STORYMIRROR

NILAY CHATTERJEE

Abstract Fantasy Others

3  

NILAY CHATTERJEE

Abstract Fantasy Others

দুখলাল ও সুখলাল

দুখলাল ও সুখলাল

5 mins
7


         সুখলাল আর দুখলাল একই গ্রামে বাস করে । ওরা দুই পড়শি । ওরা দুই বন্ধুও । আবার

সুখলালের স্ত্রী দুখলালের শ্যালিকা । অপরপক্ষে

দুখলালের স্ত্রীও সুখলালের শ্যালিকা । অর্থাৎ ওরা

দুই ব্ন্ধু পরস্পর দুই বোনকে বিয়ে করেছিল । ফলে

ওদের মধ্যে আত্মিয়তাও গড়ে ওঠে ।

প্রথমে বিয়ে করেছিল দুখলাল । সেই বিয়েতে সুখলাল বরযাত্রী গিয়েছিল । বরযাত্রী গিয়ে সুখলাল ছাতনা তলাতেই ছিল ব্যস্ত । বন্ধুর বিয়ে

বলে কথা। কখন পুরোহিত মশায় কি হুকুম করেন।

আর তা ছাড়া বিয়ের সময় ছেলেরা এমনিই একটু

নার্ভাস থাকে । কাজেই বন্ধুকে সাহস দেবার জন্যও

সে বন্ধুর পিছনেই বসেছিল । হঠাৎ তীব্র আলো, ভীড় আর অনেকক্ষণ এক ভাবে বসে থেকে ওর একটু জল পিপাসা পায় । সবাই তখন বিয়ে নিয়ে

ব্যস্ত । উসখুস করছিল কাকেই বা বলবে । এমন সময় পুরোহিত মশায় বরের পোশাক টা চাইতেই

বৌ এর বোন হাত বাড়িয়ে দিতে এলেই সুখলাল একটা সুযোগ নেয় । ইশারায় বলে--- এক গ্লাস জল

খাওয়াবেন ? বড় তেষ্টা পেয়েছে ।

মহিলাদের মন এমনিই সেবা পরায়ণ । এই সুযোগ টা উনি হাত ছাড়া করেনই বা কি করে । আবার বরের বন্ধু জল চেয়েছে বলে কথা । তাড়াতাড়ি ঘর

থেকে এক গ্লাস জল এনে দিলেন । সুখলাল হাত

বাড়িয়ে জল টা নিল তারপর জলটা খেয়ে গ্লাস টা

ফেরত দিল । এই ছিল সূত্রপাত । বিয়ের কাজ সুসম্পন্ন হলে দুখলাল বৌ নিয়ে ঘরে ফিরে এলো ।

ওরা বেশ সুখেই সংসার শুরু করে দিল । কিন্তু

সুখলালের মন তো ছটফট করতে থাকে । সে দিন

বরযাত্র গিয়ে যাকে দেখেছে সে কে , সে দুখলালের

বৌ এর বোন কি না -- বা কি তার নাম কিছুই জানতে পারে নি । অথচ কাউকে জিজ্ঞাসাও করা

যাচ্ছে না । আর দ্বিতীয় বার ওদের বাড়ি যেতেও

পারছে না । খুবই মনটা চঞ্চল সুখলালের । ইতিমধ্যে একদিন স্বপ্নও দেখেছে সুখলাল । সেই

স্বপ্নের কথাই বলতে এসেছিল দুখলাল কে । যখন

সুখলাল পরিচয় দিচ্ছিল তখন আড়াল থেকে দুখলালের বৌ সব শুনেছিল । দিন কয়েক পরে বাড়ি গিয়ে ওর বাবা মা কে সবিস্তারে জানায় । ওর মা ছোট মেয়ে নীরাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে

সব কথা । আর তখনই বিয়ের কথা পাকা হয় ।

এবং বিবাহ কার্জ সুসম্পন্ন হয় । সেই বিয়েতে আবার দুখলাল উপস্থিত থেকে পুরো তদারকি করে । কারণ সে তো তখন বড় জামাই ।

ছোট বোন নীরা আর বড়ো বোন হীরা খুব খুশি । দুই বোন পাশাপাশি সংসার করতে থাকে মহানন্দে।

একদিন সকালে দুখলালের খোঁজে সুখলাল ওর ঘরে উঁকি মারে । তখন দুখলাল ঘরে ছিল না । সেটা

অবশ্য সুখলাল জানতো না । ঘরের দরজাটা ভেজানো ছিল । হঠাৎ একটু শব্দ হতেই হীরা সচকিত হয় এবং সুখলালকে দেখে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে । কড়া ভাষায় বলে----- লজ্জা লাগেনা ...!

সুখলাল তড়িতে সরে পড়ে । সেও লজ্জিত হয় ।

সে নিজের ঘরে না ঢুকে দুখলালের খোঁজে বাইরে

যায় । ঘরে তখন নীরা একা । এক প্রস্থ ঘোরাঘুরি

করে সুখলালের খোঁজে এসে পড়ে দুখলাল ।

সে ঘরে ঢোকেনা- জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে----কি খবর রে? হীরা লজ্জায় পড়ে ।

দুখলাল আর না দাঁড়িয়ে সোজা সরে পড়ে । দুই বোন দু জনের কত্তাকে এই রকম একটা অবস্থার

মধ্যে ফেলায় নিজেরাও অস্বস্তির মধ্যে পড়ে ।

কিন্তু কেউই কাউকে কোনো কথা প্রকাশ করতে পারে না । এদিকে পথের মাঝেই দুই বন্ধুর সাক্ষাত

হয় ।দৈনন্দিন আলাপের ঢঙ এ অনেক কথাও হয় ।

ওরা বাড়ি ফিরে আসে যে যার । দুই গিন্নির মুখই

ভারি থাকায় পরিস্থিতি জটিল মনে হয়। দুখলাল এবং সুখলাল চিন্তিত হয় ।

কয়েক টা দিন এভাবে কাটে । কোনো বন্ধুই কারো

বাড়িতে আগের মতো ফ্রি ভাবে আসতে পারে না ।

কেমন একটা জড়তা অনুভব করে । এতো দিনের

বন্ধুত্বে আচমকা কুয়াশার আঁধার এসে পড়ায় সকলেই মুক্তির পথ খোঁজে । কেউই কারো বাড়ি

আগের মতো যেতে পারছেনা ।

এদিকে শহরে গ্রামে রথের হাওয়া । সোজা রথ মানে জগন্নাথদেবের মাসি বাড়ি যাত্রা সুসম্পন্ন।

এবার ফেরার পালা । দুখলাল সুখলালকে বললে

চল- আমরা উল্টো রথ দেখে আসি । দুই গিন্নির মধ্যে কেউই রাজি হলো না । তখন দুই বন্ধু ঠিক

করলো ওরাই যাবে ।

যেমন ভাবা তেমনি কাজ । দুই বন্ধু বের হলো মাহেশের উদ্দেশ্যে । ট্রেনে করে নামলো শ্রীরামপুরে। সেখান থেকে সোজা মাহেশ । ছয়শো আঠাশ বছরের পুরানো রথ । কতো ভীড় হয় !

জগন্নাথ দর্শনে কোটী জন্মের পাপ বিনষ্ট হয় ! ধর্ম,

অর্থ , কাম ও মোক্ষ চতুর্বর্গ ফল লাভ হয় ! তিনি তো সর্বভূতে বিরাজমান । তাঁর কৃপায় নব গ্রহের

শান্তি লাভ হয় । ওরা ভাবলো বৌ দুটো এলো না ।

এলে ওরা মনে একটু শান্তি পেতো ।

লোকে লোকারন্য । সবাই রথের দড়ি ধরতে চায় ।

সুখলাল আর দুখলাল ভিড়ের মধ্যে আর গেলো না । প্রভুর নাম গান কীর্তন চলছে । তারই মাঝে রথ

এগিয়ে আসছে মূল মন্দিরের দিকে । ওরা দুজনেই

জোড় হাত তুলে প্রভুকে প্রণাম জানালো । অন্তরের

 সব দু:খ পদতলে নিবেদন করলো । রথ এগিয়ে

চলে গেলো । ভিড় বাড়ছে বই কমছে না । এদিকে

রাতও বাড়ছে । সুখলাল বললো এবার বাড়ি ফিরে চল । দুখলাল বললে -- চল । ওরা বড়ির দিকে

রওনা দিল । ট্রেনে প্রচন্ড ভীড় । কোনো রকমে ঠেলে ঠুলে উঠলো । ঘেমে নেয়ে একসা । বাড়ি কাছে যখন এলো তখন রাত বারোটা । এদিকে

হীরা আর নীরা ঘর আর বার করছে । কিছুই বুঝতে

পারছে না । দুখলালের ঘরেই দুই বোন বসে ছিল ।

ওদের দেখে কেঁদে উঠলো । দুই বোন হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলো । বললে ---- আমাদের ভুল হয়ে

গেছে । আমরা বেফাস কথা বলে ফেলেছি । আর

কখনও হবে না । এই কথা দিলাম । ওরা দুই ভাই

ওদের ভুল বুঝতে পারে । দুখলাল হীরাকে আর

সুখলাল নীরাকে হাত ধরে তোলে । তারপর যে যার

বাড়িতে ফিরে যায় । সংসারে আবার হাসি ফিরে আসে । আবার আগের মতো চলা শুরু হয় দুজনের

সংসার ।

           ...............................................



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract