STORYMIRROR

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Crime Thriller

3  

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Crime Thriller

শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ

শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ

10 mins
259


বিয়ের পর নাকি প্রেমের মৃত্যু! কেউ কেউ বলে, কিন্তু দাম্পত্য প্রেমের হাজার হাজার কাহিনী তো আছে! রাজীবের মনে হয়, অন্তত তার জীবনে বিয়ের পর প্রেমের সত্যি মৃত্যুই হয়েছে।ভালোবাসা আর প্রেমের আবেদন তো সীমার কাছ থেকেই এসেছিল!

কেমন অযাচিত ভাবে। কোন কাজ নিয়ে তার অফিসে সীমা গেছিল,নিজের জন্যে নয়! বান্ধবীর বাবা, তাদের অফিসের পিয়ন ছিলেন। আর তার অকাল মৃত্যুর পর বান্ধবীর পরিবার সরকারী নিয়মে পাওনা গন্ডা প্রাপ্য আদায় ও উত্তরাধিকারী হিসাবে নির্ভরশীল তার অবিবাহিতা কন্যার চাকুরী জন্য যোগাযোগ করতে। আধুনিকা স্মার্ট সীমা তার বান্ধবীর সাথে রাজীবের অফিসে যেত। সরকারী নিয়মে কী কী কাগজ ডকুমেন্ট লাগে, সব বুঝিয়ে ,রাজীব অনেক সময় ব্যয় করে খুব আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে।

 রাজীবের এই নিস্বার্থ সারল্য আর সহযোগিতায় সুন্দরী সীমাকে মুগ্ধ করে। তার মত স্বামী নাকি শিবের শত বছরের তপস্যা ছাড়া পাওয়া যায় না। রাজীবের মনের মত করে নিজেকে সে বদলেও নিয়েছিল। পোষাক , আচার আচরণে সাবেকী আনা এনেছিল। ভারতের সাংস্কৃতি ঐতিহ্যের প্রতি রাজীবের বিশ্বাস ছিল। আধুনিকা সীমা মনে প্রানে কিন্তু ভোগবাদে বিশ্বাসী। নিজের স্বার্থে সে যেকোন কাজ করতে পারে, সেটা প্রতারণা, শঠতা বা আরও কঠোর কিছু হোক,সে সব পারে এবং তা খুব নিখুঁত সাবলীল ভাবে।

প্রাথমিক আলাপের পর , সীমা ঘন ঘন রাজীবের অফিসের বাইরে বেলার শেষে এসে অধীর ভাবে অপেক্ষায় থাকত । ফোনে তার আগমন জানাত ,রাজীব অফিস থেকে বের হলে, তার গাড়ির পিছন সীটে বসে কত দুজনের গল্প হতো।ড্রাইভার গাড়ি চালাতো, সীমাকে বাড়িতে আগে ড্রপ করে, রাজীব বাড়ি ফিরত। রাজীবের সারল্য আর মেধার গুন কীর্তন তার প্রতিটি কথায় ।সরল মনের রাজীব অচিরেই সীমার প্রেমে হাবুডুবু খেল, অবশেষে বিয়ে।

রাজীব সাদাসিদে ,পড়াশোনার মানদন্ডে ভীষণ মেধাবী ,অর্থনীতিতে মাষ্টার ডিগ্রি করে, সি এ,আর ম্যানেজমেন্টের ডিগ্রি আছে। কেন্দ্র সরকারী সংস্থায় কাজ করে। উচ্চ পদস্থ অফিসার, ভালো বেতন। অফিসে জটিল কাজ ও সিদ্ধান্ত নিতে এক দায়িত্বশীল কর্মী।সৎ কিন্ত আবেগ প্রবন । দেখতে শুনতে সুন্দর বলা যাবে না । চোখে ভারী চশমা, উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন, রোগা পাতলা গঠন, মাঝারি বর্ন, গোঁফ দাড়ি কামানো,শান্ত শিষ্ঠ ভদ্র নিরীহ চেহারা । পড়াশোনা আর চাকরীর বাইরের জগতে বড় আনাড়ি।

বন্ধু কুনাল, তার ম্যানেজমেন্ট পড়ার সাথী, ভীষণ মেধাবী, কিন্ত পড়াশোনায় ও অফিসের কাজকর্মে রাজীবের মত দক্ষ নয়। তার এই কাজ পাবার পিছনে রাজীবের কিছুটা অবদান আছে। কুনালের কুট বুদ্ধি গোয়েন্দাদের হার মানায় ,সমাজের দরিদ্র মানুষের প্রতি একটা দায়বন্ধতা নিয়ে একটা সংগঠনে যুক্ত। এই সুত্রে, প্রশাশনিক কর্তা, পুলিশ, আরও অনেক মহলে তার যাতায়াত, পরিচিতি আলাপ আর বন্ধুত্ব। 

 

রাজীবের বিয়ের পর থেকেই কেমন যেন উদাস মনমরা। কাজ করে,তবে সেই বিচক্ষনতা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মেধা মাঝে মধ্যেই কেমন তাল কাটে।

রাজীব ভীষণ চাপা স্বভাবের মানুষ, পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবনের কথা সে অন্যের সাথে শেয়ার করতে চায় না। কষ্টে যন্ত্রণায় গুমরে মরলেও না। এটা কুনাল জানে, তার বাবা জানে, স্ত্রী সীমাও জানে। এই সুযোগ নিয়েই, সীমা তাকে হেনস্থা করে, দাবিয়ে রাখে। কিন্তু তার টাকায় অবাদ অধিকার। একটা বড় ইনসুরেন্স করে তাকে নমিনি করার প্রস্তাব না বলে ,দাবী বলাই ভালো, সীমা করেছিল। রাজীব তাতে রাজী নয়।

একটা বাচ্চা অন্তত হোক । মনে মনে ভাবছিল, সীমার আচরণ দিন দিন যেমন বদলাচ্ছে, ওকে বিশ্বাস করা এখনই ঠিক নয়,অন্তত একটা সন্তান হোক। সন্তান, স্বামী স্ত্রীর বন্ধন সেতু। রাজীব ভাবে কত দম্পতির,দাম্পত্য জীবন টিকে আছে শুধুমাত্র সন্তানদের প্রতি বাবা মায়ের তীব্র স্নেহ ভালোবাসার মোহে। অজানা দুই নর নারী পরিনত বয়সে প্রেম বা অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে বা ধর্মপত্নী শাস্ত্রমতে জন্ম জমান্তরের সম্পর্ক সে সব মিথ ! তাতো বৃটিশ যুগ বড়জোর আটের দশক অবধি ধারনা বা বিশ্বাস ছিল! আজ আর কজন বিশ্বাস রাখে!

রাজীবের এখনকার মূল্যায়নে মনে হয় সীমার এক ব্যক্তিসর্বস্ব স্বার্থপর নারীবাদী ভোগবাদে বিশ্বাসী জংলী আধুনিকা । ভারতের ঐতিহ্য সাংস্কৃতি ও আচার আচরণে তার ঘৃনা। বিদেশীদের ভোগসর্বস্ব কালচারে মোহগ্রস্থ।তবে একা সীমা নয়, অনেক তথাকথিত শিক্ষিত পুরুষরাও আজ ভারতের ঐতিহ্য সাংস্কৃতি প্রতি চরম বিরক্তি ঘৃনা,আর অবিশ্বাস। এই সবজান্তা পুরুষরাও সীমাদের সমর্থন করে। এটাই নাকি তাদের প্রগতিশীলতা! রাজীব ভাবুক মনে এমন সব কত উদঘট চিন্তা মাঝে মাঝেই করে। রাজীব প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্য, দর্শন সাংস্কৃতি, সামাজিক বন্ধন, আচার আচরণে আজও বিশ্বাস রাখে।

কুনাল, সেদিন রাজীবকে চেপে ধরে বলে, "আমায় খুলে বল, তোদের সমস্যা কী! এত কম বয়স, এই কবে বিয়ে করলি! এভাবে জীবন কাটালে সে তো এক নরক যন্ত্রণা ! দরকারে আপোষ না হলে ডিভোর্স নে।এখন তো স্বাভাবিক ঘটনা।কত নিবি!"

রাজীব ভেঙ্গে পড়ল, মুখচোখ থমথমে, খুব বিষন্ন দেখাচ্ছিল বলল," আমি নাকি বিদ্যাবোঝাই বাবু মশাই ! মাঝিকে অনেক ব্যাঙ্গ ক'রে, যখন ঝড় উঠল, মাঝি বলল সাঁতার জানেন বাবু? তখন বাবু না বলল , আর মাঝি তাকে ব্যাঙ্গ করল বলল ,তার সব বিদ্যা মিছে।"

কুনাল উত্তেজিত হয়ে বলে, "এর মানে কী! শিক্ষা মেধার কোন মুল্য নেই !পড়ত আমার পাল্লায় ওর বাপ চোদ্দ গুষ্টির নাম ভুলিয়ে দিতাম। কঠোর হ , শক্ত হ , রাজীব !সংসার একটা সমুদ্র, নদীতে ওঠা ঝড় নয়, এখানে প্রতি মুহূর্তে তুফান ওঠে। সাঁতার নয় এই তুফান সামলাতে মেধা লাগে। 

রাজীব প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে অসহায়ের মত বলে, "আমাকে হুমকী দেয়, যা আইন আছে বেশী চালাকী করলে, এমন আইনে ফাঁদে ফাঁসাবো, তোমার বাবা মাকেও বুড়ো বয়সে জেল খাটাবো, তেমন উকিল নাকী তার জানা।"

কুনাল তাজ্জব হয়ে বলে ," বলিস কী ! এতো রীতিমত ব্লাকমেলিং! ঠিক করে বলত তো, তোরা সেক্স করিস!"

রাজীব খানিক চুপ থাকে ,হতাশায় বলে , " ওর শরীরের অধিকার ওর নিজস্ব, ইচ্ছা হলে, আমাকে দিতে পারে, না দিতেও পারে ! গতকাল আমি বললাম, আমার মা চাইছে বাচ্চা নিতে, আমার বয়স তো বত্রিশ তেত্রিশ পাড় হল। কী উত্তর দিল জানিস! তোমার মত হনুর সন্তান আমি গর্ভে ধরব কিনা এখনও ভাবি নেই। আর এ শরীর আমার , আমি বাচ্চা নেব ! কী নেবো না, এখন নেবো! না পরে নেবো, সেটা একশভাগ আমি সিদ্ধান্ত নেব। তুমি বা তোমার মা নয়। "

কুনাল এবার জোর দিয়ে বলে " ও তোকে মোটেও ভালোবাসে না, ওর প্রেমটা ছিল জাষ্ট ছলনা। তুই ঠকেছিস। আচ্ছা বলত,ওকি তোর টাকা নিয়ে একা শপিং করে, বা না জানিয়ে বাড়ির বাইরে যায় ? "


রাজীব খানিক চুপ থাকে ,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, "আমি যখন অফিসে আসি , মাঝে মধ্যেই ও বাপের বাড়ির যায়। মাকে বলেই যায়, বিকালেই ফিরে আসে ।"

"তোর মা এত তোর মানসিক চাপ যন্ত্রণা ,অবিশ্বাস কিছু জানে না নিশ্চয়! "

"আমার ব্যক্তিগত সমস্যা আমি কেন ওদের বলে টেনশন অশান্তি বাড়াবো ! বাবা মা বষস্ক মানুষ এতে দুঃখ পাবে, হাই প্রেসার, সুগার, হাজার রোগ, ভেবে ভেবে অসুস্থ হয়ে মরেই যাবে। পাঁচ বছর আগে বাবার এক বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার বিয়ের যোগাযোগ করে, আমি সেই সময়ে বিয়ে করতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। আরও কেরিয়ার আরও ডিগ্রি, আরও ভালো বেতন ভালো চাকরী এই সব করে করে নিজের সর্বনাশ নিজেই করেছি। আর ওদের জড়াবো না। ও যা চায় ওকে দিয়ে দি। অশান্তি আর ভালোলাগে না।"

কুনাল খানিক ভেবে বলল,"হাজার দশেক মত খরচ লাগবে, তুই দিলে খুব ভালো, না হলে আমি নিজে খরচ করব।"

উদ্বিগ্ন রাজীব বলে "কি করবি? "

"ওর পিছনে গোয়েন্দা লাগাবো। "

" ও জানলে আমার কী হাল করবে জানিস? "

"আরে ছাড় তো! আরও কত ধূর্ত চালাক মানুষের পিছনে বাঁশ দিয়েছি। যারা অনেকেই প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতাদেরও ঘনিষ্ঠ। আর বেশী কিছু বলব না। "

"টাকা আমি তোকে দিয়ে দেবো,তবে খুব সাবধান! আমি যেন না বিপদে পড়ি। "

 এর দিন চারেক পর কুনাল বেশ উত্তেজিত হয়ে রাজীবকে জানাল,"যা সন্দেহ করেছি ঠিক তাই!তোর বৌ অন্যের প্রেমেতে হাবুডুবো খাচ্ছে। তুই অফিস বের হবার পর,ওর বাপের বাড়ি যাবার নাম করে তোর মা কে বলে,তোর উপার্জনের টাকায় ফুর্তি করে। গোপনীতার কারনে ছেলেটি নাম বাড়ি ঠিকানা তোকেও বলা যাবে না। ছেলেটার বাবা কাজের সুত্রে বাইরের রাজ্যে, মোটামুটি সচ্ছল নিজস্ব ওর বাবার বাড়ি আছে, বাড়ির লোন শোধ করতে হয়।ছেলেটা এককথায় লোফার বাউন্ডুলে বেকার, একটা দামী মটোর সাইকেল বাপের টাকায় কিনেছে।আশি নব্বই স্পীডে বাইক চালায়, আর তোর বৌ ওর কাঁধে হাত রেখে ,"এই পথ যদি না শেষ হয় " এই মেজাজে প্রেমিকের সাথে, হোটেলে, বারে ঘুরে বেড়ায়। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেল। তোর সাথে প্রেমের অনেক আগে থেকেই ওদের ভালোবাসা । ও বেকার, বাড়িতে মা, দুটো বোন। বিয়ে সম্ভব নয়, তাই তোকে মুরগী বানিয়েছে। ধনী দুর্বল ভীরু ভদ্র সচ্ছল উচ্চ আয়,এমন মানুষ তার দরকার। এটিএম,আর কী! যদি সমস্যা করিস।আইনের ভয়,বাবা মাকে জেলে ভরার ভয়ে, তুই আপোষ করবি।তোর টাকা, আর ইয়াং সুন্দর স্মার্ট যুবক, কিন্ত বেকার নিস্কম্মা প্রেমিকের সাথে ফুর্তি, এমন সুখ আর কোথায় !তোর সাথে সেক্স করবে কেন!ওর শরীরের চাহিদার তো তোর দশগুন একজন মিটিয়ে দিচ্ছে !"

রাজীব মানসিকভাবে ভেঙ্গেই পরে বলে "আমার আত্মহত্যা ছাড়া পথ নেই।"

কুনাল তীব্র ভৎসনা করে বলে, "হেরে যাচ্ছিস! তুই তো কাপুরুষ! তোর বাবা মায়ের সর্বনাশ হবে,দুঃখ হবে।ওর তো ভালোই হবে। তুই মরলে! এত ভালো বেতনের চাকুরের স্ত্রী হিসাবে ও মোটারকম কমপেনসেশন, অন্যান্য বেনিফিট,আর ডাই ইন হারনেস্ গ্রাউন্ডে সরকারী চাকরী সব পাবে। আর ঐ বেকার প্রেমিক পরে বিয়ে করে সুখে থাকবে। সত্যি তুই গাধা।পড়াশোনাতে এত ভালো, আর সাংসারিক, সামাজিক বোধবুদ্ধিতে জিরো।"

রাজীব হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছিল বলল, "আর ভালো লাগছে না। আমি আর পারছি ,নিজের প্রতি নিজের ঘৃনা হয়। তাই মাঝে মাঝেই ও বলে , তুমি কাপুরুষ, মটোর সাইকেল চালাতে পারো না,গাড়ির চালাতে জানো না, ড্রাইভার রাখতে হয়েছে। বারেতে যাও না, হোটেলে যাও না,ড্রিং করো না।সিগারেট পর্যন্ত খাও না। যেন পাঁচ বছরের শিশু! তুমি আবার সেক্স কী করবে, সেক্সের এর কী বোঝ !

উত্তেজিত আর ক্ষোভে কুনাল বলল ,"আর টাকা হাতানোর সময় শুধু স্বামী ! স্মার্ট দক্ষ মটোর বাইকে আশি একশো তে স্পীড তোলা ঐ প্রেমিক , তোর একের দশমাংশ উপার্জন করে দেখাক না ! আমার হাত নিসপিস করছে, হতো যদি আমার স্ত্রী, এক চড়ে চির ঘুম পারিয়ে দিতাম, ফাঁসি যেতে হলে যেতাম। অবশ্য সেটা করতে হতো না। সেই বিয়ের প্রথম রাতেই বিড়াল কাটার গল্প টা জানিস তো। জগত টাই শক্তের ভক্ত নরমের যম।"

একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল " কাজের কথায় আয়, তুই আজ রাতে একটা মোবাইলে তোদের যাবতীয় কথাবার্তা অডিও রেকর্ড করবি, গোপনে এমন রাখবি যেন ও বুঝতেই না পারে। এসব আলোচনার কিছুই ওকে বলা দরকার নেই । ডিভোর্সের প্রস্তাব দিবি। কিছু টাকা যাক, জীবনে অনেক আয় করবি, ওয়ান টাইম সেটেলমেন্ট করে ওকে জীবন থেকেই বিদায় কর। কাল অডিওটা দিবি, বিতর্কিত কথা তুই বলবি না। আইনি লড়তে হলে ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। "

এদিন রাতে রাজীব ভীষণ উত্তেজিত ছিল। দুপুরে বাপের বাড়ির নাম করে ঘুরে এসেছিল। তাদের মধ্যে দাম্পত্য জীবনের মুল টাই কাটা। তবুও এক ঘরে শোয়া। হঠাৎই রাজীব বলল,"আমাকে তোমার পছন্দ নয়,আমার ও তাই। আমরা ডিভোর্স করলেই উভয়ে সুখে থাকব।"

সীমা ক্রোধে জ্বলে ওঠে!" মামার বাড়ির আবদার! আমার কোন সমস্যা নেই, ডিভোর্স আমি নেবো না।"

"তোমার সমস্যা না হলেও আমার আছে,তোমার তো ফুর্তি করার মানুষ আছে ।"

"এই একদম বাজে বকবে না! ইতর অসভ্য। "

"আমি সব জানি ,বাপের বাড়ির নাম করে তুমি কী করো ! ডিভোর্স তোমায় নিতেই হবে।"

সীমা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে যায়," তার পর বলে, কে এই সব মিথ্যা বলল আর আমার নামে কলঙ্ক দিচ্ছ! কোটের চক্করে এমন ফেলব,তোমার বাবা মা জেলের ঘানী টানবে। "

" তুমি যা খুসী করো, আমার কাছে তোমার বিরুদ্ধে পোক্ত প্রমাণ আছে, তুমি নষ্ট মেয়ে ! কত টাকা আমার আজ অবধি নিয়েছ, কোথায় খরচ করেছ, আমি সব হিসাব চাইব।সব প্রমাণ হবে। কোটের ভয় আমি খাই না।"

সীমা এবার চুপ করে গেল, আর রা দিল না।কিছু যেন আগাম পরিকল্পনায় গুম হয়ে খানিক বসে, শুয়ে পড়ল।

পরদিন রাজীব অফিসে এসে কুনালকে অডিও শোনালে, কুনাল তাজ্জব হয়ে বলল , " এসব কী বলছিলি! ও তো সতর্ক হবে ! আমাদের আরও অনেক গোপন তথ্য এলে ভালো হত । তুই সব তালগোল পাকালি। ভাই কিছু মনে করিস না, পড়াশোনায় মেধা,অফিসে দক্ষতাই আসল মেধা নয়, তুই সংসার সমাজে জটিল পাকচক্রে ডাঁহা ফেল।"দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,"ওকে সতর্ক করে দিলি, সুবিধা ও পেয়ে গেল।"

রাজীব বাড়ি এসে শুনল,সীমা আজ তার মা বাবার সাথে ভালো আচরণ করেছে। তারপর তিন চার দিন বাড়ির বাইরে যায় নি। শ্বশুর শাশুড়ির কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে শুনে।কুনাল বলল,"এটাও ওর কোন চাল! তোর সাথে তিন চার দিন বাক্যালাপ নেই, অথচ তোর বাবার মার সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরী। আমার ভালো মনে হচ্ছে না।"

ঠিক দিন সাতেক পর ,কুনাল দুর্সংবাদ পেলো,গত সন্ধ্যা রাতে রাজীব মারা গেছে। বাড়ির নিকট সব্জি বাজারে অফিস ফিরে, সে নিজেই পায়ে হেঁটে বাজারে সব্জি কিনতে যেতো। নিত্য টাটকা শাক সব্জির বাজার তার নেশা।এদিন বাজার থেকে ফেরার পথে, একটু নির্জন স্থানে তাকে ধাক্কা মেরে, কোন কার স্পীডে চলে যায়। তাকে পথের মানুষ যত সম্ভব তাড়িতাড়ি স্থানীয় এক হাসপাতালে নিয়ে গেলে, মৃত ঘোষণা করে।

খবর পেয়েই কুনাল তীব্র অনুতাপ ও আফসোসে নিজের চুল ছিড়তে লাগল। তৎক্ষণাৎ সে রাজীবের বাড়ী গেল। তার বাবা মা শোকে পাথর। ভাই দুঃখে থমথমে মুখে বসে।রাজীবের স্ত্রীর কথা ওর ভাইকে জিজ্ঞেস করলে, সে বলল, "কাল থেকে সীমা বৌদি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল, দুঃখে সে কিছুই খাচ্ছিল না, অসুস্থ দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তাকে ভীষন ক্লান্ত দুর্বল লাগছিল। ওর বাড়ির লোক ওকে নিয়ে গেল।

কুনাল হতাশায় ক্ষোভে নিজের মাথা চাপড়ে এমন মুখ চোখের এক অভিব্যপ্তি প্রকাশ করল, যেন ছিপে ধরা পড়া কোন মস্ত বড় মাছ, জল থেকে তোলার আগেই, সুতো ছিঁড়ে গভীর জলে পালিয়েছে।

রাত তখন প্রায় এগারটা, রাত জাগা রাহুলের স্বভাব ,এই দুদিন আবার সে বেশ টেনশনে, সীমা তার সাথে হোয়াটস্অ্যাপস্ ছাড়া যোগাযোগ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছে। শত্রুরা ওঁত পেতে থাকবে।তার সাথে সম্পর্ক কথা হয়ত রাজীব কোন সুত্রে জেনেছিল, কিন্ত তারা কে বা কারা ,সে জানে না।মানুষের স্মৃতি বড় দুর্বল, আর আত্ম কেন্দ্রিক, পাঁচ ছ মাস পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।


এতরাতে হঠাৎই এক অজ্ঞাত নম্বরের ফোন। হ্যালো বলতেই ওপার থেকে হেসে উত্তর এলো, "রাহুল স্যার অনেক অনেক কনগ্রাচুলেশন। "

"আপনি কে বলছেন! আর কী জন্যই বা এই কনগাচুলেশন?"

"পথের কাঁটা সড়েছে, এবার সীমা কে বিয়ে করতে আর তো সমস্যা নেই!"

"আপনি কী আল ফাল বকছেন! সীমা কে ?"

"আহা বাবু সোনা, বুঝেছি,সীমার ডাই ইন হারনেস্ গ্রাউন্ডে রাজীব অফিসে একটা সরকারী কাজ না হলে মুস্কিল তাই না! বিয়ে করলে সীমার আর কাজ হবে না। সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টে মোটা মাইনে ,বেশ তো তাহলে ও চাকরিটা পেলেই বিয়েটা করো!"

"আপনি কে বলুন তো ! পাগলের মত কী সব ননসেন্স টক করছেন।"

"আমি রাজীবের প্রেত !" বলেই ফোনের ওপার থেকে খুব জোরে অট্টহাসী হাসতে লাগল।

এবার রাহুল ফোন কেটে দিল।আর ঐ নম্বর থেকে অবশ্য ফোন এল না।

রাহুল এসবে গুরুত্ব দিল না। বাহুবলী রাহুল বেশীরকম শরীর চর্চা, বাইক চালানো আর ফুর্তির জীবনেই মত্ত। আগেপিছে ভাবার তার সময় নেই।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy