Sekhar Bandyopadhyay

Abstract Others

3.9  

Sekhar Bandyopadhyay

Abstract Others

সম্পর্ক

সম্পর্ক

5 mins
294


প্রত্যেকবারের মতই এবারও পুলক ওদের বিবাহবার্ষিকীর দিন অফিস থেকে ফিরতে দেরী করছে। রচনা এবারও সারা বাড়ি সাজিয়ে নিজেও সেজেগুজে বসে থাকে কখন পুলক ফিরবে তারপর তারা একসাথে ডিনার খেতে যাবে। এই বছর ওদের চতুর্থ বিবাহবার্ষিকী। এর আগের তিন বছরও পুলক দেরী করে আসায় আর ডিনার খেতে যাওয়া হয়নি। জিজ্ঞাসা করায় পুলক বলে অফিসের কাজের চাপে বেরোতেই পারেনি। বসের ভয়ে সে বলতেই পারেনি যে আজ তাদের বিবাহবার্ষিকী। প্রতিবারই ঐ দিনটায় কোন না কোন জরুরী মিটিং এসে পড়ে। রচনা প্রতিবারই ভীষণ রেগে যায় কিন্তু পুলক মিষ্টি হেঁসে সুন্দর করে গুছিয়ে এমন যুক্তি খাড়া করে যে রচনার আর কিছু করার থাকে না। রচনা জানে পুলকের মত সচ্চরিত্র মানুষ আর হয় না। বিবাহবার্ষিকীর পরের দিনই রচনাকে নিয়ে রেষ্টুরেন্টে ডিনার করে ও কোন না কোন দামী উপহার কিনে দেয়, ফলে রচনার রাগও গলে জল হয়ে যায়। রচনা তখন বলে "আজকের মত ফ্রি কি তুমি গতকাল থাকতে পারনি?" পুলক বলে "বসের মর্জিমাফিক সব কাজ করতে হয় যে।" রচনা রেগে গিয়ে কতবার ওর অফিসে ফোন করে বসের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই পুলকের বাঁধায় তা আর হয়ে ওঠেনি। পুলক বলে যে ওর বসকে সরাসরি বললে বস রেগে গিয়ে ওর প্রোমোশন আটকে দেবে। ফলে অফিসে আর ফোন করাও হয়নি। রচনা মনে মনে পুলকের বসকে শাপশাপান্ত করতে থাকে। কিন্তু এবারও পুলকের ফিরতে দেরী হওয়ায় রাগে আর ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে সোজা অফিসে ফোন করল রচনা, রিসেপশনিষ্ট ফোন ধরে জানতে চাওয়ায় রচনা নিজের পরিচয় দেওয়াতে, রিসেপশনিষ্ট ফোনের লাইনটা বসের কাছে দেয়। রচনা ঝড়ের গতিতে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে জানতে চায় প্রতিবছরই দশই অক্টোবর আপনাদের জরুরী মিটিং ঠিক এসে পড়ে! বস ঘাবড়ে গিয়ে জানায় যে কিন্তু দশই অক্টোবর কোন মিটিং নয় পুলকবাবুর পি এর জন্মদিন আর পুলকবাবুরা বার্থডে পার্টি সেলিব্রেট করে। এইরকম একটা উত্তর রচনা কল্পনাতেও আনতে পারেনি। সে মনে মনে ভাবল এর একটা বিহীত করা দরকার। সে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। মুখে অবশ্য কিছুই প্রকাশ করে না। পুলকের সামনে সে যেন কিছুই জানেনা সেইভাবেই থাকে। কয়েকদিন বাদে পুলকের এক বন্ধু বাড়িতে এল। পুলক আলাপ করিয়ে দিল প্রবালের সাথে। প্রবালের চালচলন, হাবভাব দেখেই রচনা বুঝতে পেরেছিল লোকটার মধ্যে কিরকম একটা গায়ে পড়া ভাব আছে। রচনার এই ধরনের স্বভাব মোটেই পছন্দের না, কিন্তু তবুও সে যেন আজ একটু বেশীই গল্প করছে প্রবালের সাথে। পুলকের চোখে কিছুই এড়ায় না, কিন্তু সে কিছু বলতেও পারছেনা। এদিকে গল্প চলতেই থাকে। গল্পের মধ্যেই ঠিক হয় দুদিন পরে রাতের ডিনারটা রচনা ও প্রবাল একটা রেষ্টুরেন্টে করবে। 

             যেমন কথা তেমনি কাজ, পুলককে কিছু না জানিয়েই রচনা প্রবালের সাথে ডিনার করে প্রায় রাত সাড়ে এগরটায় ফিরল। ফেরার পরে পুলক জিজ্ঞাসা করে "কোথায় গেছিলে, এত রাত হল ফিরতে?" রচনা হেঁসে বলে "কলেজের দুজন বান্ধবীর সাথে রেষ্টুরেন্টে ডিনার করতে গেছিলাম।" পুলকের একটু সন্দেহ হয় কিন্তু সেটা সরাসরি প্রকাশ করতে পারেনা। কয়েকদিন পরে অফিস যাওয়ার সময় পুলক রচনাকে বলে যায় যে আজকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় 'মডার্ণ' রেষ্টুরেন্টে চলে আসতে, সেখানে তারা আজ ডিনার করবে। ঠিক সন্ধ্যা সাতটা থেকে পুলক একা একা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে এসে দেখে রচনা বাড়ি নেই। ফোন করলে সে জানায় যে সে বান্ধবীদের একটা সিনেমা দেখতে গেছে, ফিরতে দেরী হবে। আরও বলে যদি পুলক রেষ্টুরেন্ট থেকে না খেয়ে ফেরে তাহলে ফ্রিজে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিতে পারে। পুলক রাগে ফুঁসতে থাকে, মনে মনে ঠিক করে আজকেই এর একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়বে। রচনা রাত এগারোটার পর ফিরে দেখল পুলক থমথমে মুখে বসে আছে। রচনা হেঁসে বলল "ফিরতে একটু দেরী হয়ে গেল, কি করব বলো বান্ধবীরা খুব জোর করল।" পুলক বলল "তোমার কোন বান্ধবীরা এত রাত পর্যন্ত রেষ্টুরেন্টে খেতে যায় বলতো, আমি ফোন করে কথা বলি।" রচনা সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে "কলেজের বান্ধবীরা বহুবছর পরে যোগাযোগ করে একটু সিনেমা দেখা, রেষ্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করলে অসুবিধার কি আছে বল?" পুলক জ্বলে ওঠে, "আমি প্রায় দেড়ঘন্টা রেষ্টুরেন্টে বসে অপেক্ষা করে ফিরে এলাম এটা কি কোন ব্যাপারই না? তুমি যে কোনও বান্ধবীর ফোন নম্বরটা দাও আমি কথা বলব।" রচনা হেঁসে বলে "না না আমার বান্ধবীরা কি ভাববে বল!" কিন্তু সপ্তাহ তিনেক পরে আবার একই ঘটনা ঘটায় পুলক ডায়রি ঘেঁটে রচনার এক বান্ধবীকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করায় সেই বান্ধবী তো আকাশ থেকে পড়ল, "আমরা এত রাতে বাইরে খেতে যাব! আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে?" তখন পুলকের সন্দেহ আরও ঘণীভূত হল। পুলক রচনাকে দৃঢ়ভাবে জিজ্ঞাসা করল "তুমি কোন বান্ধবীদের সঙ্গে রেষ্টুরেন্টে ডিনার করতে যাও তাদের ফোন নম্বর দাও। আমি তোমার এক বান্ধবীকে ফোন করেছিলাম সে বলল যে এতরাতে বাইরে ডিনার করার প্রশ্নই নেই।" রচনা বলল তুমি কাকে ফোন করেছিলে শুনি?" পুলক ডায়রির নম্বরটার কথা বলল। সেটা শুনে রচনা হেঁসে বলল "ও সবিতা! ও তো কোনকালেই বাড়ি থেকে বেরোতে চায়না। ও বড্ড সেকেলে।" এইকথা শোনার পর পুলকের মেজাজ আরো চড়তে থাকে। ভাবে আজই এর শেষ দেখে ছাড়বে, বলে "তোমার কাছ থেকে মিথ্যা কথা কখনও আশা করিনি, তুমি আমাকে মিথ্যা কথা বলছ যে তুমি তোমার বান্ধবীদের সঙ্গে এতরাতে ডিনার করতে যাও।" এইকথা শুনে রচনা জ্বলে ওঠে, "তুমি বুঝি মিথ্যা কথা বল না, বরং তুমিই মিথ্যা কথা বলা প্রথমে শুরু করছিলে।" পুলক বলে "আমি কোন মিথ্যা কথা বলেছি শুনি?" তখন রচনা পুলকের পি এর বার্থডে সেঋলিব্রেশনের জন্য আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে আসতে না পারার কথাটা বলে। কথাটা শুনে প্রথমে চমকে গেলেও সামলে নিয়ে বলে, "আমি আমার পি এর বার্থডে পার্টিতে গেছি বেশ করেছি।" রচনাও বলে "তাহলে আমিও বেশী রাত করে ডিনার করতে গিয়ে বেশ করেছি।" পুলক বলে "তাহলে এই অবিশ্বাসের সম্পর্ক রেখে আর লাভ নেই।" রচনাও জ্বলে উঠে দৃঢ়ভাবে বলে "প্রতিবছর আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে আমি রেডি হয়ে তোমার অপেক্ষায় বসে থাকতাম আর তুমি মিটিংয়ের মিথ্যা দোহাই দিয়ে পি এর সাথে সময় কাটাতে। এই অস্বচ্ছতা আর মিথ্যা নিয়ে কোন সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে না। আমিও চাই সোজা কথাটা সোজাভাবে বলতে। এখানেই এই অস্বচ্ছ সম্পর্কের ইতি টানা দরকার।

        পরদিন সকালে উঠে রচনা তার জামাকাপড়, জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করলে পুলক অপরাধীর মত মুখ করে বলে "আমার ভুল শুধরাবার আরেকটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না?" 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract