NILAY CHATTERJEE

Abstract Fantasy Others

3  

NILAY CHATTERJEE

Abstract Fantasy Others

মুক্তি

মুক্তি

4 mins
7


          মুক্তি

       যখন পর পর তিন বছর অপেক্ষা করার পরও

চাকরির কোনো আশা দেখতে পেলো না সুলভ

তখন ও একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো । না আর

চাকরি নয় । সে ব্যবসা করবে । কিন্তু কিসের ?

সেটা নিয়েও বেশ একটা উথাল পাথাল চললো মনের ভিতর । এবং উত্তরও পেয়ে গেলো । সে একটা চা এর দোকান খুলবে । কিন্তু কোথায় ?

না নিজের গ্রামে নয় । নিকটে কোনো শহরেও নয় ।

ও চলে গেলো কালিম্পং । প্রথম কয়দিন সে শহরটা

ঘুরে দেখলো । খুব সুন্দর ! পাহাড়ের খাড়াই ! আবার কোথাও ঢালু । মাঝে মাঝেই বাজার । বেশ

মনোরম । ঘুরতে ঘুরতে সুলভ এক সময় এসে পড়ল তিস্তা বাজারে । পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা

বিশাল পাহাড়ি নদী । খুবই খরস্রোতা ।

অনেক পর্যটক এখানে আসেন । সুলভও এখন

পর্যটক । কিন্তু পর্যটনের মধ্যেই ওর একটা চিন্তা

কাজ করছে । সেটা হচ্ছে জীবনে স্থায়িত্ব আনার চিন্তা । এই চিন্তাটা ওকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ।

ও একটা অল্প টাকায় ঘর ভাড়া নিল । পাহাড়ের

ঢালে ঘর । ওখানে অবশ্য সব ঘরই পাহাড়ের ঢালে।

ঐ ঘরে একটা ছোটো বারান্দা আছে । ও   ঐ বারান্দাটা কাজে লাগালো । দুটো পাশ ঘিরে দিলো।

তারপর শুরু করলো চা দোকান । সঙ্গে রাখলো কেক , পেস্ট্রি , বিস্কুট । পাশ দিয়ে চলে গেছে রাস্তা।

সব সময় গাড়ি চলছে । ওখানে তো সারা বছরই শীত । কাজেই গাড়ির চালক ঠান্ডা হাওয়ায় গাড়ি

চালাতে চালাতে গা গরম করার প্রয়োজন হলেই

গাড়ি থামিয়ে দোকানে এসে বসে এক গ্লাস গরম

চা তার সাথে পছন্দ মতো বিস্কুট , কেক নিয়ে খেয়ে

আবার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় । মাঝে মাঝে সুলভ

এখানকার স্টাইলে চপ , বেগুনী , ঘুগনি ও বানায় ।

সুলভের দোকানের জনপ্রিয়তা এক লাফে বেড়ে যায় ।

খদ্দেরও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে । বাস ওয়ালারা

একটা স্টপেজ বানিয়ে ফেললো । সুলভের আরো

সুবিধে হয়ে গেলো ।

নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা । তার কুলকুল শব্দ।

সুলভের মন চুরি করে নিল নদীটা । পাহাড়ের ওপর সরকারের নজর খুব স্বচ্ছ । পাহাড়কে ঢেলে সাজাচ্ছেন । সুলভ খুব খুশি । চতুর্দিকে বড় বড় রাস্তা হচ্ছে । ওদিকে সিকিমে তৈরী হচ্ছে বাঁধ ।সমস্ত পাহাড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পানীয় জল এর

পাকা বন্দোবস্ত । সুলভ মনে মনে বেশ আনন্দিত।

ওর চাকরি না করার সিদ্ধান্ত টা সঠিক ছিল ।

এতদিনে তা ভালোভাবেই প্রমাণিত হয়েছে । ওর

বন্ধুরা এখনও চাকরির জন্য কলকাতায় আন্দোলন

চালিয়ে যাচ্ছে । খবর গুলো তো ও সবই পাচ্ছে ।

গ্রীষ্ম ঢুকে গেলো । মানে বৈশাখ মাস । এ সময় শীত বেশ সহনীয় ----

অনেকটাই কমে । একটা হাফ সোয়েটার সকালে

সন্ধ্যায় যথেষ্ট । আর কলকাতায় দিন দিন তাপমাত্রা

বাড়ছে । শুধু কলকাতা নয় । বাঁকুড়া , পুরুলিয়া ,

বীরভূম , ঝাড়খণ্ড ওদিকে বিহার , রাজস্থান সব

প্রখর গ্রীষ্মের কবলে । সুলভের গরমের আচ এখনও লাগেনি । বিশ্বউষ্ণআয়নের আবহাওয়া

এখানেও । সবাই বলছে ঠান্ডা আরো বেশী থাকে ।

এবার সুলভের জন্যই ঠান্ডা টা কম । সুলভ হাসে ।

ওকে সবাই খুব ভালোবাসে । ব্যবসা ওর তর  তরিয়ে বাড়ছে । এদিকে উষ্ণতাও বাড়ছে ।

দার্জিলিঙ কালিম্পং এর তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের

চেয়ে বেশী । দক্ষিণের তাপমাত্রা কোথাও চল্লিশ,

কোথাও বিয়াল্লিশ , কোথাও বা সাতচল্লিশ ডিগ্রি ।

বৃষ্টির নাম নেই । অথচ আবহাওয়া দপ্তর ঘোষণা

শুরু করেছে বর্ষা দোর গড়ায় ।

ইতিমধ্যে রেমাল একটা চোখ রাঙানি দিয়ে গেছে।

সেটা অবশ্য বাংলা দেশে আছড়ে পড়েছে । তাই

দক্ষিণে তেমন একটা ক্ষতি হয় নি । রেমাল চলে

যেতেই আবার তাপ চর চর বাড়তে শুরু করেছে ।

আকাশ বাণী থেকে ঘন ঘন ঘোষণা হতে লাগলো

উত্তরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হবে ।

কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি ।

বৃষ্টি বাঁধ মানে না । শুধু তিস্তা নয় তোর্সা জলঢাকা

সব নদীতেই প্রবল বন্যা দেখা দিলো । সিকিমের

বাঁধ ভেঙ্গে জলোচ্ছাস শহর রাস্তা ডুবিয়ে দিলো।

শুরু হলো ধস নামা । পাথরের চাঁই গড়িয়ে গড়িয়ে

পড়তে লাগলো। হিমালয় পর্বত ভঙ্গুর । ধসে বাড়ি

ঘর ভেঙ্গে পড়তে লাগলো । সমতলের ছেলে সুলভ।

ও অতো অভিজ্ঞ নয় । সবাই ওকে সতর্ক করলো।

ঘর টা সাময়িক ছেড়ে দিতে বললো । কারণ ঘরটা

পুরোপুরি পাহাড়ের গায়ে । একেবারে ঢালু এরিয়া ।

ঘর ছেড়ে দিল সুলভ। আর ঠিক সেই রাত্রেই প্রবল

বর্ষণে সুলভের দোকান ভেঙ্গে পড়লো খাদে ।

ভাগ্যিস সরে গিয়েছিল ছেলেটা । নাইলে কি যে হতো । বলা মুস্কিল ।

বৃষ্টি হয়ে চলেছে অনর্গল । বিরাম নেই। সিকিম ঢোকার মুখে জাতীয় সড়ক ভেঙেছে ।

রাস্তার পাশে গাড়োয়াল তলিয়ে যাচ্ছে জলের তলায় । কালিম্পং থেকে দার্জিলিং বিস্তীর্ন এলাকা

প্লাবিত । ঘন ঘন ফোন আসছে বাড়ি থেকে । বন্ধুরাও ফোন করছে । দোকান ঘর এবং থাকার ঘর দুটোই ধসে গেছে । আসলে ও তো সমতলের

লোক । পাহাড় সম্মন্ধে ওর ধারনা কিছু মাত্রও নেই।

 পর্যটক যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা হোটেলে ঘরে।

ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে । গাড়ি ঘোড়া সব বন্ধ ।

সুলভ পড়ে গেলো অথৈ জলে , বলা যায় ।

ও কিন্তু হারবার পাত্র নয় । দক্ষিণ বঙ্গ থেকে বেকার অবস্থায় ও এখানে এসেছিল । এখানে এসে

রোজগারের রাস্তা পেয়েছিল । আবার ওকে নতুন

করে সব সাজিয়ে নিতে হবে । ও ঠিক করলো

পাহাড়ের ঢালে আর ঘর নেবেনা । একটু ম্যাল এরিয়ায় ঘর নিয়ে দোকান টাকে আবার দাঁড় করাবে । বেকারত্ব থেকে মুক্তি ওকে পেতেই হবে।

           ----------------------------------------



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract