STORYMIRROR

NISHA KAMILA

Tragedy Inspirational

3  

NISHA KAMILA

Tragedy Inspirational

মা

মা

3 mins
981

"মা" - খুব ছোট্ট একটা শব্দ কিন্তু এই ছোট্ট শব্দটার মধ্যে পৃথিবীর সমস্ত সুধা মেশানো আছে। মা মানেই শক্তি আর ভক্তির আধার। 

গলির ধারে একটা ছোট্ট কুঁড়েঘরে রহিম এবং তার মা বাস করত। খুব কষ্টে রহিমের মা তাকে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়িয়ে একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষে পরিণত করলেন।ছোটবেলায় রহিম তার বাবাকে হারায় তাই সেই কষ্ট যাতে সে কখনোই বুঝতে না পারে তাঁর মা যথাসাধ্য পরিশ্রম করতেন এবং তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করতেন। 

 রহিমের মা সবসময় তাঁর মুখের এক দিক শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে রাখতেন। রহিম ছোটবেলায় একবার তাঁর মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো-"মা আপনি আপনার মুখের এক দিক ঢেকে রাখেন কেনো?" 

মা উত্তর দেয়-"বাবা, সে কথা তুই ঠিক সময় মত জানতে পারবি।" 

রহিম বড় হওয়ার পর অনেক বড় একটা কোম্পানির ম্যানেজার পদে চাকরি পেলো। সেই খবর শুনে রহিমের মায়ের চোখে জল এলো। রহিম জিজ্ঞাসা করলো-"মা, আপনি কাঁদছেন কেনো? আজ তো বড় আনন্দের দিন।"

মা নীরবে উত্তর দিলেন-"এতদিনে বুঝি আমার কষ্ট সার্থক হলো।"

তবে রহিম তখনও জানতো না যে তার মায়ের মুখের এক দিক পোড়া ছিলো যা এতদিন তিনি রহিমের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। 

রহিমের চাকরি পাওয়ার পর মাঝে মাঝেই তার বাড়িতে কোম্পানির বিভিন্ন আলোচনার জন্য সভা বসত রহিমের বাড়িতে। ঠিক সেইরকমই একদিন একজন অতিথিকে চা দিতে গিয়ে রহিমের মায়ের আঁচল সরে যায় এবং সভায় উপস্থিত সকলে ভয় পেয়ে আঁতকে ওঠেন রহিমের মায়ের মুখ দেখে । রহিমও তার মায়ের মুখ দেখে এবং সকলের সামনে তার অসম্মানের জন্য ভীষণ রেগে যায় এবং তার মা-কে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। 

শেষ পর্যন্ত বহু মায়ের মতো সেই হতভাগ্য মায়ের ও আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। যাই হোক কোনোপ্রকারে দিন-যাপন করতে শুরু করলেন তিনি। 

রহিমের ও বিয়ের পর এক পুত্র সন্তান হল। কিন্তু দুঃখের খবর সেই পুত্র সন্তানের জন্মের পর থেকেই একটা বৃক্ক খারাপ ছিলো। ডাক্তার বলেই দিয়েছে খুব শীঘ্র যদি কেউ তার বৃক্ক স-ইচ্ছায় দান না করে তাহলে রহিমের পুত্র সন্তান কে বাঁচাতে ডাক্তার অক্ষম। 

সুতরাং ভীষণ দুঃখের সাথে এবং কিছু একটা অদ্ভূত ঘটে যাওয়ার আশায় দিন কাটতে লাগলো তাদের। 

এদিকে রহিমের মা-ও জানতে পারলো সেই কথা। 

প্রায় ২০ বছর কেটে গেছে। 

নিয়মমাফিক অপারেশন এর মাধ্যমে রহিমের সন্তান মোটামুটি ভালই ছিলো। 

এইভাবে একদিন ডাক্তার হাসি মুখে বেরিয়ে এসে রহিমকে বললেন তার সন্তান এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। রহিম এবং তার স্ত্রী তাড়াতাড়ি তাদের সন্তানের কাছে গেলো এবং ইশ্বর কে ধন্যবাদ দিতে লাগলো। 

কিন্তু হঠাৎ রহিমের মাথায় প্রশ্ন এলো কে দিলো বৃক্ক? তারা তো কাউকেই খুঁজে পায়নি। 

তখন সেই ডাক্তার একজন বৃদ্ধাকে দেখিয়ে বললেন-"ইনি দিয়েছেন নিজের বৃক্ক, কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি নিজেই এখন প্রায় মৃত্যুশয্যায়।" 

চকিতেই রহিম চিনতে পারে সেই বৃদ্ধাকে। যাঁর জন্য রহিম আজ এত বড় জায়গায় চাকরি করছে, যাঁর জন্য রহিম এত বছর ধরে বেঁচে আছে, যিনি এত বছর রহিম কে আগলে রেখেছিলেন তিনি তাঁর নিজের প্রাণ দিয়েই বাঁচিয়ে দিলেন আরো একটা নতুন প্রাণ। 

তিনি আর কেউ নয় স্বয়ং রহিমের মা। 

রহিম নীরবে চোখের জল ফেলতে ফেলতে নীরবে কেঁদেছিল সেদিন। দুঃখে নয় আপশোসে। 

মা যেমনই হোক না কেনো মায়ের ভালোবাসার সীমানা হয় না। মাকে দেখতে সুন্দর হোক বা না হোক মা তো মা-ই হয়। 


ଏହି ବିଷୟବସ୍ତୁକୁ ମୂଲ୍ୟାଙ୍କନ କରନ୍ତୁ
ଲଗ୍ ଇନ୍

Similar bengali story from Tragedy