Riya Singh

Abstract Drama Action

3  

Riya Singh

Abstract Drama Action

শেষ ঠিকানা তুমি (১৫)

শেষ ঠিকানা তুমি (১৫)

5 mins
247


কিছুক্ষণ পরে অরিন্দম কে ধুতি পাঞ্জাবি পড়ে আস্তে দেখে অয়ন্তিকা বললো,এসব কি অরিন্দম? তুমি এগুলো কি পড়েছো ? কার বিয়ে ? এই সময়ে মন্দিরে কেন ডেকেছো আমাকে?


আমি নয় বলো আমরা,তুমিও পড়বে বিয়ের সাজ আমার মতোই। একটু পরে লগ্ন আছে আমাদের বিয়ের। এবার পরিস্কার হয়েছে ব্যাপারটা। তাহলে ঝটপট রেডি হয়ে নাও দেখি।(অরিন্দম)


তোমার কি মাথাখারাপ হয়ে গেছে? কি ভুলভাল বকছো আর যদি বিয়ের কথা বলতেই হয় আমি আমার মা বাবা কে জানিয়ে করবো তাদের অমতে নয় বুঝেছো তুমি।


অয়ন্তিকার কথাগুলোতে অরিন্দম কোন কান না দিয়ে ই ওর হাতটা টেনে ধরে বললো, 


তুমি এইমুহুর্তে আমাকে বিয়ে করবে আর পরিবারের কথা আমি ভেবে নেবো। পড়তে বলেছি তুমি সেটাই করবে ব্যাস আর কোনো কথা না সর শাড়িটা নিরীহ মন্দিরে চলে এসো এদিকে চিহ্নটা আছে কোন রকমে চেঞ্জ করা যাবে যা যা দরকার দেওয়া আছে সব চলে আসবে। আমার কথাগুলো না শুনলে তোমার পরিবারের পক্ষে সেটা খুব একটা ভালো হবে না।


অরিন্দম এর কথাবার্তা কোন কিছুই অয়ন্তিকার ঠিকঠাক লাগলো না আজ, আপাতত যা বলছে করার পর একবার আরো বোঝানোর চেষ্টা করে দেখবে।ওকে বোঝাতেই হবে এভাবে কিছু হয়না কোনদিন।


অয়ন্তিকা শাড়ি পড়ে ওর পাশে এসে বসার পর অরিন্দম ওকে দেখে হা হয়ে গেল যেমনটা ভেবেছিলেন তেমনটাই অন্তভাগে সুন্দর দেবীর মত লাগছে।


তুমি কিন্তু ঠিক করছো না এসব, একবার ভেবে দেখো অরিন্দম। আমার মা বাবা আছে তারা কিভাববে? আমি তাদের কাছে ছোট হয়ে যাবো প্লিস বোঝো? অরিন্দম অয়ন্তিকার কোন কথাই শুনলো না সবটাই নিজের মতো জোর করে মিটলো,বিয়ে শেষে অয়ন্তিকার কোন কথাই বলেনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। গাড়িতে উঠে বসার পর অরিন্দম কে একটাই কথা বললো,


আজকের যা হলো এর জন্য তুমি কোনদিন ক্ষমা পাবে না আমার থেকে।কখনো না, আমি বাড়ি যাবো তোমার মনমতো যা হয়েছে হয়েছে এবার আমি আমার মনমতো ই সব করবো।


অয়ন্তিকা মাথা গরম করিও না। তুমি আমার স্ত্রী আমার বাড়িতে তুমি যাবে বাকিটা তোমার বাবা মাকে ডেকে মিটমাট করে না ব্যবস্থা করব আশা করি ওনারা ভুল বুঝবেন না। (অরিন্দম)


সেটা তুমি এইসব কান্ড করে আগেই বুঝিয়ে দিয়েছো আর নতুন করে তাদের বোঝানোর কিছু নেই। (অয়ন্তিকা)


বাড়ি ফেরার পর রামুকাকা ওদের দুজনকে এইরকম পোশাকে দেখে অনু চিৎকার করে বলে উঠলো,


ছোট মামণি নিচে আসো দেখো ছোট দাদা বাবু বিয়ে করে এনেছে নতুন দিদিমণি কে। কোথায় গেলে গো?


আয়েশ করে আরাম করে ল্যাদ খেতে খেতে বিছানায় শুয়ে চোখদুটো বন্ধ করেছে কি রামু কাকার চেঁচামেচি করায় অনুর সাধের ঘুম টা ভেস্তে গেল। নিচে গিয়ে নিজের মতো করে কেন চিৎকার করছো বলে দরজার দিকে তাকিয়ে পুরো স্ট্যাচু! ওকি ভুল দেখছে নাকি সামনে যেটা দেখি সেটাই আসলে সত্যি? এটা তো হওয়ার কথা নয় যতটা সম্ভব কাছাকাছি আনার চেষ্টা করেছিল তা বলে একেবারে শর্টকাট বিয়ে তাও দাভাই? পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রামুকাকাকে অনু একটু ধাক্কা মেরে বলল আচ্ছা কাকা আমরা যেটা দেখছি সেটা আমরা দুজনেই সত্যি দেখছি না স্বপ্ন দেখছি। উত্তরে রামু কাকা ফিস ফিস করে শুধু বললো,


নাগো মামনি দাদাবাবু সত্যি সত্যি বিয়ে করে এনেছে গো,বরণডালা সাজাতে হবি গো। আমি যাই সব সাজিয়ে আনি তুমি ততক্ষনে সামনে থাকো, বলে রামু কাকা চলে যাওয়ার পর অনু চোখদুটো ছোট ছোট ছোট করে অরিন্দমের সামনে গিয়ে বললো,


তুই কি সব কাজ জলদি জলদি করিস বলে বিয়েটাও এইভাবে করে ফেললি,একটু মায়াদয়া নেই তোর ? একটু আনন্দ করবো তাও তোর সহ্য হলো না? হুট করেই ভাবলি করেও নিলি।


তারপর অয়ন্তিকার কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বললো,


দি তুমিও? ভালোবাসো একে অপরকে বলতেই পারতে? আমি কি সুন্দর তোমাদের বিয়ে তে মজা করতাম। এই এক সেকেন্ডে রনি কে বলাই হয়নি,ওকে বলি আগে।


ওকে আগে শোনা,আমিও দেখি ওর হবু বউ কে বিয়ে করার পর ওর রিয়্যাকশন টা কেমন হয়?(অরিন্দম)


কেমন আর হবে? একটু কষ্ট পাবে ব্যস? এ তো ভালোবাসার গল্প নয় যে অনেক কিছু পছন্দ ছিল সবে তারমধ্যে তুই এইসব করেও ফেললি বলে অনু দুজনের দিকে আঙুল তুললো। 


এদিকে অয়ন্তিকার সবকিছু দুই ভাইবোন কথাগুলো ওর কাছে কিরকম লাগছে সেটা ওর কাছে অজানাই। শেষে থাকতে না পেরে অনুকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,


কিসের কথা বলছিস অনু কি কেকার হবু বউ কি বিয়ে কিছুই বুঝতে পারলাম না তারমধ্যে তোর দাদার এই আজব কান্ড।


সব বুঝতে পারবে বউদি,একটু সময় লাগবে বুঝলে (অনু)


বউদি? অয়ন্তিকার কথা শুনে অনু বললো,


তুমিতো আমার দাদার বউ মানে আমার বউ দি তো। কি রে দাদা ঠিকঠাক বলেছি তো?


দেখি সরো সরো বরণ করি বলে রামুকাকা অনু কে সরিয়ে সব স্ত্রী আচার করে ফেলল, শেষে অয়ন্তিকা কে বললো,


বাড়ির লক্ষী তুমি এবার সব কিছু সামলানোর দায়িত্ব তোমার।


অয়ন্তিকা রামুকাকাকে বললো ,


তুমি সবার বড় এতো দিন সবটা আগলে রেখেছো আগামী তে তোমার সাথে আমি ও আছি, কিছু ভুল হলে ধরিয়ে দিও। কাকা তো বাবার মতোই তাই না? মেয়ে হয়ে আবদার করলাম কিন্তু।


অয়ন্তিকার কথা শুনে বয়স্ক মানুষটা ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কেঁদে ফেললো,আসলে একটা নতুন মানুষের থেকে ও যে সম্মান পাওয়া যাবে তা উনি আশাই করেননি। এই বাড়িতে কাজের লোক হয়ে এলেও এখানকার একজন মানুষ হয়েই থেকেছে ,এখন বাবার মতো সম্মান পেয়ে মানুষটা কেঁদে ফেলার পর অরিন্দম পরিস্থিতি সামলাতে একটু মজার সুরে বললো,


আমি অনু বাদ নাকি ,যেই দেখেছো বউমা এসে গেছে সব আদর ওকে দিও না কিন্তু আমরাও আছি আমাদের ভাগের আদর আমাদেরকে ই দিতে হবে।অনুও তাল মিলিয়ে বললো, ঠিক বলেছিস দাদা আমাদের আদরের ভাগ কিন্তু কাউকে দেওয়া যাবে না। এইভাবেই কিছুটা সময় কাটিয়ে অনু অয়ন্তিকাকে অরিন্দমের ঘরে বসিয়ে দিলো,আর নিজের কিছু জামাকাপড় দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো।


অনু আমার ফোনটা আমাকে একবার দিয়ে যাবি। (অয়ন্তিকা)


দিচ্ছি তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো, আমি খাবার আর ফোন দুটোই আনছি কেমন (অনু)


হ্যালো মা? শোনো না বলছি আমি আজ বাড়ি ফিরে যেতে পারবো না, আজ নার্সিংহোমে চাপ তো তাই একটা বন্ধুর বাড়িতে থেকে যাবো। তোমরা চিন্তা করো না।


অয়ন্তিকা ফোন টা রেখে পিছনে ঘুরে দেখলো অরিন্দম দাঁড়িয়ে আছে।তাই অয়ন্তিকা ওকে দেখেই বললো,


তোমার জন্য এই প্রথম আমাকে মিথ্যে বলতে হচ্ছে,কালকের বাড়ি গেলে কি কি ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে ভেবেও কেমন লাগছে আমার। এসবের দায়ী একমাত্র তুমি,এর জন্য কোনদিন আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়েছিল সেটাও মনে করতে খুব রাগ হচ্ছে। যদিও ধরেনি অনুভূতি ছিল আমার জন্য,সেটা আমাকে সরাসরি বলে তারপর বাড়ির অনুমতি নিয়ে এসব করলে কি খুব খারাপ হতো?


অয়ন্তিকার কথার উত্তরে আজ অরিন্দমের কাছে বলার মতো কিছু ই নেই। একটু ধৈর্য ধরলে হয়তো এই সবের মুখোমুখি হতে হতো না। কিন্তু অয়ন্তিকা কি ওকে ভালোবাসে এটা সবার আগে জানা দরকার তারপর বাকিটা সব মিটমাট করে ওর রাগ কমিয়ে দেবে।তাই অয়ন্তিকা কে বললো,


কালকে তোমার সাথে আমিও তোমার বাড়িতে যাবো যেহেতু দোষ আমি করেছি সেটার দায় আমিই নেবো। সব ঠিক করে নেবো দেখে নিও।


চলবে...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract