উত্তর পেলো না
উত্তর পেলো না
উত্তর পেলো না
যখন ছোট ছিল বদন তখন ও কাঁসি
বাজাতো বাবুদের বাড়ি ওর বাবার সঙ্গে ।
তারপর একটু বড়ো হতেই যখন ঢাক
কাঁধে নিলে তখন থেকে বদনের দাম টা আর
একটু বেড়ে গেলো । বদনের বাবা সুদর্শন যখন
বিছানা নিলে তখন বদনই হলো সর্বেসর্বা ।
বাবুদের বাড়ি বাজাতে গেলে ওনারা খুব যত্ন
আত্তি করেন । সকালে চা । একটু বেলায় রুটি তরকারি কিংবা ফুলকো লুচির সাথে মাখামাখা
আলুর দম । তার সাথে টানা নাড়ু ,গুড়পিঠে
কোনোদিন খইচুর , মন্ডা থাকবেই । দুপুরে 'মা'
এর ভোগ । বেশ ভালোই কাটে কটা দিন ।
সারাটা বছর বদন .. না -- শুধু বদন নয় ওর মতো
আরো অনেকে ভোলা , টিরা , কালু দিন গোনে ।
কবে পুজো আসবে । মহালয়া পার হলেই ঢাক গুলোর বাঁধন ঠিক করে নেয় । চামড়া গুলো
টান টান করে নেয় । তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা
আপন মনে নেচে নেচে বাজায় ঢাক । একদিন
পোস্ট আপিসের পিয়ন চিঠি নিয়ে আসে ।
সে চিঠিতে লেখা থাকে ---' তোমরা চার পাঁচ জন
এসো । পঞ্চমীর দিন সন্ধ্যায় অবশ্যই । '
এবার মহালয়া পেরিয়ে গেলো বাবুদের চিঠি এখনো
এলোনা । সবাই বেশ চিন্তায় রয়েছে ।
দ্শ তারিখে সপ্তমী । হাতে আর সময়ই বা কোথায় ।
কবে থেকে ভাবছে একটা ফোন কিনবে । সে আর
হয়ে উঠছে না । কিন্তু না । এবার ফোন কিনতেই
হবে । আজ একবার পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখবে বদন । মনে মনে এটাই ভাবলো ।
বাঁশ কঞ্চির কাজ গুলো সেরে গরু টাকে জল দেখিয়ে পড়ি মরি করে ছুটল বদন পোস্ট অফিসে।
অফিস টা গাঁয়ের মাঝে । বামুন পাড়ায় ।
অফিসে গিয়ে দেখলে তখনও দমাদম স্ট্যাম্প মারছে পিয়ন দাদা । আর মাস্টার মশায় নাকের
ওপর গোল কাঁচের চশমা ঠেকিয়ে তখনও কাজ
করে চলেছেন । দরজার এক পাশে বসে রইলো
বদন । খানিকক্ষণ বসে থাকার পর মাস্টার মশায়
নিজেই বদন কে জিজ্ঞাসা করলেন , ' কি রে বদন ? কিছু বলবি ? '
---- বাবু , আমাদের চিঠি আজও আসে নাই ?
----- না রে কোনো চিঠি তো নেই । কিসের চিঠি
বলতো ?
------- বাবু , ঐ ঢাক বাজাতে যাবার ডাক ।
------ ও , তোরা কোথায় যাস ঢাক বাজাতে ?
------- আজ্ঞে কইলকাতা ।
------ ওরে বাবা .....! কলকাতা কোথায় রে ?
------- বাবু আমরা তো অতো জানিনা । আমরা
হাওড়া টেসনে নামি । তারপর বাবুদের বাড়ি থেকে
লোক আসে । তারপর আমাদিকে গাড়িতে
করে নিয়ে যায় । দশমী পেরোলে আবার
গাড়ি করে টেশনে পৌছে দিয়ে যায় ।
------- বা: বা: ।
----- কিন্তুক এ বার তো .....
------ চিঠি এখনও আসেনি ।
----- তাইত ভাবছি বাবু কি যে করবো .....।
------ এবার কলকাতায় অনেক পুজোতেই ঢাক মাইক বাজবে না । পুজো হয়তো কোনোরকমে
হবে । তবে কোনো শব্দ হবে না । ভীড়ও অতো
হবে না ।
----- কেনে বাবু কেনে ?
---- সে কি রে কিছু খবর রাখিস না ?
---- বাবু কি খবর ?
কলকাতায় খুব ঝামেলা চলছে । হাসপাতালে এক জন মহিলা ডাক্তার গভীর রাতে খুন হয়েছেন । হ্যা
একটা খুন হয়ে গেছে । খুবই দু:খ জনক ঘটনা ।
----- হাসপাতালে খুন ? সে দিনে মোড়ে ঐ ছেলা গুলো কি বলাবলি করছিল .. .. অতটা তন করি নাই ।
----- তাহলে ঠিকই শুনেছিস ।
------ শুধু খুন নয় । চরম সম্মান হানির পর খুন ।
বদনের মন টা খারাপ হয়ে গেলো । সে ভারাক্রান্ত
মন নিয়ে ঘরে ফিরে এলো । ভোলা , টিরা , কালু ওরা সবাই এসেছে । সবাই নীরব ।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ওরা ঠিক করলো -- না , চিঠি আসুক আর নাই আসুক
ওরা যেমন যায় তেমনি এ বছরও দ্ল বেঁধে যাবে ।
পুজোতো হবেই । পুজোতো বন্ধ হবেক নাই । ঐ
বাবুরা যদি নাই ডাকে অন্য কোথাও .....।
কথাটায় সায় দেয় সবাই । তড়িঘড়ি ওরা বোচকা
বেঁধে নেয় । তারপর ঢাক কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে
কলকাতার উদ্দেশ্যে । সবাই রাতের গাড়ি ধরে ।
সকালে হাওড়া স্টেশনে নামে । দেখে -- ওদের মতো
আরো অনেকে এসেছে । তবে উন্মাদনা যেন কম ।
মাস্টার মশাই ঠিকই বলেছিলেন । সেই বাবুরা কিন্তু
আসে নাই । আর কাউকে স্টেশনে পাঠায় নাই ।
একটা রাত ওরা গামছা পেতে স্টেশনের ধারে কাটালো । পরের দিন একটা দল ওদের বায়না করে
নিয়ে গেলো ঠিকই । কিন্তু গিয়ে দেখলো জৌলুস
যেন একটু কম । প্যান্ডাল হয়েছে । ঢাকও বাজছে
কিন্তু মানুষের মধ্যে আনন্দে যেন খামতি । পুজো
করতে হবে তাই যেন করছে । আলোও কম । পুলিশ আরো বেশী বেশী করে ঘুরছে ।
সবচেয়ে বড়ো কথা দেবী দুর্গার আট হাতে অস্ত্র ।
আর দুটো হাত দিয়ে ' মা ' নিজের মুখ আড়াল করে রেখেছেন । ভোলা , কালু , টিরা , বদন সবাই
অবাক হলো । মাস্টার মশায় যা বলেছিলেন তাহলে
সেটা ঠিক । ' মা ' কি তাহলে রুষ্ট হয়ে রাগে ও লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকেছেন ?
ওরা এ ওর দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো কিন্তু
উত্তর পেলো না কোনো ।
.................................................
