সরস্বতী বিদ্যালয়
সরস্বতী বিদ্যালয়


আর কিছুদিন পরেই সরস্বতী পুজো।সেই প্রসঙ্গে অনেক দিন আগেকার একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে গেলো। যদিও তার সাথে সরস্বতী পুজোর সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
এক দশকের ওপর হয়ে গেলো আমরা শ্যামবাজারের পাট চুকিয়ে বাসা বেঁধেছি হাতিয়াড়ার কাছে। জায়গাটা কলকাতার বাইরে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা কলকাতার মধ্যে পড়ে।প্রথম প্রথম এখানে আসার পর মন বসেনি একেবারে।মনে হতো যেনো কোথায় এসে পরলাম।দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত শহুরে গন্ধমাখা জীবনে যেনো অতর্কিতে ঢুকে পড়েছিল একরাশ ঘুঁটে বিচালির মেঠো হাওয়া। এপাশে ওপাশে খেয়াল খুশি মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহুতলের বাইরে জীবনযাত্রা যেনো থমকে ছিল বেশ কিছু বছর আগের যুগে। বুঝেছিলাম কলকাত্তাইয়া হালচাল এখানে একেবারেই বেমানান। মানুষজনের গড় শিক্ষার হালও ছিল বেশ উদ্বেগজনক।
আস্তে আস্তে অনেক মানুষের সঙ্গেই বহুতলের চৌহদ্দির বাইরে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। অনেকের সাথেই কথা বলে জেনেছিলাম এই অঞ্চলে সরস্বতী বিদ্যালয় নামে একটি স্কুলে এখানে অনেকের ছেলেমেয়ে পড়ে। ধারে ভারে কলকাতার কোনো নামি স্কুলের সাথে তুলনাতেই আসে না।তবু এখানের মানুষের কাছে সেটাই অনেক। তখনও এই অঞ্চলে অনেকের কাছে পড়াশোনা শেখা শুধু বিলাসিতা মাত্র। পড়ুয়া থেকে শুরু করে তাদের মা - বাবাদের কাছে অব্দি সেই সরস্বতী স্কুলের অনেক গল্প শুনেছি। যদিও আসার পর পর তেমন ভাবে স্কুলটিকে নিজের চ
োখে দেখার সুযোগ বা আগ্রহ কোনোটাই তৈরি হয়নি।
তেমন সুযোগ ঘটল প্রায় বছরখানেক বাদে। আমাকে একটি বিশেষ প্রয়োজনে একদিন যেতে হয়েছিল সেই স্কুলের কাছে একটি বাড়িতে। স্কুলটি একটু দূরেই ছিল আমাদের বাড়ি থেকে। চেনা জানা মারফত খবর পেয়েছিলাম সেই স্কুলের কাছে একটি বাড়ির নিচে নাকি হারমোনিয়াম, তবলা ইত্যাদি সারানোর একটা দোকান আছে। বাড়ি পাল্টানোর সময় জিনিসপত্র এধার ওধার হবার ধাক্কায় মায়ের সাধের হারমোনিয়ামটার বেশ কিছু জায়গায় চোট আঘাত লেগেছিল। অনেকদিন ধরেই এমন দোকানের সন্ধানে ছিলাম। যাই হোক, দোকানের খোঁজ নিতে গিয়ে রাস্তায় লোককে জিজ্ঞেস করতে করতে পৌঁছে গেছিলাম গন্তব্যে । দোকানটিও ছিল খাসা। সেই যে সারিয়ে দিয়েছিল তারপর থেকে আজও একবারের জন্য খারাপ হয়নি। জিজ্ঞেস করেছিলাম - 'আচ্ছা দাদা সরস্বতী স্কুলের সামনে আপনার দোকান বলাতে সবাই একবাক্যে এই দোকানটা দেখিয়ে দিল । তা স্কুলটা কোনটা?' তিনি সাথে সাথে রাস্তার উল্টো পাড়ের একটি নোনা ধরা রং ওঠা স্কুলবাড়ির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন - 'এই তো দিদি। আমার মেয়েও তো এই স্কুলেই পড়ে।' লক্ষ্য করে দেখলাম সত্যিই তো। স্কুলই বটে। আরেকটু কাছে গিয়ে নামটা পড়েই বেশ অবাক হলাম। দেখলাম কোনরকমে তার হলুদ দেওয়ালে অস্পষ্ট হরফে লেখা - 'শরৎ স্মৃতি বিদ্যালয়' মানে ওই লোকের মুখে মুখে শোনা সরস্বতী বিদ্যালয় আর কি!
ভাবুন দেখি, কি কান্ড!