arijit bhattacharya

Horror Others

3  

arijit bhattacharya

Horror Others

সাসানডিরি

সাসানডিরি

3 mins
534


ধোঁয়াটে কুয়াশা ঘেরা বিকালের মরা হলুদ রোদকে কেমন যেন রহস্যময় বলে মনে হয়। আর রহস্যে ঘেরা এই পরিবেশের মধ্যেই হাথা গ্রামের হাট থেকে বাড়ি ফেরে রিমিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে,পশ্চিম পাহাড়তলিকে আবীররঙে রাঙিয়ে দিবাকর অস্তাচলে চলেছেন। শালবনে মর্মরধ্বনি তুলে মহুয়ার মন মাতাল করা মিষ্টি গন্ধ নিয়ে বইছে বসন্তের ফুরফুরে হাওয়া। তিতির,কুম্ভাটুয়া পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে বাসায় ফিরে আসছে। না,তাড়াতাড়ি বসতিতে ফিরতেই হবে। পা চালায় রিমিল। লাল মাটির প্রস্তরময় অনুর্বর পথ।


আর দুপাশে গভীর শাল সেগুনের মাইলের পর মাইল বিস্তৃত রহস্যময় বনানী। হাট তো শুক্রবারে বসে,কিন্তু গতকাল প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হাট বসেছে আজ শনিবার বিকালে। মুণ্ডাদের কাছে শনিবার দিনটাই তো অশুভ। গায়ে কাঁটা দেয় রিমিলের। দূর থেকে ভেসে পেঁচার ডাক। আরে আজ ,বস্তির মোড়ল সুই মুণ্ডা তো বলেই দিয়েছেন,রাতের বেলা শালতলায় আগুনের আঁচে বসে খাওয়া দাওয়া হবে। উফ,একে বনমোরগের পোড়া ঝলসানো মাংস তারপর মহুয়া। আজ রাতটা দারুণ কাটবে। এক নিমেষে মনের সব খারাপ ভাবনা উবে যায় রিমিলের। আর কয়েকদিন পরেই তো শুরু হবে সারহুল উৎসব। জ্যোৎস্নারাতে গভীর অরণ্যানী থেকে ভেসে আসবে মাদলের দ্রিমি দ্রিমি দ্রিম দ্রিম আওয়াজ।


রূপোলী চন্দ্রালোকে প্রেমিক প্রেমিকারা বেরোবে অভিসারে।প্রকৃতির কোলেই ঘটবে মিলন। হঠাৎই ভাবনায় ছেদ পড়ে রিমিলের।শালবন ক্রমশ: পাতলা হয়ে আসছে। এই তো সামনের বাবলাতলার টাঁড়টা নাকি ভালো না। এখানে পুরনো এক সাসানডিরি আছে। আজ শনিবার,পৃথিবীর বুকে অন্ধকার ঘনায়মান,ঝিঁ ঝি ডাকছে। এই অন্ধকারে নাকি এক চরম ভয়ঙ্কর দেও এই সাসানডিরিতে ঘুরে বেড়ান। জীবন্ত মানুষের উষ্ণ রুধিরে তিনি পরিতৃপ্ত হন। তাঁর প্রকোপ থেকে বাঁচতে শনিবার সবাই শিংবোঙার থানে বোঙাদেবতার কাছে বিশেষ পুজো দেয়।


আশেপাশের স্থানীয় মুণ্ডারা বিকেল হলেই এই স্থান মাড়ায় না। চরম ভয়ঙ্কর এই দেও-না জীবিত ,না মৃত। তিনি দিনের বেলায় মাটির তলায় ঘুমোন,আর রাতের অন্ধকারে জেগে ওঠেন। কিন্তু,আজ ফিরতে যে দেরি হয়ে গেল। হাটে পাশের লাপরা বস্তির ঝিন্দারামের সাথে দেখা,কতো কথা হল।কিভাবে যে সময় কেটে গেল বুঝতেই পারল না রিমিল! না,ঐ বাবলাতলা পেরোতে হবে যে ভাবে হোক। বোঙাকে স্মরণ করে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল রিমিল। কিন্তু,হঠাৎই এতো ঠাণ্ডা লাগছে কেন। হঠাৎই যেন জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। কোনো অদৃশ্য শক্তি যেন তার পা পেছন থেকে আঁকড়ে তার হাঁটার গতি রুদ্ধ করতে চাইছে। আর এই ঝাঁঝালো গন্ধই কোথা থেকে ভেসে আসছে। বাতাসের গতিই বা এত দ্রুত হল কেন! মনে হচ্ছে ঝড় উঠেছে।


তারপরই আলো আঁধারিতে রিমিল দেখল সেই বিভীষিকাকে। ছ ফুট দীর্ঘ এক মানুষ,কিন্তু তাকে মানুষ না বলে অমানুষ বলাই ভালো।ঝাঁকড়া চুল,চোখের পরিবর্তে একজোড়া জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড,দু কষ বেয়ে ঝরে পড়ছে লালা,চোয়াল ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে একজোড়া তীক্ষ্ণ শ্বদন্ত।চোখের সামনে নিজের মৃত্যুকে স্পষ্ট দেখতে পেল রিমিল। হঠাৎই কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে কিছু বলল রিমিলকে। কন্ঠস্বর খুব পরিচিত। রিমিল ব্যাগ থেকেই একটু নুন আর এক কোয়া রসুন নিয়ে ছুড়ে মারল ছায়ামূর্তির দিকে।হাড়হিম করা প্রচণ্ড আর্তনাদ করে জ্বলতে জ্বলতে দূরে সরে গেল ছায়ামূর্তিটা। তারপর বাতাসে মিলিয়ে গেল। কোনোও মতে বস্তিতে ফিরল রিমিল। হাটের থলে তে খুঁজে পেল এক আঙটি। কিন্তু,এ আঙটি যে দাদুর,হ্যাঁ দাদুর। কান্নায় ভেঙে পড়ল রিমিল। বাবলাতলার সাসানডিরিকে আর ভয় পায় না রিমিল। বুড়ো বীরু ওঁরাও এর ভালোবাসা তার সাথে আছে। আর কোনো দেও তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। ভালোবাসার মতো শক্তি আর কিছুতে নেই।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror