STORYMIRROR

Apurba Kr Chakrabarty

Horror Tragedy Classics

3  

Apurba Kr Chakrabarty

Horror Tragedy Classics

তন্ত্র শক্তি

তন্ত্র শক্তি

16 mins
161


কর্মসুত্রে নবীন মুহুরী সে সময়ে সিউড়িতে। কর্মস্থলে একা, কিন্ত দায়হীন বলা যাবে না। কামারকুন্ডুতে তার ভর্ত্তি ঘর সংসার। প্রতি শুক্রবার বাড়ী আসত, ফিরত সোমবার সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার ধরে আমাদপুর ,তারপর বিশ কিমি গাড়ীতে সিউড়ি। বয়স পঞ্চাশে ধাক্কা মারছে কিন্ত শরীর সচেতন নবীনের যা দেহের গঠন ও ক্ষমতা পঁয়ত্রিশের যুবককে হার মানায়।


ঈশ্বর তাকে নিরোগ শরীর দিয়েছেন, মিষ্টি মাংস কোন জিনিস খেতে বাদ দেয় না। কিন্ত না আছে ব্লাড সুগার না হাই বা লো কোন প্রেসার, বা না অ্যাবনরম্যাল অন্য কিছু। চোখে আগে চশমা লাগত পজিটিভ প্লাস দেড় , এখন আর লাগে না।একমাত্র দাঁত মাঝে মধ্যেই একটু সমস্যা করে। যদিও খাসীর মাংসের হাড় এখনও চিবিয়ে খায়।আখ বা কলাই চিবিয়ে খাওয়া তো কোন ব্যাপার নয় ।

নবীনের কাজটাই এমন শহর ও গ্রাম জেলার ধনী ব্যাপারী শিল্পপতিদের সাথে পরিচিত হয়ে ওঠা তো স্বাভাবিক। আর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তার সাবলীল সরল মেলামেশা কারণে।এই জেলা সদর অফিসে তখন সাতদিন আসা হয়নি তাই কোন পরিচিতিও নেই।


নিজের একক থাকার মত নিরিবিলি স্বল্প ভাড়ার ঘরের কথা বলতে অফিসের এক ঠিকাদার তাকে বেশ কিছু বাড়ি দেখিয়েছ। তার পছন্দের মত নয়,পরিবেশ ভালো নয়, অফিসের সহকর্মীদের কেউ কেউ সমবয়সের যারা মজা করেছে," একা আছেন সিউড়ির স্টেশন সংলগ্ন এলাকার ভাড়া নিন ভালো থাকবেন। আর শনি রবিবার বাড়ি যেতে ইচ্ছাই হবে না।" কারন শুনে নবীন হেসে অস্থির, এই বয়সে! পাগল! কোন দিন ঐ পথের কথা কল্পনাতে আনি নি।

তিনি স্ত্রী প্রতি যেমন দায়বদ্ধ, স্ত্রীও স্বামী সোহাগীনি এই বয়সেও তারা যেন সুখী পরিতৃপ্ত নব দম্পতি ! ঠিকাদার বলে," স্যার স্টেশনের কাছে আপনাকে যে ঘরে দেখিয়েছে, নিকটে সব ভদ্রলোকদের বসবাস। কিছুটা দুরে মেয়েরা ব্যবসা করে। দিন রাত ওদের অমন পেশা,দেখলেই বুঝবেন ওদের হাবভাব আচরণ আবেদন--"

নবীন একটূ বিরক্ত হয়ে বলে," এত ব্যাখ্যার দরকার কী! আমি কী বাচ্চা ছেলে কিছু জানি না!আপনার দ্বারা হবে না।"


সহকর্মী জুনিয়র রবিন মুখার্জি ,দীর্ঘদিন সিউড়িতে পোস্টিং ।এ শহরে তার ভালো পরিচিতি আছে বলল, "স্যার আমাদের অফিসের খুব ঘনিষ্ঠ আর সৎ পরোপকামী এক ব্যাপারীকে আপনার ঘরের কথা বলায়, কথা দিয়েছেন, একটা ভালো ঘরের ব্যবস্থা করে দেবেন । আজ আপনাকে বিকাল বেশ কটা উনার জানা চেনা বাড়ি দেখাতে নিয়ে যাবে। নবীন এ কদিন অফিসের মধ্যেই গেস্ট রুমে থাকছে। একটাই ঘরে দুটো খাট, নাইট গার্ডের সাথেই একঘরে ভিন্ন ভিন্ন খাটে রাতে তাকে শয়ন করছেন ।


 রান্নাও নাইট গার্ড করছে, নাইট গার্ড একা থাকলেও অবশ্য নিজের রান্না সে নিজে করে।সমস্যা হল,রাতে ঘুমের মধ্যে তার নাক ডাকে, বেশ অস্বাভাবিক ও রীতিমত বিদঘুটে।কখনও সুমদ্র গর্জন,বা বাঘ সিংহের গর্জনের মত আওয়াজ ।আবার মাঝে মধ্যেই ঘুমের মাঝে কেমন কান্না বা চেঁচামেচি সে শুরু করে, তার আওয়াজ শুনলে ভয় লাগে,রীতিমত সাহসী নবীনের, আধা ভৌতিক বা আধা অলৌকিক মনে হয়। বিশেষত এই নির্জন রাতে, অজানা পরিবেশে।


নবীন নাইট গার্ডেকে বলে, " তোমার বৌ কিন্তু সত্যিই ভাগ্যবতী মহিলা, তাই তুমি নাইট গার্ডের চাকরী করে অফিসে রাতে ঘুমাও। আমি তো এ কদিনেই কাহিল!"


নাইট গার্ড লজ্জায় হাসে, "আগে এমন ছিল না স্যার, এখন বেশী শব্দ হয় ,নাকের ভিতরে একটা ছোট অপারেশন করার কথা ডাক্তার বলেছেন , আর কে করছে!"


পলাশ আগ্রওয়াল বয়স তিরিশের কোঠায়,মাঝারি উচ্চতা সৌখিন চেহারা, সোনালী ফ্রেমের চোখে হালকা চশমা, মাথা ভর্তি সুবিন্যস্ত কালো চুল, কাছে এলে মিষ্টি আতরের বা সুগন্ধি সেন্টের মন ভরিয়ে দেয়। পোষাকপরিচ্ছদ চাকচিক্য বা খুব দামী নয় কিন্ত রুচীশীল আর সাচ্ছন্দকর,গলায় সরু সোনার চেন, বুদ্ধিদীপ্ত সদা হাস্যময় মুখমন্ডল। মারোয়ারী তবে তিন চার জেনারেশন এখানেই বসবাস, বড় ব্যাপারী, কাপড়ের আর মনোহারীর হোলসেল ব্যবসা,নিজেদের ট্রান্সপোর্ট ব্যাবসাও আছে। দেখে আর ব্যবহারে কে বলবে এত ধনী! আবার উচ্চ শিক্ষিত ইনজিয়ারিং ডিগ্রি, এম বি এ। কিছুদিন বহুজাতিক কোম্পানীতে কাজ করেছে।সবটাই অবশ্য অভিজ্ঞতার জন্য। টাকা তাদের খায় কে!


সত্তর আশি জন তাদের নাকি কর্মচারীদের বেতন দিতেই মাসে আট ন লক্ষ টাকা খরচ হয়। আর ব্যাঙ্ক ঋণের সুদ আসল,দিতে লাগে ষোল লাখ,এরপর তিন তিনটে পার্সোনাল গাড়ির তেল, ট্যাক্স ইনসুরেন্স, সঙ্গে ইনকাম ট্যাক্স হিজিবিজি কত লাইসেন্স ফি,বিদ্যুত ফোন এত হিসাব করলে মাথা খারাপ, মাসে আয় চল্লিশ পঞ্চাশ লাখ বা বেশী! আর রাজ্য সরকারের একলাখের নিচে বেতনভূক গ্রুপ এ বা বি অভিজ্ঞ দীর্ঘদিনের অফিসারদের, স্যার স্যার মুখে লেগে থাকে সদাই, বিনয়ের অবতার।


এখন আবার একটা রাইস মিল সদ্য শুরু করেছে সেই সুত্রে এ অফিসের সাথে আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। পনের একর জমিতে আবার কলা চাষ করবে।কলা ছাড়াও ,কলা গাছের ফাইবার থেকে সুতো তৈরী হবে, সব প্রযুক্তি রেডি, বাজারও তৈরি। বাংলা ছাড়া মুখে অন্য ভাষা নেই। বারো ক্লাস অব্দি লেখা পড়া বাংলা মাধ্যমে। নামেই মারোয়ারী,বাড়িতেও ওরা বাংলাতেই কথাবার্তা বলে।


পাঁচটায় অফিসে সেদিন পলাশ হাজির,নিজেই ড্রাইভ করছিল মিল্ক হোয়াইট কালার দামী ব্যান্ডের গাড়ি, পনের লাখের কম নয়।সামনের গেট খুলে নবীনকে তার পাশের সিটে বসতে বলল ।নরম গদিযুক্ত সীট একটা মিষ্টি গন্ধে গাড়ির ভিতরটা যেন ভরপুর, এসি দরকার ছিল না তবু হালকা এসি চলছিল। গাড়িতে চাপিয়ে গোটা তিনেক বাড়ি নবীন দেখাল।কোন বাড়ি অপছন্দের নয়, কিন্ত ভাড়া তার হিসাবে বা বাজেটে বেশ বেশী। মোটে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার চার রাত,তার পর গভর্নমেন্টের হোলি ডে, সি এল, ই এল, এসব আছে। গড়ে বারো তের দিন মাসে,রাতবাস এর জন্য পাঁচ ছ হাজার মাসে ভাড়া গোনা সম্ভব না।


খুলে না বললেও ধূর্ত চালাক পলাশ বেশ বুঝল, বলল স্যার দেড় দু হাজার বাজেটে এখন সিউড়িতে ঘর ভাড়া পাবেন না,আর যা পাবেন আপনার মত মানুষ থাকতে পারবে না।


নবীন খুলেই বলে,"মেস বাড়ি থাকতে পারতাম, কিন্ত আমার নিরিবিলি পছন্দ, হৈচৈ আমার মোটেও সহ্য হয় না। আমাদের রাজ্য সরকারের ডি এ বেশ কম,মাইনে যা পাই, ট্যাক্স আর ট্যাক্স বাঁচাতে ফোর্স সেভিংসে অনেক চলে যায়।তারপর আবার দুই ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ । ছেলেটা বেসরকারী একটা কলেজ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে, লাগাম ছাড়া খরচ, আর মেয়ের এগার ক্লাস, ছটা টিউশন ,আর তার রিকশার খরচ তার পর বই খাতা কত কী! এর পর বাড়ির ব্যাঙ্কের ঋন পরিশোধ সেও প্রতিমাসে মোটা টাকা। আর্থিক পরিস্থিতি ভালো নয়,লাগাম ছাড়া খরচে নাজেহাল।" দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে "এতদুরে পোস্টিং এক অভিশাপ, যন্ত্রনা। "


পলাশ বেশ বিব্রত, একটু দরদী মনে আর সংকোচ নিয়ে বলে , "স্যার আমার বলা ঠিক হবে কিনা জানি না,আমাদের একটা ঘর আছে, ফাঁকাই পড়ে আছে।একবার দেখে যেতে পারেন, যদি পছন্দ হয় থাকতে পারেন। ভাড়ার কোন সমস্যাই হবে , ওটা আপনার খুশী, আমাদের কোন দাবী নেই।"

নবীন তৎক্ষণাৎ বলল," চলুন না দেখে আসি। আমি আর আমাদের নাইট গার্ডের সাথে,থাকতে পারছি না।নাক ডাকার বিকট শব্দে, গোটা রাত জেগে থাকতে হচ্ছে।"


পলাশ মনে মনে ভাবে , এক হাড় কৃপনের পাল্লায় পড়েছি , হোটেল লজে দুদিন তো থাকা যায়! তবে নিজের ছাগল কে ঘাড়ে না লেজে কাটবে সে তার ইচ্ছা,তাই সৌজন্যতাবশত চুপচাপ থাকল।

এবার গাড়ী নিয়ে তাদের ঘর দেখাতে গেল। নবীন এই কদিন সিউড়ি এসেছে, তাই সাপ ব্যাঙ কিছুই চেনে না। কেমন গোলক ধাঁধার মত এদিন ও দিন ঘুরিয়ে একটা এমন পরিবেশে নিয়ে এল ,সিউড়িতে এমন নির্জন নিঃশব্দ পরিবেশ আর নিরিবিলি এলাকা আছে কল্পনা করা যাবে না।শহরের কোলাহল বা শব্দ দূষণ কিছুই নেই।

পলাশ বলল, স্যার এটাই আমাদের গোডাউন, আসলে এটা এক বৃটিশ আমল জমিদার বাড়ি ছিল।রায় সিংহ  বাড়ি। বাবা প্রায় আজ থেকে পঁয়তাল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে কিনেছিলেন, তখন থেকেই একই রকম আছে।

তখন দেশ স্বাধীন হয়েছিল, জমিদার প্রথা বিলোপ হল, রায় সিংহ দের বংশধররা, গজপতি আগ্রওয়াল কে সব বাড়িতটাই বিক্রি করে দেয়, সমগ্র এরিয়া দুই একর বা আরও বেশী। মাঝে একদেড় দু বিঘা পুকুর, বাগান , রাধাকৃষ্ণ মস্ত মন্দির, আর জমিদার বাড়ি প্রাচীন বনেদীয়ানা ঐতিহ্যময় নকশা আর কারুকার্য ভরা।

তখন প্রায় সন্ধ্যা অন্ধকার নেমে আসছে,পলাশের তাড়াছিল। তাই আগেকার ভাঙ্গাচোড়া ভগ্ন সেরেস্তা বাড়ি,পরিত্যক্ত বাঘ আর ময়ুরের খাঁচা,নাটমঞ্চ আরও কত ঘুরিয়ে আজ দেখাল না।শুধুমাত্র এই মস্ত বাড়ির ব্যাপারে বলল, উপর নিচে ,ছটি করে বারোটি ঘর, দুতলেই,প্রশস্ত বাথরুম টয়লেট, আর আট ফুটের চওড়া বারান্দা। প্রতিটি কক্ষ পনের ফুট বাই বারো ফুট আর উচ্চতা বারো ফুটের কম নয়। নিচের চারটি কক্ষ বস্ত্র পোষাকের, আর দুটি কক্ষ মনোহারীর গুদাম বা গোডাউন হিসাবেই ব্যবহার হয়।


দ্বিতীয় তলে,নিচের সাদৃশ্য সিঁড়িতে উঠেই পরপর পাঁচটি পূর্ব মুখী,আর এলের মত ঘুরে একটি দক্ষিণ মুখী ঘর। সিঁড়িতে উঠেই প্রথম ,দুটি পূর্বমুখী ঘরে, দুজন করে মোট চার জন এই গোডাউনের কর্মচারী, যাদের বাড়ি দুরে, যাতায়াত দৈনিক সম্ভব নয়, তাদের রাতের শয়ন কক্ষ। তার পরেও দুটি কক্ষ অফিসের কাজে ব্যবহার হত, হিসাব খাতা, দলিল দস্তাবেজ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের লাইসেন্স ছাড়পত্র থাকত স্টীলের কটি আলমারীতে, অর্থ বা টাকাকড়ি অল্প বিস্তর থাকে পুরোন আমলের লোহার সিন্দুকে।কটা চেয়ার টেবিল কর্মীদের কাজ করার জন্য রাখা।

তারপরে পূর্বমুখী পঞ্চাশ ঘরটি ফাঁকাই ছিল,চাবি দেওয়া পড়ে থাকে।সেই কেনার পর থেকেই। মাঝে মধ্যেই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়।ঘরে একটি মূল্যবান বহু প্রাচীন আমলের বড় খাট আছে, বাড়িটির ক্রয় বিক্রির সময়কাল থেকেই।একটি বেশ বড় তৈলচিত্র দক্ষিণ দেওয়াল জুড়ে আছে।দেখে মনে হয় কোন সাধু বা তান্ত্রিক।উগ্রভাব, চোখ গুলো ক্ষুদ্র গভীরে ঢোকা, কেমন জ্বল জ্বল করছে , কালো দীর্ঘ বলিষ্ঠ শরীর মাথায় জটা মুখ মন্ভল গোফদাড়িতে ঢাকা, এমন জীবন্ত ছবি সচারচর দেখা যায় না। দেখলে ভীতু মানুষ ভয়ে চমকে উঠবে।

ঘরের উত্তর দিক চেপে মাঝ বরাবর রাখা আছে বড় খাট ,সাত বাই ছয় ফুট। কালো আবলুশ কাঠের পালিশ এখনও যেন চকচক করে। কে জানে কেন জমিদারের উত্তরাধিকারীরা খাট ও তৈলচিত্র রেখেই গেছেন সে এক রহস্য! এত ভারী খাট আর জব্বর নাড়া চাড়া করতে চারজন লাগে। খাটটি মোটা চাদরে সম্পুর্ন ঢেকে রাখা, ধুলো নোংরার হাত থেকে বিছানা সামগ্রী রক্ষা করতে হয়ত। এ ঘরে পর প্রশস্থ বাথরুম ও টয়লেট,এবার ডানদিকে ঘুরে দক্ষিণ মুখো একটি বড় ঘর, দৈর্ঘ্য পনের ফুটের বেশি মনে হয়। সংলগ্ন আট ফুটের দীর্ঘ বারান্দা।বারান্দায় চার ফুট উচ্চতায় লোহার কারুকার্যময় গ্রীলের গরাদ ।

এ ঘর নবীনের বেশ পছন্দ, অভিভূত, ঘরের দরজার উচ্চতা সাড়ে সাত ফুটে কম নয়, প্রশস্ত সাড়ে তিন ফুট। দরজার ফ্রেম পাঁচ ইঞ্চি বাই চার ইঞ্চি হালকা কারুকার্য বার্মা সেগুনের। আর কপাটের পাল্লা বেশ মজবুত, নকশা কারুকার্যকে ভরা অভিনব সুন্দর।

পশ্চিম দিকের দেওয়ালে দুটো জানালা পরস্পর ছয় ফুট দুরত্বে, আর মাঝে দেওয়াল আলমারি সেগুনের কাঠের ফ্রেম পালিশ করা। আলমারির কাঠের এক পাল্লার কপাট আড়াই ফুট প্রশস্ত চার প্রান্তভাগ বরাবর তিন ইঞ্চি লতাপাতা ও বিবিধ ফুলের নকশা করা,আর মধ্যভাগ দুইফুট জুড়ে আছে কাঠে খোদিত বাঘছাল পরিহিত ত্রিশুলধারী নান্দনিক অপূর্ব শান্ত ধ্যান মগ্ন শিবের মূর্তি ।

জানালা দুটি ও আলমারির উচ্চতা ও প্রশস্ত ছিল সম মাপের।মেঝের থেকে দেড় ফুট উপর শুরু ,আর সাড়ে সাত উচ্চতার দরজার লেভেল অবধি যেন সম রেখায় দৃষ্টিকোণে স্থাপন করা হয়েছিল। আর জানালার ফ্রেম চার বাই তিন ফুট, মাঝের ফ্রেমের কাঠটি ঈষৎ মোটা চার চার মনে হল। উপর নিচের উভয় পাল্লা ভিতর দিকেই খোলার ব্যবস্থা। বেশ প্রশস্ত কক্ষের দেওয়াল গা বরাবর পাল্লা খুললে থেকে যায়। বেশ মজবুত, জানালার ফ্রেমে কুড়ি এম এম গোলাকার লোহার গরাদের রড ছ ইঞ্চি অন্তর অন্তর লাগানো,আড়াআড়ি ভাবে।

পূর্ব দিকে, দরজার বাম পাশে ঠিক পশ্চিম জানালার সম মাপের ও মানের একটি মাত্র জানালা। কক্ষের দেওয়ালের দক্ষিণ পাশে বাথরুম টয়লেট ও উত্তরের পাশে পৃথক কক্ষ।যা অফিস রুম হিসাবেই ব্যবহার হত।

সমগ্র দ্বিতলের মেঝে সুদৃশ্য শ্বেত পাথরের পালিশ করা, বেলজিয়াম পাথর মনে হয় । এ ঘরের সিলিং থেকে, খাটের উপর পুরনো বনেদী আমলের পাখা, আর ঘরের সিলিং এর ঠিক মাঝে কারুকার্যময় মস্ত ঝাড় লন্ঠন এখন অকেজো, আভিজাত্যের অহংকার আর শোভা বর্ধন করে আছে।

এ তো রাজ বাড়ি পলাশ বাবু! নবীন বিষ্ময়ে বলে,তা ভাড়া কত লাগবে!

পলাশ মৃদু হেসে বলে, ভাড়া তো দিচ্ছি না স্যার ! উপরের এই রকম আরও ঘরে যারা থাকে, আমাদের কর্মচারী ,তারা থাকে ভাড়া ছাড়াই। তবে আপনি যদি স্থায়ী ভাবে থাকেন, বিনা ভাড়ায় থাকাটা আপনার সম্মান ইজ্জতে লাগতে পারে , আপনি তাই আপনার ইচ্ছামত ভাড়া দিতে পারেন ।

নবীন বললেন, না মানে আমি ব্যবহার করলে,থাকলে  বিদ্যুতের বিলের খরচ, ঘর পরিস্কার করা,জল এমন সব অনেক আনুষঙ্গিক খরচ হবে,ফাঁকা পড়ে থাকলে হবে না। তাই আমি দু হাজার দেবো, জানি এ বাড়ীর প্রকৃত ভাড়া অনেক।

পলাশ মুচকে হাসল, তাই দেবেন, আমাদের কোন দাবী নেই।

নবীনের ভীষণ পছন্দ, আর সময় নষ্ট নয়,নাইট গার্ডের সাথে এককক্ষে রাতের ঘুম তার হচ্ছিল না।সঙ্গে বিবিধ নাসিকা গর্জনের শব্দ ও ঘুমের মধ্যেই কেমন সব কান্নার শব্দ চিৎকার করে,চমকে ওঠে তাই আর কাল বিলম্ব নয়।

নবীন বলল" মঙ্গলে ঊষা বুধে পা,যেথা ইচ্ছা সেথা যা,বুঝলেন পলাশ বাবু, খণার বচন, কাল সকালেই আমার ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসব।"

পলাশ সম্মত হলেও ,"বিছানার হাল দেখি" বলে মোটা চাদর তুলে দেখল, এতো মোটা চাদর, নিয়মিত ন্যাপথলিন জীবাণুনাশক স্প্রে করাতে পোকামাকর নেই, কিন্ত একটি ধুলোর গাড় আস্তরন সারা বিছানা জুড়ে।পলাশ বলল, "কাল আমার দিয়ে এঘরের সব বিছানা বালিশ তোষক রোদে সকাল থেকেই ছাদে মেলে দিতে বলছি।রোদে ভাজা ভাজা হলে, বিকালে, লাঠি দিয়ে তোষক বালিশ পিটিয়ে ধুলো বের করতে হবে।

 পরিস্কার করতে তো কাচাকাচি করা সম্ভব নয়! আর নতুন দুটো সেট বিছানার চাদর বালিশের ওয়ার, মশারি গোডাউন থেকে ওরা বের করে দেবে।"

নবীন বলল "সেই ভালো! যা দাম হবে আমি দিয়ে দেবো,আর একটু ভালো কোয়ালিটির দেবেন, হোলসেল রেটে একটু কমই হবে নিশ্চয়!" আশান্বিত সুরে নবীন বলল।

"বিলক্ষণ ও নিয়ে ভাববেন না।তবে সকালে মাল পত্র যা আপনার আছে রেখে যান, অফিস শেষে ফিরে এসে পাকাপাকি এখানেই থাকবেন।"

নবীন ভীষণ খুশী,পলাশ তাকে অফিস অবধি গাড়ীতে পৌছে দিলেন। এ বাড়ি যেতে রিকশা বা অটোতে কী ভাবে যাবেন তাও বলে দিল। তবে সাবধানী নবীন তার নিজের ডাইরিতে পথরুট নোট করে নিল।

          (দ্বিতীয় পর্ব)

           দুষ্ট আত্মা

পরদিন যথাযথ সকালে ব্যাগ ও অনুসাঙ্গিক মাল, সকালে রিকশা যোগে ঐ ঘরে নবীন রেখে এল।পলাশ বলে রাখায় ,গোডাউনের কর্মীরা নবীনকে ঘরের চাবি দিল, সহযোগিতার করল।রাস্তা বেশী নয়,অফিস থেকে এক দেড় কিলোমিটার দুর।খামকা কুড়ি টাকা রিকশার ভাড়া!আসার সময়, রিকশায় যেতে যেতেই বিভিন্ন নিশানা , দোকানের নাম , বাঁক কোন দিকে ডান না বাম সব নোট করে ছিলেন ,তার ডাইরীতে। অনেকটা গোয়েন্দা পুলিশের মত। তাই ফেরার সময় তার হেঁটে অফিস ফিরতে অসুবিধা হল না।

নিশ্চিত হল,এ ভাড়া ঘর থেকে অফিসে যাতায়াত খরচ অন্তত আর লাগবে না। খাবার হোটেল ও পথে একটা দেখল, যতদিন নিজে না রান্না করছি বা যদি কোন দিনও না করি,এ হোটেলে খাওয়া যাবে। বড়জোর ঐ ভাড়া বাড়ী থেকে হেঁটে দশ মিনিটের পথ। রাতটায় দরকার হবে ,দিনে অফিসের কাছাকাছি বেশ কটা হোটেল আছে। বারোটার পর একবার এসে খেয়ে আসা যাবে। টিফিনের এখনই ব্যবস্থা করেছে, বাড়ী থেকে আনা মুড়ি , চিড়ে আর এখানে স্থানীয় দোকান থেকে কলা, মিষ্টি ,দৈ যখন যেমন কিনে নেয়।

বিকেল অফিসের পর এদিন যেতে যেতেই একটু অন্ধকার নেমেছিল মার্চের প্রথম দিক। পথে চা খেয়ে যখন ঘরে ঢুকল, ঘরের রূপ অনেক বদল। ওবেলা অফিসে আসার সময় ,ঘর পরিষ্কার জন্য পলাশ আগ্রওয়ালের এক কর্মীচারী ঘরের চাবিটা চেয়ে নিয়েছিল।ঘরে তাই চাবি ছিল না ,বাইরে থেকে লাগানোছিল তালা খোলা ছিল। ঘরে ঢুকে নবীন দেখল ,একটা সোফা, যদিও পুরোন তবে বেশ ভালো। চেয়ার টেবিল, টি টেবিল ঘরে সেট করা আছে। কিছু বিদ্যুতের অল্পসল্প কাজও করা হয়েছিল,একটা টেবিল ল্যাম্প,মোবাইলের চার্জ দেওয়ার প্লাগ। নাইট ল্যাম্প, জলের পাত্র।

কপাট লাগিয়ে একটু ঠেশান দিয়ে সোফায় সবে নবীন বসেছে, ঠক ঠক দরজার আওয়াজ। নবীন দরজা খুলে দেখে এক বয়স্ক মানুষ অপরিচিত , নাম রামু কেয়ার টেকার,বলল বাবু চাবিটা রাখুন, আর কোন অসুবিধা হলে বা প্রয়োজন হলে নিচে তলায় আমি থাকি,কেয়ার টেকার রামু বললেই দেখিয়ে দেবে।

নবীন ভীষণ খুশী ও প্রসন্ন মনে বলল, পলাশ বাবু আর তোমাদের ব্যবহারে সত্যি আমি খুব কৃতজ্ঞ।বিছানার নতুন চাদর বালিশের ওয়ার, নতুন মশারী পাপোষ ,টেবিল চেয়ার ,সোফা সব কিছু,এমন কী মোবাইলের চার্জ দেবার প্লাগ কিছু আর বাকী নেই!এতোটা আমিও ভাবি নেই, ভীষন ভীষণ সজ্জন মানুষ উনারা।

সে আর বলতে! আমাদের কর্মচারী ভাবেন না যেন আপনজন, বয়স্ক তাই পলাশ বাবু আমাকে কাকু ডাকেন,আপনি বলেন। একটু যেন নবীন কে তুমি সম্বোধনে ধাক্কা দিল।

নবীন মনে অনুভব করল বলে মনে হল না।তাই বলল আচ্ছা ভাই বলতে পারবে , রাত আটটায় খেতে গেলে সামনের সুরুচী হোটেলে কি খাবার পাবো?না আরও রাতে গেলে ভালো!


রামু বলল,"আর একটু দেরীতে গেলেই ভালো,নটা বা তার পরে যাবেন, নচেৎ হয়ত একটু বসতে হবে। আর হ্যাঁ, আপনার ঘরের নাইট ল্যাম্প আর পুরোন সুইচ বোর্ডের কিছু কাজ করতে হয়েছে ,তারপর তার প্লাগ বিদ্যুতের উপকরণ,সঙ্গে কাজের জন্য ইলেকট্রিক মিস্ত্রির মজুরী, ফদ্দটা আমায় দিয়ে গেছে, চারশো বারো টাকা।ফদ্দটা নিজে রাখবেন ! ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কাল সকালে আসবে, দিয়ে দেবেন। না ফদ্দ টা আমি রাখব , টাকাটা আমাকে দেবেন! আমি দিয়ে দেবো!"

নবীনের মনে হল একটু বেশী পড়ে গেল, তবে এদের সৌজন্যতা সে আপ্লুত তাই না করলেন না। টাকা মিটিয়ে বলল, "আর পলাশ বাবুদের কত টাকা হল! এই সব নতুন বিছানার চাদর বালিশ ওয়ার মশারী পা পোষ !"

"ওটা ছোট বাবু এ নিয়ে আপনার সাথে নিজে কথা বলবেন। "

"সোফা টেবিল চেয়ার এ সব মাল পত্র!ভাড়াও তো লাগবে!"একটু যেন উদ্বিগ্ন ফালতু কিছু টাকা খরচ! তবে তার ভ্রম ভেঙ্গে রামু হেসে বলল "মাথা খারাপ! এসব উনাদের কত যে এখন ওখানে পড়ে আছে তার হিসাব নেই। ওর জন্য কিছু লাগবে না,যতদিন আছেন ব্যবহার করুন।"এরপর সে বাইরে থেকে কপাট টেনে দিয়ে চলে গেল। একবার পলাশ বাবুকে কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানোর খুব দরকার।

ফোন করল, কিন্ত ফোন বিজি।

কপাট ভিতর থেকে এঁটে এবার মোবাইল ঘাঁটছিলেন।

কত সব সোস্যাল মিডিয়া,ফেসবুক থেকে ইউ টিউব হোয়াটস্আফ ,গুগল সার্চ করে ,খবর সিনেমা আর বি এফ কিছুই বাদ নেই।

 

এখানে তার মন অস্থির করে ওঠে, নিজের বাড়িতে থাকলে,ভোড়ের সময় বাথরুম থেকে এসে,এই বয়সে স্ত্রী মালতীকে নিয়ে একটু নিজের পৌরুষের ক্ষমতাটা ঝালিয়ে নেয়। সবদিন নয় কয়েকটা দিন বিরতি থাকে কিছু বিধিনিষেধ কিছু সাবধানতা। স্ত্রীও বড় পতি সোহাগিনী, আর স্বামীর প্রতি এ বিষয়ে দরাজ। নবীন পঞ্চাশ আশপাশ আর মালতী দশ বছরের ছোট, তাই তার স্ত্রীর শারীরিক চাহিদা এখন বেশ তীব্র। সুস্থ সবল স্বামীতে সে তৃপ্ত, বয়স দশ বছর বড় ফ্যাক্টর নয়। আসল হল সেটা,তাদের মানসিক ও শারীরিক পরস্পরের মিলজুল, তাদের এটা একশ শতাংশের কাছাকাছি।

নির্জন পরিবেশ একা মোবাইল তার সঙ্গী না হলেই মালতী,এই বয়সেও স্বভাব যেন সেই যোল বছরের মত। একটু ---

 পলাশের ফোন এল, "সব ঠিক আছে স্যার!"

"কী বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেবো, আমি ভীষণ খুশী। কালকে দেখা হবে।"

"সরি স্যার কালপরশু আমি ভীষণ ব্যস্ত, রাইস মিলের মেশিন আসবে, অ্যাসেমবেলিং ইনস্টলেশন হাজার কাজ ,আবার কোম্পানীর স্কিল মিস্ত্রি তো পরে আর পাবো না! দুটো দিন কারখানা সাইট আমাকে থাকতেই হবে।দুবরাজপুরেই ব্যস্ত থাকব। 

"বুঝেছি ,আপনার ঐ চাদর বালিশ ওয়ার মশারী কিছু পেমেন্ট বাকী আছে ।"

"ওনিয়ে ভাববেন না স্যার, শুক্রবার বিকেলে দেখা করার চেষ্টা করছি।"

"আমি তো তিনটের পর গাড়ি ধরে আমাদপুর যাব কাঞ্চনজঙ্ঘার ধরতে হবে। নচেৎ বাড়ি ফেরা দায়।"

"ওকে, স্যার বাড়ি থেকেই ঘুরে আসুন, সোমবার দেখা করব। আর সামান্য পেমেন্ট নিয়ে ভাবা দরকার নেই। কেমন আমাদের ঘর লাগছে, পছন্দ কীনা সেটাই আসল ।"

নবীন আবার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানা বলল ভীষণ পছন্দ।

এবার বাড়ির ফোন, মালতী ফোন ধরলে আর ছাড়তে চায় না। ছেলেটা বাইরে থাকে পড়াশোনার জন্য।আর মেয়ে প্রতি সন্ধ্যায় টিউশন থাকে।একা মনমরা মালতী ঘরে মন বসে না।মোবাইল নেশা নেই,একটু টিভিতে হিন্দি সিরিয়ালের নেশা। এই সময়টা তেমন সিরিয়াল থাকে না, তাই দিন ফোন করবে। সব শুনে মালতী খুশী ,শুক্রবার বাড়ি এলে আরও জানবে। এভাবেই কখন নটা হয়ে যে বেজে গেল, তাই এবার হোটেলে খেতে যেতে হবে, ঘরে চাবি তালা লাগিয়ে নিচে নামল।

রাত তখন প্রায় দশটা হোটেলে খেয়ে যখন নবীন বাবু ভাড়া ঘরে ফিরছিলেন ,দোতলার দুটো ঘরে পলাশ আগ্রওয়াল দের চার কর্মচারীরা একসাথে একঘরে বসে নিজেদের মধ্যেই তখন আড্ডায় ব্যস্ত। বয়সে বেশ তারতম্য থাকলেও যেন সব ধরনের আলোচনা ! নবীন নিজের পদমর্দযা অনুভব করে, একটু দুরত্ব রাখতে চায়। এদের মালিক আমাকে স্যার স্যার করে, তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে এদের সাথে আলাপ পরিচয় দরকার নেই।

ঘরে ঢুকে দরজার খিল লাগিয়ে আজ আর মোবাইল ঘাঁটঘাটি নয়,পোষাক বদল করে সোজা বিছানায় উঠল। মার্চের প্রথম দিক, বাইরে তবু একটা শীতের আমেজ, এত রাতে হোটেল থেকে ফেরার সময় বেশ অনুভব করলেও, দরজা জানালা বন্ধ থাকার কারনে ঘরের ভিতরে শীতের কোন রেশ নেই। তবে গরম নেই পাখা চালানো দরকার নেই।তার স্বভাব মত পড়নে শুধু লুঙ্গি, আর শীত না থাকায় খোলা গায়ে একটা হালকা চাদর নিয়ে শুলো।

একটু পর গরম অনুভব করার কারনে চাদর খুলে ফেলেছিল ,ঘরে নীল নাইট ল্যাম্প, চোখে পড়েছিল না। ক্লান্ত অবসন্ন দেহ গত দুদিন ,অফিসের নাইট গার্ডের নাকের গর্জনের কারনে ঘুম বার বার ব্যহত, তাই নিদ্রায় আচ্ছন্ন হল।

রাত সাড়ে তিনটা চারটায় তার ঘুম ভাঙ্গল, সেটা তার অভ্যাসগত , বাথরুম যেতে হয়।একটু ঠান্ডার জন্য গেঞ্জিটা পড়ে , তার ঘরসংলগ্ন পর্ব দিকের বাথরুমে গেল, কাজ মিটিয়ে ,বাথরুমে লাইট নিভিয়ে এরপর

