অনুগল্প/এক চিলতে হাসি
অনুগল্প/এক চিলতে হাসি
“রূপা... রূপা... আস্তে! দাঁড়া মা..., আমি কি তোর সাথে পাল্লা দিতে পারি? বয়স হয়েছে তো!”
সত্তর বছরের অনিমেষ মেঘালয়ের কুয়াশা ঘেরা মনেস্ট্রির সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে হাঁপাচ্ছিলেন! কিন্তু ত্রিশ বছরের অপরূপা শিশুর মত লাফিয়ে লাফিয়ে নামছে আর খিলখিল করে হেসে উঠছে!
“পারে না...বাবু আমায় ধরতে পারে না...!”
মাত্র একমাস আগে জন্ম এমন একটি শিশুমনের! পুরী যাচ্ছিল ওরা সপরিবারে, গাড়ী নিয়ে! বালাসোরের কাছে বিশাল অ্যাকসিডেন্ট! স্বামী ঋত্বিক ড্রাইভ করছিল! স্পট ডেড! চার বছরের ছেলে বাবু সামনের সিটে বসেছিল, ছিটকে কোথায় পড়েছে, কেউ জানে না! আজ অবধি নিখোঁজ! মা অনুপমা সুগারের রুগী! হাসপাতালে এক সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছেন! অনিমেষ ও অপরূপাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল! একসঙ্গে এতগুলো শোক মেয়েটা সামলাতে পারলো না! বাবু কোথায় বাবু কোথায় বলে বায়না করছে! ঠিক যেমন ছোটবেলায় খেলনার জন্যে করতো কিংবা ট্রেন থেকে নেমে যখন জল আনতে যেতেন অনিমেষ, ট্রেন হুইসেল দিলেই কেঁদে উঠতো মেয়ে। “বাবা উঠলো না কেন? ট্রেন ছেড়ে দেবে যে!”
আত্মীয়রা সকলে বলল, মানসিক চিকিৎসা করাতে! ডাক্তারের পরামর্শ মতোই তাই তিনি মেয়েকে নিয়ে এসেছেন শিলং এর মেন্টাল অ্যাসাইলামে! গত একমাস ধরে কখনো বাবা হয়ে কখনো বাবু হয়ে মেয়ের আবদার মেটাচ্ছেন! অতি কষ্টেও মুখের এক চিলতে হাসিটাকে মিলিয়ে যেতে দেন নি! তিনি বলেন, "পাগল হলেই বা! মেয়েটাকে তো আর জলে ফেলে দিতে পারি না! আমারই তো সন্তান! আমি যে বাবা!"