তিতাস ( পর্ব -৭ )
তিতাস ( পর্ব -৭ )
যাই হোক অবশেষে গল্পের বেশ অনেকটাই শেষ করে ফেলেছে দীপমাল্য। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাস্তার দিকের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় দীপমাল্য। আকাশে একটা হালকা মেঘ জমেছে, একটা মিস্টি হাওয়া চলছে, হাওয়াটা এতটাই শিতল যে মনে হচ্ছে কোথাও বৃষ্টি হয়েছে বা এখানে বৃষ্টি হবে। হাওয়াটা বেশ ভালোই লাগছিল কারণ একটা চাপা গরম পড়েছিল। লাগাতার মাস চারেক একফোটা বৃষ্টি হয়নি একটু বৃষ্টি হলে পরিবেশটা কিছুটা শিতল হবে। ঘড়িতে তখন নয়টা পনেরো। দীপমাল্য ঠিক নটার মধ্যে রাতের খাওয়া সেরে ফেলে এটা ওর বরাবরের অভ্যাস তারপর এই ব্যালকনিতে কিছুটা সময় অতিক্রম করে কোনদিন খাতা পেন নিয়ে বসে আবার কোনদিন শুয়ে পরে। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা বার করে সিগারেট ধরাতে যায় হঠাৎ তিতাসের মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। লাইটারটা ধরিয়ে আবার নিভিয়ে দেয়, সিগারেটটা প্যাকেটে ঢুকিয়ে ফতুয়ার পকেটে সেটাকে রেখে দেয়। তারপর নিজেই মনে মনে হাসে মথাটা চুলকে নিয়ে মনে মনে বলে আমারযে ঠিক কি হলো আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা মাত্র দুইদিনের আলাপে আমি কি করে এতটা ওরউপর নির্ভরশীল হয়ে পরলাম। এই সব সাতপাঁচ ভাবছে হঠাৎ সেলফোনটা বেজে ওঠে। ব্যালকনি সংলগ্ন ঘরের বিছানায় রাখাছিলো গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসে, আননোন নাম্বার ফোনটা রিসিভ করে আবার ব্যালকুনিতে আসে সে হ্যালো কে বলছেন? অপরপ্রান্তথেকে উত্তর আসে আমি তিতাস বলছি। কয়েক মুহুর্ত বাকরুদ্ধ হয়ে থেকে বলে হা বলো আগামীকাল আসছোতো? তিতাস বলে সেই কারণেই ফোন করা সকালে একটু সমস্যা হয়ে যাবে আমার একটু দেরি হবে, দীপমাল্য একটু মজা করে বলে কতটা? তিতাস বলে মানে? দীপমাল্য বলে মানে কতটা দেরি হতেপারে? তিতাস বলে এই সারে বারোটা থেকে একটা। দীপমাল্য বলে চলবে কারণ রাধুনিতো আমি ঐ টুকু সময় আমার লাগবে। তিতাস বলে মানে? দীপমাল্য বলে তুমি ধিরে সুস্থে এসো আমার কোন সমস্যা নেই একটু থেমে আবার বলে আচ্ছা তুমি কি খেতে ভালোবাসো মাছ না মাংস? তিতাস দীপমাল্যর সমস্যাটা বুঝতে পেরে বলে আপনার কোনটা রাধতে সুবিধা হবে? দীপমাল্য মুখফসকে বলে ফেলে মাংস হলেই সুবিধা হয় তারপর সেই ভুলটাকে চাপা দিতে বলে তবে মাছটাও আমি রান্না মন্দ করিনা তুমি যেটা ভালো খাও আমি সেটাই তোমাকে খাওয়াবো। তিতাস বলে আমাকে নিয়ে আপনার এতো না ভাবলেও চলবে আমি সবটাই ভালো খাই গ্রামের মেয়ে শাক সবজি, মাছ মাংস সব কিছুতেই অভ্যস্ত তাই আপনার কোন সমস্যা হবে না। নিচথেকে এক ভদ্রমহিলার কন্ঠ ভেসে আসে তিতাস নিচে এসো খাবার বারছি। তিতাস বলে হা মাসিমা এই আসছি, দীপমাল্যকে বলে শুনলেনতো মাসিমা কলিং উনি আবার দেরি পছন্দ করেন না আগামীকাল আপনার সাথে কথা হবে এখন তাহলে রাখি কেমন গুড নাইট। দীপমাল্য কিছু বলবার অবকাশ পেলোনা সুধু পেত্যুত্তরে জানাল গুড নাইট।
ফোনটা কেটে গেল তিতাসের সাথে কথা বলে একটা আলাদা আনন্দ পাচ্ছিল দীপমাল্য। কি চঞ্চল সভাভ অথচ কত পরিপাটি করে কথা বলছিল মেয়েটি, দীপমাল্যর মনে হলো যদি আর কিছুটা সময় ওর সাথে কথা বলা যেতো তাহলে বেশ ভালো হতো। তিতাসের নাম্বারটা সে ফোনে সেভ করে নেয়। দীপমাল্যর ফোনে খুব কম লোকের নাম্বার সেভ করা রয়েছে ওর মন্তব্য যার দরকার হবে সে ফোন করে নেবে খামোখা ফোনের জায়গা ভর্তি করে লাভ কি? নাম্বার টা সেভ করে গিয়ে লেখার টেবিলে বসে সে। আরএকটা প্রজেক্টে সে কাজ করছে এটা একটা মাসিক পত্রিকার প্রজেক্চমট ধারাবাহিক একটি গল্প। প্রতি মাসে একটি করে পর্ব ছাপা হয় এখন ধারাবাহিকের বিয়াল্লিশ তম পর্ব চলছে আগামী সপ্তাহে এটার ডেলিভারি তাই কিছুটা এগিয়ে নিতে হবে। তিতাসের সাথে কথা বলে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গিয়েছে দীপমাল্যর আর লেখার জন্য একটা চনমনে মনের প্রয়োজন তাই সুযোগটাকে হাতছাড়া করা চলবে না যতটা এগিয়ে রাখা যায় আরকি। লিখতে লিখতে ঘন্টা দুয়েক কেটে গিয়েছে পর্ব প্রায় শেষের পথে আর ভালোলাগছেনা লিখতে একটু ঘুমঘুম পাচ্ছে তার। কাকা এখন বাড়ি চলে গিয়েছে এক কাপ কফি হলে হয়তো লেখাটা শেষ হয়ে যেতো কিন্তু নিজে করে খেতে ইচ্ছে করছেনা তার। খাতা পত্র গুছিয়ে বিছানায় গিয়ে ওঠে সে। ঘুমাবার আগে সে তার ফেসবুক পেজটা একটু ঘেটে দেখে তার অনুসরণকারিদের সাথে একটু হায় হ্যালো করে তবেই ঘুমাতে যায়। প্রতিদিনের মতো আজো তাই করছিল হঠাৎ ভাবে তিতাসকে একটা ফোন করলে হয়না? এই ভেবে সে পেজ থেকে বেড়িয়েও আসে নাম্বারটা বার করে ডায়াল করতে গিয়েও থেমে যায় সে। ঘড়িতে প্রায় বারোটা বাজে। দীপমাল্য ভাবে এতো রাতে একটা মেয়েকে ফোনকরা ঠিক হবেনা আগামী কালতো দেখা হচ্ছেই তখন না হয় কথা হবে। দীপমাল্য কিছুতেই বুঝতে পারছেনা ওকি তাহলে ধিরেধিরে তিতাসের প্রতি দুর্বল হয়ে পরছে? নানান চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন ঠিক কটা বাজে কিছুই মনে নেই তার।

