বন্ধন মুক্তি
বন্ধন মুক্তি
উইল তো কর্তা করে গিয়েছেন । সেই মতো
কাজও হয়েছে । বড় ঘর দালান সবই পেয়েছে বড়
ছেলে । ও পাশের ঘর দুটো আর উঠোনের অর্ধেকটা পেয়েছে ছোট ছেলে । বড় ঘর দালানের
সামনে উঠোনের অংশ টা বড় ছেলে পেয়েছে । আর
একেবারে ধার দিয়ে ছোট-র সদরে যাওয়ার পথ ।
আর সদর দুজনেরই কমন । মানে দুজনই যাওয়া
আসা করবে । ঠিক ঠাকই চলছিল । বাড়ির গিন্নি
মানে, সজন আর সুজনের মা সরমা দেবীর ভার
ছয় মাস ছয় মাস করে পালি করে নিয়েছে দুই ছেলে । ছোট ছেলের কাছে ছয় মাস থাকার সময়
সরমা দেবী ওনার টিনের বাক্সে রাখা ওনার একটা
সোনার টিকলি সুজনের মেয়ে বিউটি কে দিয়ে
এসেছেন । এখন বড় ছেলের ঘরে থাকার পালা ।
বড় ছেলে , বড় বৌ দুজনেই খুব ভালো মানুষ ।
মা বলতে অজ্ঞান । সরমা যে কয় দিন থাকে ওনারা
খুব যত্ন করেন । ওদেরও একটাই মেয়ে নাম তারা ।
সে প্রতি মুহূর্তে ঠাম্মার খবর নেয় । ঠাম্মা খেয়েছে
কি না । ওষুধ খাওয়া হয়েছে কি না । দুপুরে খাওয়া
হয়ে গেলে ঠাম্মার বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দেওয়া।
আর রাতে খাবারের পর বিছানার চাদর ঝেড়ে মশারি খাচিয়ে দেওয়া পর্যন্ত । তারপর তারার ছুটি।
ঠাম্মাও তারাকে খুব ভালোবাসেন । এক মুহুর্ত চোখের আড়াল হলেই খোঁজ করেন তারা কোথায়
গেলো । বেশ ভালোই চলছিল সংসার ।
হঠাৎ ঠাম্মার জ্বর হতেই তাল কাটলো । সবাই মাথার কাছে বসে । ডাক্তার বাবু নিদান দিয়ে গেছেন --বয়স অনেকটাই হয়েছে , ওষুধ গুলো
ঠিক ঠিক খাওয়াবেন আর সব সময় লক্ষ্য রাখবেন। এক্ষুনি ভয়ের কিছু নেই তবে বুড়ো মানুষ
এই আর কি ।
সাত দিনের মাথায় যখন জ্বর টা ছাড়ল সরমা দেবীকে বেশ হাসি খুশি দেখাচ্ছিল । সন্ধ্যা বেলায়
সবাই ওনাকে চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে , কেউ বসে।
তখন সরমা দেবীর কি খেয়াল হলো ওনার টিনের
বাক্স টা আনতে বললেন ।
বড় ছেলে সজন বললো ---তুমি আবার এখন বাক্স
নিয়ে কি করবে ?
সরমা দেবী বললেন নিয়ে আয় না ।
বাক্স টা আনা হলো । ওনার সামনে নামিয়ে দিতেই
উনি চাবি টা খুললেন । তারপর হাতড়ে হাতড়ে
যত্ন করে রাখা ওনার সোনার আংটি টা বের করলেন । তারপর তারা কে দিয়ে বললেন এটা আজ থেকে তোমার । এটা আমি তোমার জন্যই
রেখে ছিলাম । আজ এটা তোমায় দিয়ে আমি বন্ধন মুক্ত হলাম । ঠাম্মা দুই হাত তুলে আশীর্বাদ
করলেন তারাকে । এবার আমার ছুটি হলেই বাঁচি।
সজন , সুজন আর দুই বৌ সমস্বরে বলে উঠলো
---- এমন কথা কেন বলছেন বলছেন মা !
ওদিকে তারা আর বিউটি কাঁদতে লেগে গেছে ।
ঠাম্মা বললেন --- ও দিদি ভাই তোমরা আবার
কাঁদছো কেন । এতে কান্নার কি হলো ।
তারা বললো --- ঠাম্মা , তুমি বলো -- আমাদের
ছেড়ে কোনো দিন যাবে না ...।
ঠাম্মা বললেন --- আচ্ছা বেশ বেশ । তাই হবে ।
তুমি কেঁদো না ভাই । আমার ভালো লাগে না ।
ঘর টা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো ।
.........................................................
