Ajoy Kumar Basu

Abstract

2  

Ajoy Kumar Basu

Abstract

স্বপ্ন-বর্জনে অর্জন

স্বপ্ন-বর্জনে অর্জন

5 mins
949


স্বপ্ন-বর্জনে অর্জন

 

পৃথিবীর ব্যবসা জাগতে এক অসাধারণ নির্ণয়, যা আগে কখনো হয় নি আর অদূর ভবিষ্যতে হবার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম "The Board of Directors, in the 70th Meeting, after due deliberations regarding life and safety of stray animals, trees, shops, pedestrians and other vehicles, unanimously resolves that:

1. The Chairman of the Board, Mr.Gajanan Rajhansa is barred hereafter from

  (a). Driving all types of motorised vehicles, Zero-wheeler to Multiple-wheeler;

  (b). Sitting on a Driver's seat and/or touching directly, or by remote mechanism, steering, accelerator, clutch and gear.

2. The Chairman has to surrender his Driving license to authorities without any precondition.

3. A 24-hour protection force shall be employed to ensure smooth movement of the Chairman without his personal involvement.

ঘটনার পরিপ্রেক্ষতা জানানো প্রয়োজন।

আমার নামেই আমার পরিচয়। প্রথম অংশে বর্তমানের আমি। কুলুঙ্গিতে থাকি না, একটা পেরেকে ঝুলি। ব্যবসায়ে নেমে বুঝেছি এখনকার এবং এখানকার কম্পিউটার যুগে আমাকে শুধু উত্তর -দক্ষিণে মাথা করলে চলবে না। দরকার মতো ডানদিক -বাঁদিক করতে হবে। তাই আমার ব্যবসা তুঙ্গে। কিছুদিন আগে কারখানা বন্ধ করে বাইরের জিনিষ বেচতাম; আর এখন কারখানা খুলে চীনাদের জিনিষ আমার কারখানার নামে বিক্রি করি। লাভের অংশটা একটুও কমতে দি না।

নামের দ্বিতীয় ভাগে লুকিয়ে আছে আমার ভবিষ্যৎ। এখন উপার্জনটা পাঁচের সংখ্যায়, কিন্তু আমি জানি ঠিক মতো দুলতে পারলে দশ কিংবা পনেরোতে পৌছবোই। সেই সময়ে আমি কি হতে চাই জানো? মন্ত্রী কিংবা হেড মন্ত্রী হবার বাসনা আমার নেই - আমি কার্নেগি হতে চাই - আমার সবকিছু শিক্ষার খালে ঢালতে চাই যাতে সেটা চলতেই থাকে অশিক্ষাকে জায়গায় জায়গায় নামিয়ে রেখে। তাই পড়ার দেবীর বাহন আমার নামের বাহন বানিয়ে রেখেছি।

প্রথমে ভেবেছিলাম কার্নেগি -গুরুর পথ ধরে লাইব্রেরি করবো। এখন প্ল্যান বদলে ফেলেছি, কারণ বুঝেছি লাইব্রেরি আমাদের দেশের বাজারে চলবে না, কেউ মনে রাখবে না। এই কলকাতা শহরে ন্যাশনাল লাইব্রেরী আর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ লাইব্রেরি দ্যাখো। কেউ পড়ছে না। কিছু লোক আসলে কম পক্ষে তাদের জামা কাপড়ের মাধ্যমে কিছু ধুলো ঝাড়া হতো -সেটাও নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের মাইনেতে রাখা কয়েকটা ধুল -ঝাড়া মাঝে মাঝে একটু সাফ করে ন্যাশনাল লাইব্রেরিকে; বঙ্গীয় লাইব্রেরির নো- মাইনে, নো -ধুলঝাড়া। আমার এখনকার প্ল্যান ইস্কুল-কলেজে -উনিভার্সিটিতে ইনভেস্ট করবো সেই সময়ের বাজার বুঝে যাতে লাভটা, সরি -সরি, surplus generation টা maximum হয়। টাটা -বিড়লা -মূর্তি যাকেই দ্যাখো কত কত লেখা পড়ার ব্যবস্থা করেই চলেছে, আর যেগুলো আছে সেগুলোর পিন্ডি নাশ হচ্ছে।

 

আমি যখন ছোট ছিলাম, হেঁটে যেতাম ইস্কুলে আর পাশ দিয়ে হুস হুস করে গাড়ি -বাস দৌড়তো, সেই সময় থেকে আমার গাড়ি চালানোর অদম্য বাসনা। তাই তো আমি প্রথমেই বৌ-বাড়ী না করে গাড়ি কিনেছিলাম। ড্রাইভারের সিটে বসলেই আমার মনে হয় আমি সুপার-কৃষ্ণ, সুপার -অর্জুন হয়ে গেছি। মহাভারতের গপ্পে পড়েছি,অনেক ছবিও দেখেছি, কৃষ্ণ যুদ্ধে রথ চালাচ্ছে, অর্জুন সুভদ্রাকে রথে নিয়ে পালাচ্ছে। কিন্তু কটা ঘোড়া? এক -দুই -চার, maximum সূয্য ঠাকুরের সাতটা। আমার বাড়ীর জল তোলে একটা ঘোড়া, জল গরম করে তিনটে ঘোড়া আর আমি যে গাড়ি চালাচ্ছি সেটা টানছে একশো -দুশো ঘোড়া। এই ভাবনাটা আমাকে সুপার পদে বসিয়ে দিয়েছে।

আমি যখন গাড়ি চালাই তখন একটা উড়ু উড়ু ভাব আমাকে পেয়ে বসে। এইতো কমাস আগের ঘটনা, পাশের মোটর সাইকেলের সঙ্গে একটু ধাক্কা ধাক্কি হলো। হেলমেট পড়া মধ্যবয়সি ভদ্রলোক ছিটকে পড়লেন। ঘাড়টা মচকায় নি, অল্পই চোট। কিন্তু অতীব সজ্জন, কবুল করলেন দোষটা তাঁরই। সামনে একটা গর্ত দেখে আমার গাড়ির দিকে চলে এসেছেন। মঙ্গলকারী জনতা আমাকে ছেড়েই দিলো গজ গজ করতে করতে। আমিও সজ্জন, সজ্জন -সজ্জনে মাসতুতো ভাইয়ের মতো। তাই গাড়িতে বসিয়ে পাশের ডাক্তার খানায় নিয়ে যথা যুক্ত ওষুধের ব্যবস্থা করলাম। সজ্জন -জোড়কে দেখে কম্পউন্ডারও আমাদের দলে নাম লেখালো, পয়সা নিলো না।

গাড়ির তলায় কিছু কুকুর-বেড়াল-মুরগি-হাঁস এটা সাধারণ দৈনন্দিন ঘটনা-একটু পয়সা খরচ হয় বটে, আমার শরীর অক্ষত থাকে। মাঝে একটা ঘটনা ঘটলো যাতে আমার কোনো হাত ছিল না। কালীপুজোর আগের দিন, আমি চলছি, সামনে থেকে একটা জঞ্জাল বোঝাই লরি। আমি ফুটপাথ ঘেঁষেই যাচ্ছি। কী করে জানবো যে ফুটপাথের দোকানটা কালীপুজো উপলক্ষে একটা Extension Counter খুলেছে রাস্তার দুফুট নিয়ে। যা হবার তাই হলো; আমার গাড়ির ধাক্কায় এক্সটেনশন কাউন্টার নিয়ে তার মেন্ কাউন্টার হুড়মুড়িয়ে পড়লো। আশে পাশের লোকেরা রাস্তা অবরোধ করে জনতা -বিচারসভা বসালো। আমার ভাগ্য ভালো, ওই দোকানের পাশের দোকানিরা দেখলো একজন competitor কমার সম্ভাবনা। তারাই আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিলো। ভাঙ্গা দোকানের চেহারা দেখেও জান-আদালত অনেক দোকানির আশা ভাঙতে পারলো না। আমি সুস্থ দেহে মুক্তি পেলাম। জন আদালত দোকানিকে আদেশ দিলো ওর দোকানটাকে অন্য জায়গায় সরানোর।

আমাকে যে গাড়ি চালানো শিখিয়েছিলো বার বার বলতো আমি যেন সামনে আর ডাইনে-বাঁয়ে দেখে চালাই। তাকে স্মরণে রেখে আমি গাড়ি চালাই। এক দিন একটা গাছের তলা দিয়ে যাচ্ছি, কী করে জানবো এক মানুষরূপী হনূমান গাছে চড়ে বসে আছে। গাছের ডাল ভেঙে পড়বি তো পড় আমার গাড়ির বনেটে।অ্যাম্বাসাডর গাড়ি, মোটা লোহা দিয়ে তৈরী-বনেটটা একটু তোবড়ানো গাল হলো, কিন্তু লোকটা বেঁচে গেল -গাড়ির সামনে পড়লে রক্ষে ছিল না। রাস্তার লোকজন আমাকে আমার ব্রেক চাপানোর দক্ষতার বাহবা দিয়ে চা বিস্কুট খাওয়ালো। আর একদিন হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছি, দুপাশে ইংরেজ আমলের লাগানো আম গাছের সারি। রাস্তায় অনেক ঢিল পড়ে আছে, নিশ্চই বাচ্ছাগুলো ঢিল মেরে আম পাড়ে। একটা ঢিল ছিল গাছে আটকে, হটাৎ জ্যান্ত হয়ে আছড়ে পড়লো উইন্ড শিল্ডের ওপর। এক মুহূর্তে সামনের কাঁচ মাকড়সার জাল হয়ে গেল। আমি কোনোক্রমে আস্তে আস্তে চালিয়ে পৌঁছলাম গ্যারেজে।

 

আমার গাড়ি রং করবার একটা সুপ্ত আকাঙ্খা সব সময়ে আছে। তাই আমার গাড়ির রং করেছি সর্বদলীয়; লাল, নীল, গেরুয়া ডোরা কাটা। দূর থেকে বোঝা যায় আমার ইউনিক গাড়িটাকে। এই হচ্ছে আমার গাড়ি চালানোর ইতিকথা-যুগান্তকারী কিছু নয়।

সেদিন আমার বোর্ডের মিটিং। বিদেশ থেকে এসেছেন এক সদস্য আর তাকে নিয়ে আসতে গেছেন দুই দেশী সদস্য। ওঁরা জানেন কোন পথ দিয়ে আমি বাড়ী থেকে অফিস যাই। রিকশা ভাড়াটা বাঁচাতে তাঁরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে। দূরে দেখা যাচ্ছে আমার সর্বদলীয় গাড়ি।সদস্যগণ নজর করলেন আমার রঙিন রথ দেখা মাত্র জনতার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা।  সকলের মধ্যে চাঞ্চল্য, বাঁচাও বাঁচাও ভাব, কুকুরগুলোকে তাড়িয়ে দিলো, মায়েরা বাচ্ছাদের হাত শক্ত করে ধরলো, সবাই একটু ১০০ মিটার দৌড়ের জন্যে প্রস্তুত। আমি গাড়ি চালাচ্ছি শিবনেত্র হয়ে উর্দ্ধশ্বাসে। বোর্ডের সদস্যগণ বৃথাই হাত নেড়ে থামতে বলছে। আমার রথ থামার রথ নয়।

দেশী সদস্যদের মনের বিস্তার অনেক বেশি। অঘটন নিয়ে থাকতে থাকতে কোন কিছুতেই বিচলিত হন না। কিন্তু বিদেশী সদস্য এমন ঘটনা আগে কখনো দেখেনি, দেখবে ভাবেওনি।

 তাঁরা আসলেন রিকশা চেপে; বিদেশী সদস্যের নেতৃত্বে এবং প্ররোচণায় এসেই আমাকে বাদ দিয়ে করলেন জরুরি বৈঠক। বৈঠক শেষে আমার ঘরে চেয়ারম্যানের সই করানোর জন্যে আসলেন। আমি পড়লাম তাদের নির্ণয় পত্র:


অদ্যকার সপ্তদশ সমিতির বৈঠকে, অপোষ্য জীবজন্তু,গাছপালা,দোকান,পথচারী এবং অন্যান্য যানবাহনের সংরক্ষণ ও প্রাণরক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির অস্তিত্ত্ব বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হইয়া়ছে। সর্ব সম্মতিতে সমিতি নিম্নলিখিত নির্ণয় লইয়া়ছে :

১) অদ্য হইতে সমিতির অধ্যক্ষ শ্রী গজানন রাজহংসের নিম্নলিখিত অধিকার রহিবে না :

 (ক ) যন্ত্রচালিত সকল বাহন,এক হইতে বহু চক্র যান চালাইবার অধিকার;

 (খ ) ড্রাইভারের সিটে বসিবার এবং প্রত্যাক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে (লাঠি কিংবা রিমোট কন্ট্রোলের সহায়তায় ) স্টিয়ারিং, এক্সেলারেটর, ক্লাচ ও গিয়ার্ ছুঁইবার অধিকার ২) অধ্যক্ষকে নিঃশর্তে অবিলম্বে তাঁহার ড্রাইভিং লাইসেন্স সরকারি অফিসে জমা দিতে হইবে

৩) অধ্যক্ষকে তাঁহার স্বয়ং -চালিত হইবার প্রবণতা হইতে রক্ষা করিবার জন্য অষ্টপ্রহর ড্রাইভার প্রহরার ব্যবস্থা করা হইবে।


সদস্যদের মুখের দৃঢ়তা দেখে বুঝলাম আজ আর নিস্তার নেই। মনের বেদনা মনেই রেখে করে দিলাম সই। সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।

আমি এক জ্ঞানী বন্ধুকে জিজ্ঞেস আমার করেছিলাম আমার নিজের কত শক্তি। আপদ-মস্তক নিরীক্ষণ করে তাঁর মত, মেরে-কেটে আধঘোড়া হবে।

মাথার ঝুড়িতে কার্নেগীকে নিয়ে অর্ধ-অশ্ব আমি এখন সাইকেল চালিয়ে ঘুরি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract