নিরাপত্তা
নিরাপত্তা
নিরাপত্তা
ছোট্ট সুবর্ণা কে হাত ধরে নিয়ে গেল স্কুলে
ওর বাবা নিরাময় দত্ত । দিন টা খুবই ভালো ।
---- বৃহষ্পতিবার । গুরু বারে বিদ্যারম্ভ । খুব
শুভ কাজ । সুবর্ণা ইস্কুলে ভর্তি হবার আগের
কাজ গুলোয় বেশ পটু হয়েছে । তাই বাড়ির
সকলের ইচ্ছায় ও আজ স্কুলে যাচ্ছে বাবার
হাত ধরে । কাঁধে একটা ছোট্ট ব্যাগ । ওর মধ্যে
সব আছে । বই , খাতা , পেনসিল এমন কি স্লেট
খড়ি পেনসিল এবং জলের বোতল , টিফিন ।
গতকাল রাত অব্দি বাড়ির সকলের কি চিন্তা !
ঐ টুকু বাচ্চা ! কি করবে ওখানে ! পাছে পড়ে
যায় ! কেই বা লক্ষ্য রাখবে ?
: তখন অদৃশ্য লোক থেকে কে যেন সহায় দান
করে । ......আমি তো আছি । ভয় কি ?
বাড়ির সবাই বলাবলি করে--দিদিমণিরা আছেন ।
ভয়ের কিছু নেই ।
সত্যি ভয়ের কিছু ছিলও না । সুবর্ণা দিব্বি ক্লাস
সেরে ইস্কুল থেকে ফিরে এলো ।
ইস্কুলের বারান্দা একটু উঁচু এবং সিঁড়ি বসানো ।
সুবর্ণা যখনই নামার চেষ্টা করে তখনই অদৃশ্য লোক
থেকে কে যেন বলে ওঠে : খুব সাবধান পড়ে যেও না । সুবর্ণা অবশ্য খুব সাবধানী । ধীরে ধীরে নামে ।
কিন্তু পা ফেলার সাথেই স্কুলের কোন পিয়ন বা দিদিমণির নজরে পড়ে যায় । সঙ্গে সঙ্গে কড়া ধমক
----- এই কোথা যাস ? যাও নিজের জায়গায় বোসো । সুবর্ণা গুটি গুটি পায়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে । ছেলেমেয়েরা হুড়োহুড়ি একটু করবেই ।
কিন্তু সেখানেও কড়া নজর ।
এমনই একটা বেষ্টনীর মধ্যে চার পাঁচটা বছর পার করে সুবর্ণা যখন হাই স্কুলে ঢুকলো তখন আরো
চিন্তা পেয়ে বসলো মা , বাবার মনে । সেখানে আরো
পাঁচ টা স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা এসে ভর্তি হয়েছে ।
পাছে আবার ঝুনোঝুনি , চুলোচুলি না করে ।
কিন্তু সেখানেও সেই অদৃশ্য লোক থেকে কে যেন বলে ওঠে ...অতো ভয় পাবার আছে টা কি ?
আমি তো পাশেই রইলাম ।
ওর থেকে লম্বায় - বয়সে বড় ছেলেমেয়েরাও ওর
সাথে কেউ কোনোদিন খারাপ ব্যবহার করেনি ।
সেখানেও ছিল অদৃশ্য লোকের বেষ্টনী মানে দিদিমণিদের কড়া নজর ।
সুবর্ণা যখন বারো ক্লাসে উঠলো তখনতো ও নিজেকে গার্ড দিতে শিখে গেছে । কি ভাবে চতুর্দিকে খেয়াল রাখতে হয় সেটা রপ্ত করে ফেলেছে । তারপরেও ছিল সেই অদৃশ্য লোকের
প্রভাব । রাস্তায় চলছে হয়তো পিছনে কাকু আসছেন কিম্বা জেঠু পেরিয়ে গেলেন । স্কুলের পথে
হয়তো বড়দি কিংবা অঙ্কের দিদিমণি পাশ দিয়ে
পেরচ্ছেন । তখন আরো নম্র ধীর করতে হয়েছে
সুবর্ণা কে চলন । তখনও সেই অদৃশ্য লোক থেকে
ইঙ্গিত এসেছে ... হ্যা , এমনি করেই তোমাকে পথ
চলতে হবে । তাহলেই তুমি থাকবে নিরাপদ । অবশ্য
আমি আছি তোমার ভয় নেই । ভয় অবশ্য সুবর্ণার
কোনো দিন লাগেনি । কিন্তু জয়েন্ট পরীক্ষায় পাশ করে ও যখন মেডিকেলে ডাক্তারি পড়তে গেলো --
ও তো তখন একটা প্রাপ্ত বয়স্কা লেডি ।
ওকে রাত জেগে পড়তে হয় । রাত জেগে ডিউটি
করতে হয় । একা একটা ওয়াড় সামলাতে হয় ।
তখনও সুবর্ণা সেই অদৃশ্য লোকের ইশারা পেতো ।
....... ভয় কি আমি তি আছি ।
সত্যি শুধু সেই অদৃশ্য শক্তি নয় সেখানে ছিলেন
অধ্যক্ষ । ছিল পুলিশ বাহিনী । কতো নিয়মের বাঁধন। বাইরের লোকের প্রবেশ নিষেধ যখন তখন ।
নীরবতা পালন । একদল সহকারি নার্স সব সময় সাথে থাকতো । রোগীরা কেউ ককায় , কেউ জল চায় । কেউ আবার সারা রাত বক বক করে একাই
সুবর্ণার কোনো দিন ভয় করতো না । সকাল কি সন্ধ্যা সেখানে ছিল একটা বেষ্টনী । এই বেষ্টনী টাই
হলো নিরাপত্তা। এই নীরাপত্তাই ওকে একদিন একটা বড়ো ডাক্তারে পরিনতো করলো ।
জীবন সার্থক হলো সুবর্ণার ! কতো নাম হলো ।
বাবা , মা কতো গর্ব বোধ করতেন । তারপর সুবর্ণা
সংসারে প্রবেশ করলো । নিজে 'মা' হলো । তখন ও
নিজেই হলো বেষ্টনী । স্বামী , সন্তান , শ্বশুর , শাশুড়ি সকলের দিকে সমান নজর রাখতে হতো ।
সকলের সুস্থতা অসুস্থতার দায়িত্ব পালন করতে হতো । ও সকলকে দিত নিরাপত্তা । একটা ফুলকে
পূর্ণ বিকশিত হতে গেলে যেমন দরকার নিরাপত্তার
বেষ্টনী , নজরদারি তেমনি একটা মানুষকে পূর্ণ রূপে তার কর্মক্ষেত্রে পরিধী বরাবর সুস্পষ্ট রূপে
জীবনে বিকশিত হতে গেলেও চাই জীবনের নিরাপত্তা।
................................................