ইন্টারভিউ
ইন্টারভিউ
।হঠাৎ করেই চাকরির ইন্টারভিউয়ের চিঠিটা পেল রবীন। সামনের সোমবারই ইন্টারভিউ। রবীন তো ভুলেই গেছিল যে কবে এই কোম্পানিতে চাকরির জন্য সে দরখাস্তটা করেছিল। খবরের কাগজ দেখে দেখে সে কতই না দরখাস্ত জমা দিয়েছিল, তার মধ্যে কটা যে কোন উত্তরই পায়নি তার কোন হিসাবই রাখে না আর। কারণ নয় নয় করে সে গোটা পাঁচেক চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু চাকরি তার অধরাই থেকে গেছে। প্রতিবারই কোন না কোন অজুহাত দেখিয়ে তাকে বাতিল করা হয়েছে। হয় অভিজ্ঞতার অভাব, নয়তো একাডেমিক ক্যারিয়ার ব্রাইট নয়, বা কোম্পানিতে কোন আত্মীয় স্বজনের বা উচ্চপদস্থ কারুর রেফারেন্স নেই ইত্যাদি নানান কারণে। তবুও যতবারই সে কোন ইন্টারভিউয়ের চিঠি পেয়েছে ততবারই তার মনের ভিতরে একটা অদ্ভুত শিহরণ জেগেছে। এইবারও তার মনে যে একটা আনন্দের স্রোত খেলে গেল সেটা অবশ্য সে অস্বীকার করতে পারল না তার ঘণিষ্ঠ বন্ধু সোমেশের কাছে। সোমেশও এই ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়েছে। তবে সোমেশের অতটা তাগিদ নেই কারণ সে একটা ভাল চাকরি ইতিমধ্যেই পেয়ে গেছে। রবীনের ব্যাপারটা অন্যরকম, সে বেকারত্বের জ্বালায় জ্বলছে। তার উপর ওর বোনেরও বিয়ে দিতে হবে আর ওর বাবাও অবসরপ্রাপ্ত। ফলে অভাবের সংসারে একটা চাকরি যেন আকাশের চাঁদ। ফলে টেনশনে টেনশনে প্রায় জেরবার অবস্থা তার। একটা সপ্তাহ মাত্র প্রস্তুতির সময় আছে। কিন্তু এইসময়টা সে কিভাবে প্রস্তুতি নেবে, কি পড়বে, কিভাবে প্রশ্নের উত্তর দেবে, কিভাবে ইন্টারভিউয়ারদের সম্বোধন করবে এইসব ভাবতে ভাবতেই একটা সপ্তাহ হুশ করে কেটে গেল কিন্তু কিছুই আর প্রস্তুতি নেওয়া হল না।
যাইহোক, ইন্টারভিউয়ের দিন এসে গেল। রবীন সক্বাল সক্বাল ঐ অফিসে উপস্থিত হল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখল প্রায় জনা পঞ্চাশের উপর ছেলে ওয়েটিং হলে বসে বা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সঙ্গে সঙ্কোচের সঙ্গে আলাপ করতে শুরু করল। ইতিমধ্যে ইন্টারভিউ একজন একজন করে শুরু হয়ে গেল। এদিকে কয়েকজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেই সে দেখল যে তাদের বেশিরভাগেরই চাকরির অভিজ্ঞতা আছে, আর তারা ইংরাজিতে সাবলীলভাবে কথাবার্তা বলছে, যেটা সে মোটেই পারে না। আরও জানল যে ভ্যাকেন্সি মাত্র দুটো। সে তখনই ঠিক করে ফেলল যে তার মতো আনকোরা, আনাড়ি ছেলের এখানে কোনো জায়গা নেই, তাই সময় নষ্ট না করে সে উঠে বেরিয়ে যেতে গেল। আর ঠিক তখনই ভিতর থেকে তার ডাক পড়ল। ক্ষণিকের দ্বিধা কাটিয়ে রবীন সাবলীলভাবেই ভিতরে গেল। সে বেশ বুঝতে পারছিল যে তার টেনশনটা যেন হঠাৎ উবে গেছে, ফলে ভয়, জড়তাগুলোও অনেকটাই কেটে গেছে। কারণ তার তো হারানোর কিছু নেই। প্রাথমিক পরিচয় পর্ব সারা হলে ইন্টারভিউয়ার তাকে প্রশ্ন করল, "আপনার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে?" সে বলল, "না নেই।" "আপনার তো দেখছি রেজাল্টও সেরকম ভাল নয়, আপনি কি করে আশা করেন যে এই চাকরিটা আপনি পাবেন?" রবীন সপাটে জবাব দেয় " আমার থেকে বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও বেশি ভাল রেজাল্ট সম্পন্ন প্রার্থীরা বেশিদিন এখানে থাকবে না আর তাছাড়া বেশি মাইনে দাবি করবে। আর আমার ভাল চাকরির আশা কম বলে আমি মন দিয়ে কাজ করব।" এই কথা বলে রবীন অপেক্ষা করছিল যে কখন তাকে বলা হবে যে আচ্ছা এবার আপনি আসতে পারেন। কিন্তু কি আশ্চর্য! ইন্টারভিউয়ার বলে উঠল "এক্সেলেন্ট!! আপনি কি কাল থেকেই জয়েন করতে রাজী আছেন?"