NILAY CHATTERJEE

Abstract Inspirational Others

3  

NILAY CHATTERJEE

Abstract Inspirational Others

নিরাপত্তা

নিরাপত্তা

3 mins
7


         নিরাপত্তা

         ছোট্ট সুবর্ণা কে হাত ধরে নিয়ে গেল স্কুলে

        ওর বাবা নিরাময় দত্ত । দিন টা খুবই ভালো ।

        ---- বৃহষ্পতিবার । গুরু বারে বিদ্যারম্ভ । খুব

       শুভ কাজ । সুবর্ণা ইস্কুলে ভর্তি হবার আগের

       কাজ গুলোয় বেশ পটু হয়েছে । তাই বাড়ির

       সকলের ইচ্ছায় ও আজ স্কুলে যাচ্ছে বাবার

       হাত ধরে । কাঁধে একটা ছোট্ট ব্যাগ । ওর মধ্যে

     সব আছে । বই , খাতা , পেনসিল এমন কি স্লেট

     খড়ি পেনসিল এবং জলের বোতল , টিফিন ।

     গতকাল রাত অব্দি বাড়ির সকলের কি চিন্তা !

     ঐ টুকু বাচ্চা ! কি করবে ওখানে ! পাছে পড়ে

    যায় ! কেই বা লক্ষ্য রাখবে ?

   : তখন অদৃশ্য লোক থেকে কে যেন সহায় দান

     করে । ......আমি তো আছি । ভয় কি ?

   বাড়ির সবাই বলাবলি করে--দিদিমণিরা আছেন ।

ভয়ের কিছু নেই ।

    সত্যি ভয়ের কিছু ছিলও না । সুবর্ণা দিব্বি ক্লাস

সেরে ইস্কুল থেকে ফিরে এলো ।

ইস্কুলের বারান্দা একটু উঁচু এবং সিঁড়ি বসানো ।

সুবর্ণা যখনই নামার চেষ্টা করে তখনই অদৃশ্য লোক

থেকে কে যেন বলে ওঠে : খুব সাবধান পড়ে যেও না । সুবর্ণা অবশ্য খুব সাবধানী । ধীরে ধীরে নামে ।

কিন্তু পা ফেলার সাথেই স্কুলের কোন পিয়ন বা দিদিমণির নজরে পড়ে যায় । সঙ্গে সঙ্গে কড়া ধমক

----- এই কোথা যাস ? যাও নিজের জায়গায় বোসো । সুবর্ণা গুটি গুটি পায়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে । ছেলেমেয়েরা হুড়োহুড়ি একটু করবেই ।

কিন্তু সেখানেও কড়া নজর ।

এমনই একটা বেষ্টনীর মধ্যে চার পাঁচটা বছর পার করে সুবর্ণা যখন হাই স্কুলে ঢুকলো তখন আরো

চিন্তা পেয়ে বসলো মা , বাবার মনে । সেখানে আরো

পাঁচ টা স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা এসে ভর্তি হয়েছে ।

পাছে আবার ঝুনোঝুনি , চুলোচুলি না করে ।

কিন্তু সেখানেও সেই অদৃশ্য লোক থেকে কে যেন বলে ওঠে ...অতো ভয় পাবার আছে টা কি ?

আমি তো পাশেই রইলাম ।

ওর থেকে লম্বায় - বয়সে বড় ছেলেমেয়েরাও ওর

সাথে কেউ কোনোদিন খারাপ ব্যবহার করেনি ।

সেখানেও ছিল অদৃশ্য লোকের বেষ্টনী মানে দিদিমণিদের কড়া নজর ।

সুবর্ণা যখন বারো ক্লাসে উঠলো তখনতো ও নিজেকে গার্ড দিতে শিখে গেছে । কি ভাবে চতুর্দিকে খেয়াল রাখতে হয় সেটা রপ্ত করে ফেলেছে । তারপরেও ছিল সেই অদৃশ্য লোকের

প্রভাব । রাস্তায় চলছে হয়তো পিছনে কাকু আসছেন কিম্বা জেঠু পেরিয়ে গেলেন । স্কুলের পথে

হয়তো বড়দি কিংবা অঙ্কের দিদিমণি পাশ দিয়ে

পেরচ্ছেন । তখন আরো নম্র ধীর করতে হয়েছে

সুবর্ণা কে চলন । তখনও সেই অদৃশ্য লোক থেকে

ইঙ্গিত এসেছে ... হ্যা , এমনি করেই তোমাকে পথ

চলতে হবে । তাহলেই তুমি থাকবে নিরাপদ । অবশ্য

আমি আছি তোমার ভয় নেই । ভয় অবশ্য সুবর্ণার

কোনো দিন লাগেনি । কিন্তু জয়েন্ট পরীক্ষায় পাশ করে ও যখন মেডিকেলে ডাক্তারি পড়তে গেলো --

ও তো তখন একটা প্রাপ্ত বয়স্কা লেডি ।

ওকে রাত জেগে পড়তে হয় । রাত জেগে ডিউটি

করতে হয় । একা একটা ওয়াড় সামলাতে হয় ।

তখনও সুবর্ণা সেই অদৃশ্য লোকের ইশারা পেতো ।

....... ভয় কি আমি তি আছি ।

সত্যি শুধু সেই অদৃশ্য শক্তি নয় সেখানে ছিলেন

অধ্যক্ষ । ছিল পুলিশ বাহিনী । কতো নিয়মের বাঁধন। বাইরের লোকের প্রবেশ নিষেধ যখন তখন ।

নীরবতা পালন । একদল সহকারি নার্স সব সময় সাথে থাকতো । রোগীরা কেউ ককায় , কেউ জল চায় । কেউ আবার সারা রাত বক বক করে একাই

সুবর্ণার কোনো দিন ভয় করতো না । সকাল কি সন্ধ্যা সেখানে ছিল একটা বেষ্টনী । এই বেষ্টনী টাই

হলো নিরাপত্তা। এই নীরাপত্তাই ওকে একদিন একটা বড়ো ডাক্তারে পরিনতো করলো ।

জীবন সার্থক হলো সুবর্ণার ! কতো নাম হলো ।

বাবা , মা কতো গর্ব বোধ করতেন । তারপর সুবর্ণা

সংসারে প্রবেশ করলো । নিজে 'মা' হলো । তখন ও

নিজেই হলো বেষ্টনী । স্বামী , সন্তান , শ্বশুর , শাশুড়ি সকলের দিকে সমান নজর রাখতে হতো ।

সকলের সুস্থতা অসুস্থতার দায়িত্ব পালন করতে হতো । ও সকলকে দিত নিরাপত্তা । একটা ফুলকে

পূর্ণ বিকশিত হতে গেলে যেমন দরকার নিরাপত্তার

বেষ্টনী , নজরদারি তেমনি একটা মানুষকে পূর্ণ রূপে তার কর্মক্ষেত্রে পরিধী বরাবর সুস্পষ্ট রূপে

জীবনে বিকশিত হতে গেলেও চাই জীবনের নিরাপত্তা।

       ................................................



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract