STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Horror Inspirational

3  

Nityananda Banerjee

Horror Inspirational

সংশপ্তক ( সপ্তবিংশতি অধ্যায় )

সংশপ্তক ( সপ্তবিংশতি অধ্যায় )

5 mins
120

সপ্তবিংশতি অধ্যায়


অম্বরীশ মরল। নিজের পাপে, আপন কর্মফলে। দীপুদের সংসারে বুঝি বা শান্তি নেমে এল । 

দীর্ঘদিন কালাচাঁদ বাবুর খবর নেই। তাঁর সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু নয় বছর পরও যখন তাঁর কোন খোঁজ পাওয়া গেল না; সকলেই ধরে নিয়েছিল উনি হয় মারা গেছেন কিম্বা নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন । 

ঐন্দ্রিলাদেবী মনে মনে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। গ্রামে কোন নতুন ব্যক্তির আগমন হয়নি। হলে নিশ্চয়ই কারও না কারও চোখে পড়ত ।

নীলেশবাবুও কোনদিন দীপুকে একলা কোথাও যেতে দেননি। যেখানেই গেছে তিনি সঙ্গে থেকেছেন। সেই সময়টা পরিবারটি সর্বেশ্বরবাবুর তীক্ষ্ণ নজরে থেকেছে।

সুতরাং নতুন কোন উৎপাত হয়নি।

দীপুর দীর্ঘ দশ বছর ধরে চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে রোগটি তার শরীরে নেই বললেই চলে। মাত্র ০.০১৭ পার ডি এল ( ডেসি লিকার )।

ডাক্তারবাবু বলে দিয়েছেন এবার Treatment Free Remission Period ধরতেই পারি। কিন্তু কালান্তক করোনাকালে তা' করা বোকামি হয়ে যেতে পারে। তা-ছাড়া যখন রোগটি ০.০০১ বা তারও কম হবে এবং তা' অন্তত তিনটি বছর ক্রমান্বয়ে একই রকম বা তার কম হবে তখনই এই Treatment Free Remission পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। 

দীপুর কোভিশিল্ডের দুটো ভ্যাক্সিন হয়ে গেছে। বুস্টার ডোজেরও সময় এসে গেছে। ডাক্তারবাবু বলে দিয়েছেন বুস্টার ডোজ নিয়ে নিতে। 

নীলেশবাবু গত বছর চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন । এখন তাঁর হাতে অঢেল সময়। কিন্তু চিকিৎসার শুরুর দিকে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়ে গেছে তার জন্য এখন আর অনুতাপ নেই। বরঞ্চ যে ডাক্তার এত খরচ করিয়ে দীপুর অসুস্থতা ঠিক করার ভীত গড়ে দিয়েছেন তাঁকে নীলেশবাবু মনে মনে এখনও স্মরণ করেন। 

একদিন টিভিতে নিউজ দেখছিলেন। ব্রেকিং নিউজে দিচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রখ্যাত ডাক্তার এবং ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডক্টর ভট্টাচারিয়া রাত ঠিক এগারোটায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

নীলেশবাবুর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। দীপু বলল 

- কাকাবাবু আমার ডাক্তারবাবু। ওই দেখ ছবি দিচ্ছে।

টুপটুপ করে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল নীলেশবাবুর চোখ থেকে।

- বড় ভালো ডাক্তার ছিলেন রে দীপু। আজ ওঁরই জন্য তুই সুন্দর জীবন যাপন করছিস। মানতেই হবে অনেক খরচ করিয়েছেন। হয়তো তার কিছু কিছু প্রয়োজন ছিল না ; তবু বলব উনি রোগীর ব্যাপারে খুব সাবধানী ছিলেন । তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

দীপু সম্মতি জানালো। শ্রদ্ধায় তারও অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে গেল ।

বলল - মা ! রূপসা ! দেখ দেখ আমার চিকিৎসার প্রথম ডাক্তারবাবু।

সবার চোখের কোণা চিকচিক করে উঠল । 

তখন দুপুর বেলা। মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে সবেমাত্র তারা ভাতঘুম দিতে উদ্যত। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে আই হোল দিয়ে দেখে নিলেন নীলেশবাবু। গৈরিক বসন পরিহিত এক জটাজুট সন্ন্যাসী ভিক্ষার্থে তাঁদের দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন ।

জৈষ্ঠ্য মাস, তায় দ্বিপ্রহর । নীলেশবাবুর ধর্মভীরুতা দরজা খুলতে বাধ্য করল।

সন্ন্যাসী ' অলখ নিরঞ্জন ' বলে ভেতরে ঢুকলেন । কোনদিকে দৃষ্টিপাত না করে সাধু বললেন - পানি পিলাউ বেটা ।

নীলেশবাবু দীপুর নাম ধরে ডেকে বললেন - দীপু একটু জল বাতাসা নিয়ে আয় । সাধুবাবা এসেছেন ।

ঐন্দ্রিলাদেবী এক ঘটি জল, জলের গ্লাস আর কিছু বাতাসা সন্ন্যাসীর সামনে নামিয়ে দিলেন । সাধুবাবা তা' থেকে একটি বাতাসা তুলে মুখে দিলেন এবং ঢকঢক করে একঘটি জল পান করলেন ।

নীলেশবাবু সন্ন্যাসীর আগমনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে সন্ন্যাসী বললেন - সাধু লোগোঁ কা আনেজানে কা কোই ওয়াক্ত নেহি হোতা; কোই কারণ ভি নেহি। ভিকসা মাঙনে আয়া; কুছ দো বেটা ।

এই অসময়ে সাধুবাবাকে খালি হাতে বিদায় করা বিধেয় নয় বিবেচনা করে বৌঠান নীলেশবাবুকে বললেন - একশ এক টাকা দিয়ে বিদেয় কর ঠাকুরপো।

নীলেশবাবু টাকা দিলেন। সন্ন্যাসী সন্তুষ্ট হয়ে তা গ্রহন করলেন এবং দ্রুত প্রস্থান করলেন ।

কারও মনে কোন সন্দেহ রইল না, কারণ গ্রামেগঞ্জে এমন অনেক সাধু আসেন কাশী বারাণসী থেকে। একবার তো তারাপীঠ থেকে এক তপস্বী এসেছিলেন বুড়োশিবের থানে । তিনদিন হত্যে দিয়েছিলেন বাবার পায়ে । সেই তিন দিন তিনি অন্নজল গ্রহন করেননি। চতুর্থ দিনে গ্রামের লোকজন অনুনয় বিনয় করলে বলেছিলেন - তোদের যখন এত ভক্তি তখন ' এক পাকে পাক ' কোন খাবার আনিস। বাবার ইচ্ছে হলে নেব ।

মনে আছে দীপুর। সেবার খাঁটি গাওয়া ঘি দিয়ে পেতলের হাড়িতে খিচুড়ি রান্না করে পাঠিয়েছিলেন মা।

তপস্বী নিয়েছিলেন ছোট্ট কাঁসার বাটির এক বাটি খিচুড়ি। বাকি হাড়িসমেত খিচুড়ি ফেরত দিয়ে বলেছিলেন - এই প্রসাদ নিয়ে যা । সবাইকে দিবি।

তার পরের দিন তপস্বী চলে গেছিলেন। আর কোনদিনই তাঁকে দেখা যায়নি। এমনকি সেবার যখন তারাপীঠের মন্দিরে পূজো দিতে গিয়েছিল সেই বাবার কোন খবর পাওয়া যায়নি।

আসলে সাধুরা এমনই হয়ে থাকেন। এক জায়গায় বাস করার পাত্রই নন।

এই সন্ন্যাসীকে দেখেও তেমনই মনে হল। গ্রামের ঘরে ঘরে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেন। তারপর অনেকদিন আর কোন সাধু সন্ন্যাসীর এই গ্রামে

আগমন ঘটেনি।

এর মাঝে দীপু আবার ফলো আপে গেছে। রিপোর্ট এই প্রথম ০.০০২ /ডে.লি.

ডাক্তার ভীষণ খুশি। সি বি সি রিপোর্টে হিমোগ্লোবিন স্থিতিশীল। বাকিগুলো মোটামুটি সবই ঠিক আছে। 

ডাক্তার বাবু লিখলেন কিছু ভ্যাক্সিন ; যেগুলো একটা নেবার পর তৃতীয় মাসে পরেরটা। ষষ্ঠ মাসে তার পরেরটা করে বেশ কিছু।

এখন নীলেশবাবুও স্থিতিশীল। অন্তত দীপুর রোগ নিয়ে। তিনি অবশ্য বরাবরই আশাবাদী। 

এখন আগের তুলনিয় খরচ অনেক কমে গিয়েছে। ঘনঘন এডমিশন নেইই। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার সুপ্রীমকোর্টের হস্তক্ষেপে আন্তর্জাতিক ঔষধ তৈরির কোম্পানীটি ভারতে এই কেমোর দাম বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল ; তা' পারেনি। 

সুপ্রীম কোর্টের বক্তব্য ছিল ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি যেখানে এই সকল ওষুধের দাম কমিয়ে দিয়েছে তখন সরকারের নির্দেশমত ওই কোম্পানিও কম দামে ওষুধ দিতে বাধ্য। নতুবা এই দেশ থেকে তারা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে পারে। 

ফলে ওষুধটির প্রথমে যা দাম ছিল এখন সেই মূল্য কমে গিয়ে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে।

জীবনদায়ী ওষুধের ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্টের এই রায় নিঃসন্দেহে মঙ্গলজনক।

সর্বেশ্বর বাবু যিনি নীলেশের প্রিয় বন্ধু তিনিই এই সংবাদটি নীলেশকে দিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত জানিয়ে দি Max Foundation দীপুর আবেদন গ্রহন করেনি। সেই সময় নীলেশবাবুরা খুবই আর্থিক কষ্টের মধ্যে ছিলেন। সেই জন্য পাঁচ বিঘে ধানী জমি ই সি এলকে বিক্রি করতে হয়েছিল । অবশ্য জমির অধিগ্রহন নোটিশ ইতিমধ্যেই ওঁরা পেয়ে গেছিলেন। বলা ভাল সেই সুযোগ ঈশ্বরই এনে দিয়েছে।

বিকেলে সর্বেশ্বরবাবু খবর দিলেন গ্রামে সাধু সন্ন্যাসীদের আসা যাওয়া বেড়েছে। নীলেশকে বললেন

- তোরা একটু সাবধানে থাকিস।

- কেন বল তো ? সাধুবাবা এলে ভয়ের কি আছে ?

- আমার এমনই সন্দেহ হচ্ছে। হুটহাট কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দিবি না। কে কোন মতলবে আসে বলা তো যায় না।

- হুমম্ ঠিকই বলেছিস। আমরা তো আবার পদে পদে ঠকে যাই !

- চল আজ নদীর ধারে একটু ঘুরে আসি। অনেকদিন যাওয়া হয় না। বসে বসে হাঁফিয়ে গেছি।

নীলেশরঞ্জন রাজী হয়ে সর্বেশ্বরের সঙ্গে দামোদরের তীরে মথুরাচণ্ডীর মন্দিরে গেল । এই মন্দিরটি অনেক পুরানো । শোনা যায় প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর যখন বেঙ্গল কোল কিনেছিলেন তখনই নাকি এই দুর্গামন্দিরটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল । এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে একটি সুন্দর পর্য্যটন স্থান হয়েছে। নিকটেই বাউলদের আখড়া । রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ আছে। দূর দেশ থেকে অনেকেই আসেন ,জন্মাষ্টমী, ঝুলন, রাখী পূর্ণিমায় । ওঁরা ওখানেও কিছুটা সময় কাটালেন। বহু বাউলের সমাবেশ হয়েছে। তারা কেউ গাইছে, কেউ ঢোল বাজিয়ে নাচছে। 

একজন বাউলকে দেখে সর্বেশ্বর বাবু বললেন - বোষ্টমঠাকুরের দেশ কোথায় ?

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল বোষ্টম । বোষ্টম বলল - আমাদের কোন দেশ নাই। যেখানে থাকি সেটাই আমাদের দেশ গো ।

চমকে উঠলেন নীলেশরঞ্জন। এই গলার স্বর তো চেনা চেনা লাগে। পুনরায় কিছু বলার আগেই বোষ্টম যেন অন্তর্হিত হয়ে গেল ।

সর্বেশ্বর বাবু বললেন - কেমন পালিয়ে গেল দেখ ? যেন বাঘের মুখ থেকে ছাড়া পেয়ে আহত হরিণ দৌড়াচ্ছে।

নীলেশ বললেন - আমার যেন কেমন খটকা লাগছে রে।

- তা হলে চল আখড়াটা একবার চক্কর দিয়ে আসি। আবার যদি দেখা পাই !


( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror