Sagnik Bandyopadhyay

Fantasy Inspirational

4.1  

Sagnik Bandyopadhyay

Fantasy Inspirational

রবীন্দ্রজয়ন্তী

রবীন্দ্রজয়ন্তী

2 mins
545



"ওই শালা গলা তুলে কথা বলছিস কি? দেখবি! দেখবি!"

"তোরা এরকম ঝামেলা করছিস কেন, শান্ত হয়ে কথা বল।"

"ওই বেশি জ্ঞান দিস না, ভাগ এখান থেকে।" - এইভাবে কুড়ি-একুশ বছরের ছেলেদের দুটি দলের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। হঠাৎ ঝামেলার মধ্যে উপস্থিত হন এক বৃদ্ধ। তাঁর একগাল সাদা দাড়ি, দেখতে সুপুরুষ, মাথা সাদা চুলে আবৃত, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেত্র। গুরু গম্ভীর কণ্ঠে শান্তভাবে বলে উঠলেন,"তোমরা ঝামেলা করছো কেন?" প্রথম দলের শুভ বলে উঠলো," এই বুড়ো ভামটা আবার কোথা থেকে এসে জুটল?" দ্বিতীয় দলের সায়ক বলে উঠলো," দাদু, আপনি ওর কথায় কান দেবেন না। ওর হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।" " না বাবা! সত্যিই তো আমার বয়স হয়েছে। এখন আমার কদর ফুরিয়েছে। তাইতো ওই ছোকরা 'বুড়ো ভাম' বলে সম্বোধন করল। ঠিকই বলেছে। না বাবা! তুমি ক্ষমা চেয়ো না, তোমাদের কোন দোষ নেই।


কিন্তু তোমরা ঝগড়া করছো কেন?" - শুনে বলে উঠলেন বৃদ্ধ। "এই যে বুড়ো, যাও যাও। ওই সব জেনে তোমার কাজ নেই।"- বলে উঠলো এক ছোকরা। যার মুখে সিগারেট, মাথায় কাকের বাসার মতো চুল, ভ্রূতে একটি রিং ঝুলছে। নাম তার কেল্টু। দ্বিতীয় দলের মধ্যে থাকা শান্ত দেখতে ভদ্র একটি ছেলে এগিয়ে এসে বৃদ্ধের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,"দাদু, সামনে তো রবীন্দ্রজয়ন্তী, তাই আমরা পাড়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তী করব বলে ঠিক করেছি।" শুনে এক অকৃত্রিম আনন্দে বৃদ্ধের বুক ভরে উঠলো। তাঁর মানসপটে উদ্ভাসিত হলো যৌবনের কিছু ঘটনা। সহাস্যে বলে উঠলেন," সে তো বেশ কথা! কিন্তু ঝামেলা কেন?" এই সময় কেল্টু, শুভরা গজগজ করতে করতে চলে গেল। " দেখলে ছেলেগুলোকে। এরা আমাদের রবীন্দ্র জয়ন্তী করতে দেবেনা।


সেই নিয়ে ওরা ঝামেলা করছে।"- অয়ন বলল। " তোমরা তো খুব ভালো ছেলে। সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। ওদেরকে তোমরা বুঝিও। আচ্ছা তোমরা রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কি কি করছো? আর আমাকে নেমন্তন্ন করবে না?"- দাদু কৌতুহলী হয়ে বলে উঠলেন। তারপর সবাই একে একে দাদুকে বলতে শুরু করল, তারা কি কি আয়োজন করবে। দাদুও আনন্দের সাথে শুনতে লাগলেন। এইভাবে সময় চলে যেতে থাকলো। তারপর দাদু তাদের থেকে বিদায় নিলেন, রবীন্দ্রজয়ন্তীতে তাদের সাথে দেখা হবে বলে চলে গেলেন।‌ রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন উপস্থিত, ভদ্র ছেলেদের দল পাড়ার মাঠে এসে রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রস্তুতি করছে। মাইকে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে। চারিদিকের পরিবেশ যেন রবীন্দ্রময় হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে কেল্টু, শুভদের দল এসে মাঠে উপস্থিত হয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রস্তুতি ভন্ডুল করে দিল। তারা বলে ওঠে," তোরা কি সব প্যানপেনে গান বাজাচ্ছিস। আরে! রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন আজ। জন্মদিনের DJ বাজাতে হয়।" অয়নদের দলের সুমিত বলে উঠলো, " না! রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন রাবীন্দ্রিক আঙ্গিকেই হবে।" এইবার দুই দলের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হয়ে উঠল। সেই সময় উপস্থিত হলেন বৃদ্ধ।


এইসব দেখে তাঁর মনে হতে লাগলো আমি এখনো এদের মধ্যে বেঁচে আছি কেন? আমার জন্মদিন নিয়ে একি অনাচার হচ্ছে? আমি তো এই সমাজ চাইনি। ক্ষোভে, দুঃখে চিৎকার করে বলে উঠলেন,"তোরা আমায় মুক্তি দে এবার। মুক্তি দে।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy