পুনর্ভবা পর্ব :- ১৪
পুনর্ভবা পর্ব :- ১৪
দুপাশে বিস্তীর্ণ সবুজ ধানের খেত। মাঝে মাঝে পাট ও অড়হঢ় কলাইয়ের খেতের পাশ দিয়ে রাস্তার নানা গর্ত ও খোদল বাঁচিয়ে চলতে শুরু করে গরুর গাড়ি টা। যত তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারবে দিনাজপুরে, ফেরার সময় রোদের আঁচ তত কম লাগবে।
এদিকে হাসপাতালে রুকসানা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে যেন। খুব চিন্তা হচ্ছিল রাতে। এখন সুলতার পাশে শুয়ে আছে ছোট্টো তুলতুলে পুতুলের মতো একটা নতুন আলাদা শরীর। এখনও যেন চোখ খুলতে তার বিরক্ত। তবে চিৎকার করে কেঁদেছে খুব। মায়ের পেটের নিরাপদ স্হানটাই যেন ছিলো বেশি পছন্দের।
এখন চুপ করে ঘুমোচ্ছে।
প্রথম দিকে সুলতার ছেলের বাসনা থাকলেও কয়েকদিন থেকে মনে মনে চাইছিল যেন মেয়েই হয়।
হ্যাঁ, মনের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে ওর। যদিও নিখিলেশ কাছে নেই তবুও শান্তিতে, তৃপ্তিতে, আবেশে যেন চোখ বুজে আসে।
তহিবুল চাচা ও রুকসানা চাচি সারারাত হাসপাতালেই ছিলেন। কিছুক্ষন আগে চাচা বাড়ি ফিরলেও চাচি এখানেই আছেন। কিছুতেই সুলতাকে ছেড়ে যাবেননা। কাজে কাজেই চাচাকেই চাচির জন্যে দুপুরের খাবার আনতে হবে।
অপরূপা রুকসানা চাচির অন্তরটাও যে এত বড় তা সুলতা আগে আন্দাজ করতেও পারেনি। এতো ঘনিষ্ঠ ভাবে মেশার সুযোগ তো আগে হয়নি। যদিও পাশাপাশি বাড়িতে থাকে কিন্তু ঐ, যে যার সংসার নিয়েই ব্যস্ত। মাঝেমধ্যে টুকটাক কথা হয় এই।
অনেক কথাই জানা ছিলোনা সুলতার। ওনারা নাকি আগে বিহার শরীফ এ ছিলেন। বিরাট বড় কাপড়ের ব্যবসা ছিল ওঁদের ওখানে।
কিন্তু দেশ ভাগের পর ওনারা মুসলমান বলে পাড়ার লোকেরা আগের মতো আর মিশতোনা। ধীরে ধীরে কেমন একঘরে করে দিয়েছিলো।
তার ওপর একদিন দোকান লুঠ হলো। আর ভরসা রাখতে পারেননি তহিবুল চাচা। পাকিস্তান এর লা ওরে রুকসানার বাপের বাড়ি। আর পূর্ব পাকিস্তানের এই বীরগন্জে তহিবুল চাচার মামার বাড়ি। লাহরের
জামাই আদরের চেয়ে নিঃসন্তান মামার কাছে আসাটাই ভালো মনে হয়েছে ওনাদের।
১৯৫০ সালে খুব সামান্য জিনিস নিয়ে সাধারণ বেশে কাউকে বুঝতে না দিয়ে ওনারা এখানে চলে আসেন।
তারও দুবছর পর তাঁদের মেয়ে তরুর জন্ম। তরুর ভালো নাম যে জেসমিন তা অবশ্য সুলতা জানে। কিন্তু ঐ তরু নামটাই সুলতার বেশি আপন লাগে। সেকথা বলতেই হেসে ওঠেন রুকসানার বেগম।
_________হাঁ বেটি, তোমার চাচার ত আর আমার রু দিয়েই ঐ নামটা রাখি আমরা। পরে জানলম যে তরু মতলব পেড়।
_______হ পেড় মানে গাছ। কিন্তু গাছের থনে এই তরু
কথাডা আরও ভালা।
______হামলোগ ভি এখন বাংলা বলতে পারে। অওর তোমার কথা বুঝতে ভি পারে। আমাদের বেটি তরু তো পুরা বাঙ্গালী আছে। হা হা হা হা..........
