Gopa Ghosh

Abstract

5.0  

Gopa Ghosh

Abstract

পুরী বিভ্রাট

পুরী বিভ্রাট

5 mins
838


দেখলাম আমার না এর কোনো দাম নেই। এই নিয়ে তিনবার বললাম কেয়া কে কিন্তু প্রতিবারই শুনতে হলো

"তুমি চুপ করে থাকো, তোমার কথা কেউ শুনতে চায় নি"

বউয়ের মুখ ঝামটা খাওয়ার অভ্যাস আমার আছে, তাও আবার বললাম

"আমি কিন্তু এবারে ছুটি কিছুতেই ম্যানেজ করতে পারবো না এটা আগে থেকেই বলে রাখছি"

কেয়ার গলা এবার আরো জোর হলো

"প্রতি বারেই তুমি এই এক নাটক করো প্লিজ এবার আর তার পুনরাবৃত্তি করোনা"

আমি আর কিছু না বলে অফিস বেরিয়ে গেলাম।

সেদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি আমার শাশুড়ি মা এসেছেন সাথে আমার শালাবাবু ও। একটু অবাক হলেও কেয়া কে বুঝতে না দিয়ে বললাম

"কত দিন পরে মাকে দেখলাম, রাহুল ও অনেকদিন পরেই এলো।"

শাশুড়ি মাকে প্রণাম করে খাটে বসতেই উনি বললেন

"কেয়ার জোড়াজুড়িতে আস্তে হল বাবা, আসলে পুরি যাবার নাম শুনে রাহুল আমার পিছু ধরল"

আমি বুঝলাম সকালে আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি। পুরি যাবার একদম ঠিক করেই ফেলেছে সাথে মা আর ভাই কেও নিয়ে যাবে। আমি অনেক না যাওয়ার ফিকির খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোন ফিকির কাজ করলো না তাই অগত্যা পুরীর টিকিট কাটতে হলো। অফিসে খুব কষ্ট করে ছয় দিনের ছুটি ম্যানেজ করলাম। তাতেও আমার বউ খুশি নয় বলল

"আর দুদিন ছুটি টা বাড়াতে পারতে কারন পুরীতে অনেক কিছু দেখার জিনিস রয়েছে"

"বেশ তাহলে পুরী যাওয়ার জন্য চাকরিটাই ছেড়ে দিয়ে কি বল?"

"হ্যা তাই করো আর আমরা হরি মোটর খেয়ে থাকি"

কেয়ার সঙ্গে কথাতে কোনদিনই আমি জিততে পারিনি তাই আর কথা না বাড়িয়ে শুতে চলে গেলাম।

ভোর পাঁচটার মধ্যেই পুরি স্টেশনে ট্রেন ঢুকে গেল। আমার শালা রঞ্জন খান পনেরো লুচি খেয়ে আগের দিন রাত থেকেই বমি করছে, তাই ওকে শাশুড়ি মা কোন লাগেজ বইতে না দিয়ে সব আমার কাঁধেই চাপাতে চাইছে। আমি দুটো ব্যাগ নিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে কেয়া কে বললাম

"ব্যাগ গুলো তোমরা নিয়ে এগিয়ে এসো আমি রিকশা দেখি"

অগত্যা ওরা ব্যাগগুলো নিয়ে খুব ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলো, আমি আমার ছোট্ট মেয়েকে এক হাতে ধরে এগিয়ে যেতে লাগলাম। পেছনে একটা আওয়াজ শুনে ফিরে দেখি রঞ্জন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে।আমি ছুটে গিয়ে রঞ্জন এর মুখে জল ছিটিয়ে দিতে লাগলাম। শাশুড়ি মা কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিয়েছেন। কিছু লোক ছুটে এসে বলল

"ওনাকে অটো করে হাসপাতালে নিয়ে চলে যান, এই সামনেই অটো পাবেন"

মনে মনে ভাবতে লাগলাম কার মুখ দেখে যে যাত্রা শুরু করে ছিলাম জানিনা তবে এটা যাত্রা নয় অযাত্রা ই মনে হয়। আর কিছু করার নেই ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার কিছু অ্যান্টাসিড আর মিকসচার দিয়ে বললেন ওর পেট থেকে হয়েছে। আমরা হোটেলে গিয়ে উঠে ওকে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে থাকতে বললাম।

পরদিন একটু সুস্থ হতেই রঞ্জন কে নিয়ে আমরা সূর্য মন্দির দেখতে বেরোলাম। একটা প্রাইভেট গাড়ি বুক করে নিলাম। সূর্য মন্দির এ পৌঁছে বাইরে কিছু দোকানে কেয়া বারবার দাঁড়িয়ে পড়তে লাগলো ।আসলে ওর কেনার বাতিক একটু বেশি ।আমি ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে মন্দিরে ঢুকলাম। আমরা মন্দির দেখছি, আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে আমার শাশুড়ি মা আগে আগে চলছিলেন। আমি কেয়ার সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটছিলাম। কিছুক্ষণ পরে শাশুড়ি মাকে আর খুঁজে পেলাম না । ভাবলাম হয়তো কিছু দেখতে গেছেন কিন্তু আধঘন্টা পর ও খুঁজে পাওয়া গেল না। গাড়ির ড্রাইভার বারবার ফোন করছিল । আমরা হতভম্ব হয়ে গেলাম ।।আমার মেয়ে ওনার কোলে ছিল। আমার মাথা আর কাজ করছিল না। উনি কোথায় চলে গেলেন সাথে আবার একটা বাচ্চা। আমি কিছু লোককে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কেউই কোনো উত্তর দিতে পারল না। আসলে এত ভিড়ের মাঝে ওনারাও ঠিক বুঝতে পারছিলেন না আমি কার কথা বলছি। ভাবলাম ওখানেই স্থানীয় থানায় যাব সেই জন্য একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ওখানে থানা টা কোথায়।তখনই একজন লোক ছুটে আসতে আসতে বলল আপনারা ওই পুকুরে কাছে যান একজন ওখানে ডুবে যাচ্ছিলেন তবে এক মহিলা ঝাঁপিয়ে পড়ে ওনাকে বাঁচিয়েছেন, সাথে একটি বাচ্চাও আছে ।আমি পড়িমড়ি করে ছুট লাগলাম। গিয়ে দেখলাম পুকুরের পাড়ে আমার মেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে । একজন আমার মেয়ের হাত ধরে । শাশুড়ি ভিজে কাপড়ে পুকুরের পাড়ে শুয়ে । কেয়া চিৎকার করে উঠলো

"মা তোমার কি করে এমন হলো?"

এবার শাশুড়ি মা চোখ খুললেন। একজন বললেন ওনার পেটে জল টা বার করে দাও । এক ভদ্রমহিলা পেটে চাপ দিতেই ওনার মুখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো ।তারপর সুস্থ হয়ে উনি যা বললেন শুনে আমরা হতভম্ব হয়ে গেলাম । উনি আমার মেয়েকে নিয়ে ঘুরছিলেন তখন একজন মহিলা ওনাকে ওই পুকুর পাড়ে কিছু দেখানোর জন্য ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

উনি অন্য কোন মন্দির আছে ভেবে ওখানে গিয়ে দাঁড়ালে মহিলাটি বলেন আর একটু নেমে জলটা মাথায় দিলে ওনার সব দুঃখ দূর হয়ে যাবে । আমার শাশুড়ি মেয়েটাকে কোল থেকে নামিয়ে যেই পুকুর পাড়ে জল দিতে যান অমনি পাটা স্লিপ করে জলে পড়ে যান । মহিলাটি ওনাকে পয়সার জন্যই জল দিতে বলেছিলেন। ভেবেছিলেন জল ছুঁয়ে আমার শাশুড়ি মা ওনাকে কিছু পয়সা দেবেন কিন্তু উনি যে পড়ে যাবেন এটা ভাবেন নি তাই ওই মহিলাটি আমার শাশুড়ি মাকে জল থেকে তুলে শুইয়ে রেখেছিলেন আর আমার মেয়ের হাত ধরে অপেক্ষা করছিলেন আমরা যাওয়ার।


এবারে কেয়াও বলে উঠলো

"এবারের ট্যুর টা বড্ড প্রবলেম করছে সত্যি আরো কত কি আছে কে জানে?"

কেয়া র কথা সত্যি প্রমাণিত হলো । সমুদ্রের পাড়ে ঘুরতে যাওয়ার সময় কেয়ার ব্যাগ চুরি হলো তার মধ্যে আমার ক্রেডিট কার্ড আর ঘরের চাবি ছিল ।এছাড়াও বেশ কিছু ক্যাশ টাকাও ছিল। আমরা থানায় ডায়েরি করলাম কিন্তু বাড়ি যাওয়ার পয়সাও আর আমাদের কাছে ছিল না। রিটার্ন টিকিট কাটা অবশ্য ছিল কিন্তু হোটেলের টাকা ভেবেছিলাম ক্রেডিট কার্ডে মেটাবো সেটাও হলো না। কলকাতার এক বন্ধুকে ফোন করে আমার একাউন্টে কিছু টাকা পাঠাতে বললাম ডেবিট কার্ড অন্য ব্যাগে ছিলো তাই বাঁচোয়া। ভেবেছিলাম আর একদিন কোথাও বেরোবো না হোটেলেই বসে থাকবো কিন্তু আমার শাশুড়ি মা এত কিছুর পরেও জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি যেতে চাইলেন। বিকেলে বেরিয়ে আমরা আগে মন্দির তারপর জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি গেলাম। মোটামুটি সব দেখে ফিরেই পড়ছিলাম যদি না আমার মেয়ে একটা পুতুল দেখে বায়না না করতো তবে আরও একটা বিপদের হাত থেকে বেঁচে যেতাম।

পুতুল কিনে দোকান থেকে বের হচ্ছি এমন সময় দোকানী চেঁচিয়ে বলল

"দাদা যে পুতুলটা ব্যাগে ভরেছেন ওটা দিয়ে যান"

"কি যা তা বলছেন আমি তো এই পুতুলটা আপনাকে দাম দিয়ে কিনলাম"

"ওটা নয় দেখুন আপনার প্লাস্টিকে আরও একটা পুতুল আছে"

প্লাস্টিকের মধ্যে সত্যিই আর একটা পুতুল ছিল। আমি হতভম্ব কি করে এই পুতুলটা এখানে এলো বুঝলাম না। এবার দোকানি একটু স্মিত হেসে বলল

"কি করে পুতুলটা আপনার ব্যাগে গেছে সেটা তো বলতে পারব না তবে ওটা দিয়ে যান"

আমি খুব অপমানিত বোধ করলাম পুতুলটা ফেরত দিয়ে বললাম

"দেখুন এই পুতুলটা অন্য কোন ভাবে হয়তো ব্যাগে চলে গেছে আপনি চাইলে এর দাম আমি দিয়ে দিতে পারি"

এই বলে আমি দাম দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। পরে ভাবলাম আমার পাশে একজন দশ বারো বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে পুতুল দেখছিল, হয়তো সেই ভুলবশত ওটা আমার ব্যাগে ভরে দিয়েছে।যাই হোক এটাও আমার অযাত্রা র ফল।

এই পুরি বিভ্রাটের পর আর কোনদিন সাহস করে পুরী যাওয়ার নাম করি নি।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract