Sekhar Bandyopadhyay

Inspirational Others

4.2  

Sekhar Bandyopadhyay

Inspirational Others

গণপতি

গণপতি

2 mins
278


"হ্যাঁ রে ছেলে, এগুলো কত করে?" ছেলেটা উত্তর দেয়, "দিদিমণি এই ছোট মুখোশগুলো কুড়ি টাকা আর বড়গুলো চল্লিশ টাকা।" "কি বলছিস! এই সামান্য কাগজের মুখোশটার দাম চল্লিশ টাকা?" নীলা ফোঁস করে ওঠে, সমরকে বলে, "চলো, আর দাঁড়িও না, এইটুকু ছেলে হকার তো নয় যেন ডাকাত।" সমর বলে "আহা গরীব ছোট্টছেলে ফেরী করে খাচ্ছে।" নীলা বলে অমনি তোমার দরদ উথলে উঠল, এই তোমার দোষ, গরীব বাচ্চা দেখলেই তোমার মন গলে যায়। দেখ গিয়ে বিক্রির পয়সা দিয়ে বিড়ি, মদ এসব খাবে।" সমর আর কথা বাড়ায় না। ওরা আজকে ভোরেই কোলকাতা থেকে দুদিনের জন্য অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে এসেছে। সারাদিন গাড়ী করে অযোধ্যা পাহাড়ের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে বিকালে হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ পরই আবার দেখল সেই ছেলেটা মাথায় ঝুড়ি নিয়ে ফেরী করছে। ওকে দেখেই সমর ডাকল, "হ্যাঁরে, তোর নাম কি?" ছেলেটা বলল, "গণপতি লোহার।" "তুই পড়াশুনা করিস?" "হ্যাঁ, করি তো।" "কোন ক্লাসে পড়িস?" "ক্লাস সেভেনে।" "তোর বাবা কি করে?" "আজ্ঞে আমার বাবা দুবছর আগে একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছে।" "তোর বাড়িতে আর কে আছে?" "আজ্ঞে আমি আর আমার দিদি।" "কেন তোর মা?" "মা তো ছোটবেলাতেই মারা গেছে।" "তোর দিদি কত বড়?" "দিদি আমার থেকে দুবছরের বড়।"


"তোর দিদি কোন ক্লাসে পড়ে?" "দিদি ইস্কুলে পড়ে না, দিদি লোকের বাড়ি কাজ করে।" সমরের খুব মায়া হল, এইটুকু ভাই-বোন দুটো একলা একলা পরিশ্রম করে জীবন ধারণ করে। সমর বলল, "এখানে কোথায় ভাল ছৌ-নাচের মুখোশ পাওয়া যায় জানিস?" গণপতি বলল, "হ্যাঁ, চলো দেখিয়ে দিচ্ছি।" ওরা তিনজন একসাথে গাড়ী করে চড়িদা গ্ৰামে গিয়ে ছৌ-নাচের ভাল ভাল দামি মুখোশ কেনাকাটা করল। সমর গণপতিকে একটা বড় চকোলেটের প্যাকেট কিনে দিয়ে বলল, "নে খেয়ে নে"। কিন্তু গণপতি খাচ্ছে না দেখে সমর আবার বলল, "কিরে খাচ্ছিস না কেন, খেয়ে নে লজ্জা করিস না।" কিন্তু তাও গণপতি খাচ্ছে না দেখে বিরক্ত হয়ে নীলা বলল, "এইসব গেঁয়ো ভূতদের কখনো চকোলেট দিতে হয়, তোমার যত সব আদিখ্যেতা।" সমর বলল, "কিরে তুই চকোলেট খাস না?" গণপতি বলল, "হ্যাঁ খাই।" "তাহলে তুই খাচ্ছিস না কেন, তখন থেকে বলছি?" গণপতি বলল, "ঘরে গিয়ে দিদির সঙ্গে খাব।" সমর অভিভূত হয়ে গিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল।


                খানিকক্ষণ পরে সমর আর নীলা হোটেলে ফিরে আসল। হোটেলে ফিরে নীলা দেখল ওর মানিব্যাগটা নেই। তক্ষুণি নীলার মনে পড়ল ঐ ছেলেটা ঠিক তার পাশেই ছিল কেনাকাটা করার সময়, নিশ্চয়ই এটা ওরই কাজ। সমরকে বলল, "দেখ, তুমি ঐ ছেলেটাকে খুব লাই দিচ্ছিলে না, ও আমার মানিব্যাগটা চুরি করে পালিয়েছে।" ঠিক তখনই দরজায় ঠক্ ঠক্ শব্দ। নীলা একরাশ বিরক্তি নিয়ে "এখন আবার কে আসল" বলতে বলতে দরজা খুলেই দেখল গণপতি দাঁড়িয়ে আছে, আর বলল "দিদিমণি, এই নাও তোমার মানিব্যাগটা রাস্তায় পড়ে গেছিল।" নীলা তাড়াতাড়ি মানিব্যগটা নিয়ে খুলে দেখল ওটা সম্পূর্ণ অক্ষত আছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational