STORYMIRROR

Paula Bhowmik

Comedy Action Inspirational

3  

Paula Bhowmik

Comedy Action Inspirational

ট্রাই বেকার !

ট্রাই বেকার !

3 mins
237

"এই সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারাবেননা, ফুটবল ম্যাচ। 

আর মাত্র তিনদিন, আসছে শুক্রবার হতে চলেছে__

দারুন জবরদস্ত দুটো দলের মুখোমুখি সংগ্রাম। 

শাকধোওয়া ও হাতিডোবার মধ্যে ফুটবলের লড়াই!

না দেখলে দুর্দান্ত লস করবেন দাদা, দিদি, কাকুরা।

টিকিট মাত্র একটাকা, একটাকার বিনিময়ে আনন্দ। 

লুটেপুটে নিন শুধু ই মজা।" 


মাইক নিয়ে বকবক করেই চলেছে অসীম দাদা। ঘোড়ার গাড়ি স্ট্যান্ডে সারি সারি ঘোড়ার গাড়ি তে বাঁধা ঘোড়া গুলোও পা ঠুকছে। আর আমাদের তো কোনও কথাই নেই। স্কুল থেকে পাওয়া গেল এক আশ্চর্য কুপন। 

এটা দেখালেই আমাদের জন্যে লাগবে হাফ টিকিট। ব্যস কেল্লা ফতে। কুপনটাতো আর নষ্ট করা যায়না।

"বাবার নাহয় অফিস আছে, তুমিই চলোনা মা!" ভাই তো ছোট্টো! ওর তো আর টিকিট লাগবেনা। সুতরাং মায়ের একটাকা আর আমার আট আনা। মোট দেড়টাকা। মাত্র হাফ লিটার দুধের দাম! 

সবকিছু শুনে বাবাই উৎসাহ জোগালেন মাকে। 

"যাও না, দেখেই এসো খেলাটা ওদের নিয়ে"

বাজার, হাট পার করে তবে খেলার মাঠ। সে তো আমি আগেই দেখেছি। কিন্তু আজ? একেবারে অন্য সাজ! টিকিট কেটে ঢুকে দেখি খেলার জায়গা বাদে বাকি মাঠে পিলপিল করছে লোক। বাড়ি থেকে আনা খবরের কাগজ পেতে গুছিয়ে বসেছি। এখনও দর্শক এসেই যাচ্ছে। কালো পোষাক পড়া ফর্সা মোটা সোটা রেফারি মাঠে এলেন। মাঠের দুপাশে নেট লাগানো গোলপোস্ট। সাদা-নীল ও লাল-হলুদ পোষাকে খেলোয়াড়েরা সব তৈরি। বাঁশী বাজিয়ে শুরু হলো খেলা। গোলকিপার দের ফুলহাতা পোষাক। খেলার সাথে সাথে আরেকজন সাধারণ চেহারার রেফারিও দৌড়ে চলেছেন মাঠের পাশ বরাবর।

"খেলা জমে উঠেছে। হাড্ডা হাড্ডি লড়াই। কেউ গোল খেতে রাজি নয়। শাকধোওয়া এবার বলটাকে গোল পোষ্টের নেটের কাছাকাছি এনে ফেলেছে প্রায়। দেখা যাক কি হয়। দুর্দান্ত শট। গোওওওওল। 

না _______।

গোলটা শেষ পর্যন্ত হলোনা। হাতিডোবার গোলকিপার শূন্যে লাফিয়ে উঠে বলটাকে নিয়ে নিয়েছে বুকের মাঝে। দারুণ পারফরম্যান্স! "

" এবারে বল চলে এসেছে আবার মাঠের মাঝখানে।

পায়ে পায়ে ঘুরছে বল। সবাই বলটাকে নিজের পায়ে পেতে চাইছে। শাকধোওয়ার প্লেয়ার যেন মরিয়া। কাড়া কাড়ি করতে গিয়ে দিয়েছে একজনকে কিভাবে যেন ল্যাং মেরে। রেফারির চোখ এড়াতে পারেনি ঘটনাটা। এবারে পেনাল্টি। শাকধোওয়ার গোলকিপারের মুখ রাগে থমথম করছে। এ যেন ধরে বেঁধে জিজ্ঞেস করা, কত মার খেতে পারে! শট্ ভালো ই ছিল কিন্তু একটুর জন্যে গোলপোস্টে লেগে বলটা বেরিয়ে গেল। শাকধোওয়ার ভাগ্য ভাল। "

এভাবেই চললো হাফটাইমের আগে পর্যন্ত। মাঠের পাশের বাড়িগুলোর ছাদ থেকেও লোকজন খেলা দেখছে। এমনকি কিছু উঁচু গাছের ডালেও ছেলেপুলেরা বসে আছে বানরের মতো। ওখান থেকেও চিৎকার করে উৎসাহ দিয়ে চলেছে।ঝকঝকে পরিস্কার নীল আকাশের বুকে ছোটো ছোটো দু একটা সাদা ফুটফুটে মেঘ মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাতাসে শীতের আমেজ। তাই রোদটাও ভালো ই লাগছে। বাদাম ভাজা খাওয়া হলো। পিপাসা মেটাতে পেপসি কোলা।

হাফটাইমের পর আবার খেলা শুরু হতে হাতিডোবার দল এলো শাকধোওয়ার জায়গায়। 

আর শাকধোওয়া অপর দিকে। দশ মিনিটের মধ্যেই শাকধোওয়াকে দু দুটো গোল দিয়ে ফেলল হাতিডোবার টিম। বাকি সময়ে অতি কষ্টে দুটো গোল ই শোধ করে ফেলল শাকধোওয়ার টিম। আমি তো খুব খুশি। কিন্তু এবার কি হবে! খেলার সময় ও প্রায় শেষ হবার মুখে। কি জানি কি সব হিসেব কষে সিদ্ধান্ত হলো টাই ব্রেকারের।

সারামাঠের দর্শকের সেকি হৈচৈ। দু দলের গোলকিপার এর পরীক্ষা যেন। কিন্তু আমার তো দুজনের জন্যেই কষ্ট হচ্ছিল। কি আর করা যাবে! ফলাফল আজ আর মনে নেই। তবে আমার কাছে দুটি দল ছিল সমান ই।

টাই ব্রেকার নিয়মটা পচা। জানা কথা দুটো দলই প্রায় সমান, তবু একটি দলকে জেতানোর চেষ্টা করার হাস্যকর সুযোগ। ওটা তাই  ট্রা___ই বে__কা___র। বাঙালি রা যা বলে ঠিকই বলে। মন থেকেই বলে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy