NILAY CHATTERJEE

Abstract Fantasy Others

3  

NILAY CHATTERJEE

Abstract Fantasy Others

সে দিনের এক ন

সে দিনের এক ন

4 mins
7



   

     আমার পিতামহীকে আমার দেখার সৌভগ্য

        হয় নি । তা বলে ঠাকুমার আদর যে আমি পায়নি তা নয় । আমি যাঁকে ঠাকুমা বলতাম তিনি

আমার বাবার পিসিমা । অর্থাৎ আমার দাদা মশায়ের বোন । ঐ যে তখন কার দিনে নিয়ম ছিল

নয় বছরে গৌরী দান । সব মেয়েরেই বিয়ে হতো

নয়ের আগে । বা কাঁটায় কাঁটায় নয়ে । নয় পেরনো

চলবে না । ঠাকুমারও তাই হয়েছিল । কিন্তু বিধি

বাম । ঠাকুমা বাল্য বয়সেই বিধবা হয়ে যান ।

আর হবে নাই বা কেন । তখন তো আট বছরের একটা বালিকার সাথে পঞ্চাশ বছরের একটা বুড়োর বিয়ে হতো । বুড়োটা হয়তো এর আগে তিন খানা বিয়ে করে বসে আছে । কারণ বিয়ে করলেই তো টাকা পাবে । বিশ -পঞ্চাশ কি একশো । আর

তখনকার একশো মানে এখনকার এক লাখ ।বেশীও হতে পারে ।

তা- আমার দাদামশায় বোন কে বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসেন । এবং নিজের তদারকিতে রাখেন ।

ঠাকুমাও দাদার সংসার টাকে নিজের মনে করেই

দেখাশোনা করে ভালবেসে জীবন পার করে দিলেন । আমার দাদু থাকতেন বাঁকুড়া শহরে ।

তিনি ছিলেন বাঁকুড়া কোর্টের উকিল । তাঁর যেমন ছিল রোজগার তেমনি ছিল পসার । তিনি সেখানে পেল্লায় বাড়ি খাচিয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে

দিন কাটাতেন । আর ঠাকুমা গ্রামের বাড়িতে জমিজমা , পুকুর , বাগান , গরু বাছুর সব সামলাতেন । আমি পিতামহী কে দিয়ে শুরু করে

ছিলাম । এখন বলি পিতামহকেও আমি দেখিনি ।

এবং ওনার পরলোকে গমনের পরেই শহরের বাড়ি

শরিকি বিবাদে বেহাত হয়ে যায় । তখন থেকে সকলে ঠাকুমার তত্ত্বাবধানেই দিনযাপন শুরু করে ।

গ্রামের বাড়ি টাও অনেকখানি জায়গা নিয়ে এবং

বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা । বড় বারান্দা ওয়ালা কোঠা ঘর কতো সুন্দর সেটা ছিল

আমার জ্যেঠুর । আর এক পাশে আমাদের লম্বা চার চালা ঘর । মাঝে উঠোন সেখানে কতো গাছ।

আমি মানে আমরা ঠাকুমার শেষ জীবনের সাক্ষী।

তবুও ওনার কোলে চেপে পাড়া বেড়িয়েছি এখনও

মনে পড়ে । তখন আর মাঠ,ঘাট ,পুকুর, বাগান করতে পারতেন না । কিন্তু ওনার অভিজ্ঞতা ছিল

প্রচুর । কোন আকাশে মেঘ উঠলে বৃষ্টি হয় ।

আজ বৃষ্টি হবে কি না । কোন বারে বৃষ্টি শুরু হলে

ক দিন ধরে চলবে । ঝড় ,বিদ্যুৎ থামাবার মন্ত্র কি ।

কোন জমি টা কোথায় । ওখানে কতো ধান হয় ।

কোন গাছের পাতা বেটে রস করে খেলে পেটের ব্যামো সারে , সর্দি কমে , কাশি কমে এসব মুখস্থ ।

আর একটা জিনিষ মুখস্থ ছিল সেটা হলো রামায়ণ-

মহাভারত । বিছানায় ঠাকুমার পাশে শুয়ে শুধু একবার বলতাম --- ঠাকুমা ঐ হনুমানের গল্পটা

বলো না । ব্যাস, ঠাকুমা শুরু করতেন কেমন করে

হনুমান মন্দোদরীর কাছ থেকে ছলেবলে  রাবণের মৃত্যু বাণ খানা

নিয়ে এসে রামচন্দ্রের হাতে তুলে দিল আর রাবণ বধ সম্পন্ন হলো । এক কথায় ঠাকুমার রামায়ণ

মহাভারত ছিল মুখস্থ ।

প্রতি দিন দুপুরে বিশেষ করে শীতের দিনে রোদ পিঠ করে ঠাকুমার সে কি আড্ডা । আরও দু তিনজন এপাড়া ওপাড়া থেকে ওনার পরিচিত

সাথি আসত । জমে যেতো গল্প ।

আর একটা কাজ ঠাকুমা খুব ভালো করতে পারতেন । সেটা হলো বিয়ে হবে কি না বা কতো

দেরী হবে উনি বলে দিতে পারতেন। আর এটা জানবার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে পাশপাশাড়ি প্রতিবেশীরা আর দূর দূরান্তের

গরীব ঘরের অনেক বাবা মা ঠাকুমার কাছে আসতেন ।

সঙ্গে সেই মেয়েটিকেও নিয়ে আসতেন ওনারা ।

ঠাকুমা একটা পরীক্ষা করতেন । দুটো বাটি নিতেন।

লুকিয়ে একটা গোলাপ ফুল তুলে আনতেন । এবার

গোলাপ ফুলটা একটা বাটির মধ্যে রেখে আড়াল করে দুটো বাটিই উল্টে দিতেন । এবার মেয়ের মা ও মেয়েকে চোখ বুজতে বলতেন । তারপর বলতেন --

এই সামনের দুটো বাটির মধ্যে যে কোনো একটা তোলো । যে যতো তাড়াতাড়ি ঐ গোলাপ ফুল ঢাকা

বাটি খানা তুলতে পারবে তার ততো তাড়াতাড়ি বিয়ে হবে । যে যতো দেরী করবে বা ফাঁকা বাটি টা

তুলবে তার বিয়ে ততো দেরী আছে এটাই ঠাকুমা

বলতেন। কখনও দেখতাম দুটো বাটির মধ্যে একটায় গোলাপ আর একটায় রাখতেন ধুতরা ফুল। যে অনেকক্ষণ ভেবে ধুতরা ফুল ঢাকা দেওয়া

বাটি টা তুলতো ঠাকুমা বলতেন শিব ঠাকুরের মাথায় জল ঢালো । শিবের পুজো করো প্রতিদিন

বিয়ের দেরী আছে তবে শিবের মতো বর পাবে ।

কখনও রাখতেন গোলাপ আর জবা । যে জবার বাটিটা তুলতো । ঠাকুমা বলতেন মা কালীর পুজো

দাও । মানত করো । তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাবে ।

এ পরীক্ষা যে কেউ বাড়িতে করতে পারে । কিন্তু

সবাই ঠাকুমার কাছে আসত । আমরা ঠাকুমার

কারসাজি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতাম । সে কি কম

দিনের কথা ! সেই প্রিয় ঠাকুমাকে যে দিন হারিয়ে

ছিলাম সে দিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম মনে ।

আজ কি জানি কেন যেন তাঁর কথাই মনে পড়ে গেলো ।

        ...............................................



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract