স্মৃতির সরণী বেয়ে
স্মৃতির সরণী বেয়ে
স্মৃতিসুধার পথ ধরে চলেছি আমি...
সে পথ লাল মাটির...
শাল পিয়ালের জঙ্গলে
এঁকেবেঁকে গিয়েছে চলে...ঠিকানাহীন
উঁচুনীচু...এবড়োখেবড়ো...কর্দমাক্ত
আকাশে তখন ধুসর মেঘের ঘনঘটা
অস্তমিত রবির ছটা হয়েছে মলিন।
কোথায় যেন বজ্রপাত হলো?
শব্দদানবের উল্লাসে...তুই ভয় পেয়ে গেলি...
অমনি আমার আঙ্গুলগুলি আরো শক্ত করে ধরলি।
তোর ছোট্ট হাতের নরম স্পর্শে
সেদিন ধন্য হয়েছিলাম...
তাই তোর সাথেই কোন অজানায়
যেন...হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।
আদো আদো স্বরে কতো কি যে বলতিস্!
চোখে তোর অপার কৌতূহল!
প্রাণে অচেনা’কে চেনার আনন্দ!
সব প্রশ্নের উত্তর আমারও কি জানা ছিল ছাই
ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে তুই তাও বুঝে গিয়েছিলিস্...।
তাই নিজের উত্তর নিজের মত করেই
সাজিয়ে নিয়েছিলিস্...।
হঠাৎ করেই তোর মা চলে গেলেন তারার দেশে,
সেদিনই ঘর ছাড়লাম আমি উদাস বাউলের বেশে।
তুই কেঁদেছিলিস। বৌমা আপত্তি করেছিল।
তিতলি, বুবাই আমায় লতার ম
ত জড়িয়ে ধরেছিল।
তবুও মন’টা শক্ত করেছিলাম...
কিছুটা একাকীত্ব ভিক্ষা চেয়েছিলাম।
পরকে আপন করতে চেয়েছি,
তাই আপনকে করলাম পর।
তখন থেকেই আমার স্থান
বৃদ্ধাশ্রমের এই স্যাঁতস্যাঁতে ঘর।
তুই উদারপন্থী...আমি প্রাচীনপন্থী
অকারণ বিবাদ বৈষম্যে কি লাভ ছিল?
তুই তোর জীবন তোর মত করেই সাজিয়ে নে...
আমি আমার জগৎ-বাগিচায়
নতুন চারা করবো রোপন,
ফলের আশা করবো না...
তবু নতুন বীজ করবো বপন...
জীবন সায়াহ্নে এইটুকু স্বপ্নই সঙ্গী হয়ে রইলো...
কি চেয়েছি... আর কি পেয়েছি...?
হিসাবের খাতাটা না হয় অসম্পূর্ণই থেকে গেল!
তখন থেকেই চলেছি আমি...স্মৃতির সরণী বেয়ে
তোর ছেলেবেলার দুষ্টুমি আর কান্না-হাসি নিয়ে
নতুন সাথী পেয়েছি যতো...
বন্ধুত্ব ও ভালবাসা বিলিয়েছি ততো...
গোলাপ,জুঁই, বেল, রজনীগন্ধায়
বাগান গিয়েছে ভ’রে...
তবুও চলছি...চলছি আমি...
তোর ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুলের ভরসায়
অনাদি অনন্তকাল ধরে...।।