Rima Goswami

Horror

4  

Rima Goswami

Horror

রক্ত পিপাসু

রক্ত পিপাসু

6 mins
716


কয়েক দিন ধরেই ইউক্রেনের চেরনোবিলের পাশে ছোট এক অখ্যাত গ্রামের বাইরে জঙ্গলে ঘেরা জলা জায়গাটার কাছে চারটি তেরো চোদ্দ বছরের মেয়েদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে । বেশিরভাগ মেয়েই রক্তশূন্যতার কারণে মরেছে বলে ধারণা । ফ্যাটফ্যাটে গায়ের রং , ঠিকরানো চোখ .. আর গায়ে অল্প অল্প ক্ষত সব লাশের একই বৈশিষ্ট্য । গ্রামের অনেক মেয়েই নিখোঁজ হয়েছে কয়েক মাস ধরে । তাদের আবার কিছুদিন পর জলার ধারে মৃত পাওয়া গেছে । বিষয়টিতে কেউই কিছু থই পাচ্ছে না । গমের দেশ ইউক্রেন একটা শান্ত বলতে গেলে উপদ্রপহীন স্থান । ইউক্রেনের অধিকাংশ এলাকা কৃষিকাজের উপযোগী উর্বর সমভূমি নিয়ে গঠিত। ইউক্রেন খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। দেশটির অর্থনীতি উন্নত এবং এর কৃষি ও শিল্পখাত যথেষ্ট বড়। ইউক্রেনে একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান যেখানে রাষ্ট্রপতি হলেন সরকারপ্রধান। এমন জায়গায় বার বার এরকম ঘটনা ঘটা একটু আশ্চর্যজনক । প্রথমে যাকে মৃত উদ্ধার করা হয় তার নাম ক্যাথলিন । সে ওই জঙ্গল পেরিয়ে একটি ক্যাস্টেলে থাকা এক সম্ভ্রান্ত মহিলার কাছে কাজ করতে যেত । মহিলাকে বাইরে বের হতে দেখা যায় না তবে তার কাছে কয়েকটি মেয়ে কাজ করে । মহিলার বয়স জানা নেই তবে তার নাম ক্রিস্টিফার । অনেকেই ওই ক্যাস্টেল আর ক্রিস্টিফারকে অভিশপ্ত বলে থাকে । ক্যাথলিন নেহাত গরিব ঘরের মেয়ে । তাকে কাজে যেতে হত পেটের দায়ে । একদিন হঠাৎ ক্যাথলিন গায়েব হয়ে যায় তার বাবা তার খোঁজে ক্যাস্টেল পর্যন্ত গেলে ওকে ক্রিস্টির বাকি কাজের মেয়েরা জানায় ক্যাথি দুদিন আগে কাজ করবে না বলে মাইনে নিয়ে চলে গেছে তারপরের খবর জানা নেই । মোটা মাইনের কাজ কেন ছাড়বে বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়া ক্যাথি ? উত্তর পাওয়া যায়নি তবে ক্যাথিকে পাওয়া যায় মৃত । ওর মালিককে অভিযোগ করার সাহস হয়নি ওর বাবার । উল্টে মোটা অংকের অর্থ ক্যাথির বাবা পেয়েছিল মেয়ের মৃত্যুর জন্য । এর পর থেকেই একই ঘটনা ঘটে যাচ্ছে অথচ কোন সুরাহা হয়নি রহস্যর । ক্যাস্টেল এর মালকিন ক্রিস্টিফার এককালে ভীষণ সুন্দরী নারী ছিল । সৌন্দর্য ছিল তার দুর্বলতা । সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ক্রিস্টি তার পৈতৃক ক্যাস্টেলে থাকত তার বাবার সঙ্গে । মা মারা মেয়েকে কোনদিন অভাব দেননি কিছুর । তার পছন্দের পুরুষ চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রের এক ম্যানেজার রুশ যুবক স্যামুয়েলের সঙ্গে ক্রিস্টির বাবা বিয়েও ঠিক করেন । বিয়ের দুদিন আগে ঘটে এক দুর্ঘটনা । ক্রিস্টির বয়স তখন মাত্র কুড়ি , আগামী সুখের দিনের স্বপ্নে বিভোর । স্বপ্ন ভঙ্গ হয় সেদিন..১৯৮৬ সালের ২৬শে এপ্রিল ভোরের দিকে কর্মীরা চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রের ৪ নম্বর চুল্লিতে কিছু পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন৷ সেই কাজে কিছু ত্রুটি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে চুল্লির নক্সায়ও কিছু দুর্বলতা ছিল৷ ফলে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে৷ বিস্ফোরণের ফলে চুল্লির ধ্বংসাবশেষের মারাত্মক তেজস্ক্রিয় উপাদান চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রতিবেশী বেলারুশ ও রুশ প্রজাতন্ত্র থেকে শুরু করে জার্মান সহ পশ্চিম ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকায় তেজস্ক্রিয়তার কুপ্রভাব ধরা পড়ে৷ দুর্ঘটনার ফলে পরমাণু কেন্দ্রের দুই কর্মীর অবিলম্বে মৃত্যু হয় , ওরা ছিল হতভাগ্য স্যামুয়েল ও ক্রিস্টির পিতাও ৷ ঘটনার পরের কয়েক মাসে ২৮ জন কর্মী ও উদ্ধারকর্মী মারা যান৷ সংলগ্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়৷ তারপর ১৯৮৬ ও ১৯৮৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চেরনোবিল ও সংলগ্ন এলাকা তেজস্ক্রিয়তা মুক্ত করতে ৪ লক্ষেরও বেশি উদ্ধারকর্মী পাঠায়৷ তাদের মধ্যে অনেকে এই কাজের বিপদ সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিল না৷সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে ২৫টি ফানুস উড়িয়ে স্মরণ করা হলো চেরনোবিল দুর্ঘটনার কথা। চেরনোবিল দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব নিয়ে আজও বিতর্ক শেষ হয় নি৷ এমনকি জাতিসংঘের একাধিক সংস্থাও মৃতের সংখ্যা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি । ক্রিস্টি একা হয়ে যায় তার ক্যাস্টেলে , ওখান থেকে বেরোতে পারত না ক্রিস্টি কারণ তেজস্ক্রিয় রশ্মি তার সুন্দর চেহারা বিনষ্ট করে দিয়েছিল । টাকার অভাব ছিল না , তাই পর্দার আড়ালে সে জীবন কাটাতে থাকে । কাজের জন্য মেয়ে গ্রাম থেকে বহাল করে বেশ ছিল নিজের মতো সে । দুঃখ একটাই তার কুরূপ , স্যামুয়েল আর বাবার মৃত্যু সে ভুলেছে কালের নিয়মে । ক্যাথি কাজে বহাল হয়ে কুরূপ ক্রিস্টিকে দেখে ভয় পেত । তারপর আস্তে আস্তে ভাব হয়ে যায় তার মনিবের সঙ্গে । মনিবকে সাজানো ছিল ক্যাথির কাজ । ক্রিস্টিফার সাজতে ভীষণ ভালোবাসত । সেদিন বিকালে ক্যাথি ক্রিস্টির চুল ছাড়িয়ে দিচ্ছিল হাতির দাঁতের তৈরি চিরুনি দিয়ে । ক্রিস্টির শনের মত সাদা চুল ছাড়াতে ছাড়াতে ক্যাথির হাতে গেঁথে যায় চিরুনির একটা কাঁটা । গলগল করে রক্ত বেরিয়ে ক্রিস্টির সাদা চুল ভিজিয়ে দেয় ক্যাথির হাতের ক্ষত । ক্রিস্টি তাড়াতাড়ি অন্য মেড দের ডাকে ক্যাথিকে ব্যান্ডেজ করার জন্য । ওরা এসে ক্যাথির হাতে পট্টি করে দেয় তারপর রক্তপাত বন্ধ হয় । মাথার চুলে লাগা চ্যাটচ্যাটে রক্ত ক্রিস্টি ধুয়ে মুছে আয়নায় ফিরে আসে আবার নিজের কেশ বিন্যাস করতে । বেলজিয়াম গ্লাস নির্মিত মূল্যবান আয়নায় ক্রিস্টি আবিস্কার করে তার চুলের যে যে অংশে ক্যাথলিনের রক্ত লেগেছিল সেই চুল গুলো সাদা রঙের বদলে কালো রঙের হয়ে গেছে । ব্যাপারটা একটু অবাক করে ক্রিস্টিকে । একজন মেড কে দেখে ক্যাথির ড্রেসিং করতে যে কাপড় ব্যবহার হয়েছে সেগুলো রক্ত সহ আনতে বলে । মেড কিছু না বুঝেই রক্ত মাখা কাপড় গুলো মালকিনকে এনে দেয় । সেই রক্ত মাখা কাপড় গুলো ক্রিস্টি নিজের গালে বুলাতে থাকে । একটু একটু করে ম্যাজিকের মত লোলচর্ম গাল গুলো যৌবনের দিনের মত দীপ্তিময় হয়ে যায় । ক্রিস্টিফার বুঝে যায় ক্যাথির রক্ত তাকে যৌবনের দিন গুলো ফিরিয়ে দিতে পারে । ব্যাস শুরু হয় এক খেলা । একটু একটু করে ছুঁচ ফুটিয়ে ফুটিয়ে রক্ত বের করে নেওয়া হয় ক্যাথির শরীর থেকে । ওই রক্ত ক্রিস্টি মাখতে শুরু করে শরীরে । ধীরে ধীরে ফিরে আসে আগের সেই সৌন্দর্য যা সে হারিয়ে ফেলে চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রের দুর্ঘটনায় । তবে সমস্যা হলো একদিন রক্ত না মাখলেই শরীর থেকে জৌলুস কমতে শুরু করে । মেডরা ভীষণ ভীত তবে ওরা ক্রীতদাস ক্রিস্টিফারের তাই কিছু বলতে পারে না । ক্রিস্টি যদিও তাদের জানিয়ে দিয়েছে সে তেরো বছরের মেয়ের রক্ততেই আগ্রহী । মেডদের কেউই তেরোর নয় তারা সকলেই যুবতী বা মধ্যবয়ষ্ক । ক্যাথির শরীর থেকে রক্ত নিয়ে নিয়ে ওকে ঝাঁঝরা করে দেয় ক্রিস্টি । একদিন ক্যাথি রাতের ঘুমের মধ্যে মারা যায় । মৃতদেহ নিয়ে কি কাজ ? তাই ওর বডিটা মেডদের জঙ্গলের পাশের জলা জায়গাতে ফেলে দিতে বলে ক্রিস্টি । এর পর রক্তের জোগাড়ের জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করে চতুর ক্রিস্টি । মেডদের স্বর্ণ মুদ্রার লোভ দেখিয়ে গ্রাম থেকে তেরো বছরের মেয়ে চুরি করায় আর তাদেরও রক্ত শুষে ফেলে দেয় । এভাবে চলতে চলতে ভীষণ সুন্দরী হয়ে যায় ক্রিস্টি । গ্রামের এক রাখাল ছেলে একবার কুরূপ ক্রিস্টিকে দেখেছিল ক্যাস্টেলের বারান্দায় । অনেক দিন পর আবার ওই বারান্দাতে যুবতী ক্রিস্টিকে দেখে রাখাল প্রথমে চিনতে পারে না । পড়ে রাতের বেলা অনেক ভেবে তার সন্দেহ হয় যে ওই কুরুপা বুড়ি আর এই সুরুপা যুবতীর মধ্যে অবাক করা মিল । তবে একটা বুড়ি কি করে যুবতী হয়ে যায় ? ব্যাপারটা সে সকলকে বললে তারা সিদ্ধান্ত নেয় ওই ক্যাস্টেলে তারা নজর রাখবে । ভয়কে জয় করে সবাই লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রাম পাহারা দেয় আর ক্যাস্টেলেও নজর রাখে । বেশিদিন লাগেনা ক্রিস্টির পর্দা ফাঁস হতে । মেডদের চেপে ধরলে তারা সব ভয়ে সব কবুল করে , তারাও বাধ্য হয়েই মেয়েদের অপহরণ করছিল । এই ভয়াবহতা তাদের ও ভালো লাগেনি । তারা ক্রীতদাসী তাই তাদের কিছুই করার ছিল না । এবার তারা মুখ খোলে , সব স্পষ্ট করে জানায় । মেডদের সেপাইরা তুলে নিয়ে যায় আর হাজার চেষ্টা করেও ক্রিস্টিফার পালাতে পারেনা । কারণ ততক্ষনে ক্যাস্টেলের মধ্যে নিষ্ঠুর ক্রিস্টিকে বন্ধ করে বাইরে থেকে আগুন ধরিয়ে দেয় গ্রামের লোকেরা । রূপের লোভী ক্রিস্টি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় , তার পার্থিব শরীর যার সৌন্দর্যের রক্ষার্থে এত গুলো মেয়ের প্রাণ সে নিয়েছিল সেই শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় । পিছনে পড়ে থাকে একরাশ আতঙ্ক আর সন্তান হারানো মায়েদের কান্না ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror