Bhattacharya Tuli Indrani

Tragedy

3  

Bhattacharya Tuli Indrani

Tragedy

কল্পনা এবং বাস্তব

কল্পনা এবং বাস্তব

3 mins
606


প্রতিভা

'সঙ্গীতা, তুমি ধর তানটা আর এক বার… সবাই শোন ভাল করে। শী ইজ নিয়ারলি পার্ফেক্ট।' 

গুরুজীর কথায় নড়ে চড়ে বসল সব ছাত্র ছাত্রী।

মুখ বেঁকাল রত্নদীপ। তার থেকে ওপরে কেউ থাকবে এটা মেনে নিতে পারেই না সে।


মোটামুটি ভাবে শিক্ষা সম্পূর্ণ হলে সকলেই বেরিয়ে পড়ল যার যার সামর্থ্য মতো পথ বেছে নিতে। 

'তুমি কী করবে সঙ্গীতা, এখন?' রত্নদীপ কৌতুহলী হলো।

'আমি কিছুই ভাবিনি দীপ, তুমি বল।'

'অনেক গুলো যায়গায় অ্যাপ্লাই করেছি, দেখা যাক। প্রোগ্রাম পেলে তো ভালই…'

'বাড়িতে বসে শেখাতে পারি, তাতে করে নিজেরও প্র‍্যাক্টিস হবে…' সঙ্গীতা মিনমিন করে বলল।

'তোমরা মেয়েরা বড় কিছু ভাবতেই পার না… বাড়ি বসে শিখিয়ে কী পাবে তুমি, তোমার কোনও উচ্চাশা নেই?'

বিরক্ত হলো দীপ।

সঙ্গীতা কী করে বোঝাবে দীপকে তার স্বপ্ন কী!কল্পনার উড়ানে কোথায় কোথায় উড়ে বেড়ায় সে… কাকেই বা বোঝাবে?


গুরুজীর প্রিয় শিষ্যা সঙ্গীতা এখন এক প্রতিষ্ঠিত মার্গ সঙ্গীত শিল্পী। গুরুজীর অনুষ্ঠান তো তাকে বাদ দিয়ে হয়ই না, একক অনুষ্ঠানেও ডাক পড়ছে তার, আজকাল।

এক অনুষ্ঠানের শেষে, গ্রীন রুমে ফিরে সঙ্গীতা দেখল রত্নদীপ দাঁড়িয়ে, পুষ্পস্তবক হাতে।

'কী ভাল যে গাইলে, সঙ্গীতা…'

ভাল লাগায় ভেসে গেল সঙ্গীতা।


কলিং বেল-এর আওয়াজে দরজা খুলে অবাক হয়ে গেল সঙ্গীতা। রত্নদীপ দাঁড়িয়ে, তার বাবা- মা'কে নিয়ে। অনেক অনুষ্ঠানেই দেখা হয়েছে, ওঁদের সঙ্গে।

হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতরে নিয়ে এসে বসায় সবাইকে, সঙ্গীতা। বাবা- মা'কে ডেকে নিয়ে আসে সে।

চায়ের জল বসাতে রান্নাঘরে গিয়ে, দেখার চেষ্টা করে চায়ের সঙ্গে কী দেওয়া যায়, খেতে… অতিথিদের।

বসার ঘরের কথাবার্তা কানে আসে সঙ্গীতার, অবাক হয়ে শোনে সে… রত্নদীপের সঙ্গে সঙ্গীতার বিয়ের কথা বলতে এসেছেন তাঁরা।

রত্নদীপের জন্যে সেরকম কোনও অনুভূতি কখনও গড়েই ওঠেনি সঙ্গীতার মনে। সহপাঠী হিসেবে ভালই লাগত তাকে… তাই বলে জীবনসঙ্গী! গালে রঙ ধরে সঙ্গীতার। হলে মন্দ হয় না, একই জগতে বিচরণ তাদের… ভাললাগার বিষয়ও তো একই। চা- জলখাবারের ট্রে নিয়ে বসার ঘরে ঢুকতে একটু লজ্জা বোধ করে সে। দীপের দিকে তাকাতেই পারে না সঙ্গীতা।

দীপের বাবা- মা আদর করে ডেকে বসতে বলেন সঙ্গীতাকে, তাঁদের পাশে।


সঙ্গীতার বাবা- মা যেন হাতে চাঁদ পান, এ-তো মেঘ না চাইতেই... জল। একই সঙ্গে, একই গুরুর কাছে গান শিখেছে মেয়ে… গানটা থাকবেও। মেয়েরও অমত নেই বুঝে সম্মতি জানাতে দ্বিধা করেন না তাঁরা।


সমারোহের বিয়ের সুখানুভূতি কেটে যায় খুব তাড়াতাড়ি। সকালের রেওয়াজে বাধা পড়ে রোজই… কোনও না কোনও কাজে ডেকে নেন শাশুড়ী মা… আত্মীয় স্বজনের কেউ না কেউ দেখা করতে আসে। হাঁসফাঁস করতে থাকে সঙ্গীতা।

উড়ো কথাবার্তাও কানে আসে তার… রত্নদীপ তাকে বিয়ে করেছে শুধুমাত্র তার পথের কাঁটা সরানোর জন্যেই… সঙ্গীতার প্রতিভা অনেক বেশী তার থেকে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, সঙ্গীতার গান বন্ধ করতেই হবে।

বাস্তব এসে দাঁড়ায় সঙ্গীতার সামনে। তাদের ব্যবহারে কিন্তু কিছুই বুঝতে দেয় না সঙ্গীতার শ্বশুরবাড়ির মানুষেরা।

গুরুজীর ফোনের কথা জানতেই পারে না সে… একের পরে এক অনুষ্ঠান বেরিয়ে যায় হাত থেকে।


রত্নদীপের নাম শোনা যায় এখন, প্রথম শ্রেণীর গায়ক হিসেবে।

নিজের শরীরে রত্নদীপের অস্তিত্ব জানান দেয়, সঙ্গীতাকে। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতেই, গলার আওয়াজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় সঙ্গীতার…


সঙ্গীতার নিথর দেহ পাওয়া যায়, পরের দিন সকালে। তার হাতের মুঠোয় ধরা ওষুধের খালি শিশিটা।                                                   


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy