Mausumi Pramanik

Classics

1.3  

Mausumi Pramanik

Classics

ইতি কলকাতা বইমেলা,২০১৮ কথা

ইতি কলকাতা বইমেলা,২০১৮ কথা

3 mins
835


সম্ভবত ষোল বছর বাদে গেলাম বইমেলায়। এতদিন যাইনি কেন? হয়তো কিছু অভিমান ছিল, কিছু স্মৃতি ছিল যাকে উজ্জীবিত করতে চাই নি। যদিও গতকাল বই কিনতে যাইনি। দিগন্ত প্রকাশনীর থেকে শুধুমাত্র আমার বই আনতে গিয়েছিলাম। যাবার সময় প্রায় তিন কিমি হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। যতই কচি ও রোমান্টিক সেজে থাকি না কেন, বয়স হচ্ছে ভাই...। গিয়ে বেশ খানিকটা নস্টালজিক হয়ে গেলাম। সেই আগের দিনগুলোতে ফিরে যেতে মন চাইছিল। তখন আমি আমার টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে, কিংবা বাবার কাছে কান্নাকাটি করে টাকা জোগাড় করে বই কিনতাম। তারও পরে বয়ফ্রেণ্ডের কাছ থেকে উপহার হিসাবে শুধু বই'ই নিতাম। বাবা তাঁর অফিসের লাইব্রেরী থেকে মায়ের জন্যে বই নিয়ে আসতেন। অ্যাডাল্ট বই পড়া উচিত নয় বলে মা লুকিয়ে রাখতেন। আমি পা টিপে টিপে গিয়ে সে বই নিজের ঘরে নিয়ে এসে চাদরের তলায় টর্চ লাইট জ্বেলে এক নিশ্বাসে শেষ করে দিতাম। সেই গল্প শুনেই আমার বয়ফ্রেণ্ড আমাকে প্রায় প্রতিটা দিন বইমেলায় নিয়ে যেত। যা চাইতাম সব বই কিনে দিত। আমিও দারুন খুশি হয়ে যাতাম। আমরা প্রেম করতে যেতাম বইমেলায় ঠিকই, কিন্তু বই ও কিনতাম। (আজকের মত বাটারস্কচ স্কুপ কিনে খেয়ে ও খাইয়ে ভ্যালেন্টাইনস ডে উজ্জাপন করতাম না।) সেও কিনতো। আমিও তাকে কিনে দিতাম। ময়দানে বইমেলা হবার সুবাদে অফিস বা ইন্সটিটিউট থেকে যাওয়ার খুব সুবিধা ছিল। এত নেশা ছিল বইপড়ার যে সে যখন ট্যুরে যেত ষ্টেষনে আমি সী অফ করতে যেতাম। সেদিনও বই আসত আমার ঘরে। তখন তো মোবাইল ফোন ছিল না। তাই যে ক'দিন আমাদের মধ্যে কথা বা দেখা হতো না, বই আমার সঙ্গী হত।

তারপর একসময় কি যে হল, আর বই পড়তে ইচ্ছেই করলো না। যেমন সিনেমা দেখতেও ইচ্ছে করতো না। চাকরী করে সময় পাওয়া যেত না। জীবনের সংঘর্ষ গুলো নিয়ে স্বার্থপরের মত বিজি হয়ে গেলাম। বই আমার থেকে শত হস্ত দূরে সরে গেল, কিংবা আমিই বুঝি সরে গেলাম। আমার বাবার বাড়িতে দু আলমারী ভর্তি বই থরে থরে সাজানো। আমার ও বোনেদের কেনা। ফিরেও তাকাতাম না। আমার নিজের ফ্ল্যাটে বই রাখার জায়গাই নেই। এখনো খুব একটা পড়তে ভালবাসি না। তবে ভাল সিনেমা দেখি। সঙ্গী পেলে নাটক দেখতে যেতেও খুব ইচ্ছে করে। তবে আজকাল জীবনকে পড়তেই বেশি ভাল লাগে; চারপাশের মানুষগুলোর সাইকলোজি পড়তে ভাল লাগে; ডিবেট করে তার থেকে জল সরিয়ে দুধের সরটা তুলে নিতে বেশ লাগে। কিন্তু ট্রাস্ট মী কাল আমার আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে বই কিনতে ইচ্ছে করছিল। খুব ইচ্ছে করছিল।

নতুন বইয়ের গন্ধ আমার দারুন লাগে। ছোটবেলায় নতুন ক্লাসে উঠলে মলাট লাগানো বইগুলো নাকের ওপর রেখে ঘুমিয়ে পড়তাম। উঁচু ক্লাসে লেখার সঙ্গে ছবি থাকতো না বলে আবার মন খারাপ হয়ে যেত। ভাল ছবি আমাকে ভাবনায় কোন সুদূরে যে টেনে নিয়ে যেত, ফিরে আসতেই ইচ্ছে হত না। ভালবাসার দিগন্তে ছোটগল্প অপলক বইমেলায় আমার প্রথম গল্প। নিজের লেখা কালো অক্ষরের সাজানো বাগানে দেখে একটা আলাদারকম অনুভূতি হয়, যা সোসাল মিডিয়ায় হাজার লাইক পেলেও হয় না। হতে পারে পুরো বিষয়টাই সাইকলোজিকাল, বাট ট্রাস্ট মী...সোসাল মিডিয়ার কটা গল্প আর ক'জন রীডার মনে রাখতে পারেন? এত পড়েন, মনে রাখা কি সম্ভব? আর নূতন গল্পের ভিড়ে পুরাতন হারিয়ে যায়। কিন্তু সোকেসের বইটা হাতে নিয়ে চোখ বোলালে, মনে হয় "ও! এটা তো পড়েছি, ঠিক আছে আবার পড়ি।" অবসরে টেনেটুনে দেখা আর মনটাকে বইয়ের ভিতর সমাহিত করা। এর চাইতে ভাল অভ্যাস আর কিইবা হতে পারে। প্রিন্টেড বইয়ের এটাই ম্যাজিক। তাই সোসাল মিডিয়ায় এবার গল্প কবিতা কিছুটা রেস্ট্রিক্টেড হওয়াই মঙ্গল। না হয় বইগুলো ডিভানের ভেতর, খাটের তলায় রাখবো। তবুও প্রিন্টেড বই অলয়েজ ওয়েলকাম। কাগজের বই যুগ যুগ জিও।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics