Manasi Ganguli

Abstract

5.0  

Manasi Ganguli

Abstract

সরি_ইয়ার

সরি_ইয়ার

4 mins
588


     হারিয়ে ফেলা বইটা আবার ফিরে পাওয়ায় রিনা যেন সাত রাজার ধন পেল মনে হল। প্রচন্ড আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল সে। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মনে পড়ল এই বইটার জন্য প্রিয় বন্ধু সুমিতাকে ও কত কি বলেছে। বেচারা চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে ছলছল চোখে বিদায় নিয়েছিল সেদিন ওর বাড়ি থেকে। "ছিঃ ছিঃ,এ আমি কি করেছি" মনে মনে ভাবে রিনা। "নাঃ,আমাকে সুমিতার কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে,কিন্তু কিভাবে যে ক্ষমা চাই বড় লজ্জা করছে যে। সেদিন ওর সঙ্গে এত রূঢ় ব্যবহার করলাম তারপর থেকে দুজনের বাক্যালাপও খুব কমই হয়,প্রায় বন্ধই বলা যায়। "কি যে করি!" মনে মনে অশান্তি চলছে ওর। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মনে হয় হঠাৎ সুমিতাকে একটা চিঠি লিখে ওর কাছে বরং ক্ষমা চেয়ে নেবে সে। এই ভেবে গুছিয়ে একটা চিঠি লিখে ফেলল রিনা। একটু দূরেই থাকে সুমিতা,"ওকে চিঠি পাঠালে সবাই হাসাহাসি করবে না তো আবার? আর তাছাড়া আজকাল আর কেউ চিঠি লেখেও না,সে চিঠিই বা কবে পৌঁছাবে কে জানে?" ভাবে রিনা। 'কি করি, কি করি' করে ওর হঠাৎ মনে হয় "চিঠিটা বরং ওকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিই,তাহলে তখনই পেয়ে যাবে ও।" ভাবা মাত্রই চিঠিটা টাইপ করতে বসে গেল ও নোটপ্যাডে,ওখান থেকে কপি-পেস্ট করে হোয়াটসঅ্যাপে ছেড়ে দেবে। একমনে টাইপ করে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে দেখে একটা √। অস্থির হয় রিনা,"সুমিতা হোয়াটসঅ্যাপটা খোল,নেট অন কর" বলে মনে মনে। নিজের লেখা চিঠি পড়ে বারে বারে। ও লিখল----

  

সরি ইয়ার,


    একথা বলতে আমার বড়ই লজ্জা তবু স্বীকার আমাকে করতেই হবে। আমার বিবেকের দংশন আমাকে একমূহুর্ত শান্তি দিচ্ছে না। তাই যতই লজ্জার হোক তা স্বীকার করে আমি আজ হালকা হতে চাই। তোর ওপর আমি যে অন্যায় করেছি,যদিও ভুলবশতঃ,তার জন্য তোর আমার 'পরে অভিমান করা খুবই স্বাভাবিক। কতদিনের বন্ধুত্ব আমাদের,আর তোর সাথে এই ভুল বোঝাবুঝিতে তুই আমার প্রতি কত নির্লিপ্ত হয়ে গেছিস যা আমাকে খুব পীড়া দেয়।

     আমার কাছ থেকে সুস্মিতা বন্দোপাধ্যায়ের 'কাবুলিওয়ালার বাঙালী বউ' বইটা তুই পড়তে নিয়েছিলি বা বলা ভাল আমিই তোকে পড়তে দিয়েছিলাম,পড়ে আমার খুব ভাল লেগেছিল বলে। তোরও বইটা পড়লে ভাল লাগবে এই ভেবেই দিয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ একদিন বইটার গল্পটা আমার খুড়তুতো দিদিকে বললে সে পড়তে চাওয়ায় আমি আমার বুককেসে বইটা খুঁজে না পেয়ে ভাবছি কোথায় রাখলাম, খুব অস্থির লাগছিল। তুই তো জানিস বই আমার প্রাণ, তারপর মনে পড়ল, তোকে বইটা আমি পড়তে দিয়েছিলাম, আর তখনই তোকে ফোন করি কিন্তু কিছুতেই তোর লাইন লাগছিল না আর তাতে আমি আরো অস্থির হয়ে পড়ি। তারপর যখন তোকে পেলাম, বইটার কথা বলতেই তুই যেন আকাশ থেকে পড়লি। আমাকে কেবলই বোঝাবার চেষ্টা করতে লাগলি যে বইটা তুই আমায় ফেরত দিয়েছিস, তার জন্য কত উদাহরণ দিতে লাগলি, আমি নাকি বিছানায় শুয়ে সেদিনের কাগজ পড়ছিলাম তখন, তখন নাকি বেলা ১১টা ১১.৩০টা হবে আর তাতে আমার ভেতর ভেতর উষ্মা আরো বেড়ে যাচ্ছিল। আমি হয়তো সেদিন তোর সাথে একটু উগ্র ব্যবহার করে ফেলেছিলাম আর রাগের মাথায় তখন অত খেয়ালও করিনি, কিন্তু আজ সেদিনের কথা মনে পড়লে তোর জল টলটল চোখদুটো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সত্যি বলছি,বিশ্বাস কর,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। সরি ইয়ার,আমার খুব অন্যায় হয়ে গেছে,আর রাগ করে থাকিস না, আমার ভুল, আমার অন্যায় আমি আজ স্বীকার করে নিচ্ছি। তুই আমার প্রতি এমন ঠাণ্ডা থাকিস না আর, আবার আগের মত মিলেমিশে, হেসেখেলে কাটাই চল।

   লজ্জার কথা আর কি বলি বল, তুই তো জানিস, খবরের কাগজ পড়া, শব্দছক করা, না পারলে পরের দিনের কাগজ দেখে মেলানো এ আমার নেশার মত,আর কোনোদিন কাগজ পড়া না হলে আমি পুরনো কাগজও পড়ি, আর তুই সেদিন বই ফেরত দিয়েছিলি এখন আমার পরিষ্কার মনে পড়ছে, অবশ্যই বইটা ফেরত পাবার পর। গতকাল আমি পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি করতে গিয়ে তার ফাঁক থেকে বইটা খুঁজে পেলাম। কি যে আনন্দ হল তখন, মনে হল যেন পরশপাথর পেয়েছি। ভাগ্যি আমি নিজে বিক্রি করতে গিয়েছিলাম। বিক্রি করার সময় একটু নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়ে হঠাৎ পেয়ে গিয়ে আনন্দে যেন পাগলের মত অবস্থা হল আমার আর তারপরই তোর কথা মনে পড়ল। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যেতে লাগল। সেদিনের তোর কোনো কথাই শুনতে চাই নি, ধরেই নিয়েছিলাম তুই ইচ্ছে করেই বইটা ফেরত দিস নি। আজ আমি মরমে মরে যাচ্ছি রে সুমিতা তোকে ভুল বোঝার জন্য,অবিশ্বাস করার জন্য,তাই আমাকে আজ বলতেই হবে,আমাকে আমার ভুল স্বীকার করতেই হবে,তা না হলে আমি কিসের বন্ধু তোর,কিসের মানুষ। এত কিছুর পরও আমি যে তোকে ভালবাসি রে আর মানুষ হিসাবে এটুকু বিবেক তো আমাদের সকলেরই থাকা উচিৎ,তাই না,বল।

   যাই হোক, তুই আমার ওপর রাগ করে, অভিমান করে আর থাকিস না বন্ধু, দেখা হলে অমন ঠাণ্ডা চোখে আর তাকাস না রে আমার দিকে। অত নির্লিপ্ত হয়ে আর কথা বলিস না রে, আমার ভেতরটা খানখান হয়ে যায়। জানি না অন্য কেউ হলে আমায় ক্ষমা করতে পারত কিনা কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস তুই আমায় বুঝবি, আমরা দু'জনে দু'জনকে ভালবাসি যে, তাই না? বল। ফিরে আয় বন্ধু, আমাদের বন্ধুত্ব আবার আগের মত ঝলমল করে উঠুক। আর যদি তুই আমায় ক্ষমা করতে নাও পারিস, তবু বলব আজ আমার ভুল, আমার অপরাধ স্বীকার করতে পেরে নিজেকে বেশ হালকা লাগছে, বিবেকের কাছে আজ আমি পরিষ্কার।

   আবারও বলছি, সরি ইয়ার, ফিরে আয় পুরনো সেই বন্ধুত্বে। পুরনো দিনের ভুল বোঝাবুঝিকে পিছনে ফেলে আমরা আবার মিলি আগের মত। তোকে ফিরে পেলে তবেই আমার শান্তি, আমার মনের মেঘ কেটে ঝলমলে সূর্যের দেখা মিলবে সেখানে। আমার কাতর ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে আয়রে সুমিতা, ফিরে আয়।❤❤❤❤❤

                                       রিনা


    সারাদিন ছটফট করে কাটল রিনার, বারেবারে হোয়াটসঅ্যাপ চেক করছে সে, নাঃ দেখেনি সুমিতা। রাতে অশান্তি নিয়ে রিনা ঘুমাতে গেল,বালিশের পাশে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে। সকালে ঘুম ভেঙ্গেই হোয়াটসঅ্যাপ চেক করে রিনার মুখটা হাসিতে ভরে উঠল। সুমিতা ওকে মেসেজ পাঠিয়েছে ❤❤❤❤❤।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract