খাটের চারপাশে একটু আটার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলাম, যদি আমার সন্দেহ সত্যি হয় তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে। তবে রাতে ঘুমাতেও পারছিলাম না ঠিক করে, তবে ঘুমের ভান করেছিলাম। 

রাত তখন প্রায় ১২:৩০।আবার কারেন্ট চলে গেলো। আমি ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালেও নজর কিন্তু পুতুলের দিকেই ছিলো আর আমার সন্দেহ ও সত্যি হলো। হঠাৎ দেওয়ালে একটা ছায়া নড়ে উঠতেই চেয়ে দেখলাম পুতুল যেখানে সেখানেই আছে কিন্তু তারই একটা অবয়ব ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তাকে দেখতে না পেলেও আমি যে আটা রেখেছিলাম তার জন্য ঘরের চারপাশে পায়ের ছাপ পড়ছিল, যেনো সে কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে। নিমেষের মধ্যে দেখলাম ছায়া টা আবার এসে প্রবেশ করলো আমার পুতুলের মধ্যে। হঠাৎ কারেন্ট টাও চলে এলো আর কারেন্ট আসতেই আমিও পায়ের মাপ টা তাড়াতাড়ি নিয়ে নিলাম। 

সারারাত ঘুমাতে পারিনি ঠিক করে। ভোর ভোর উঠেই ঘর পরিস্কার করে নিলাম আর মাপ টা নিতে গিয়েই অসুবিধায় পড়লাম কারণ রাতের সেই কুকুরের অবয়ব আমার পুতুল কুকুরের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড় ছিলো, কিন্তু তা কি করে সম্ভব! আমি যে নিজের চোখে দেখেছি তবে কি ভুল দেখলাম? কিন্তু আমাদের বাড়িতে তো আর কোনো কুকুর নেই। 

আর সবচেয়ে বড় কথা আমি যে পায়ের ছাপ নিয়েছিলাম সেটা সাধারণ কুকুরের চেয়ে কিছুটা বড় আর বেশ সুগঠিত ছিল। সাধারণত পুলিশ এর কাজে যে কুকুর ব্যবহার হয় তাদের পায়ের ছাপ এরকম হয় সেটা জানতাম। কিন্তু সেইরকম কুকুর আমাদের বাড়িতে আসবেই বা কোথা থেকে? 

রহস্যের জট খুলতে সময় লাগলো বেশ কিছু দিন। 

রোজ পুতুলের দিকে খেয়াল রাখি আর রোজই একই ঘটনা ঘটে কিন্তু যতবারই দেখতে যাই ততবারই কারেন্ট চলে আসে। 

একদিন আলো বন্ধ করে দিতেই ছায়া টা বেরিয়ে এলো আর আমি টর্চের আলো ফেলতেই এক ভয়ংকর মূর্তি দেখলাম। আমার সন্দেহ ঠিকই ছিলো এটা একজন পুলিশের কুকুরের ই আত্মা ছিলো। তার চোখ দুটো জ্বলে উঠলো তীক্ষ্ণ প্রদীপের শিখার মতোন তার দেহের মাংস ঝুলে পড়েছে, গলায় বাঁধা বেল্ট টা দেখে মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে এই বাড়ির সঙ্গে, নিশ্চয়ই কোনো যোগসূত্র আছে এই বাড়ির সঙ্গে ভৌতিক কুকুরের। 

পরের দিন রাতে একটা অদ্ভূত স্বপ্ন দেখে সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো। স্বপ্নে দেখলাম সেই কুকুরটাকে। তবে সে একা নয় তার মালিক ও ছিলো আর তারা এই বাড়িতেই থাকতো। একদিন সেই পুলিশ আর তার কুকুর ভয়ানক ঘটনার সম্মুখীন হলেন। ঘরে কিছু দুষ্কৃতী প্রবেশ করে এবং পুলিশ টিকে বাড়ি ত্যাগ এর ভয় দেখায় আবার তাকে খুন করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেই পুলিশ ভীষণ ডাকাবুকো। সাহসের ওপর ভর করে বলে উঠলেন-"অন্যায় মেনে নেওয়ার জন্য আমি আইন এর রক্ষক হইনি। তোমাদের জেলে পাঠাবো কিন্তু অন্যায় এর সমর্থন করবো না কিছুতেই তার জন্য মেরে ফেলতে হয় তাই করুন। খুনিও তাই ধরা পড়ার ভয় একটুও দ্বিধা বোধ না করে গুলি চালিয়ে দিলেন, রাতের মধ্যেই সরিয়ে ফেললেন মৃতদেহ। তবে কুকুর প্রভুভক্ত প্রাণী নিজের মালিকের মৃত্তু মেনে নিতে পারলো না সে ঝাঁপিয়ে পড়লো দুষ্কৃতীর ওপর। আবার একটা গুলির আঘাতে প্রাণ হারালো সেই কুকুর টাও। তার মৃতদেহ সেখানেই ফেলে রেখে বন্দুক টা সেই ঘরেই লুকিয়ে রেখে পালাল দুষ্কৃতী। নিছক একটা রেশারেশিতে পড়ে যে তার মৃত্যু হয়েছে তা মেনে নিলো সবাই। সুবিচার পেলো না দুটো প্রাণ।

ধড়ফড় করে উঠে বসলাম বিছানায়।সেইদিন আর কারেন্ট যায়নি। এইসব কি সত্যি! তবে কি… 

সকালে উঠেই আগে বাড়ির আশেপাশের লোকেদের জিজ্ঞাসা করতেই শুনলাম সেই সব কিছু যা আগের দিন স্বপ্নে দেখলাম। 

বুঝতে পারছিলাম সব কিছু। হয়তো সুবিচারের জন্যই আজও ঘুরে বেড়ায় সেই প্রভুভক্ত কুকুরের আত্মা। 

আমার ঘরে এসেই চারিদিকের মাটি একটু দেখতেই একটা জায়গা শক্ত অনুভব করলাম। বাড়ির সবাইকে ডেকে সেই জায়গাটা খুঁড়ে দেখতে বললাম, বেরিয়ে পড়লো ১৯০২ সালের একটা বন্দুক। পুলিশের কাছে সেটা জমা দিতেই অপরাধীর শাস্তির কথা ঘোষণা হয়ে গেলো এবং কিছুদিনের মধ্যেই যোগ্য শাস্তি পেলো সে। 

ঘরে এসে দেখলাম আমার পুতুলটার চোখ দুটো কেমন ভেজা ভেজা লাগলো, হয়তো ধন্যবাদ বলতে চাইলো। কিন্তু সেই আত্মা আর সেখানে থাকলো না, চলে গেলো আর আমার পুতুল ও হয়ে গেলো আবার সাধারণ পুতুল। আর আমাদের ঘরে কোনো ছায়ার আগমন হয়নি সেই দিনের পর। 

            


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror