শেষ থেকে শুরু
শেষ থেকে শুরু
ডিম্বাকৃতি টেবিলটার উল্টো দিকে বসা মদন দাসের দিকে তাকিয়ে অভিরাজ বলল,"মদন বাবু খোঁজটা তো ভালোই এনেছেন এবার তাহলে স্টোরিটা বলুন ।স্টোরি ছাড়া পাবলিক টানবো কেমন করে?"
কেকা হাসতে হাসতে বললো,"এই ধরনের ভুতুড়ে বাড়ির ভয়ানক একখানা গল্প থাকা মাস্ট তাই না?"
মদন দাস হেঁ হেঁ করে বললো,"ঠিক বলেছেন ম্যাডাম। এখানেও আছে।"
--বলে ফেলুন তাড়াতাড়ি।
মদন দাস শুরু করলো,"ধুধুল গড়ের এই বাড়িটা আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে তৈরি করেন জমিদার তেজপ্রতাপ চৌধুরী। বাড়ির নাম রাখেন বসন্ত কুঞ্জ।ধুধুলগড় ওনার জমিদারির একটা অংশ ছিল। তেজপ্রতাপ ও পরবর্তী কালে ওনার বংশধর রা খাজনা আদায় করতে এলে এখানে থাকতেন ।কখনও কখনও সপরিবারে কিছুদিন করে থেকেও যেতেন। আসলে ধুধুল গড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অসাধারণ। নদী, জঙ্গল, ছোট ছোট টিলা নিয়ে খুব মনোরম পরিবেশ।তো হল কি 1930 সাল নাগাদ তেজপ্রতাপ এর এক উত্তর পুরুষ চন্দ্রমোহন এক মেমসাহেবকে এনে তুললো ওই বাড়িতে। মেমসাহেব-এর সাথে চন্দ্রমোহনের আলাপ হয় কলকাতায়। মেমসাহেব সেই কিছুদিন হল ইংল্যান্ড থেকে কলকাতায় এসেছিলেন তাঁর বাবার কাছে। তাঁর বাবা বেশ হোমড়াচমরা একজন ইংরেজ ছিলেন আর এদিকে চন্দ্রমোহন যাকে বলে দেখতে এক্কেবারে কার্তিক ঠাকুর, ইংরেজি জানা শৌখিন প্রকৃতির মানুষ।শুধু তাই নয় চন্দ্রমোহন অতি মাত্রায় রমণীমোহন ও ছিলেন। যাকে বলে মেয়ে পটাতে ওস্তাদ লোক। মেয়েমানুষের নেশা ভালো মতোই ছিল। ঘরে সুন্দরী বউ থাকতেও বাইজিদের কোঠায় ঘুরতেন।তখন জমিদার ছিলেন চন্দ্রমোহন এর বাবা রামনারায়ণ। তো হলো কি সেই মেমসাহেবকে চন্দ্রমোহন এমন পটালো যে সে নিজের বাপের কথা অগ্রাহ্য করে চন্দ্রমোহন এর সাথে ধুধুল গড়ে চলে এলো। মেমসাহেবের নাম ছিলো এলসা।তো হলো কি এলসা জানত না যে চন্দ্রমোহনের বউ বাচ্চা আছে। মেমসাহেব হলেও এলসা সত্যিই চন্দ্রমোহনকে খুব ভালোবেসেছিলো।তাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু চন্দ্রমোহনের তো অন্য ধান্ধা, কদিনের জন্য একটু মধু খাবে তারপর ফুরুত।বুঝলেন স্যার কদিন খুব মস্তি করলো দুজনে। মেমসায়েব দের দেশে তো বিয়ের আগেও সব ই চলে হেঁ হেঁ।"
---বুঝলাম। তারপর বলুন।
--তো বুঝলেন ম্যাডাম এলসা চন্দ্রমোহন কে বিয়ের কথা বলে আর চন্দ্রমোহন নানা বাহানা দেখায়। তো একদিন হল কি রামনারায়ণ-এর কানে এলো যে ছেলে মেমসাহেব নিয়ে ধুধুল গড়ে ফস্টি নস্টি করছে। লোক পাঠিয়ে খবর দিলেন যে এসব বন্ধ করে পত্র পাঠ বাড়ি ফিরতে নাহলে ত্যাজ্য পুত্ৰ করবেন। এলসাও জানতে পেরে গেল যে চন্দ্রমোহন বিবাহিত।অশান্তি শুরু হলো।চন্দ্র মোহন পরিস্কার জানিয়ে দিলেন যে শুধু ফুর্তি করার জন্য এলসাকে এনেছিলেন এখন সে নিজের পথ ধরুক।নিজের ভুল বুঝতে পেরে এলসা প্রথমে খুব ভেঙে পড়ল তারপর একদিন রাতে এলসা উধাও হয়ে গেলো। চন্দ্রমোহন বলেছিলেন যে এলসা কলকাতা ফিরে গেছে। কিন্তু তারপর থেকে ওই বাড়িতে এক মেয়ে মানুষের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায় মাঝে মাঝেই। খুব করুণ সেই আওয়াজ শুনলে নাকি ভেতর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। ওই ঘটনার পর থেকে জমিদার বাড়ির কেউ ওই বাড়িতে রাত কাটাতে পারেনি। চাকর বকররাও পালায়। সেই থেকে পরিত্যক্ত ওই বাড়ি। শুধু দয়াল নামে এক চাকর ছিল এলসা তাকে খুব স্নেহ করতো সে রেগুলার বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করতো, অবশ্য রাতে থাকতো না। সবাই শুনলেও দয়াল কোনোদিন সেই কান্নার আওয়াজ পেত না। মাঝে মাঝেই নাকি এক অপার্থিব কান্নার আওয়াজে সারা বাড়ি কেঁপে ওঠে। এখন যে কেয়ারটেকার সেও ওই দয়ালের বংশধর। নাম নিতাই।"
---নাইস স্টোরি।
হাসতে হাসতে বলল কেকা।
---আপনি অর্ক চৌধুরীর সাথে কথা বলেছেন? প্রশ্ন করে অভিরাজ।
--হ্যাঁ স্যার। এরকম একটা লস্ট প্রপার্টি কেউ কিনতে চাইছে শুনে উনি তো একপায়ে খাড়া।
--ওকে। ওনার ফোন নম্বর টা দিন।
মসৃণ পিচের রাস্তায় ছুটে চলেছে নতুন কেনা অডিটা। অভিরাজ নিজেই ড্রাইভ করছে। পাশে বসে কেকা গুনগুন করে একটা গানের কলি গাইছে।
---এই প্ল্যান টা সাকসেসফুল হলে দারুণ হবে বলো।
---হুম। প্ল্যান টা কার দেখতে হবে তো।
---ঠিক ঠিক। এমন ইনোভাটিভ প্ল্যান শুধু আমার ডার্লিং এর কাছেই পাওয়া যেতে পারে।
---প্ল্যান টা সাকসেসফুল হলে সবাই ঝটকা খাবে। কেকা বলে।
বাস্তবিকই অভিরাজ যখন পারিবারিক ব্যবসার সাথে সাথে নতুন কিছু করার চিন্তা ভাবনা করছিল তখন কেকাই এই ঘোস্ট ট্রাভেলিং এর আইডিয়াটা দেয়। বিদেশে তো বহু জায়গায় এটা আছে।অভি আর কেকা করুর ই ভুতের ভয় নেই। তাই এরকম একটা বিজনেস প্ল্যান করছে ওরা। একটা মোটামুটি মার্কেট সার্ভে করে ওরা দেখেছে বহু মানুষই ভৌতিক অভিজ্ঞতার আস্বাদ নিতে আগ্রহী। এডভেঞ্চার প্রিয় অনেক লোকজন আছেন যাঁরা জীবনে অন্তত একবার ভুতুড়ে পরিবেশ এর থ্রিল উপভোগ করতে চান। বাড়িটা যদি পছন্দ হয়ে যায় ওরা এটাকে একটা হোটেলে রূপান্তরিত করবে যেখানে সত্যিকারের ভুতের দেখা পাওয়ার আশায় লোক ছুটে আসবে। অভিরাজদের পুরী, গোপালপুর আর দিঘাতে তিনটে হোটেল আছে তাই এমনিতে হোটেল খুলতে কোনো সমস্যা হবে না। কেকা তো নাম ও ভেবে রেখেছে হোটেলের 'হন্টেড ইন'। বাড়ির কেউ এখনো ওদের এই আইডিয়ার ব্যাপারে জানে না। আজও দুজনে অন্য জায়গা যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছে।
অভিরাজ একবার কেকার দিকে তাকালো। আজ থেকে তিন বছর আগে ও যখন বাড়িতে বলে যেও কেকাকে বিয়ে করতে চায় তখন সবাই বাধা দিয়েছিল কারণ কেকা দেখতে সুন্দরী হলেও একেবারে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ওর এক মামা কি কারণে যেন জেল খাটছে। সব মিলিয়ে দুজনের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস-এর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। অভির মা তো বলেছিলেন,"তুই কি রে? একটা মিডিলক্লাস ফ্যামিলির মেয়েও পেলি না যাদের প্রচুর অর্থ না থাক শিক্ষা-দীক্ষা রুচি এগুলো আছে। একটা হাঘরে মেয়ে যার মামা জেলে, কাকা পাঁর মাতাল তাকে তোর পছন্দ হলো?" অভি অনড় ছিল নিজের সিদ্ধান্ত এ। আজ কেকা নিজগুনে সবার নয়নের মণি। মা ওকে চোখে হারান আর বাবা নিজে হাতে ধরে ওকে ব্যবসায় এনেছেন।
---এই জানো রবি ফোন করেছিল,ওর প্রমোশন হয়েছে।
---বাহ! গুড নিউজ কিন্তু ব্যাটাকে বিয়ের নাম করলেই পালায়।
---এবার ওর বিয়েটা তো দিতেই হবে।
--হুম।
রবি ওদের কলেজ লাইফ-এর বন্ধু।ওদের তিনজনের একটা গ্রুপ ছিল।
বাড়িটার দিকে তাকিয়ে অভিরাজের মুখ দিয়ে একটা কথাই বেরিয়ে এলো,"ওয়াও। ওয়ান্ডারফুল। সত্যিই পেছনে জঙ্গল আর দূরে লাল রঙের টিলার পটভূমিতে গথিক স্টাইল এ তৈরি দোতলাবাড়িটা যেন একটা ফ্রেমে বাঁধানো ছবি। বাড়িটার ইতিউতি তার প্রাচীনতার চিহ্ন উঁকি দিচ্ছে। বাগানে একটা ভাঙা নারীমূর্তি দেখে কেকা উচ্ছ্বসিত ভাবে বলে উঠলো,"এই দেখো এইখানে একটা ফোয়ারা বসালে দারুন হবে।" অভিরাজ বললো ,"তুমি যে এখনই প্ল্যানিং স্টার্ট করে দিলে। আগে ভেতরে ঢুকে দেখি বাড়িটার কি কন্ডিশন। এটাকে হোটেলে কনভার্ট করা যাবে কিনা কেননা বাড়িটাকে বেশি ভাঙাভাঙি করলে লোকের ইন্টারেস্ট কমে যাবে।"
---স্যার ভেতরে আসুন। মদন দাস হাঁক দেয়।
---স্যার এ হলো নিতাই। এখানকার কেয়ারটেকার।
---নমস্কার স্যার। চৌধুরী স্যার আমাকে জানিয়েছেন আপনাদের আসার কথা।আপনারা নাকি এই বাড়িটা কিনে ভুতের হোটেল বানাবেন? সন্দিগ্ধ স্বরে জানতে চায় নিতাই।
---ঠিকই শুনেছ। তবে তোমার চিন্তা নেই। হোটেল হলেও তোমার চাকরি একটা থাকবেই তোমরা তো ভুতের আশীর্বাদ ধন্য বলে শুনেছি।।
অভিরাজ হাসতে হাসতে বলে।
---আসলে স্যার। এলসা মেমসায়েব আমার দাদুকে ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। দাদুর বয়সী ওনার এক ভাই ছিল নাকি। দাদুও ওনাকে খুব মানত।মেমসায়েব হলেও খুব মমতাময়ী ছিলেন। যে রাতে উনি উধাও হন দাদু সে রাতে এখানে ছিল না বাড়ি গিয়েছিল।মরার দিন পর্যন্ত দাদু আফসোস করত যে সেদিন যদি থাকত হয়তো মেমসায়েব কে রক্ষা করতে পারত।
---আচ্ছা নিতাই তুমি কোনোদিন শুনতে পাওনি ভুতের কান্না।
---না স্যার। একবার অর্ক স্যার এর এক বন্ধু জিদ ধরে রাতে এখানে ছিলেন তো বাধ্য হয়ে আমাকেও থাকতে হলো একলা কি করে ছেড়ে দি। রাত বারোটার পর থেকে উনি এমন কান্নার আওয়াজ পেতে থাকলেন যে অজ্ঞান হওয়ার জোগাড় কিন্তু আমি কিচ্ছু বুঝতে পারিনি। শেষে অতরাতে ই তাকে বের করে নিয়ে গিয়ে আমার বাড়িতে রাখি।
--ইন্টারেস্টিং। কেকা বলে উঠলো।
ছাদে উঠে ওরা তো মুগ্ধ হয়ে গেল। শেষ বিকেলের আলোয় চারদিকটা অদ্ভুত মোহময় হয়ে উঠেছে।
---ভুতের সাথে নিসর্গ ফ্রী এটাই হবে আমাদের ক্যাচ লাইন।। অভিরাজের কথায় কেকা হেসে ওঠে। বাড়িটা ওদের পছন্দ হয়েগেছে। ওপর নিচে অনেক রুম। প্রতিটা রুমে পুরোনো দিনের আসবাব পত্র আছে যেগুলো বাড়িটার ভুতুড়ে পরিবেশ বজায় রাখতে ওদের সাহায্য করবে।সর্বোপরি বাড়িটার কন্ডিশন ঠিকথাক আছে বলেই মনে হচ্ছে ওদের।
--- অন্ধকার হয়ে আসছে স্যার এবার ফেরা যাক।
---না মদন বাবু এখন তো আমরা যাবো না।
---কি বলছো কেকা? কেকা র কথা বুঝতে পারে না অভিরাজ।
--- এখন ছটা বাজে।আমরা এখানে আটটা পর্যন্ত থাকবো।শুধু তুমি আর আমি।মদন বাবু আর নিতাই বাবু চলে যাবেন।আটটার সময় ফিরে আসবেন।তারপর আমরা চলে যাবো।আটটায় বেরোলেও বাড়ি ফিরতে কোনো অসুবিধা হবে না।দশ টার মধ্যে পউছে যাব।আমি ভুতের কান্না শুনতে পাই নাকি দেখবো।
----বাড়ি পৌঁছনো টা কোনো ব্যাপার নয় কিন্তু তোমাকে নিয়ে একা এখানে ,ব্যাপার টা রিস্কি হয়ে যাবে।
---ভুতের ভয় পাচ্ছ?
---এই আমি ভুতে ভয় পাই না ভালো করেই জানো।আমার ভয় মানুষ কে।চিন্তিত মুখে বলে অভিরাজ।
---মানুষের ভয় নেই স্যার।ভুতের ভয়ে মানুষ এবাড়ির ছায়া মাড়ায় না।। কিন্তু আপনাদের একা থাকাটা বোধহয় ঠিক হবে না।আমরাও নাহয় থাকি আটটা পর্যন্ত।। নিতাই বলে।
---একদম না শুধু আমি আর অভি থাকব।প্লিজ অভি।
আদুরে গলায় বলে কেকা।কেকা র আব্দার ফেলার সাধ্য অভির কোনোদিনই নেই।
নিতাই তার বাড়ি চলে গেল আর মদন বাইক নিয়ে চা খেতে চলে গেল।
নীচের বিশাল হলঘরটায় দুটো কাঠের গদি আঁটা চেয়ারে বসে আছে ওরা।অন্ধকার নেমে গেছে।গোল টেবিল টার ওপর শুধু একটা মোমবাতি জ্বলছে।কেকাই সাথে এনেছিল।
----এই আমার না দারুন রোমান্টিক লাগছে।এরকম একটা বাড়িতে শুধু তুমি আর আমি।। কেকা র উচ্ছ্বসিত গলা।কিন্তু অভিরাজ কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে।অস্বস্তি হচ্ছে ওর ।কানের কাছে কে যেন খুব ফিসফিস করে বলছে,"গো ব্যাক।ডোন্ট স্টে হিয়ার।প্লিজ গো ব্যাক।"
"গেট আপ অভিরাজ।গেট আপ" খুব মিহি একটা আওয়াজ অভিরাজের কানে ঢুকছে।খুব আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো সে ।মাথার ওপর তারায় ভরা আকাশ।চারপাশে নিকষ কালো অন্ধকার।ঘোর টা একটু কাটতে অভিরাজ বুঝতে পারলো সে খোলা আকাশ এর নিচে শুয়ে আছে।কিন্তু সে এখানে এলো কি করে!!কেকা কোথায়?কেকা, কেকা নামটা মাথায় আসতেই ঘোর কেটে গিয়ে মনের পর্দায় সমস্ত ঘটনা ছবির মত ভেসে উঠলো অভিরাজের।মদন আর নিতাই চলে যাবার পর কেকা হঠাৎ করে খুব রোমান্টিক হয়ে পড়ে কিন্তু একটা ফিসফিসানি স্বর অভিরাজ কে অন্যমনস্ক করে দিচ্ছিল।এমন সময় কেকা ছেলেমানুষের মত তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার চোখ দুটো চেপে ধরে,অভিরাজও সব ভুলে কেকা কে জড়িয়ে ধরতে যায় কিন্তু পরবর্তী মুহুর্তে ই যেটা ঘটলো সেটা দুঃস্বপ্নেও কোনোদিন ভাবে নি অভিরাজ ।কে যেন ওর হাতদুটো কে পিছ মোড়া করে ধরলো।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পিছনে হাত বাঁধা অবস্থায় অভিরাজ কে চেয়ার টার মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো।অবাক চোখে অভিরাজ দেখলো ওর হাত বাঁধার কাজ টা করেছে মদন দাস আর ওর সামনে উদ্যত রিভলভার হাতে দাঁড়িয়ে আছে রবি, ওর অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু রবি।
---এসব কি রবি?আমাকে বাঁধলি কেন?তুই এখানে এলি ই বা কিরে? একনিশ্বাসে বলে ওঠে অভিরাজ।
---একসঙ্গে এত প্রশ্ন করিস না হাঁপিয়ে যাবি অবশ্য আর কতক্ষণ ই বা কথা বলার সময় পাবি তারপর তো চিরদিনের মতো চুপ হয়ে যাবি। টেনে টেনে বলে রবি।
---কি যা তা বলছিস? চিৎকার করে ওঠে অভিরাজ।
---তুই কেন এসব করছিস রবি? কাঁপা গলায় বলে অভি।
রবি উত্তর না দিয়ে হাসতে হাসতে কেকা র দিকে তাকায়।
---না রবি না।তুই কেকা র কোনো ক্ষতি করবি না। ভয়ে আর্তনাদ করে অভিরাজ।
---তাই নাকি? বলে রবি কেকা কে এক টানে নিজের বুকের কাছে টেনে নিলো।
---না আ আ আ.......।নিজের সমস্ত শক্তি একত্র করে চিৎকার করে ওঠে অভিরাজ ,সেই সাথে নিজেকে ছাড়া বার ব্যর্থ প্রচেষ্টা, বাঁধন গুলো আরও শক্ত হয়ে চেপে বসে ওর হাতে।
খিলখিল করে একটা হাসির হিল্লোল ওঠে।নাহ রবি নয় ,অভিরাজ বিস্ময় এর চরম সীমায় পৌঁছে দেখে এ হাসি বাতাসে ভাসিয়ে দিচ্ছে কেকা।খুব স্বাভাবিক ভাবে রবির বক্ষ লগ্ন হয়ে আছে সে।
----কিগো তোমার চোখগুলো যে ছানা বড়া হয়ে গেল।এটাই আমার আসল জায়গা যেখানে চিরকাল আমি থাকতে চেয়েছি।। হিস হিসে গলায় বলে কেকা।কেমন পিশাচিনির মত লাগছে ওকে মোমের আলোয়।
---কেকা!!!
----জানু ওকে সব টা বলে দাও।মরার আগে এটা তো জেনে মরুক কেন মরলো।। রবির গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে কেকা।
---ওকে সুইট হার্ট।
অভিরাজের গা ঘিন ঘিন করছে কিন্তু ও অসহায়।মদন দাস ওর কাছেই দাঁড়িয়ে পান চিবচ্ছে।স্কাউন্দ্রেল টাকে একটুও বুঝতে পারেনি অভি ।অবশ্য এত বছরের বন্ধু আর নিজের স্ত্রী কেই যে বুঝতে পারে নি সে আর কাকে বুঝবে।
---শোন অভি।আমি আর কেকা ক্লাস টুয়েলভ থেকে পরস্পরকে ভালোবাসি কিন্তু আমরা দুজন ছাড়া কাউ কে কোনদিন বুঝতে দি ই নি।কলেজে যখন তোর সাথে মিশলাম বুঝতে পারলাম তোকে ফাঁদে ফেলা খুব সহজ তোর ব্যবসায়িক বুদ্ধি থাকতে পারে কিন্তু সহজেই মানুষ কে বিশ্বাস করে ফেলিস আর খুব সেন্টিমেন্টাল তুই। তখন ই আমরা প্ল্যান করলাম বড়লোক হওয়ার।বুঝলি অভি আমি আর কেকা এক্কেবারে মেড ফর ইচ আদার।আমাদের চিন্তাভাবনা, স্বপ্ন, আর ওই যাকে বলে নীতিবোধ সব একদম খাপে খাপ মিলে যায়।তুই হলি আমাদের জ্যাকপট।তোকে আমি ই আরো উসকেছিলাম কেকা র সাথে প্রেম করার জন্য।কেকা র রূপ আমাদের কাজ টা আরও সহজ করে দিয়েছিলো।এত দিন অনেক কষ্ট করেছি রে আমরা আর পারছিনা তোকে টানতে।
---ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড।
----গালি দিচ্ছিস কেন?আমরা কত স্যাক্রিফাইস করেছি ভাব।আমার প্রেমিকার সাথে তিন বছর ধরে শুতে দিয়েছি তোকে ।আর বেচারি কেকা র কথা ভাব কতদিন ধরে এক্টিং করে যাচ্ছে।তোর বাবা মা চোদ্দ গুষ্টির সেবা করছে।আমার আদর খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তখন তুই.........।
----তোরা এত নিচ।আমাকে মেরে তোরা বাঁচবি ভেবেছিস?
---সেই জন্য তো এতদিনের অপেক্ষা।এখন কেকা র যা ইম্প্রেসন তোদের বাড়িতে তাতে কেউ ওকে সন্দেহ করবে না।এই ভূতুড়ে বাড়িতে হোটেল খোলার টোপ দিয়ে তোকে এখানে টেনে আনা সব আমাদের প্ল্যান।মদন আমার ই লোক।এখন তোকে ছাদ থেকে নিচের শান বাঁধানো জায়গা টায় ফেলব।তোর প্রাণ পাখি ফুরুত।তারপর কষ্ট হলেও কেকা কে একটু চোট দিতেই হবে।কেকা আহত অবস্থায় সিঁড়ির নিচে পড়ে থাকবে।আমি আউট অফ সাইট।মদন আট টার সময় নিতাই এর সাথে আবার ঢুকবে।সবাই জানে এটা ভূতুড়ে বাড়ি তো তোর খুনের দায়, কেকা র একসিডেন্ট এর দায় সব ওই মেমসাহেব ভুতের।কেকা কিছু দিন পাগলের মতো এক্টিং করবে স্বামী হারা হয়ে তাকে সামলাতে আমার মতো বন্ধুর দরকার হবে আর তোর মা বাবা তো মনি হারা ফ নী।তোর শোকে টসকে ও যেতে পারে।সব প্রপার্টি তখন কেকা র।হা হা হা।
হঠাৎ সব চুপ চাপ।এক অপার্থিব কান্নার আওয়াজ সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।কেকা রবি কে জড়িয়ে ধরেছে।মদন এতক্ষণে মুখ খুললো,"স্যার তাড়াতাড়ি করুন।মেমসাহেব কান্না শুরু করে দিয়েছে।পৌনে সাত টা বাজে।আট তায় নিতাই এসে যাবে।"
ওই অবস্থায় অভিরাজ কে টেনে হিঁচড়ে ছাদে নিয়ে গেল ওরা।কান্নার আওয়াজ টা ক্রমশ অসহ্য লাগছিল।তারপর ছাদ থেকে অভিরাজ কে ওরা........।
সব মনে পড়ে গেছে অভিরাজের।ওর হাত দুটো এখন খোলা।এত উঁচু থেকে পড়ে তো বাঁচার কথা নয় তবে কি ও আর....।
---না অভিরাজ।টুমি বাঁচিয়া আছো।
চারি দিকের ঘন অন্ধকারে র মধ্যে এক ছোট আলোক বৃত্ত।তার মধ্যে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তাঁকে দেখে অভিরাজের কল্পনার কোনো পরী মনে হলো।এক মুহূর্তের মুগ্ধতা র পরই কেঁপে উঠলো অভিরাজ।শিরদাঁড়া বেয়ে আতঙ্কের স্রোত বইতে লাগলো।
----আ আপনি.....।
---টোমার মাটোই এক হাটোভাগ্য যে ভালোবেসে সব হারায়ে ছিল।নিজের লাইফ টা ও ।আমাকে দেখিয়া ভয় পাই ও না।
---আপনি এলসা? ভয় অনেক টাই যেনো কমে গেল অভিরাজের যখন ই মনে পড়লো তার এই খানে থাকার কারণ টা।যার সবচেয়ে কাছের মানুষ টা তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে তার আর পৃথিবীর কাকে ভয়।
---ইয়েস।অভিরাজ।আমি ই এলসা।আজ এটো বছর পর টোমার জন্য আমি মুক টি পেলাম।
----আমার জন্য? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অভিরাজ।
----ইয়েস।মেনি ইয়ার্স এগো একদিন ড্রিংক করিয়া চান ড্রা মহান আমাকে শুট করিয়া দিলো।দেন এই বাড়ির একটা ওয়ালে আমার লাশ টা পুটিয়া দিয়ে প্লাস্টার করিয়া দেয়।আমি ওকে খুব ভালোবাসীতাম।ওর সেকেন্ড ওয়াইফ হইয়াও থাকিতে রাজি ছিলাম।সেদিন থেকে আমার আটমা এই বাড়িতে বন্ডি হইয়া আছে।গড এর কাছে কটো প্রে করিয়াছি কিন্তু মুক্টি পাই নাই আজ টমাকে বাঁচানোর পর এই দেখ এই হেভেনলি রে আমার ওপর পড়িয়াছে।আমি আজ মুক টি পাইবো।
----আপনি আমাকে বাঁচালেন?
----হাঁ।ওরা টমাকে ধাক্কা দিয়া ফেলিয়াছিলো কিন্তু আমি আমার পাওয়ার দিয়া টমার কুছু হটে দিই নাই।আফটার ডেথ আমার মতো সোল যারা এই ডুনিয়াতে আটকে থাকে তাদের কুছু পাওয়ার থাকে।
----কেন বাঁচালেন আমাকে? অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে বলে অভিরাজ।
----আমি তো আজ নিঃস্ব।নিজের চেয়েও যাকে বেশি ভালোবেসেছি আজ জানলাম এক মুহূর্তের জন্য ও সে আমাকে......,।। হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে অভিরাজ।
---কি করবো আমি?কি নিয়ে বাঁচবো আমি?আর সমাজ, পরিবার সবার কাছে কি বলবো?
ম্লান হাসে এলসা।
---কি নিয়া বাঁচিবে?আর টুমি মরিয়া গেলে টোমার প্যারেন্টস কি নিয়ে বাঁচিবে?ওরা তো তাডের ও মারিয়া সব প্রপার্টি লইবে।আমি টোমাকে ওয়ার্ন করার চেষ্টা করিয়াছিলাম টুমি বোঝ নাই।কিন্তু এখন টু মি আমার কথা শুনিবে।গেট আপ অভিরাজ এন্ড টেক ই ওর রিভেঞ্জ।
---রিভেঞ্জ??ভয় বিস্ময় মিশ্রিত কণ্ঠে বলে ওঠে অভিরাজ।
---ইয়েস।আমি পারি নাই কিন্তু টুমি পারিবে আমি আছি টমার সাথে।টমার রিভেঞ্জ কমপ্লিট হইলে আমি সানটি পাইবো।চলো আমার সাথে।
মুহূর্তের মধ্যে অভিরাজ নিজেকে সেই হলঘরের জানালার বাইরে আবিষ্কার করে।ভেতরে তখন ফাঁদে পড়া বাঘের মতো গর্জন করছে শয়তান গুলো।
---রবি কিছু করো ।একটু পরেই নিতাই চলে আসবে।অভির হাত বাঁধা দেখলেই সব বুঝতে পেরে যাবে।
---কি করবো আমি?বাইরে যাবার প্রতিটা দরজা এভাবে আটকালো কে?তখন থেকে চেষ্টা করছি একটাও খুলছে না।। চিৎকার করে বলে রবি।
----স্যার, এটা মনে হয় মেমসাহেব ভুতের কাজ।দেখছেন না কান্না টা ও বন্ধ করে দিয়েছে।। কাঁপা গলায় বলে মদন দাস।
----শালা হারামির বাচ্চা।তুই বলেছিলি কান্না কাটি ছাড়া মেমসাহেব আর কিচ্ছু টি করে না।মদনের কলার ঝাঁকিয়ে বলে রবি।
ক্যাচ ক্যাচ ....।"রবি দরজা খুলছে"কেকা চিৎকার করে ওঠে কিন্তু পরমুহূর্তেই তার মুখ খানা আতঙ্কে সাদা হয়ে যায়।
---অভি!!!!তুমি বেঁচে আছ!!!
---কি ভেবেছিলে মরে গেছি।তোমাদের রাস্তা সাফ।
---না মরলে এবার মরবি।। মরিয়া হয়ে উঠে রবি পিস্তল বার করে।
আঁক করে একটা শব্দ হলো।মদন দাস চোখ উল্টে ভিরমি খেল।অভিরাজের পাশে এলসা।
----এ এ কে? কেকা কাঁপছে।
----আমি অভিরাজের ফ্রেন্ড এলসা।বুঝিলে? হা হা হা এক পৈশাচিক হাসিতে গমগম করে ওঠে সারা হলঘর।। অভিরাজের পর্যন্ত বুক কেঁপে ওঠে।
কেকা প্রানপনে রবি কে জড়িয়ে ধরেছে।
---পানিশমেন্টএর জন্য রেডি হও টমরা।
---অভি আই এম সরি।প্লিজ ছেড়ে দাও আমাদের।তুমি তো আমায় খুব ভালোবাসো বলো।
কেকা র নির্লজ্জতা নির্বাক করে দিলো অভিরাজ কে।উত্তর দেবার রুচি হল না ওর।অভি জানে ও কোনোদিন নিজের হাতে কেকা র কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।এলসা ওদের নিয়ে যা খুশি করুক।ওর হয়ে প্রতিশোধ নিয়ে যদি মেয়েটার বুকের জ্বালা জুড়য় তো জুড়ক।ক্রমশ এলসার রূপ বদলাচ্ছে ওর সেই বার্বি পুতুলের মত চেহারার বদলে এখন একটা কঙ্কাল দাড়িয়ে আছে।আতঙ্কে কেকা আর রবির চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসছে।তার মধ্যেই রবি বলার চেষ্টা করে,"অভি আমরা মরলে তুই পার পাবি না ভুতের গল্প কেউ বিশ্বাস করবে না।তোর জেল হবে।ওকে আটকা তুই"।পরতে পরতে মিথ্যে জড়ানো অতীত অভিরাজের ভবিষ্যত চিন্তা কে স্তব্ধ করে দিয়েছে।ও শুধু নির্নিমেশ পলকে কেকা কে দেখছে।কেকা র চোখে ফুটে ওঠা মৃত্যু ভয়কে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে।এলসার রক্ত মাংস শুন্য হাত টা লম্বা হয়ে গিয়ে রবির মাথাটা ধড় থেকে একনিমেষে ছিঁড়ে নিল।সারা ঘরে রক্তের স্রোতের মধ্যে রবির মাথা টা গড়াগড়ি খাচ্ছে।
----এর চেয়েও অনেক বেশি পেন টুমি অভিরাজকে দিয়াছ কেকা।নিজের চোখে নিজের বয়ফ্রেন্ড এর মৃত্যু দ্যাখো। সত্যিই তো হৃদয় বিদীর্ণ হলে যে রুধির ধারা বয়ে যায় তা দেখা যায় না কিন্তু তার স্রোত
সারা জীবনেও শুকোয় না।
কি ঘটে গেল সেটা অনুধাবন করতে কেকা র কয়েক মুহূর্ত লাগলো তারপর "রবি ইইই ইইই" বলে চিৎকার করে জ্ঞান হারালো।
পায়ের তলার মাটি কাঁপতে লাগলো অভিরাজের।
ঘন অন্ধকারের মধ্যে একটা নীল আলো।তার মধ্যে দাঁড়িয়ে হাসছে এলসা।স্বর্গীয় সুষমা মণ্ডিত সে হাসি।হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে।"গুড বাই অভিরাজ" ফিসফিস করে কানের মধ্যে বলছে কেউ।
----স্যার পেশেন্ট এর জ্ঞান ফিরছে।
ধীরে ধীরে চোখ খুলল অভিরাজ।
----মিস্টার সেন কেমন লাগছে এখন?
---ঠিক আছি। আমি কোথায়?দুর্বল গলায় বলে অভিরাজ।
----আপনি ধুধুল গড় হাসপাতালে আছেন।
কয়েক ঘণ্টা পরে অভিরাজের শারীরিক অবস্থার সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডক্টর এর উপস্থিতিতে পুলিশ তাকে কয়েকটা দুঃসংবাদ জানায়।ইন্সপেক্টর খুব মোলায়েম ভাবে বলেন,"মিস্টার সেন।আপনাকে কিছু বলার আছে।একটু শক্ত হন আপনি।"অভিরাজ মুখ তুলে তাকায়।
---কি বলবেন অফিসার?
----দেখুন আপনারা কেন জমিদার বাড়িতে এসেছিলেন আমরা নিতাই এর কাছে শুনেছি।অর্ক চৌধুরীর সাথেও ফোনে কথা বলেছি।
ইন্সপেক্টর একটু চুপ করেন।অভিরাজ তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
----কাল রাত আট টা নাগাদ নিতাই যখন আপনাদের কাছে যাচ্ছিল তখনই জমিদার বাড়ি আর তার আশেপাশের মাটি কেঁপে ওঠে।এরকম ধরণের ছোট ভূমিকম্পের কথা আমরা কখনও শুনিনি ঠিকই কিন্তু কাল তাতেই বসন্ত কুঞ্জ ভেঙ্গে ধূলিসাৎ হয়ে যায়।নিতাই লোকজন নিয়ে গিয়ে আপনাকে উদ্ধার করে আনে।যদিও আপনার চোট সামান্য ই কিন্তু আপনি কাল সারারাত অচৈতন্য ছিলেন।
----কেকা কোথায়?এতক্ষণে প্রশ্ন করে অভিরাজ।
----আই এম সরি মিস্টার সেন।আপনার স্ত্রী আর মদন দাস কে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।ওরা ধ্বংসস্তূপে র তলায়একদম চাপা পড়ে গেছিলো।একটা কথা আর একজনের লাশ পাওয়া গেছে তাঁর তো মাথা আর ধড় আলাদা হয়ে গেছে। নিতাই তাকে আইডেন্টিফাই করতে পারে নি।
---আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রবি।। থেমে থেমে বলল অভিরাজ। তার দুচোখ বেয়ে নামছে জলের ধারা, বুকটা মুচড়ে যাচ্ছে। ডুকরে কেঁদে ওঠে সে।
----,মিস্টার সেন নিজেকে সামলান।আমি বুঝতে পারছি আপনার কষ্ট টা।আপনার বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে।
----আমি কেনো বাঁচলাম অফিসার?সমস্ত পৃথিবীটা শূন্য মনে হচ্ছে অভিরাজের। নিজের সত্যি কারের যন্ত্রণার কথাটা কাউকে তো মুখ ফুটে বলতেও পারবেনা সে। হটাৎ নিজের পকেটে কিসের একটা অস্তিত্ব অনুভব করে অভিরাজ। সোনার চেনে লাগানো একটা ক্রুশ। এটা তো ......। ক্রুশ টা হাতে চেপে অভিরাজ মনে মনে বলে,"আমি বাঁচবো বন্ধু। তোমার দান করা এই জীবন আমি দুজন প্রতারক মানুষের কথা ভেবে নষ্ট করব না। আমি শেষ থেকেই শুরু করবো আবার। প্রমিস"