STORYMIRROR

Mausumi Pramanik

Inspirational

3  

Mausumi Pramanik

Inspirational

ভোরের স্বীকারক্তি

ভোরের স্বীকারক্তি

2 mins
779


আজ সকালে উঠে সুইসাইড করতে ইচ্ছে করল। একা থাকাটা খুব বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার। এই মধ্য বয়সে তো একেবারেই ভাল লাগছে না। যখন তোমাদের খাতায় আমি এতটাই অপ্রয়োজনীয় যে তোমরা আমাকে ছাড়া ভাল থাকবে।



তোমরা যে যার স্বার্থ আর ইগো নিয়েই ব্যস্ত। আমার মনের খোঁজ কেউ রাখো না। তখন আমার এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়াই ভাল। সত্যি। ভুলে ভরা একটা জীবনকে বয়ে বেড়ানোটা সত্যিই একটা বিশাল বোঝা। আমার সরলতা, আমার ইনোসেন্স, আমার অনুভূতির দাম এই পৃথিবীর মানুষ যে দেবে না, তা আমি বেশ বুঝতে পারছি। জানি অনেক মানুষ আমার লেখা পড়ে মোটিভেটেড হন। কিন্তু আজ আমি নিজেকে মোটিভেট করতে পারছি না।


আত্মহত্যা শুধু যে একটা শরীরকে শেষ করে দেওয়া তা তো নয়। শরীর বেঁচে থাকল, আর মনটা একটু একটু করে মরে যেতে থাকল। কি লাভ এমন মনমরা হয়ে বেঁচে থেকে? মনটাকে বোঝার মত মানুষ যদি নাই পাওয়া গেল! যখন জানি যে আমি কোন পাপ করিনি, অথচ বারবার আমাকেই শাস্তি পেতে হবে, তেমন যন্ত্রণা দায়ক জীবন কে চেয়েছিল? এই প্রশ্নটা’ই মনকে নাড়া দিয়ে গেল।


শেষবারের মতো সুন্দর পৃথিবীটাকে দেখবো বলে বারান্দায় এলাম। দেখলাম, ঝড় উঠেছে। ঘূর্ণিঝড়েরপূর্বাভাস ছিল!


পিছনের বস্তির লোকজন ভোর হবার আগেই উঠে পড়ে কোলাহল জুড়ে দিয়েছে। টালির চালা আর স্যাঁতস্যাঁতে বাড়িগুলো কতক্ষন আর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করতে পারবে? তাই প্রশাসনের সহযোগিতায় টুকটাক জিনিস পোঁটলায় বেঁধে নিয়ে ওরা রাস্তার মোড়ের স্কুলবাড়িতে উঠে যাচ্ছে! ওদের অভিব্যক্

তি ভাবলেশহীন! দৈনিক জীবনযুদ্ধে লড়তে লড়তে ওরা বুঝি আমার চাইতেও ক্লান্ত বেশী। তবুও ওদের মুখে কোন অভিযোগের বানী নেই! তবুও বেঁচে থাকার এত ইচ্ছা! অনুপ্রাণিত হলাম।


ঝড় তার গতিবেগ আরো বাড়ালো। “যে বাতাস গ্রহন করে বেঁচে থাকো...তাতেই বিষ ছড়াবে? না! এ তো মেনে নেওয়া যায় না!” তাই পবনদেব রিভেঞ্জ নিতে, মনুষ্যজাতিকে শিক্ষা দিতে ধরায় অবতীর্ণ হয়েছেন! দেবতার কাজ তো প্রোটেক্ট করা, ধ্বংস করা নয়! তবে? বুঝলাম যে প্রকৃতি মায়ের কোলে লালিত হচ্ছি আর তাকেই অবমাননা করে চলেছি, নির্দ্বিধায়, তিনি কি শাস্তি দেবেন না? তবুও...


দেখলাম- গাছগুলো প্রাণপনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার লড়াই চালাচ্ছে! দেখলাম- শুকনো পাতা ঝরে গিয়েও বৃষ্টির জমা জলে মহানন্দে স্নান করছে! যৌবন ফিরে পাবার বৃথা চেষ্টা! না! আরো খানিক্ষন বেঁচে থাকার যথার্থ চেষ্টা। পাখীগুলো সাত তাড়াতাড়ি জেগে উঠৈছে আজ। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে তারাও!


আর দেখলাম...সেই স্বর্গীয় দৃশ্য...মা দোয়েল তার কচি বাচ্চাগুলোকে ছেড়ে উড়ে যেতে পারেনি। ছোট্ট নীড় আগলে বসে আছে। নিজে বৃষ্টিতে ভিজেও ওদের আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওদের ডানা শক্ত হয়নি। ডালপালাগুলো ৭০ কিমি বেগে দুলছে! তবুও মা তার সন্তানকে বাঁচানোর কি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে!


বুঝলাম...জানলাম ও মানলাম যে জীবনটা মহামূল্যবান। অন্ততঃ সেই মায়ের কাছে, যিনি দশমাস আমায় পেটে ধরে রেখেছেন, প্রসব বেদনা সহ্য করে যিনি আমায় পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন।

এই অমূল্য জীবনকে আমি নষ্ট করতে পারি না স্বেচ্ছায়। আমার তো সে অধিকারই নেই!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational