বিচিত্র জীবন
বিচিত্র জীবন
"কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালোবাসা ছাড়া"- গানটির লাইন সায়কের হৃদমাঝারে ক্রমাগত ধ্বনিত হচ্ছে। জ্যোৎস্নার আলোয় ঘর প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে। সায়ক ভাবছে তার হৃদয় মন্দিরে কেন এই গানটা ধ্বনিত হচ্ছে? তার জীবনে ভালোবাসার তো কোনো অভাব নেই। সে কোনো সেলিব্রেটি না হওয়া সত্ত্বেও ছোটবেলা থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের কাছ থেকে অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়ে যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত। পরক্ষনে অনুভব করল তার ভিতরে এক ধরনের শূন্যতাও বিরাজ করছে। যে শূন্যতা সায়কের মনকে অস্থির করে তুলছে। এই শূন্যতাই মাঝে মাঝে তাকে দুর্বল করে তোলে। জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতাও যেন তাকে সিক্ত করতে পারছেনা। রাত বাড়তে থাকে সায়কের হৃদয়ের ক্ষতটা যেন ক্রমশ বাড়তে থাকে। তার দুটো চোখে ঘুম নেই। নেই কোনো ক্লান্তি। শুধু আছে না পাওয়ার যন্ত্রনা। কখন যে রাত শেষ হয়ে পূর্ব দিকে আলোর ছটা দেখা গেছে তার টের পায়নি সায়ক। ভোরবেলার পাখিদের কলরব যেন সায়ককে বলছে, "আমি তো এসেছি। তুমি তো আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছো না।" সায়ক নিজের মনে গেয়ে ওঠে,
"ভালো যদি বাস, সখী, কী দিব গো আর—
কবির হৃদয় এই দিব উপহার ॥"
সায়ককে ছোটবেলা থেকেই ধনী ব্যক্তিও যেমন কাছে টেনে নিয়েছে, ঠিক তেমনি পথে বসবাস করা হতভাগ্য মা সায়কের মধ্যেই নিজের সন্তানকে খুঁজে পেয়ে মাতৃস্নেহ উজাড় করে দিয়েছে। সায়ক নিজেকে বড়ই সৌভাগ্যবান মনে করে। ব
ই নিয়ে পড়তে বসে সে কল্পনার জগতে চলে যায়। সে স্বপ্ন দেখে একজন নারী এসে তার হাত ধরে বলছে,"আমি এসেছি। তোমার সাথী হতে।" তার শূন্যতা নিমেষেই পূর্ণতায় পরিবর্তিত হলো। কিন্তু তার বন্ধুর ডাকে স্বপ্নভঙ্গ হলো। "কিরে কি ব্যাপার? কি এত আকাশ-পাতাল ভাবছিস? ও বুঝেছি! দেখ তোর যা চিন্তা ভাবনা ওই চিন্তা ভাবনা এই যুগে চলেনা। এইভাবে কেউ পটবে না। স্টাইল করবি, রোমান্টিক রোমান্টিক দুটো কথা বলবি, ব্যাস কেল্লাফতে।"- বলল চিন্টু। সায়ক মনে মনে ভাবল, "আমিতো মেয়ে পটাতে চাই না। আমি আমার মনের মানুষকে পেতে চাই।" চিন্টু বলে উঠলো,"কিরে চুপ মেরে গেলি যে? আচ্ছা তোকে একটা ভালো আইডিয়া দিচ্ছি শোন। তুই যে কোনো একটা ডেটিং অ্যাপ ইন্সটল করে নে তারপর দেখবি মেয়ে পটে গেছে। একটু স্মিত হেসে সায়ক বলল,"আমার কথা ছাড়তো।" তখন অরিজিৎ আসলো সায়কের আরেক বন্ধু। কিন্তু বয়সে বড় হওয়ায় সায়ক তাকে অরিজিৎ দা বলে ডাকে। চিন্টু বলল," দেখোতো সায়ককে বলছি একটু রোমান্টিক হতে, তবেই তো মেয়ে পটবে বলো।" "তুই চুপ কর। ওর মধ্যেকার রোমান্টিকতা আর পাঁচটা ছেলেদের মতো নয়। যে বুঝবে সে ঠিক বুঝবে আর যে বুঝবে না তাকে শত বুঝিয়েও বোঝানো যাবে না।"- অরিজিৎ দা বলল। "শোন চিন্টু আমার জীবনটাই বড়ো বিচিত্র। আর যে নারী সত্যিকারের ভালোবাসবে সে এই স্টাইলহীন, গ্ল্যামারহীন সায়ককে ভালোবাসবে। তার কাছে মানুষটাই আসল , স্টাইল বা গ্ল্যামার নয়।"- বলল সায়ক