সেলফি
সেলফি
সেলফি বেত্তান্ত
'খুব বোর হয়ে যাচ্ছি ইয়ার... কিচ্ছু করার নেই।'
ভীষণ বিরক্ত হয়ে বলল রিদিমা, রুমমেট অদিতিকে।
সবে কলেজে ঢুকেছে দুই বন্ধু, ভাগ্যক্রমে, হস্টেলের একই ঘরে যায়গা হয়েছে তাদের। বাড়ি ছেড়ে আসার দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলতে পেরেছে তারা, একই স্কুলের পড়ুয়া দুটি।
খাবার টেবিলেই শুধু ভীষণ করে মনে পড়ে মা'র হাতের রকম রকম রান্নার কথা। চোখে জলও আসে তখন। সত্যি কীসব খাবার, কিছু কিছু তো মুখে তোলাই যায় না। খিদের চোটে যতটুকু না খেলেই নয়।
ঘরের সাথে লাগোয়া টানা বারান্দা, দুই সখী এসে দাঁড়াল সেখানে। সামনের খোলা মাঠে কিছু অনুষ্ঠান ছিল, প্যাণ্ডালের বাঁশগুলো খুলছে কয়েকটা ছেলে।
'ওমা! অদি দেখ... ঘোড়া।'
'ঘোড়া? ঘোড়া আসবে কোত্থেকে রে?' অদিতি সংশয়ের হাসি হাসল।
'দেখ ভাল করে, গরু বোধহয়... '
'তুই একটা যা তা, আমি গরু আর ঘোড়ার তফাৎ বুঝি না? কী ভাবিস তুই আমাকে, গাধা?'
দুই বন্ধুই গড়িয়ে পড়ে হেসে। বয়েসের রোগ... কথায় কথায় হাসি, কথায় কথায় মুখ ভার।
'আজ একটা নতুন কিছু করা যাক, কী বলিস?' উত্তেজিত রিদিমা বলল।
'কী নতুন?' আগ্রহী হলো অদিতিও।
'চল, ঘোড়ার সঙ্গে সেলফি তুলব...' চোখ ঘুরিয়ে বলে রিদিমা... ও সেলফি রোগের রুগী।
'খেপেছিস! আমি ওদিকে নেই... দেবে ঘুরিয়ে এক লাথ, ছিটকে পড়বি। হাড়গোড় ভাঙবে। না ভাই, তুমি যাও... যা ইচ্ছে কর।'
'প্লিজ চল, একা ভাল লাগে? তুই দূরে দাঁড়িয়ে থাকিস।' অদিতির হাতদুটো চেপে ধরল রিদিমা।
'অগত্যা...' অনিচ্ছায় রাজী হতেই হলো বন্ধু অদিতিকে।
টেবলের ড্রয়ার থেকে স্মার্ট ফোনটা বার করে তৈরি হলো রিদিমা।
'তোর ফোনটা নিবি না? নিজের ছবি না তুলিস, আমারটা তো তুলে দিতে পারবি। তুই দিনে দিনে কেমন হিংসুটে দৈত্য হয়ে উঠছিস।' রিদিমা জিভ দেখাল বন্ধুকে।
'তোর ফোনেই দেব খন... তুলে। চল এখন।' অদিতি হাত ধরল রিদিমার।
'কাছে যাব? ভয় করছে।' রিদিমা হাসল। 'ঘোড়া কিছু করে না, তাই না?'
'তুই জানিস আর তোর ঘোড়া জানে। আমি এর মধ্যে নেই বাপু।'
ছোট মতো একটা ঘোড়ার কাছাকাছি গিয়ে, ছবি নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকল রিদিমা। ঘোড়া তার মুখ দেখাতে রাজিই না, সমানে মুখ ফিরিয়ে রিদিমার উল্টো দিকে চলে যাচ্ছে।
'ঘোড়ার মুখের সঙ্গে নেওয়া ছবি হয়তো অনেক হবে... তুই ঘোড়ার পেছনে চলে যা। লেজের সঙ্গে নে সেলফি। বেশ নতুনত্ব হবে... কী সুন্দর ওর লেজটা...দেখ।' ফক্কুড়ি করে বলল অদি।
পা টিপে টিপে ঘোড়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল রিদিমা।
দু'একটা ছবি তোলা হলোও। কিন্তু মনপুত হলো না তার। সাহস করে আর একটু কাছে গিয়ে, যেই না লেজে হাত দেওয়া, পেছনের দু'পা তুলে ঘোড়া মারল জোর লাথি। শূন্যে উঠে, দূরে ছিটকে পড়ল রিদিমা। দৌড়ে কাছে গেল অদিতি। ভয় পেয়ে চেঁচামেচি করতে লাগল সে। উল্টো দিকের ছেলেদের হস্টেল থেকে বেরিয়ে এল ক'টা ছেলে। এদের থেকে বেঁচে চলতে চায়, দু'বন্ধুই। আজ আর কিছু করার নেই। ভীষণ রাগ হলো অদিতির, রিদিমার ওপরে। বেশী বাড়াবাড়ি... আরও তোল সেলফি!
ধরাধরি করে ক্যাম্পাস হাসপাতালে নিয়ে চলল তারা সবাই মিলে, চোখ খুলছে না রিদিমা।
কিছুদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠল রিদিমা।
সেলফির ভূতটা একদম বেরিয়ে গেছে তার মাথা থেকে।