প্রিয়বন্ধু
প্রিয়বন্ধু


‘বাপ্পরে, কতদিন পরে দেখা হলো বলতো!’ কলকলিয়ে উঠল শ্রাবণী।
‘দাঁড়া, হিসেব করি।’ আঙুলের কর গুনতে বসল করবী|
‘তা প্রায় বেয়াল্লিশ বছর তো হবেই… ভাবা যায়? আমরা এতদিন কেউই কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারিনি… থ্যাংকস টু রত্নাবলী, ও অনেকদিন পরে বিদেশ থেকে ফিরল আর ওর উৎসাহেই আজ কতদিন পর আমরা এক হলাম রে।’ স্বপ্না রত্নাবলীর হাতটা ধরে বলল।
একগাল হেসে সকলের হাতে ঠাণ্ডা লস্যির গেলাস ধরিয়ে দিল নন্দিনী।
'এই জানিস, ওই লস্যির কাউন্টারের ছেলেটা কী বলছিল?’
উৎসুক মুখগুলো সুগন্ধার দিকে ফিরল।
'রাকা লস্যির অর্ডার দিয়ে এসেছিল… আমি আর মধুমিতা আনতে গেছি, তো ছেলেটা বলল, ‘আজ কী অকেশন ম্যাডাম?’
খলবলি মধু তড়বর করে বলে উঠল, ‘আমরা সব ছোটবেলার বন্ধু। জানো, প্রায় বেয়াল্লিশ বছর পরে আমাদের আবার দেখা হলো।’
‘সেই কবে স্কুল ছেড়েছি… বল মধু, 1976 আমি বললাম!’ বলল সুগন্ধা।
‘কী করে যোগাযোগ করলেন ম্যাডাম… ফেসবুক নিশ্চ্য়ই?’
বাচ্চা ছেলেটার চোখদুটো জ্বল জ্বল করে উঠল।
‘ঠিক বলেছ ভাই, ভাল থেক। এই নাও আমাদের তরফ থেকে তোমার লস্যি তুমি এক গেলাস খাও।’
নরক গুলজার শেষ হলো। পেটপুজোর পরে মানি স্কোয়ার মল থেকে বেরিয়ে এলো একঝাঁক রঙিন প্রজাপতি। একে একে বিদায় নিলো ছোটবেলার বন্ধুরা।
মধুমিতা আর প্রতিমা এক পথের যাত্রী।
‘রত্নাবপলীটা খুব ফিকিরে… বল মধু!’
‘কেন রে প্রতিমা, এ’রকম বলছিস কেন? পয়সা আছে, কিন্তু ওর মনটা কত বড় বল! মনে করে সকলের জন্যে উপহার নিয়ে এসেছে। কত হাজার মাইল দূরে বসেও সবাইকে এক যায়গায় করে ফেলতে পারল তো… এত্ত বছর বাদে।
‘সবই ওর ফন্দী রে, আমি সব বুঝি। নিজের লেখা বই গছাবার জন্যেই এইসব বাহানা বানানো... তুই কিনলি কেন, আমি তো কিনিনি।’
‘যাহ, এ’রকম করে বলিস না, আমার তো রত্নাকে খুব ভাল লাগে। আমরা ওর ছোটবেলার বন্ধু, আমরা যদি না কিনি ওর বই… কে আর কিনবে বলতো, কেইবা চেনে ওকে?’
‘তোমার আহ্লাদ তুমি তোমার কাছে রাখ। এইসব ঢঙ বাপু আমার সহ্য হয়না। বারফাট্টাই যত্ত সব… “বহুদিন বিদেশে তো, আমার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছি… পড়ে দেখিস, ভাল লাগবে।”
'কেউ যেন আর বিদেশ যায়না…’
মুখ ভেংচিয়ে বলল প্রতিমা।
'বাবাঃ, এতো বিষ তোর মনে! সামনে তো আদিখ্যেতার অন্ত ছিল না… বুকে জড়িয়ে ধরে কত নাটকই না করলি!‘
'খবর্দার বলছি, আমার সঙ্গে এইরকম ভাবে কথা বলবি না।’
...আমার এ পথ তোমার পথের থেকে অনেক দূরে
গেছে বেঁকে, যাবে বেঁকে…
পাড়ার সিডির দোকান থেকে গান ভেসে এলো।42 বছরের বন্ধুত্ব এক নিমেষেই শেষ। কিন্তু বোঝা গেল, এদের বয়েস বাড়েনি… এরা আজও সপ্তদশী|