ঘরে আসার সময় আলো আধাঁর বারান্দা দক্ষিণ দোয়ারি বড় কক্ষের দরজা দেখল খোলা , ভিতরে হালকা মৃদু লাল আলোর আভা , আর ঐ কক্ষের দরজার বরাবর সম্মুখে বারান্দার রেলিং ধরে এক দীর্ঘদেহী ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ,দৃষ্টি দক্ষিণ মুখে, মনে হয় ধূমপান করছিলেন। সারা বারান্দা এক প্রসিদ্ধ ব্যান্ডের তামাকের গন্ধের মাদকতায় যেন ম ম করছে। পরনে নাইট গাউন আবছা আলো আধাঁরে রং ঠিক ঠাহর হয় না, তবে পোষাকে বনেদী আনা রয়েছে, নবীন তাকিয়ে দেখে ধীরে সুস্থে নিজের ঘরে ঢুকে কপাটে খিল লাগাল। ভাবল যেই হোক আগামীকাল আলাপ করব।

ঘুম বেশ গাড় হয়েছিল তাই ক্লান্তি অনেকটা দুর হয়েছিল। বাড়িতে থাকলে এ সময় ভোড় রাতে মাঝে মধ্যেই স্ত্রী মালতীর সাথে মিলিত হয়। নরম বিছানা নিরিবিলি সাত বাই ছয় ফুট খাট।পলাশের সৌজন্যতায় কর্মচারীরা তার ঘরে মনোরম সুগন্ধি আতর বা সেন্ট ঘরে স্প্রেরে করেছিল,যার আবেশ ছিল। 

ষোল আঠারো বছরের কিশোরে উন্মাদনা যেন মাঝে মাঝেই এই বয়সেও তার জেগে ওঠে আজও তাকে তাতিয়ে তুলছিল।একাকীত্বের দুষ্ট স্বভাব তাকে গ্রাস করেছিল, সংযত থাকতে পারেনা। বিবস্ত্র শরীরে বিছানায় নরম স্পর্শে উত্তেজনায় কিছুক্ষণ আরাম উপভোগ করে, অবশেষে কিছু শক্তি ক্ষয় করে ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে আবার সে সুখনিন্দ্রায় আচ্ছন্ন হল।

দীর্ঘ নিদ্রার পর সহসা নবীন ঘুম ভেঙ্গেই দেখল মোবাইলে আটটা চল্লিশ। তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। লুঙ্গি পড়ে গেঞ্জিটা পড়ে নিল ,অপরিস্কার শরীর কেমন ঘিন ঘিন করছিল। 

 শরীর আর এই পড়নের লুঙ্গি গেঞ্জিটা এখনই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দরকার, একেবারেই স্নান সেড়ে শুদ্ধ করে নেবে। এইভাবে নবীন এবার ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে,গামছা,গায়ে মাখার সাবান,আর শার্ফের প্যাকেট, নিয়ে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে বাথরুম গেল।পাঁচ মিনিট দাঁত ব্রাশ, তারপর দীর্ঘদিনের তার স্বভাবে খেঁক খেঁক জোড়াল শব্দে গলা প্রথম পরিষ্কার করল, তারপর জল ভরে ভরে নাকের ভিতর হাত ঢুকিয়ে যতদূর অবধি সম্ভব বার বার নাকের ভিতর ধুয়ে পরিস্কার করল যা পাক্কা পনের মিনিট সময় লাগে। গামছা পড়ে, লুঙ্গি ও গেঞ্জি বালতিতে শার্ফের জলে ডুবিয়ে রেখে, টয়লেট গেল। তারপর সারা শরীর পরিস্কার করে সাবান ঘষে ঘষে স্নান করল।এতবড় বাথরুম চারদিকে দেওয়াল জুড়ে বেলজিয়াম কাচের আয়না।নিজের প্রতিবিম্ব, চারদিকেই দৃষ্ট হচ্ছিল। নকশা করা বহু মূল্যবান আয়না, এমন কারুকার্যময় বাথরুমে! স্নান করতে করতে ভাবছিল!

যেমন ধনী, তেমন সৌখিন ছিলেন এই জমিদার, নবীন ভাবছিল,কত খরচ! হিসাবী নবীন টাকার হিসাব করেই জীবন কাটালো, কিন্ত সাধারণ বেতনভূক এই রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের এসব করে লাভ হয় না।নবীন সৎ কৃপন হিসাবী কিন্ত ঘুষ খায় না।তবে একটু সুযোগ সুবিধা নেয় বড়জোর, নগদে নয়।তবু অন্যের মর্জির উপর, দাবী নেই।

স্নান সেড়ে লুঙ্গি গেঞ্জি কেচে বাথরুমের নিকট দক্ষিণ মুখী বারান্দার রেলিং এ ভিজে পোষাক শুখোনোর জন্য মেলে দিল। এবার ঘরে গিয়ে ভিজে গামছা পাল্টে অন্য শুখোনো পরিস্কার কাচা লুঙ্গি গেঞ্জি পড়ে,দক্ষিণ বারান্দার রেলিং এ ,ভিজে গামছা মিলতে এল। কিন্ত অবাক বিস্মিত হয়ে দেখল লুঙ্গি গেঞ্জি উদাও, উদ্বেগ দুশ্চিন্তায় রেলিং থেকে ঝুঁকে দেখল ,হাওয়া নেই তবু ভিজে ভারী পোষাক এভাবে নিচে একতলার উঠানে পড়ল কী করে !



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror