Subhashish Chakraborty

Abstract Horror Thriller

4.0  

Subhashish Chakraborty

Abstract Horror Thriller

পরম্পরা

পরম্পরা

4 mins
710


"না....মানে প্রব্লেমটা কোথায়? রোজ একই সময় ঘুম ভেঙে যায়, সেটা? না FM-এ আর.ডি. বর্মন ছাড়া আর কারোর গান ধরছিলো না, সেটা? নাকি অসময়ে এক পশলা বৃষ্টি?"

"আপনার মনে হচ্ছে আমি মজা করছি? মজা করছি আমি?"

"আহা -- আমি কিন্তু তা বলি নি। আপনার কথা শুনে আপনার প্রব্লেমটা কোথায় সেটা বুঝতে পারছিলাম না। সেটা যদি একবার --"

ভদ্রলোক এত ঘামছেন কেন? শরীর খারাপ করছে কি? অন্বেষা একবার চোখ বোলালো ওনার ওপর। বছর পঁয়ত্রিশের ঝাঁ-চকচকে নব-যুবক। শরীরে এক ফোঁটা মেদ নেই -- টানটান খেলা ধুলো করা চেহারা।

শুধু চোখের দুপাশে এক পোঁচ কালো দাগ ঘিরে আছে। বহু যুগ ভালো করে না ঘুমানোর ফল।

"বেশ -- শুনুন, আবার বলছি", ভদ্রলোক কপালের ঘামটা মুছলেন --"আমি রাতে একটু তাড়াতাড়িই শুই, তাড়াতাড়ি ওঠার অভ্যাস বরাবরেই। কিন্তু ঘুমটা রোজ ভাঙে ঠিক একই সময়। ঘড়ির কাঁটার ওপর চোখ পড়ে -- দেখি ১১:১১:১১ সেকেন্ড বাজে। এরকম দু-তিন দিন হবার পর হঠাৎ একদিন সকালে দৌড়াতে বেড়িয়েছি, কানে মাইক্রোফোন গুঁজে দৌড়াচ্ছি। FM-টা কিছুতেই কাজ করছিল না। বেশ কিছুক্ষণ স্ক্যান করার পর, একটা গান বাজছে শুনতে পেলাম -- আর.ডি. বর্মনের 'মন মাঝি রে'। সেটাই শুনতে শুনতে দৌড়াচ্ছি, হঠাৎ চোখ পড়লো - রাস্তার পাশে ঝোলানো একটা ফলকের ওপর। 'Kolkata -- city of RD Burman, keep it clean'। জানেন...জানেন সেদিন ব্যাপারটা দেখে খুব মজা লেগেছিলো। অদ্ভুত...অদ্ভুত কাকতালীয়তা, তাই না?"

অন্বেষা কিছু উত্তর দিলো না। ও চুপচাপ শুনছে।

"তারপর...তারপর জানেন, পরপর বেশ কিছুদিন অনেকগুলো ঘটনা ঘটতে থাকলো। দিল্লি গেছিলাম একটা কাজে, শুভ্র'র সাথে। প্রায় নয় বছর বাদে গেলাম। তখন SAIL-এ কাজ করি। ওরাই পাঠিয়েছিল। তারপর SAIL-এর চাকরি ছেড়ে ছয় বছর হলো প্রাইভেট সেক্টরে এসেছি। দিল্লি'র সেবারের সেই স্মৃতি এখনো জমজমিয়ে মনে ধরে আছে, জানেন !"

"তারপর?"

"হ্যাঁ -- শুভ্র আর আমি দাঁড়িয়ে আছি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে -- একটা গাড়ির নম্বর প্লেটে চোখ পড়লো। DL-০৬-৫৯৬২। চমকে উঠলাম আমি !"

"কেন?"

"আরে -- আরে ওটা আমার এমপ্লয়ি আই-ডি ছিল SAIL-এ। আমার চোখটা ঠিক তখন-ই পড়েছে, জানেন -- ওই গাড়িটার নম্বরের ওপর। এটা -- এটা কি হলো?"

অন্বেষা কিছু বললো না -- ঘষঘষ করে প্রেসক্রিপশনের ওপর লিখছে।

"তারপর -- বেশ কিছুদিন ধরেই -- বেশ কিছুদিন ধরেই এক টাকার একটা করে কয়েন পেতে শুরু করলাম। কখনো রাস্তায়, কখনো লিফটের মেঝেতে। কখনো অফিসের পাশের কিউবিকেলে। কখনো বা বাড়ির সিঁড়ির তলায়।"

"হুমম, তারপর?"

"তারপর দেখি বেশ কিছুদিন ধরেই সকালবেলা, পাশের পুকুরটায় মাছগুলো -- সবকটা একসাথে আমার ফ্ল্যাটের বারান্দার দিকে চেয়ে ভেসে আছে। যেন -- যেন মনে হচ্ছে সবাই কি যেন দেখছে।"

অন্বেষা মুখ তুলে দেখলো ভদ্রলোককে।

"না...মানে শুধু দেখছেই না। সবার মুখ একই সাথে বন্ধ হচ্ছে আর খুলছে। যেন কথা বলছে।"

"এরকম আর কখনো হয়েছে?"

দু তিন সেকেন্ডের বিরতি। কি যেন ভাবলেন উনি-- "নাহঃ -- আর কখনোই এরকম হয়নি। ওই সেই দু-তিন বারই।"

পেনটা রাখলো অন্বেষা প্রেসক্রিপশনের ওপর -- "coincidence....কাকতালীয়তা। এ ছাড়া এর কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।"

ভদ্রলোক বেশ রেগে মেগে উঠলেন -- "মনে হচ্ছে এটা সের্ফ coincidence? আপনি প্যাটার্ন-টা দেখছেন না? বারবার একটা ট্রাজেক্টরি দিয়ে একটা লয় বেজে চলেছে। বুঝতে পারছেন না?"

"না, পারছি না -- অন্তত আমার মনে হয় তার জন্য কোনো সাইকোলজিস্ট আপনাকে কিছুভাবে সাহায্য করতে পারবে না।"

"আলবৎ পারবে", লোকটা খুব জোরে টেবিল চাপড়ালো -- "এটাকে -- এটাকে বলে Synchronicity...শুধু কোইন্সিডেন্স নয়, মিনিংফুল কোইন্সিডেন্স। যখন বারবার কোনো একটা প্যাটার্নে কিছু ঘটে, তখন এটা ঘটে।"

অন্বেষা হেসে ফেললো -- "তাতে কি হয় শুনি?"

ভদ্রলোক আবার ঘামছেন -- "এর মানে -- এর মানে আপনার সাথে..."

"আমার সাথে কি?"

"আপনার সাথে কেউ যেন কিছু কথা বলতে চাইছে। দূর কোনো ঢেউয়ে ছিপি আটকানো বোতলে বন্ধ একটা কাগজের চিরকুট ভেসে এসেছে। কিছু লেখা আছে ওতে।"

Jesus....!!! হে ভগবান !!!

অন্বেষা বুঝলো আরো কিছুক্ষণ থাকলে ও নিজেই পাগল হয়ে যাবে। ওর নিজেরই সাইকোলজিস্ট দেখানোর দরকার হবে এবার।

"আপনি বিবাহিত?"

ভদ্রলোক একটু নরম হলেন -- "না।"

"ঘরে কে থাকে?"

"আমি একা।"

"আপনার নামটা কি যেন --"

"শমীক। শমীক সাহা।"

ও প্রেসক্রিপশনে বেশ কিছু ওষুধের নাম লিখলো -- "SAIL-এর চাকরি ছেড়ে প্রাইভেট সেক্টর। বড় ধাক্কা। বড় কাজের চাপ। অনিয়মিত ঘুম, ক্লান্তি -- আপনার সাথে এরকম হওয়াটা খুব স্বাভাবিক।"

"আপনি -- আপনি বুঝতে পারছেন না...আমার রিগ্রেশন থেরাপির প্রয়োজন --"

"আপনার কি প্রয়োজন সেটা আমি বুঝবো", ও এগিয়ে দিলো প্রেস্ক্রিপশনটা -- "এতে কিছু anti-depressant ড্রাগ লেখা আছে। মনে করে খাবেন। কথা বলুন -- একা থাকবেন না। যত পারেন কথা বলুন। মিশুন মানুষের সাথে। আপনার এটা কোনো সমস্যাই নয়।"

শমীক প্রেস্ক্রিপশনটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দোনামোনা করে উঠলেন -- "আচ্ছা বেশ তাহলে -- "

"হ্যাঁ...নমস্কার।"

আসতে আসতে বেরিয়ে গেলে, অন্বেষা হাঁক পারলো -- "নমিতা -- এক গ্লাস জল দে রে মা -- আর চা আন। লাল চা, চিনি ছাড়া।", হাত চালালো মাথার চুলে -- কি সব লোকজন মাইরি।

***

খবরটায় চোখ পড়লো প্রায় এক মাস পরে। ভিতরের দিকে একটা ছোট্ট করে কলামে লিখেছে।

বাসের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু। ধর্মতলার কাছে। নাম শমীক সাহা। বয়স পয়ত্রিশ। হ্যাঁ -- ছবিও দিয়েছে, ইনসেটে। ছবিটা দেখে চিনতেও পারলো অন্বেষা। মাস খানেক আগে এসেছিলেন ইনি -- ওর কাছে।

***

 

সেই রাতে -- একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙে গেলো অন্বেষার। একটা গলি। অন্ধকার গলি। একটা গলা। কোথায় যেন ও এই গলাটা শুনেছে - "আপনি প্যাটার্নটা দেখে বুঝতে পারলেন না? আমার সময়ের ডালে পাতা যে শেষ হয়ে এসেছে -- এটাই কেউ বলতে চেয়েছিলো।"

ও ধড়মড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়লো। বেডসাইড টেবিলটায় ঘড়িটায় বাজে ১১:১১:১১....    


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract