STORYMIRROR

Subhashish Chakraborty

Horror Tragedy Thriller

4  

Subhashish Chakraborty

Horror Tragedy Thriller

শাপমোচন

শাপমোচন

8 mins
347


"কথাটার মানে জানিস?""মানে আবার কি? এতো সবাই জানে -- ভুত।""না", স্টিয়ারিংয়ে দেন হাত রেখে, বাঁ-হাতে সিগারেট প্যাকেটের দিকে হাত বাড়ালো সৌগত -- "প্রেত কথাটার মানে হলো ক্ষুধিত আত্মা।""আত্মা, আবার ক্ষুধিত?", পিছন থেকে ঝিমলি জিজ্ঞেস করলো। "কেন?", সৌগত রেয়ার-ভিউ মিরর দিয়ে ঝিমলিকে এক ঝলক দেখে জিজ্ঞেস করলো -- "মরে গেলে কি খিদে-তেষ্টা পেতে নেই, নাকি?""জানি না বাবা", ঝিমলি কাঁধ ঝাঁকালো -- "আগে মরে গিয়ে দেখি, তারপর বলবো, কেমন?""ধুর -- তুই ওর কথা বাদ দে না", ঋষভ বললো -- "প্রেত কথাটির মানে কি বোঝা।""শুনবি? শোন তবে", সৌগত একটা লম্বা টান মারলো সিগারেটে -- "মানব শরীরে অনেকগুলো কোষ আছে, জানিস? Layers: অন্নময় কোষ -- যে লেয়ারটার জন্য ক্ষুধা-তৃষ্ণার প্রবৃত্তি আসে। তোর রসনা, তোর পাঁচন, তোর রেচন-নিষ্ক্রমণ -- সবই এর সাথে জড়িত। এর পরে, এর ভিতরে আছে প্রাণময় কোষ -- যা তোর শরীরে পুরো এনার্জি সাপ্লাই করে। তোর বেঁচে থাকার ইচ্ছাশক্তি, স্পৃহা। তোর চলন শক্তি। তোর বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু লাগে -- সবটা নিয়ে এই কোষ....এই লেয়ারটা।" ঋষভ ভ্রু কুঁচকে জানলার বাইরে তাকালো। এই সৌগত মালটা এত্ত হ্যাজায় না ! একবার জ্ঞান দেবার মওকা পেলে আর ছাড়ে না। জিজ্ঞেস করছি প্রেত কি -- শালা এক গাদা লেকচার দেয়া শুরু করলো।উফফ। "এর পর আসে মনময় কোষ", সৌগত বলে চলেছে -- "তোর মন -- তোর consciousness, তোর অহম, তোর ক্রোধ, তোর কামনা, তোর হিংসে -- তোর যাবতীয় কমপ্লেক্স -- এই কোষের জন্য। এই কোষের জন্যই তোর একটা ব্যক্তিগত -- individual স্বত্ত্বা তৈরি হয়। তোর মনে হয় তুই একটা আলাদা মানুষ।""তারপর?""এরপর বিজ্ঞানময়-কোষ। তোর জন্মজন্মান্তরের সংগৃহিত রীতি-নীতি-রেওয়াজ এক পিন্ডে স্পন্দিত হয়, তাকে বলে সংস্কার। নিজের মধ্যে অনেক প্রবৃত্তিই দেখতে পাবি, যা কিনা জিন বা হেরিডিটি থেকে প্রাপ্ত নয়। তাহলে এগুলো পেলাম কি করে? হ্যাঁ -- এগুলো জন্মজন্মান্তরের অর্জিত নানান জ্ঞান-রুপি সংস্কার। এইসব এই কোষ থেকেই আসে।""এরপর -- আনন্দময় কোষ, তাই না, সৌগত-দা?", ঝিমলি জিজ্ঞেস করলো। "হ্যাঁ....মানুষের সমস্ত ego আর অহমবোধের ওপারে এক মনের মানুষ থাকে। শরীরের পতন হলেও সেই মনের মানুষ কিন্তু রয়ে যায়। তার মৃত্যু হয়না। নানান দার্শনিক এই এন্টিটিটাকে নানান ভাবে রেফার করেছেন। লালনের মনের মানুষ, কেশব সেন তথা বেদান্তের আত্মা -- এমনকি পার্সিয়ান কবি রুমি'র কথায় -- Out beyond ideas of wrongdoing and rightdoing, There is a field. I'll meet you there."উফফ, মাইরি -- ভাবছি চলন্ত গাড়ির থেকে লাফ মেরে লাফ মারি। ঋষভের আরও বিরক্ত লাগছে। শালা, এবার তো বল -- প্রেত কাকে বলে। "হুম -- যা বলছিলাম", সিগারেটটা বাইরে ফেলে, কাঁচটা আস্তে আস্তে ওঠালো সৌগত -- "প্রেত। প্রেত কাকে বলে।"উফফ....ওরে আমার অন্তর্যামী রে....ঋষভ, এসি'র নবটাকে একটু বাড়ালো। এতক্ষণে বুঝেছে কি জানতে চাই।"মানুষের মৃত্যু হলেও, আত্মা বেশ কিছু সময় অবধি মনে করে -- তার সাথে বাকি সবকটা লেয়ার তখনও লেগে আছে। অর্থাৎ ক্ষুধা-তৃষ্ণা, অহম-বোধ -- সবকিছুই আছে। ঠিক যেন জীবন্ত এক মানুষ। তাই মৃত্যুর বেশ কিছুদিন অবধি তার 'ক্ষিধে' পায়। এই ক্ষুদার্থ-তৃষ্ণার্থ আত্মাকেই প্রেত বলে। এবং একে শান্ত করার জন্যই পিন্ড-দান, জল-দান ইত্যাদি'র আয়োজন। এমনকি শ্রাদ্ধের সময় একটা অনুষ্টান থাকে -- 'অগ্নিদগ্ধ' পিন্ড বলে। মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে পিন্ডদান করার আগে, যে সকল প্রাণী কোনো দুর্ঘটনা জনিত কারণে মারা গেছেন -- এবং এখনো ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কষ্ট পাচ্ছেন....তাঁদের সকল উদ্দেশ্যে এই পিন্ডদান।


“Infinite human imagination, infinite human stupidity”, চাপা স্বরে বললো ঝিমলি। "মানে?""ঠিকই তো", ঝিমলি বললো -- "তা নইলে মৃত্যুর পর আত্মা বলে কিছু থাকতে পারে, কি হয়, কোথায় যায়, আবার যে তার পুনর্জন্ম -- এত্ত কিছু মানব মস্তিষ্কের মতন উর্বর ভূমি ছাড়া আর কেইই বা কল্পনা করতে পারবে?""মানে তুমি বলতে চাও যে মৃত্যুর সাথে সাথেই জীবনের সবকিছুই শেষ, তাই তো?", সৌগত জিজ্ঞেস করলো। কপালে সামান্য ভাঁজ। "তা নয়তো কি?", পিছনের সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বললো ঝিমলি -- "আমি একটা Life-form -- একটু উন্নত ধরণের লাইফ-ফর্ম। যেমন উচ্চিংড়ে, আরশোলা, মাকড়সা , কুকুর, বেড়াল, ছাগল -- এদেরই মতন। তবে একটু উন্নত ধরণের। উন্নত কেন? কারণ -- আমি চিন্তা করতে পারি। প্রবল -- প্রকট-ভয়ানক ইম্যাগিন করতে পারি। অন্য প্রাণীরা যখন মরে, তখন যদি শ্রাদ্ধাধি করার দরকার না হয় -- তাহলে আমি মরলে কেন দরকার হবে?"কিছুক্ষণের নীরবতা। আর তারপর -- "যদি বলি -- তুমি ভুল বলছো। এবং সেটা প্রমান করে দি?""ভালো তো....করো না প্রমাণ? আমি ও দেখি মৃত্যুর পর কি আছে?" এক মুহূর্তের জন্য থেমে ঝিমলি বললো -- "কোথাও একটু দাঁড় করাও না গাড়িটা। হেব্বি খিদে পেয়েছে।"সৌগত কিছু না বলে অদ্ভুত ভাবে হাসলো। একটু আগে অবধি দেখেছি রাতের হাইওয়েতে সারি সারি লড়ির লাইন। হঠাৎ এই জায়গাটায় কেমন যেন চুপচাপ। এমনিতেই এতো রাত করে বেরোনোটা ঠিক হয়নি। তারপর ভয়ানক সাইক্লোন ও চলছে। দূরদূরান্তে ইতস্তত স্ট্রীটল্যাম্পের আলো আর মাঝে মাঝে পাস করা প্রাইভেট গাড়ির ঝাপসা আলো ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। সৌগতর ফোর্ডের ওয়াইপার জল মুছতে মুছতে ক্লান্ত। এইভাবে গাড়ি চালানোটা খুব রিস্কি, তাই না?সৌগত বাঁদিকের ইন্ডিকেটর জ্বালিয়ে গাড়িটা বাঁদিকের ফুটপাথের দিক করে চাপলো। কিছুই দেখা যাচ্ছে না -- কোত্থাও।"একটু দাঁড়িয়েই যাই, কি বলিস?", সৌগত যেন নিজের মনেই জিজ্ঞেস করলো কথাটা – “একটু বৃষ্টিটা ধরলেই আবার স্টার্ট দেব।"ঝিমলি একটু আগে গুনগুন করে গান গাইছিলো -- "যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙলো ঝড়ে....."গানটা থামিয়ে নালিশ করার গলায় বললো -- "আমার কিন্তু খুব খিদে পেয়েছে। কোনো ধাবা দেখে দাঁড়ালে ভালো হতো না?""সব কিছুই কি আর মনের মতন হয় ম্যাডাম?" - সৌগত হাসলো - "এখান থেকে তো ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেও কি আছে দেখা যাচ্ছে না। ধাবা-হোটেল-রেসুরেন্ট খোঁজা তো দূরের কথা।""উফফ কি বোরিং এভাবে বসে থাকা", হাই তুললো ঝিমলি -- "তোমার তো মিউসিক সিস্টেমটাও খারাপ। নইলে গান শুনতাম।"ঋষভ আস্তে আস্তে ঝিমলির দিকে তাকালো -- "তুমি কি করে জানলে ওর মিউসিক সিস্টেমটা খারাপ? ও তো একবার ও সেটা বলেনি?"ঝিমলি যেন বেশ চমকেই উঠলো -- "মানে?"ঋষভ হাসলো -- "আচ্ছা আমরা তো তিনজনে এখন বসেই আছি। কিছু করারও নেই। চল না.....আলোচনাটা সেড়ে নি।"সৌগত বেশ অবাকই হলো -- "কি আলোচনা?"


ঋষভ সিগারেট ধরালো -- "তোর কি মনে হয় আমি ন্যাকা? কিছুই বুঝি নি?""ক...কি? মা....মানে?", ঝিমলি প্রশ্নটা করলো। ঋষভ একটা লম্বা টান মারলো সিগারেটে। জানলা বন্ধ করা গাড়ির অন্দরমহল যেন দম আটকে চেঁচাচ্ছে -- "আমি সারাদিন অফিসে থাকি। প্রচুর কাজের চাপ আমার। বৌকে সময় দেবার মতন সময় আমার নেই। আজ হিল্লি কাল দিল্লি -- এই করেই কাটে আমার। তারওপর প্রায় পাঁচ বছর বিয়েও হয়ে গেলো। এখনো কোনো বাচ্ছা-কাচ্ছা হলো না। ফ্যামিলির 'Nosy-Parker' বুড়ি পিসি আর মাইমাদের রেগুলার প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত বেচারি। হ্যাঁ, প্রব্লেম আমার আছে। মানুষ তো. প্রবলেম তো থাকতেই পারে। ওষুধ তো খাচ্ছি। সময় তো দিতে হবে, নাকি? যাইহোক....ঝিমলি'র আর তর সইছিলো না। আর ঠিক তখনই দেবদূতের মতন আবির্ভাব সৌগতর। দেখতে শুনতে সুন্দর, রোমান্টিক, সিঙ্গেল-রেডি-টু-মিঙ্গল -- বাসস, আর কি চাই? আমি যখন যখন লং ট্যুরে যেতাম -- দুষ্মন্তের আবির্ভাব হত আমার ফ্ল্যাটে...নিষিদ্ধ অভিসারে শকুন্তলা মালা গেঁথে বসে আছে কোন যুগ ধরে। বেরোখা-বেপরোয়া শরীর-মিলন। কেউ দেখার নেই। লজ্জায় মুখ ঘোরানোর ও কেউ নেই....যেখানে কেউ দেখলো না, কেউ জানলো না -- সেখানে বিবেকই বা কিসের?", একটা রিং ছেড়ে ঋষভ তাকালো ওদের দুজনের দিকে -- "কিঃ -- ঠিক বললাম তো?""ক...কি সব বলছিস তুই?", সৌগত তোতলাতে তোতলাতে বললো -- "আ...আমরা তো প্রেততত্ব নিয়ে আলোচনা করছিলাম, তাই না?""ধ্যাৎ -- টাইমপাস কেন করছিস?", ঋষভ ছাই ঝাড়লো -- "তোর ওই পার্টটাইমে পড়া তান্ত্রিকের ঢপের গল্প গুলোতে আমার কোনো ইন্টারেস্টই নেই রে। তুই বরঞ্চ প্রেত-ভুত নিয়ে নেক্সট যেদিন ঝিমলির সাথে দেখা করতে আসবি, সেদিন ওকে বলে দিস, ঠিক আছে?""ক...কিসব বলছো তুমি?", ঝিমলি চেঁচিয়ে উঠলো -- "কে বললো তোমায় এসব? প্ৰমাণ করতে পারবে এসব?" ঋষভ হাসলো -- "তোমাদের দুজনের ওপর বহুদিন ধরেই আমার নানান গুপ্তচর নজর রেখেছিলো। আজ ধরা পড়ে গেছো ডার্লিং।"


সৌগত কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে বললো -- "কি করতে চাস তুই?"এক ঠেলা মেরে গাড়ির দরজা খুলতে চেষ্টা করলো ঋষভ -- "আমি চাই ঝিমলি যেন আমার ফ্ল্যাটে আর কোনোদিন ও না ফিরে না আসে। ওর সাথে আমার সম্পর্কের এখানেই শেষ। ও তোর সাথে থাকতে পারে -- যা খুশি করতে পারে। আমি ওর মুখ দেখতে চাই না।""তুই গাড়ির দরজা খুলছিস কেন?""আমি এই গাড়ির ভিতর থাকতে চাই না। তোদের দুজনের মুখ দেখতে চাই না।""শান্ত হ --- শান্ত হ....আমার কথা শোন ঋষভ....", ওর কাঁধে হাত রাখলো -- "we can always talk, তাই না?" 


"Bullshit....কোনো কথা নেই। কার সাথে কথা বলবো? তোর সাথে? না আমার 'so called' স্ত্রী'র সাথে?"

"আমার কথা শোন....প্লিজ--"গাড়ির দরজাটা জোর করে খুলতে গেলো ঋষভ, কিন্তু কিছুতেই খুললো না। "ঋষভ -- তুই এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাচ্ছিস?", ওর হাতটা আবার ধরতে গেলো সৌগত -- "আমার কথা শোন.....""ছাড় আমায় --", এক ঠেলা মেরে হাত সরাতেই চিৎকার করে উঠলো ঝিমলি। থেমে গেছে সৌগত ও – “তো....তোর বুকে -- "থতমত খেয়ে তাকালো ঋষভ, নিজের বুকের দিকে। বাঁদিকে। হার্টের ঠিক ওপরে। ডুমো করে একটা গর্ত। কুলকুলিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে সেখান থেকে।


********************


এক ঝলকে সবটা মনে পরে গেলো ঋষভের। স্ত্রীকে সন্দেহ করার নোংরা অভ্যাসটা নতুন নয়। সবার সাথেই ওর স্ত্রীকে 'associate' করতে এক অদ্ভুত আনন্দ লাগতো ওর। গাড়ি ধুতে আসা কিঙ্কর। মালি সুজিত। ইলেক্ট্রিকের মিস্ত্রি ঘনশ্যাম। মাছ-ওয়ালা রাজু। না, না -- এরা তো গেলো বাইরের লোক। ওর সন্দেহের আওতার থেকে বাদ যায়নি আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী -- কে নয় !পাশের ফ্ল্যাটে নতুন এসেছে সৌগত। একলাই থাকে। লেখক মানুষ। বেশি কারোর সাথে কথা বলে না। দেখতে শুনতে বেশ ভালো। ওই তো সেদিন ময়লা ফেলার গাড়ি যাচ্ছিলো আর ঝিমলি তখনও নামতে পারেনি দেখে ওইই তো দাঁড় করালো ওদের। এটা কিন্তু ঋষভের ভালো লাগেনি। আচ্ছা....তাহলে শেষমেশ পাশের ফ্ল্যাটের নতুন আসা ওই লোকটার সাথেই.....? ঋষভের গা ঘেন্না আর লজ্জায় গুটিয়ে গেলো। সেদিন এরকমই ঝগড়া করতে করতে হাত চালিয়ে দেয় স্ত্রীর ওপর ঋষভ। ঝিমলি ছিটকে মেঝেতে পড়ে। আওয়াজ পেয়ে, দৌড়ে ওদের ঘরে ঢোকে সৌগত। ঘরে ঢুকে দেখে এক অদ্ভুত দৃশ্য। হাতে ধরা রিভলবারটি নল দিয়ে তখনও মৃদু মৃদু ধোঁয়া বেরোচ্ছে। ঝিমলি ছটফট করছে ব্যথায় -- দুটো গুলি ওর লেগেছে। একটা পেটে, আরেকটা সামনে দিয়ে কলার বোন গুঁড়িয়ে পিছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভয়ানক রাগে ঝাঁপিয়ে পড়লো সৌগত ঋষভের ওপর। কিছুক্ষণ ওর সাথে ধস্তাধস্তিতে প্রথম যে গুলিটা চালিয়েছিল সেটা ঋষভই। আর সেটা লাগে সৌগতর বুকে। চিৎকার করে ওঠে ব্যথায়। গলগলিয়ে রক্ত -- লাংস ফেটে বেরিয়ে গেছে পেছন দিয়ে গুলিটা। নিভে আসা শক্তিতে সৌগত প্রানপনে বন্দুকের নলটা ঋষভের দিকে ঘুরিয়ে, ট্রিগারটা চিপতে পেরেছিলো। গুলিটা ঋষভের বুকে গিঁথে গিয়েছিলো।পেট আর বুকের ঠিক মাঝামাঝি।


*********************


এবার বুঝেছো, কেন তোমার খিদে পাচ্ছে?", সৌগত প্রশ্নটা করলো -- "মরা মানুষের ও কেন খিদে-তেষ্টা পায়?"ঝিমলি হাঁ করে চেয়ে রইলো খালি সিলিংটার দিকে। আজ কুড়িদিন হয়ে গেলো। ওরা যে তিনজনে ঐভাবেই ওই ফ্ল্যাটে পড়ে আছে -- কেউই জানে না। এমনিতেই ওদের ফ্লোরে বড় একটা কেউ আসে না। এক ফাঁকিবাজ কেয়ারটেকারটা ছাড়া। মেইন্টেন্যান্সের বিল দিতে আসা ছাড়া এমনিতেই ও আসতো না। ঋষভের সন্দেহের তীরের ফলার ধারে সেটাও বেশ কিছু মাস হয়েছে বন্ধ হয়েছে। কেয়ারটেকার এখন বিলটা হোয়াটস্যাপ করেই পাঠায় ঋষভকে। আজ তাই বড় ফাঁকা ওদের ফ্ল্যাট বাড়ির ওপরের তলাটা। কেউই এখানে আসে না। কুড়িদিন হয়ে গেলো ওরা এভাবে মরে পড়ে আছে। আরও কতদিন যে এভাবে পড়ে থাকবে -- বোধকরি ঈশ্বরই জানেন। "ক্ষিদে...বড় ক্ষিদে আর তৃষ্ণা",


ফিসফিসিয়ে বললো ঝিমলি --


"আর যে পারছি না সহ্য করতে।"দীর্ঘশ্বাস ফেললো ঋষভ। সৌগতর প্রাণহীন দেহটা ধরে মাছি কিলবিল করছে, গলগলিয়ে ঘুকছে-বেরোচ্ছে ঘোলাটে রঙের চামড়া খাওয়া পোকার দল। কুৎসিত লাগছে দেখতে। মৃত্যু ওরকম সুপুরুষকে কি করে দিতে পারে, না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। ও হাত বাড়িয়ে দেওয়ালে হাত রাখলো। ঠিক এখানে ওর পেটটা ভেদ করে গুলিটা গিয়ে লেগেছে। হ্যাঁ....খিদে পাচ্ছে ওর ও। সঙ্গে ভয়ানক তৃষ্ণা। তবে নিজের গলা ভেজানোর জন্য নয়। নিজের করা ভুল মোছার জন্য জল। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror