রাধা আর
রাধা আর
রাধা আর রাণী
রাধা আর রাণী দুই বন্ধু -- মানে বান্ধবী ।
ওরা সেই ছোট থেকে একই ক্লাসে পড়ছে । এ বছর
ওরা এইটে উঠলো । অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণী । দেখতে
ওরা অনেকটা বড় হলেও বুদ্ধি পরিপক্ক নয় ।
ওরা একই সাথে স্কুলে যায় আবার একই সাথে
স্কুল থেকে ফেরে । কাজেই বাবা মায়েরও কোনো
চিন্তা নেই কিন্তু সেদিন ওরা এক কান্ড করে বসল ।
সে রকম কিছু নয় । তবে নয়ই বা বলবো কি করে ।
ওরা স্কুল থেকে ফিরলো না । সব ছেলেমেয়ে বাড়ি
পৌছে গেলো । ওরা দুজনে বাদ । কাজেই বাবা মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ দুই বাড়িতেই দেখা
গেলো । স্কুলে গিয়ে খবর নিলেন । স্কুলতো বন্ধ হয়ে
গেছে । যারা দু একজন রয়েছে সেপাই পাহারাদার
তারা কেউই কিছু বলতে পারলো না । যার কাছে চাবি থাকে মানে চাবির তদারকিতে যিনি থাকেন
তাঁকে ডেকে পাঠানো হলো । তিনি এলেন । প্রতিটি
ক্লাস রুম খুলে দেখলো । যদি কোনো ভাবে আটকে
গিয়ে থাকে বা ঘুমিয়ে যায়--- বলা তো যায় না ।
বাথরুম গুলোও তালা খুলে দেখা হলো । কোথাও
কোনো হদিশ পাওয়া গেলো না । অগত্যা থানা পুলিশ । ওনারা দুই বাবা এবং মা কে অনেক কিছু
জিজ্ঞাসা করলেন । গতকাল কোনো বিষয় নিয়ে
বাড়িতে রাগারাগি হয়েছিল কি না ! বা ওরা হয়তো
কিছু চেয়েছিল ওদের মনের মতো কিছু । পায় নি ।
বাবা , মা দু জনেই মানে দুই পক্ষই বললেন -- না না
সেরকম কোনো ঘটনাই ঘটে নি ।
তাহলে আর একটা জিনিষ জানতে বাকি । পুলিশ
অফিসার মহাশয় সেটাও জেনে নিলেন । ওনাদের
সরাসরি জিজ্ঞাসা করলেন । ------কোনো love
Affair.......!
দুই বাবা মা ই জিভ বের করে চোখ মুজলেন ।
বললেন ছি ছি....! কি বলছেন দারোগা বাবু !
আমাদের মেয়ে কখনো এরকম করতেই পারে না ।
দারোগা বাবু বললেন ----কি করে বুঝলেন ?
------- মেয়েরা কোথায় কি করে বেড়াচ্ছে আপনারা
সব খবর রাখেন ?
দুই বাবা মা বেশ জোরের সাথেই এবার বললেন ---- সাড়ে চারটে তে স্কুল ছুটি । ওরা কোনো দিন
পাঁচ টা পার করেনি বাড়ি আসতে । আর সেই মেয়ে
কি না love........! না না না ... আমরা ঠিক মানতে পারছিনা দারোগা বাবু আপনার কথা ।
এবার দারোগা বাবু মিসিং ডাইরি করলেন । তারপর বললেন --- আপনাদের কথা মানছি ।
-- কিন্তু যদি কোনো বেয়াদপির খবর পাই তখন আমরা ব্যবস্থা নেবো । আর তখন হাতে পায়ে
ধরলেও আমরা ছেড়ে কথা বলবো না ।
এই কথা বলেই দারোগা বাবু উঠলেন । শুধু উঠলেন
না । দুই জনের ছবি চেয়ে নিলেন । তারপর ফোন
ধরলেন । নিকটবর্তী থানা গুলোতে খবর পাঠিয়ে এলার্ট হতে বললেন সকলকে । প্রতিটি থানা
সতর্ক । ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । দারোগা বাবু
মানে Mr . Sanyal আজ একটু চাপের মধ্যে আছেন । আগামী কাল রথযাত্রা । বাঙালীর আবেগের উৎসব । এবং উৎসব টা পাড়া, গ্রাম
শহর জুড়ে । কাজেই চতুর্দিকে ফোর্স পাঠাতে হবে ।
এই একটা চিন্তা । তা ছাড়া D . I .G সাহেব
নিজে আসছেন ইনস্পেকসনে । মনে মনে সান্যাল
সাহেব একটু বিরক্ত হলেন । আগামী কাল না এলেই কি ওনার চলত না ? কিন্তু রথ কথাটা মনে আসতেই উনি যেন একটা পথ খুঁজে পেলেন ।
পথ মানে সমাধান । সমাধান মানে একটা ক্লু । যদি
ক্লু টা মিলে যায় তবে কেল্লা ফতে । কাল আবার
খোদ সাহেব নিজে আসছেন । উনি আর এক মুহুর্ত দেরী করলেন না । সামনের Santry কে ডাকলেন। সে ছুটে এসেই পুলিশি কায়দায় অভিবাদন জানিয়ে বললো-- Sir ........!
কিছু বলছেন ? সান্যাল বাবু বললেন --হ্যা । কিন্তু
কি বলছেন ওনারই মাথায় নেই । তারপর হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলেন ওরা কি চলে গেলো ?
সেপাই বললো ---কারা স্যার ?
এবার সান্যাল বাবু উত্তেজিত হয়ে বললেন --
কারা মানে ? তুমি এতক্ষণ কি করছিলে ?
দু জন বেরিয়ে গেলো দেখোনি ? এতক্ষণ ধরে
কথা বলছিল কিছুই কি লক্ষ কর না ? তখন
সেপাই বললো , ও যারা ভেতরে কথা বলছিল ?
সান্যাল বাবু বললেন --- হ্যা হ্যা ওদের কথাই ...।
সেপাই এবার নিশ্চিত হয়ে বললো --- ওরা তো টোটো নিয়ে এসেছিল । টোটো তেই ফিরে গেলো ।
সান্যাল বাবু আরও রেগে গিয়ে বললেন --- যাও যাও নিজের জায়গায় যাও । যত্ত সব অপদার্থ .....।
উনি সেকেন্ড অফিসার কে ডাকলেন । Mr . তরফদার ..। একটু আসবেন ?
তরফদার বাবু তড়িঘড়ি ছুটে এলেন ।
Mr. সান্যাল জিজ্ঞাসা করলেন --- আপনি এখন কি করছেন ? তরফদার বাবু উত্তর দিলেন --- একটু
রিপোর্ট গুলো দেখছি ।
------ কিসের রিপোর্ট ?
-------- সেদিন যে ঝামেলা টা হলো ।
-------- ও দত্ত পাড়ায় ? ঠিক আছে । কিন্তু এখন ই
আপনাকে একবার হাওড়া স্টেশন যেতে হবে ।
হাওড়া স্টেশন ....?
সান্যাল বাবু বললেন---- হ্যাঁ হ্যাঁ এখন ই । এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান । জগন্নাথ এখনও বেরোয়নি ।
-------- ব্যাপার টা বুঝতে না পেরে তরফদার বাবু
থমকে গেলেন । কি যে বলছেন ? জগন্নাথ, হাওড়া স্টেশন-------!
MR. সান্যাল এবার চিৎকার করে বললেন --- এক্ষুণি বেরিয়ে যান । পুরো গাড়ি টা চেক করুন ।
এই নিন ছবি । দুটো গার্ল স্টুডেন্ট মিসিং ।
আগামী কাল রথ । বলা যায় না কিছুই ।
চতুর্দিকে খবর দেওয়া আছে । বেরিয়ে পড়ুন ।
তরফদার বাবু আর দেরী করলেন না । গাড়ি নিয়ে
বেরিয়ে গেলেন । কিন্তু উনি যখন হাওড়া পৌছলেন
তখন জগন্নাথ বেরিয়ে গেছে । ওখান থেকেই উনি
থানায় ফোন করলেন । Mr. সান্যাল ছাড়বার পাত্র নন । গাড়ি যতোই ছুটুক খড়গপুরে একটা বড় হল্ট
দেবে । উনি খড়গপুর G .R .P কে সব জানলেন ।
ওরা এলার্ট রইলো । গাড়ি স্টেশনে ঢুকতেই শুরু হলো চেকিং । প্রতিটি কামরা । দেখা গেলো দুটি বাচ্চা মেয়ে কাঁধে স্কুল ব্যাগ পাশাপাশি বসে গল্প করছে । জিআরপি কাছে যেতেই ওরা কেমন কাচুমাচু করে উঠলো । জিয়ারপি জিজ্ঞাসা করলো
তোমরা কোথায় যাবে ? --- ওরা বললো পুরী ।
জিয়ারপি বললো এইতো পুরী এসে গেছে ।
ওরা বললো এসে গেছে ? জিয়ারপি বললো -- হ্যা ।
ওরা যেই ব্যাগ নিয়ে উঠতে যাবে ওমনি রেল পুলিশ
ওদের হাত দুটো ধরে বললো । এসো আমি তোমাদের নামিয়ে দিচ্ছি । বলেই সোজা ওনাদের
অফিসে এনে হাজির করলো । ওখানে ইনসপেক্টর সাহেব তাঁর সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে বসে ছিলেন ।
উনি সোজা থানায় ফোন করে জানিয়ে দিলেন যে বাচ্চা দুটি ধরা পড়েছে । ওখান থেকে বাড়িতে ফোন এসে গেলো । রাধা আর রাণী সুস্থ আছে । ওরা কাল ফিরে আসছে । জিয়ারপির বড় বাবু ওদের খুব যত্ন করে খাওয়ালেন । তারপর সব খবর
নিলেন ওদের থেকে । ওরা না কি রথ দেখতে পুরী যাচ্ছিল । কিছু টাকা জমিয়েছিল রাধা । আর কিছু টাকা যোগাড় করেছিল রাণী ।
পরের দিন সকালে জিয়ারপির গাড়ি ওদেরকে
বাড়ি পৌছে দিয়ে গেলো । ওদের জগন্নাথ দরশন আর হলো না ।
দুই বাড়ির বাবা মা বাচ্চাদের ফেরত পেয়ে খুব খুশি হলেন ।
.............................................
