STORYMIRROR

NILAY CHATTERJEE

Others

3  

NILAY CHATTERJEE

Others

উত্তর পেলো না

উত্তর পেলো না

4 mins
190


           উত্তর পেলো না

            যখন ছোট ছিল বদন তখন ও কাঁসি                         

          বাজাতো বাবুদের বাড়ি ওর বাবার সঙ্গে ।

    তারপর একটু বড়ো হতেই যখন ঢাক

    কাঁধে নিলে তখন থেকে বদনের দাম টা আর

  একটু বেড়ে গেলো । বদনের বাবা সুদর্শন যখন

   বিছানা নিলে তখন বদনই হলো সর্বেসর্বা ।

   বাবুদের বাড়ি বাজাতে গেলে ওনারা খুব যত্ন

আত্তি করেন । সকালে চা । একটু বেলায় রুটি তরকারি কিংবা ফুলকো লুচির সাথে মাখামাখা

আলুর দম । তার সাথে টানা নাড়ু ,গুড়পিঠে

কোনোদিন খইচুর , মন্ডা থাকবেই । দুপুরে 'মা'

এর ভোগ । বেশ ভালোই কাটে কটা দিন ।

 সারাটা বছর বদন .. না -- শুধু বদন নয় ওর মতো

  আরো অনেকে ভোলা , টিরা , কালু দিন গোনে ।

কবে পুজো আসবে । মহালয়া পার হলেই ঢাক গুলোর  বাঁধন ঠিক করে নেয় । চামড়া গুলো

টান টান করে নেয় । তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা

আপন মনে নেচে নেচে বাজায় ঢাক । একদিন

পোস্ট আপিসের পিয়ন চিঠি নিয়ে আসে ।

সে চিঠিতে লেখা থাকে ---' তোমরা চার পাঁচ জন

এসো । পঞ্চমীর দিন সন্ধ্যায় অবশ্যই । '

এবার মহালয়া পেরিয়ে গেলো বাবুদের চিঠি এখনো

এলোনা । সবাই বেশ চিন্তায় রয়েছে ।

দ্শ তারিখে সপ্তমী । হাতে আর সময়ই বা কোথায় ।

কবে থেকে ভাবছে একটা ফোন কিনবে । সে আর

হয়ে উঠছে না । কিন্তু না । এবার ফোন কিনতেই

হবে । আজ একবার পোস্ট অফিসে গিয়ে দেখবে বদন । মনে মনে এটাই ভাবলো ।

বাঁশ কঞ্চির কাজ গুলো সেরে গরু টাকে জল দেখিয়ে পড়ি মরি করে ছুটল বদন পোস্ট অফিসে।

অফিস টা গাঁয়ের মাঝে । বামুন পাড়ায় ।

অফিসে গিয়ে দেখলে তখনও দমাদম স্ট্যাম্প মারছে পিয়ন দাদা । আর মাস্টার মশায় নাকের

ওপর গোল কাঁচের চশমা ঠেকিয়ে তখনও কাজ

করে চলেছেন । দরজার এক পাশে বসে রইলো

বদন । খানিকক্ষণ বসে থাকার পর মাস্টার মশায়

নিজেই বদন কে জিজ্ঞাসা করলেন , ' কি রে বদন ? কিছু বলবি ? '

---- বাবু , আমাদের চিঠি আজও আসে নাই ?

----- না রে কোনো চিঠি তো নেই । কিসের চিঠি

        বলতো ?

------- বাবু , ঐ ঢাক বাজাতে যাবার ডাক ।

------ ও , তোরা কোথায় যাস ঢাক বাজাতে ?

------- আজ্ঞে  কইলকাতা ।

------ ওরে বাবা .....! কলকাতা কোথায় রে ?

------- বাবু আমরা তো অতো জানিনা । আমরা

           হাওড়া টেসনে নামি । তারপর বাবুদের   বাড়ি থেকে          

          লোক আসে । তারপর আমাদিকে গাড়িতে

           করে নিয়ে যায় । দশমী পেরোলে আবার

         গাড়ি করে টেশনে পৌছে দিয়ে যায় ।

------- বা: বা: ।

----- কিন্তুক এ বার তো .....

------ চিঠি এখনও আসেনি ।

----- তাইত ভাবছি বাবু কি যে করবো .....।

------ এবার কলকাতায় অনেক পুজোতেই  ঢাক মাইক বাজবে না । পুজো হয়তো কোনোরকমে

     হবে । তবে কোনো শব্দ হবে না । ভীড়ও অতো

      হবে না ।

----- কেনে বাবু কেনে ?

---- সে কি রে কিছু খবর রাখিস না ?

---- বাবু কি খবর ?

কলকাতায় খুব ঝামেলা চলছে । হাসপাতালে এক জন মহিলা ডাক্তার গভীর রাতে খুন হয়েছেন । হ্যা

একটা খুন হয়ে গেছে । খুবই দু:খ জনক ঘটনা ।

----- হাসপাতালে খুন ? সে দিনে মোড়ে ঐ ছেলা গুলো কি বলাবলি করছিল .. .. অতটা তন করি নাই ।

----- তাহলে ঠিকই শুনেছিস ।

------ শুধু খুন নয় । চরম সম্মান হানির পর খুন ।

বদনের মন টা খারাপ হয়ে গেলো । সে ভারাক্রান্ত

    মন নিয়ে ঘরে ফিরে এলো । ভোলা , টিরা , কালু ওরা সবাই এসেছে । সবাই নীরব ।

    

       বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ওরা ঠিক করলো  -- না , চিঠি আসুক আর নাই আসুক

ওরা যেমন যায় তেমনি এ বছরও দ্ল বেঁধে যাবে ।

পুজোতো হবেই । পুজোতো বন্ধ হবেক নাই । ঐ

বাবুরা যদি নাই ডাকে অন্য কোথাও .....।

কথাটায় সায় দেয় সবাই । তড়িঘড়ি ওরা বোচকা

বেঁধে নেয় । তারপর ঢাক কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে

কলকাতার উদ্দেশ্যে । সবাই রাতের গাড়ি ধরে ।

সকালে হাওড়া স্টেশনে নামে । দেখে -- ওদের মতো

আরো অনেকে এসেছে । তবে উন্মাদনা যেন কম ।

মাস্টার মশাই ঠিকই বলেছিলেন । সেই বাবুরা কিন্তু

আসে নাই । আর কাউকে স্টেশনে পাঠায় নাই ।

একটা রাত ওরা গামছা পেতে স্টেশনের ধারে কাটালো । পরের দিন একটা দল ওদের বায়না করে

নিয়ে গেলো ঠিকই । কিন্তু গিয়ে দেখলো জৌলুস

যেন একটু কম । প্যান্ডাল হয়েছে । ঢাকও বাজছে

কিন্তু মানুষের মধ্যে আনন্দে যেন খামতি । পুজো

করতে হবে তাই যেন করছে । আলোও কম । পুলিশ আরো বেশী বেশী করে ঘুরছে ।

সবচেয়ে বড়ো কথা দেবী দুর্গার আট হাতে অস্ত্র ।

আর দুটো হাত দিয়ে ' মা ' নিজের মুখ আড়াল করে রেখেছেন । ভোলা , কালু , টিরা , বদন সবাই

অবাক হলো । মাস্টার মশায় যা বলেছিলেন তাহলে

সেটা ঠিক ।  ' মা ' কি তাহলে রুষ্ট হয়ে রাগে ও লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকেছেন ?

 ওরা এ ওর দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো কিন্তু

উত্তর পেলো না কোনো ।

       .................................................



Rate this content
Log in