STORYMIRROR

Dola Bhattacharyya

Horror Tragedy

3  

Dola Bhattacharyya

Horror Tragedy

রঙ্গন চলে গেল

রঙ্গন চলে গেল

4 mins
171


প্রতিবারের মতোই এবারেও ভুত চতুর্দশীর দিনই চলে এসেছি ভাটপাড়ায়, আমার বাপের বাড়ি তে। এখানেই কালীপুজো, ভাইফোঁটা কাটিয়ে ফিরে যাব গুয়াহাটি, আমার শ্বশুরবাড়ি । এসেই শুনলাম দাদাভাই বাড়ি নেই। আজই রওনা হয়েছে শিলিগুড়ির দিকে। দাদার বন্ধু রঙ্গন দা থাকে ওখানে । দাদাভাই পৌঁছলে, দুই বন্ধু মিলে যাবে সান্দাকফু। শুনেই আমার মন খুব খারাপ। ভাইফোঁটা দিতে পারব না। সন্ধ্যা র পর একা একাই বসে ছিলাম ছাদে। নিচে জোর হৈচৈ লাগিয়েছে সকলে। কাল বাড়িতে পুজো ।সেই নিয়েই মেতে উঠেছে সব। সন্ধ্যা বেলায় সারা বাড়িতে, ছাদে, অনেক মোমবাতি লাগানো হয়েছিল। এখন সেগুলো নিভে গেছে সব। অন্ধকারের মধ্যে চুপ করে বসে ছিলাম। হঠাৎ বিচ্ছু দুটো র সাড়া পেলাম। "ও পিসিমণি, তুমি এখানে! সবাই তোমায় খুঁজছে যে" । তিন্নি আর বিন্নি। দাদাভাইএর দুই ছেলেমেয়ে। ক্ষুদে শয়তান এক একটা। আমার এখুনি নিচে যেতে ঠিক ইচ্ছে করছিল না। ওদের বললাম, "তোরা নীচে যা, আমি একটু পরে যাচ্ছি" । কিন্তু দেখলাম, নিচে যাবার কোনোরকম ইচ্ছেই নেই ওদের। আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগল। মনে মনে ভাবছিলাম, নাঃ। এবার নিচে যেতেই হবে। আমি না নামলে ওরাও যাবে না। সিজন চেঞ্জ এর সময় এটা। ক্ষুদে দুটোর ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। হঠাৎই দুটোতে মিলে চেঁচিয়ে উঠল,"ও পিসিমণি, ভুত। ভুত । দুজনেই তখন আঁকড়ে ধরেছে আমায়,"ভুত, ওই দ্যাখো পিসিমণি"। "কোথায় ভুত! কি দেখলি তোরা"? আমি তো অবাক।

"ওই দ্যাখো, উড়ে এদিকেই আসছে ওটা "। 

তাকিয়ে দেখি, একটা নিভে যাওয়া ফানুষ, খোলটা খানিকটা ছিঁড়ে গিয়ে ঝুলছে, ওই ভাবেই উড়ে আসছে ওটা অনেকটা নিচু দিয়ে। হঠাৎ করে দেখলে ভয় লাগে বৈকি। ওদের বললাম,"ভুত কোথায়! ওই দ্যাখ, ওটা একটা নিভে যাওয়া ফানুষ। ছিঁড়েও গেছে খানিকটা"। এইবার খানিকটা ধাতস্থ হলো ক্ষুদে দুটো। 


      কালীপুজো টা ভালো করেই কাটল আমাদের । ভাইফোঁটা র আগের দিন রাতে দাদাভাই ফিরে এল হঠাৎ। বাড়ির সকলে অবাক। "কি রে! সান্দাকফু গেলি না তোরা" । দাদাভাই চুপ ।কেমন যেন বিষন্ন দেখাচ্ছে ওকে। বলল," রঙ্গন মারা গেছে"। 


চমকে উঠলাম শুনে। সকলেই অবাক। কি এমন হলো ছেলেটার, যে এমন অকালেই চলে যেতে হল! একটু ফ্রেশ হয়ে এসে গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে দাদাভাই বলল, "কারণটা খুব অদ্ভুত। ঘটনাটা ঘটেছিল ভুত চতুর্দশীর দিন রাতে। তার পরদিন আমি যখন পৌঁছোই, তখন রঙ্গন খুবই অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ওকে। গায়ে খুব জ্বর। শুনেই আমি ছুটে গেলাম ওর সাথে দেখা করতে। ওর রুগ্ন, পান্ডুর মুখটা দেখে মনে হচ্ছিল, যেন কতদিন ধরে রোগ ভোগ করছে। মাত্র একদিনেই এই অবস্থা দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলাম আমি। আমাকে দেখে ওর পাশে বসতে বলল রঙ্গন, "তোর সাথে খুব জরুরী কিছু কথা আছে তাপস। আমার সময় কিন্তু খুব কম" । আমি বললাম, "বেশ তো। শুনবো। আগে তুই সুস্থ হয়ে ওঠ" ।


"না না। অত সময় আমি পাব না। আজই, এখনই শুনতে হবে তোকে" । কেমন যেন উদভ্রান্তের মতো দেখাচ্ছিল ওকে। বললাম, "বেশ তো। বল। কিন্তু ধীরে ধীরে" ।

বলতে শুরু করল ও" —


     "সেদিন ছিল ভুত চতুর্দশী। রাতের খাওয়া সেরে এগারো টা নাগাদ শুতে চলে গেলাম। একটা বই পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। রাত তিনটে নাগাদ ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল। আমার ঘরের সামনেই বিশাল ছাদ। জানালা দিয়েই ছাদের অনেকটা অংশ দেখা যায়। দেখি, সারা ছাদ জুড়ে কে যেন অনেক প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে। অবাক হয়ে গেলাম। সন্ধ্যা বেলায় বৌদি কিছু মোমবাতি জ্বালিয়ে ছিল দেখেছি। কিন্তু এত রাতে কে আলো দিল ছাদে। দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখলাম, কই! কোথাও তো কোনো আলো নেই। তাহলে! ঘুম চোখে কি দেখলাম আমি! তবে আরো একটা জিনিস দেখলাম, প্রদীপ ছাদে নয়। জ্বলছে আকাশে। তারায় তারায় ভরা আকাশ ।কি অপূর্ব দৃশ্য! দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ নজর পড়ল, ছাদের আলসের ওপর দিয়ে কে যেন লঘু পায়ে হেঁটে চলেছে, মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার সাদা চাদর মুড়ি দেওয়া। ভাবলাম চোর হবে হয়তো। কিন্তু কি সাহস চোরটার! ছাদের আলসের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে! চেঁচিয়ে উঠলাম, এই, কে তুমি! নামো আলসে থেকে ।আমার গলা শুনে দাঁড়াল মূর্তি টা। আর কিছু বলে না। নামেও না আলসে থেকে। আমি ততক্ষণে মূর্তিটার অনেক কাছে চলে এসেছি। আবার বললাম, এই। নামো। চাদর সরাও মুখ থেকে। দেখি তুমি কোন মহাপ্রভু। কথাগুলো বলেই ওর চাদর ধরে মারতে গেলাম এক টান। চাদর অবধি আমার হাত পৌঁছানোর আগেই, আমার চোখের সামনে মুর্তিটা ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ে গেল। কি হল! উদ্ভ্রান্তের মতো এদিক ওদিক তাকালাম। নাঃ। কেউ কোথাও নেই। শুধু রাত শেষের হিমেল বাতাস এসে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল আমার সর্বাঙ্গ। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম

 আমি "। 

" গল্প শেষ করে খুব হাঁপাচ্ছিল রঙ্গন। আজ ভোর রাতের দিকে চলে গেল ও সেই না ফেরার দেশে। হয়তো সেই দেশের লোকই সেদিন নিতে এসেছিল ওকে"। 

       পরদিন সকালে ভাইফোঁটা দিলাম ঠিকই, কোথায় যেন কোন বেদনার তন্ত্রী তে টান পড়ে রইল। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror