মুক্তি
মুক্তি
মুক্তি
যখন পর পর তিন বছর অপেক্ষা করার পরও
চাকরির কোনো আশা দেখতে পেলো না সুলভ
তখন ও একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো । না আর
চাকরি নয় । সে ব্যবসা করবে । কিন্তু কিসের ?
সেটা নিয়েও বেশ একটা উথাল পাথাল চললো মনের ভিতর । এবং উত্তরও পেয়ে গেলো । সে একটা চা এর দোকান খুলবে । কিন্তু কোথায় ?
না নিজের গ্রামে নয় । নিকটে কোনো শহরেও নয় ।
ও চলে গেলো কালিম্পং । প্রথম কয়দিন সে শহরটা
ঘুরে দেখলো । খুব সুন্দর ! পাহাড়ের খাড়াই ! আবার কোথাও ঢালু । মাঝে মাঝেই বাজার । বেশ
মনোরম । ঘুরতে ঘুরতে সুলভ এক সময় এসে পড়ল তিস্তা বাজারে । পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা
বিশাল পাহাড়ি নদী । খুবই খরস্রোতা ।
অনেক পর্যটক এখানে আসেন । সুলভও এখন
পর্যটক । কিন্তু পর্যটনের মধ্যেই ওর একটা চিন্তা
কাজ করছে । সেটা হচ্ছে জীবনে স্থায়িত্ব আনার চিন্তা । এই চিন্তাটা ওকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ।
ও একটা অল্প টাকায় ঘর ভাড়া নিল । পাহাড়ের
ঢালে ঘর । ওখানে অবশ্য সব ঘরই পাহাড়ের ঢালে।
ঐ ঘরে একটা ছোটো বারান্দা আছে । ও ঐ বারান্দাটা কাজে লাগালো । দুটো পাশ ঘিরে দিলো।
তারপর শুরু করলো চা দোকান । সঙ্গে রাখলো কেক , পেস্ট্রি , বিস্কুট । পাশ দিয়ে চলে গেছে রাস্তা।
সব সময় গাড়ি চলছে । ওখানে তো সারা বছরই শীত । কাজেই গাড়ির চালক ঠান্ডা হাওয়ায় গাড়ি
চালাতে চালাতে গা গরম করার প্রয়োজন হলেই
গাড়ি থামিয়ে দোকানে এসে বসে এক গ্লাস গরম
চা তার সাথে পছন্দ মতো বিস্কুট , কেক নিয়ে খেয়ে
আবার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় । মাঝে মাঝে সুলভ
এখানকার স্টাইলে চপ , বেগুনী , ঘুগনি ও বানায় ।
সুলভের দোকানের জনপ্রিয়তা এক লাফে বেড়ে যায় ।
খদ্দেরও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে । বাস ওয়ালারা
একটা স্টপেজ বানিয়ে ফেললো । সুলভের আরো
সুবিধে হয়ে গেলো ।
নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা । তার কুলকুল শব্দ।
সুলভের মন চুরি করে নিল নদীটা । পাহাড়ের ওপর সরকারের নজর খুব স্বচ্ছ । পাহাড়কে ঢেলে সাজাচ্ছেন । সুলভ খুব খুশি । চতুর্দিকে বড় বড় রাস্তা হচ্ছে । ওদিকে সিকিমে তৈরী হচ্ছে বাঁধ ।সমস্ত পাহাড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পানীয় জল এর
পাকা বন্দোবস্ত । সুলভ মনে মনে বেশ আনন্দিত।
ওর চাকরি না করার সিদ্ধান্ত টা সঠিক ছিল ।
এতদিনে তা ভালোভাবেই প্রমাণিত হয়েছে । ওর
বন্ধুরা এখনও চাকরির জন্য কলকাতায় আন্দোলন
চালিয়ে যাচ্ছে । খবর গুলো তো ও সবই পাচ্ছে ।
গ্রীষ্ম ঢুকে গেলো । মানে বৈশাখ মাস । এ সময় শীত বেশ সহনীয় ----
অনেকটাই কমে । একটা হাফ সোয়েটার সকালে
সন্ধ্যায় যথেষ্ট । আর কলকাতায় দিন দিন তাপমাত্রা
বাড়ছে । শুধু কলকাতা নয় । বাঁকুড়া , পুরুলিয়া ,
বীরভূম , ঝাড়খণ্ড ওদিকে বিহার , রাজস্থান সব
প্রখর গ্রীষ্মের কবলে । সুলভের গরমের আচ এখনও লাগেনি । বিশ্বউষ্ণআয়নের আবহাওয়া
এখানেও । সবাই বলছে ঠান্ডা আরো বেশী থাকে ।
এবার সুলভের জন্যই ঠান্ডা টা কম । সুলভ হাসে ।
ওকে সবাই খুব ভালোবাসে । ব্যবসা ওর তর তরিয়ে বাড়ছে । এদিকে উষ্ণতাও বাড়ছে ।
দার্জিলিঙ কালিম্পং এর তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের
চেয়ে বেশী । দক্ষিণের তাপমাত্রা কোথাও চল্লিশ,
কোথাও বিয়াল্লিশ , কোথাও বা সাতচল্লিশ ডিগ্রি ।
বৃষ্টির নাম নেই । অথচ আবহাওয়া দপ্তর ঘোষণা
শুরু করেছে বর্ষা দোর গড়ায় ।
ইতিমধ্যে রেমাল একটা চোখ রাঙানি দিয়ে গেছে।
সেটা অবশ্য বাংলা দেশে আছড়ে পড়েছে । তাই
দক্ষিণে তেমন একটা ক্ষতি হয় নি । রেমাল চলে
যেতেই আবার তাপ চর চর বাড়তে শুরু করেছে ।
আকাশ বাণী থেকে ঘন ঘন ঘোষণা হতে লাগলো
উত্তরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হবে ।
কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি ।
বৃষ্টি বাঁধ মানে না । শুধু তিস্তা নয় তোর্সা জলঢাকা
সব নদীতেই প্রবল বন্যা দেখা দিলো । সিকিমের
বাঁধ ভেঙ্গে জলোচ্ছাস শহর রাস্তা ডুবিয়ে দিলো।
শুরু হলো ধস নামা । পাথরের চাঁই গড়িয়ে গড়িয়ে
পড়তে লাগলো। হিমালয় পর্বত ভঙ্গুর । ধসে বাড়ি
ঘর ভেঙ্গে পড়তে লাগলো । সমতলের ছেলে সুলভ।
ও অতো অভিজ্ঞ নয় । সবাই ওকে সতর্ক করলো।
ঘর টা সাময়িক ছেড়ে দিতে বললো । কারণ ঘরটা
পুরোপুরি পাহাড়ের গায়ে । একেবারে ঢালু এরিয়া ।
ঘর ছেড়ে দিল সুলভ। আর ঠিক সেই রাত্রেই প্রবল
বর্ষণে সুলভের দোকান ভেঙ্গে পড়লো খাদে ।
ভাগ্যিস সরে গিয়েছিল ছেলেটা । নাইলে কি যে হতো । বলা মুস্কিল ।
বৃষ্টি হয়ে চলেছে অনর্গল । বিরাম নেই। সিকিম ঢোকার মুখে জাতীয় সড়ক ভেঙেছে ।
রাস্তার পাশে গাড়োয়াল তলিয়ে যাচ্ছে জলের তলায় । কালিম্পং থেকে দার্জিলিং বিস্তীর্ন এলাকা
প্লাবিত । ঘন ঘন ফোন আসছে বাড়ি থেকে । বন্ধুরাও ফোন করছে । দোকান ঘর এবং থাকার ঘর দুটোই ধসে গেছে । আসলে ও তো সমতলের
লোক । পাহাড় সম্মন্ধে ওর ধারনা কিছু মাত্রও নেই।
পর্যটক যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা হোটেলে ঘরে।
ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে । গাড়ি ঘোড়া সব বন্ধ ।
সুলভ পড়ে গেলো অথৈ জলে , বলা যায় ।
ও কিন্তু হারবার পাত্র নয় । দক্ষিণ বঙ্গ থেকে বেকার অবস্থায় ও এখানে এসেছিল । এখানে এসে
রোজগারের রাস্তা পেয়েছিল । আবার ওকে নতুন
করে সব সাজিয়ে নিতে হবে । ও ঠিক করলো
পাহাড়ের ঢালে আর ঘর নেবেনা । একটু ম্যাল এরিয়ায় ঘর নিয়ে দোকান টাকে আবার দাঁড় করাবে । বেকারত্ব থেকে মুক্তি ওকে পেতেই হবে।
----------------------------------------