Aritra Das

Abstract

3  

Aritra Das

Abstract

উপসংহার - অধ্যায় ২

উপসংহার - অধ্যায় ২

7 mins
837


[এই অধ্যায়টি 'দ্যা লেজেণ্ড অফ্ রাম্' সমগ্রের সর্বশেষ পর্ব, 'দ্যা রিভিলিশন'-এর উপসংহার। যা দিয়ে গল্পটির সূচনা হয়েছিল, সেই আখ্যানের শেষ পর্ব এটি। আপনাদের মন্তব্য ও মতামত একান্ত প্রার্থনীয়]

-অরিত্র দাস


[পূর্ব প্রকাশিতের পর...]



-“ঠিক সেটাই যেটা বলা হয়েছে; তবে এর মাধ্যম অন্য ছিল। এই পুঞ্জীভুত জ্ঞান রাক্ষস ব্যতীত একমাত্র দেবতারাই পড়তে পারবেন, আর সেটাই তাঁরা করেছিলেন। দেবতারা এই জ্ঞানের সঙ্গে নিজেদের জ্ঞান একত্র করে সমস্তকিছু লুকিয়ে রেখে দেন একটি গোপন স্থানে, লোকচক্ষুর আড়ালে। তবে একটি বিষয়, মূল ‘পুস্তক’-টিকে লুকিয়ে রাখলেও তাঁরা অনুভব করেন যে এই সংকলনের কিছু অংশ মানবজাতির কল্যানসাধনার জন্য লাগতে পারে; সেই কারণেই এই সংকলনের কিছু জ্ঞান নয়টি পৃথক পুস্তকের মধ্যে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, সময় হলেই নির্বাচিত কোন মানব বা মানবগোষ্ঠীকে এটি হস্তান্তর করা হবে মানবজাতিরই উন্নয়নের স্বার্থে।”


-“এই নয়টি পুস্তকের বিষয়বস্তুগুলি কি, মহর্ষি?”


-“অনেককিছু। কিছু তোমাদের চেনা জগৎের মধ্যে, বেশিরভাগ তোমাদের চেনা জগৎের বাইরে। মানবগোষ্ঠী এখনো সম্পূর্ণ সভ্যতার আলোকে বিকশিত হয়নি; তাছাড়া আমাদের ধ্বংসাত্মক প্রকৃতি এই জ্ঞান আহরণের পরিপন্থী। উপকারের পরিবর্তে যদি অনিষ্ট সা–”


-“যথা, মহর্ষি? বুঝি না বুঝি, একবার শুধু শ্রবণ করতে চাই বিষয়গুলি।”- একগুঁয়ে, জেদি বালকের মত কথাটি বললেন অষ্টবসু।


-“বেশ! তবে নির্ঘন্ট মেনে নয়টি বিষয় হয়তো বলতে পারব না, চেষ্টা করব প্রত্যেকটি বিষয় মোটের ওপর ছুঁয়ে যাওয়ার। সংক্ষেপে বিষয়গুলি হল-”


এরপর মহর্ষি মার্কণ্ডেয় একটি নাতিদীর্ঘ বর্ক্তৃতা দিলেন গবেষক রবরবা ও দেবতাদের মিলিত জ্ঞানভাণ্ডার সম্বলিত পুস্তক থেকে নেওয়া নটি বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ওপর যা আলাদাভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে:


  • সমরবিদ্যা- সমর সংক্রান্ত নীতি ও কৌশল এবং বিশেষ মারণ পদ্ধতি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- অস্ত্রাদি ছাড়াই নিরস্ত্র অবস্থাতে থেকেও কিভাবে শত্রুকে নিমেষে পর্যদুস্ত করা যায়। সমর সংক্রান্ত বিধি ও প্রয়োগপদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে এখানে।
  • আলোকবিদ্যা- আলোক সংক্রান্ত সমস্ত তত্ত্বগুলি আলোচনা করা হয়েছে এখানে। আলোককে কিভাবে ব্যবহার করা যায় ভেদক অস্ত্র হিসেবে, বা মারণাস্ত্র হিসেবে। গতিবিদ্যা সংক্রান্ত তথ্যগুলিও দেওয়া আছে এইখানে।
  • অনুজীববিদ্যা- আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে রয়েছে অসংখ্য জীবাণু। এগুলি আকারগত দিক দিয়ে একটি উৎকুনের থেকেও ছোট। আমাদের সাধ্য নেই এদের খালি চোখে দর্শন করা। এই সকল জীবাণু, তাদের দ্বারা সৃষ্ট রোগ এবং তাদের প্রতিকার- এই সকল বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করা আছে এখানে।
  • পরশপাথর- রসায়নবিদ্যা,অপরসায়নবিদ্যা ও ধাতুকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় বিদ্যা ব্যক্ত করা আছে এখানে। এর একটি আকর্ষনীয় বিষয় হল কিভাবে লৌহকে সোনায় রুপান্তরিত করা যায়।
  • নদীসংস্কার- সাধারণ প্রাণীদের কিছু প্রাথমিক রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে দেবতারা এইসময় কয়েকটি নির্বাচিত নদীর সংস্কার করতে শুরু করেন; নদী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবার পাশাপাশি জোর দেওয়া হয় উৎপত্তিস্থল থেকে তাতে কিছু ঔষধি মিশ্রণের যাতে অবলা প্রাণীরা তাদের কিছু প্রাথমিক রোগ সারিয়ে নিতে পারে। কিভাবে, কি পদ্ধতিতে এই বিরাট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব তার রূপরেখা ধরে রাখা আছে এখানে। গঙ্গা এই প্রকল্পের প্রথম ও প্রধান উল্লেখযোগ্য নদী যার পরিমার্জন করা হয়। গঙ্গার ‘পূণ্যতোয়া’নামকরণের পিছনে কারণও এটাই। এর ফলে সাধারণ প্রাণীদের কিছু রোগবিমুক্তি সম্ভব। পার্বত্য অঞ্চলে উদ্ভূত বেশ কয়েকটি নদী এই প্রকল্পের আঁওতাধীন। এই প্রকল্পটির উদ্ভাবক স্বয়ং শুলিন।
  • চিকিৎসাবিদ্যা- মানবগোষ্ঠী তার বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে অসম্ভব কষ্টস্বীকার করেছে, মরে ধূলিধাবাড় হয়েছে, সংখ্যা অজস্রবার হ্রাস পেয়েছে- এর একটি মূল কারণ রোগ-বিরোগ। এর প্রতিকার সংক্রান্ত যে বিজ্ঞান তার নাম চিকিৎসাবিজ্ঞান। চিকিৎসা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বিবৃত করা আছে এখানে।
  • মহাকাশ ও মহাকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য- এর একটা বড় অংশ এসেছে দেবতাদের অভিজ্ঞতা থেকে; রবরবার মূল পুস্তকে এই বিষয়টি যৎসামান্য বর্ণিত হয়েছে। মহাকাশ যানগুলির প্রকারভেদ, নিয়ন্ত্রিত ঊৎক্ষেপণ ও সঠিক চালনা পদ্ধতি, কি ধরণের জ্বালানি ব্যবহার করা উচিৎ, গতিবেগ অঞ্চলবিশেষে কেমন রাখা উচিৎ- এই সকল বিষয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
  • বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগস্থাপন- এই অংশটি এখনই সকলকে জানানোর সঠিক সময় হয়তো এখনও আসে নি অষ্টবসু, কারণ পৃথিবীর বাইরে পা রাখবার প্রযুক্তি এখনই মানবদের হাতে নেই; কিন্তু যেহেতু তোমরা এই অভিজ্ঞতায় পুষ্ট তাই তোমাদের কাছে খুলে বলতে কোন বাধা নেই। সদ্য জন্মানো শিশুর সঙ্গে কিভাবে সংযোগস্থাপন হয়? শারীরিক ভাষা ও দৃষ্টির সাহায্যে। অনুরূপভাবেই যোগসাধন করতে হয় বহির্বিশ্বের উন্নত চেতনাবিশিষ্ট প্রাণীদের সাথে তার কারণ, ভাষার ব্যবধান। কিভাবে যোগসাধন করতে হবে তার একটি নির্দিষ্ট আচরণবিধি; এছাড়া বিভিন্ন গ্রহের প্রাণীদের একটি পরিষ্কার বিবরণ,প্রাণবিশিষ্ট গ্রহগুলির অবস্থান ও মানচিত্র, ইত্যাদি ব্যাখ্যা করা আছে এই অংশে।


এছাড়াও অর্থনীতি ও সমাজবিদ্যা প্রসঙ্গও আলোচনা করা আছে একটি আলাদা পুস্তকে। অনেক জটিল মনস্তত্ত্ব আলোচিত হয়েছে সেখানে যা আমাদের আভ্যন্তরীণ বিকাশে সহযোগিতা করতে পারে।


-“মোটের ওপর এই হল বিষয়। এখন বল অষ্টবসু।“


-“আপনি যা বললেন তা যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক। যদিও আপনার কথাই সত্যি, অনেকগুলি বিষয় আমার কাছে ঠিক বোধগম্য হল না- আচ্ছা, ‘বহির্বিশ্বে প্রাণ’ ব্যাপারটা কি? এরকম সত্যিই কি কিছু আছে?”


-“তোমার অস্তিত্ব আছে? বা তুমি-আমি, আমাদের চারপাশে সবকিছু যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ঘিরে রয়েছে? তোমার মধ্যে এই ধারণা তৈরি হল কেমন করে যে আমাদের প্রাণই মহাবিশ্বের একমাত্র জীবিত প্রাণ; বাদবাকি কোনকিছুরই অস্তিত্ব নেই? তুমি তো ‘সোমরস’ ভ্রমণ করে এলে, সেখানে কোন প্রাণ তুমি দেখ নি? পাও নি সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব?”


-“কিন্তু সে তো দেবতারা, বা দেবতাদের দ্বারা সৃষ্ট প্রাণ! নিজে থেকে কোন প্রাণ সৃষ্টি-”


-“মূর্খের মত কথা হয়ে গেল অষ্টবসু! উপাখ্যানের গোড়াতেই তো বলেছি যে দেবতারা যখন পৃথিবীতে আসেন তখনই এই গ্রহে প্রাণ সঞ্চার হয়ে গিয়েছিল। কে করেছিল এই প্রাণসৃষ্টি? আমি অন্ততঃ জানি নে, তাই ধরেই নেব যে এটি একটি স্বয়ম্ভূ ঘটনা! নিজে থেকেই হয়েছিল এই প্রাণসৃষ্টি; কিছু ভাগ্যবান, নির্বাচিত প্রাণীদের বিকাশের পথে দেবতারা সহযোগিতা করেছিলেন মাত্র। যা এই গ্রহে হয়েছিল তা বাইরের গ্রহে হতে আপত্তি কোথায়?”


-“আপনার কথাগুলি কিরকম যেন অবিশ্বাস্য-”


-“অষ্টবসু! পৃথিবীতে বা অন্য যে কোন গ্রহে প্রাণধারণের কতগুলি মৌলিক শর্ত থাকে। সেই শর্তগুলি প্রাকৃতিকভাবে বা কৃত্রিমভাবে পালিত হলে তবেই সেই গ্রহে প্রাণের বিকাশ সম্ভব। আর, এরকম গ্রহের সংখ্যার কথা ভাবছ? আমাদের পৃথিবী, এবং এই আস্ত সৌরমণ্ডল যে মস্ত ছায়াপথের মধ্যে আছে শুধু তার বিস্তার কতটা জান? সাধারণ ব্যোমযানগুলিতে কোন সংক্ষিপ্ত পথ ছাড়াই যদি কয়েক আলোকবর্ষ গতিতে আমরা সিধা চলতে থাকি, তবে কোটি কোটি বছর পর আমরা আমাদের ছায়াপথের সীমানার বাইরে যেতে সক্ষম হব, বহির্বিশ্ব তো অনেক দূরের গল্প! পরিব্যপ্তিটা বোঝা যাচ্ছে? একা শুধু আমাদের ছায়াপথেই দুই নিখর্ব সংখ্যক গ্রহ আছে; এর মধ্যে স্বল্প কয়েকটির পরিবেশও যদি পৃথিবীর মত হয় এবং এদের মধ্যে কয়েকটিতেও যদি প্রাণবিকাশ হয়ে থাকে তাহলেও তা সংখ্যায় প্রভূত পরিমানে হবে। হতে পারে সেই প্রাণ আদিম, হতে পারে সেই প্রাণ অনুন্নত, হতে পারে সেই প্রাণ আমাদের থেকে উন্নত, কিন্তু প্রাণ থাকবেই একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। প্রাণের সম্ভাবনা এইসব ক্ষেত্রগুলিতে সর্বদাই বর্তমান।”


-“’সাধারণ ব্যোমযান’বা ‘সংক্ষিপ্ত পথ’ ব্যাপারগুলি ঠিক বোধগম্য হল না-”


-“আলোক একটি নির্দিষ্ট বৎসরে বায়ুশূণ্য মাধ্যমে যতদূর ভ্রমণ করতে পারে তাকেই বলে এক আলোকবর্ষ। আমাদের সাধারণ ব্যোমযানগুলি এই গতিবেগে চলতে পারে না, কিন্তু যে অন্তরীক্ষ যানগুলি এই গতিবেগের থেকেও দ্রুতগতিতে চলতে পারে তার সাহায্যেই দেবতারা মহাবিশ্বের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত যাতায়াত করেন। কিন্তু এখানে কিন্তু মনে রাখা দরকার যে মহাবিশ্বে চলাচলের জন্য এই দুরন্ত গতিবেগও কিন্তু যথেষ্ট নয়; সোজা রাস্তা ধরলে বিরাট সময় লাগতে পারে ‘ক’চিহ্নিত স্থান থেকে ‘খ’চিহ্নিত স্থানে আসতে। কাজেই তাঁরা চলাচলের জন্য কয়েকটি ‘সংক্ষিপ্ত পথ’ব্যবহার করেন যা মহাবিশ্বের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত। এই পথগুলির পোশাকি নাম ‘স্থান-সময় ভাঁজ’। আর এই পরিবহনে একটি বিরাট ভূমিকা নেয় উষ্ণগহ্বর। ‘ক’আর ‘খ’দুটি বিন্দুকে কাছাকাছি আনবার পরেও তাদের মধ্যে একটি সেতুর মত কাজ করে এই উষ্ণগহ্বর। সহজ নয় এই কাজ। এর জন্য দরকার হয় জটিল, সুক্ষ্ম গণিতের।”


-“প্রভু ক্ষমা করবেন কিন্তু সত্যিই এবারে বিষয়টা আমি বুঝতে পারছি না; একটু সহজ করে কি বোঝানো সম্ভব?”


-“আমায় ক্ষমা কোরো অষ্টবসু। চাইলেও আমি সবিস্তারে তোমায় কখনোই বোঝাতে পারব না। এই গণিত আমাদের সরল মস্তিষ্কের তুলনায় অনেক বেশি জটিল। আমার পক্ষে এই বিশ্লেষণ অসম্ভব!”


চুপ করে গেলেন অষ্টবসু। এবার মহর্ষি বাল্মীকি কথা বলে উঠলেন বেশ খানিক্ষণ নীরবতার পর।


-“আমি কতগুলি প্রশ্ন করতে চাই; কিন্তু সেগুলি মূলতঃ দর্শনকেন্দ্রীক। এতে কোথাও কোন অসুবিধা হতে পারে মহর্ষি?”


-“আপনাদের সামনে সত্য বলব বলেই তো নিজের হাতে নিজের রক্তপাত ঘটিয়েছি মহর্ষি বাল্মীকি! আপনি নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করতে পারেন।”


-“বেশ! আমার প্রথম প্রশ্ন- কালো পোকার মত ঐ ক্ষুদ্র বস্তুটি কি ছিল?”


-“ওটি একধরণের শব্দ প্রেরক যন্ত্র। আমি যা যা কথা উচ্চারণ করব তার পুরোটাই চলে যাবে ধারকযন্ত্রের কাছে।”


-“এককথায়, ‘আড়িপাতা’যন্ত্র। তার মানে কেউ আমাদের কথায় আড়ি পাতছে। কিন্তু কেন?”


মাথা নীচু করে কি যেন ভেবে নিলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। তারপর মহর্ষি বাল্মীকির দিকে তাকিয়ে বললেন-


-“কেউ যাতে আড়ি পাততে না পারে, সেইজন্যই তো কষ্টস্বীকার করলাম মহর্ষি। আর এ বিষয়ে প্রশ্ন কেন?”


-“আপনি উত্তর দিতে না চান না দেবেন, কিন্তু প্রশ্ন করা আমার কর্তব্য আর এই দায়িত্ব আমায় পালন করতে দিন। দ্বিতীয় প্রশ্ন: দেবতারা পৃথিবীতে আর বসবাস করছেন না কেন? তাঁরা যাতায়াত করেন বটে মাঝে-মধ্যে, কিন্তু ভেবে দেখবার বিষয় এখানেই যে তাঁরা কষ্টস্বীকার করে ‘সোমরস’গ্রহাণুতে থাকেন, কিন্তু পৃথিবীর মত উন্মুক্ত ও খোলা পরিবেশে তাঁদের থাকতে আপত্তি। কেন?”


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract