Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

প্রান্তিক প্রেম তৃতীয় পর্ব

প্রান্তিক প্রেম তৃতীয় পর্ব

5 mins
205


পর্ব (৩)

খরচের ব্যাপারে হরিপ্রসাদ বাগাড়িয়া নিশ্চিন্ত করলেও আইডিয়াটা কি সেটাই তো জানা গেল না ।

কমলসাধন বাগচী বললেন - এত অধৈর্য্য হলে চলবে ? আগে তো শোন তারপর মন্তব্য করিস !

বাগাড়িয়া বললেন - জলদি বল বাপ। আমার আর তর সইছে না।

মদনবাবুও সে রকমই ইঙ্গিত দিলেন । শুধু সায়ন্তিকা নীরব থেকে মাথা নীচু করে রইল । মদনবাবুর চোখ এড়ায়নি তা' । 

তিনি বলে উঠলেন - ওহো ! তোদের একটা কথা বলা হয়নি। এই যে দেখছিস মেয়েটি মাথা নীচু করে বাধ্য হয়ে বসে আছে --

- কৌন ? বাগাড়িয়া বললেন - সায়ন্তিকা ? আরে ওকে আমি খুব ভালো করে চিনি ।

প্রতিবাদ করে কমলসাধন বললেন - চিনি নয় রে ; গুড়, আই মিন জ্যাগারি । তুই তেমনই চিনিস। আরে বাবা! সায়ন্তিকা হল মদনের অফিসের কর্মী।

- হামি জানে সে কথা। আর এও জানে সায়ন্তিকার কেউ নেই। 

মদনমোহন এতক্ষণ চুপচাপ ছিলেন। বললেন - সায়ন্তিকা! তোমার কোন তাড়া আছে ? যদি থাকে তো বল তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আসি।

- না না স্যার । আমার কোন তাড়া নেই। তা-ছাড়া আপনাদের দারুন আইডিয়াটা না শোনা অব্দি কৌতূহল ধরে রাখতে পারছি না।

হরিপ্রসাদ বললেন - ম্যাডাম কি আমাদের সাথে থাকবেন ?

- মন্দ হয় না। কেন না আমিও এক আধটু এডভেঞ্চারাস মেয়ে ।

মদনমোহন বললেন - ব্যস , তবে তো মিটেই গেল ।

তারপর কমলবাবুকে বললেন - নে, এবার শোনা তোর আইডিয়াটা।

- তোদের কি কারও ভুতপ্রেতে বিশ্বাস আছে?

- মানে ? বাগাড়িয়া বললেন - শেষে কি ভুতের পাল্লায় ফেলবি ?

- কিছুটা তেমনই।

মদনমোহন উৎফুল্ল হয়ে বললেন - ভেরি ইন্টারেস্টিং। তেমন হলে আমি রেডি। 

বাগাড়িয়াও হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন - শোনা তোর আইডিয়া।

সায়ন্তিকা বলল - স্যার, একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না কি? ভুতের দেশে অভিযান - মানে তো দারুন রিস্কি ।

মদনমোহন বললেন - তাহলে তুমি এক কাজ কর। চল তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি। খামোকা উৎপাতে জড়িও না।

সায়ন্তিকার অভিমানে লাগল যেন । বলে উঠল - ধ্যেৎ, তেমন কোন ব্যাপার নেই। আমিও রেডি। যাব আপনাদের সাথে।

ইতিমধ্যে অর্ডার মত ডিনার এসে গেছে। বাগাড়িয়া বললেন - চল তবে গরমাগরম খেয়ে লি সবাই মিলে। তারপর জমিয়ে শোনা যাবে। ম্যাডামের থাকার ঘরটা একবার দেখিয়ে দিয়ে আসি। কেমন !

- সে হবে'খন। 

কমলবাবু বললেন - খাবার এসে গেছে ; খেয়ে নি। তারপর না হয় সায়ন্তিকার রুমে বসে আলোচনা করব। এই যে সুকুমার, নে খাবার রেডি কর।

সায়ন্তিকা প্রতিবাদ করে বলল - ও মা ! সে কি? আমি থাকতে সুকুমারদা কেন ? আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

সুকুমার বললেন - সেই ভালো। আমি বরং একটু হেল্প করে দি।

বলে সায়ন্তিকা আর সুকুমার ডাইনিং টেবিলে খাবার আয়োজন করতে লাগল ।

সুকুমার - সায়ন্তিকা ! 

গলা নীচু করে বললেন - একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি ?

- বলুন ।

- না, মানে আমাকে যখন দাদা বলে ডাকলে তাই বলছি আর কি !

- বলুন না। দাদা বোনকে কিছু বলবে এতে কিন্তু কিন্তু কেন?

- মদনকে তোমার কেমন লাগে ?

হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে সায়ন্তিকা লজ্জায় পড়ে গেল । কোন উত্তর দিল না। সুকুমার বললেন

- কিছু মনে করবে না। তোমাকে দেখে আমার মনে হয়েছে তুমি কোন একটা অসহায়ত্বে ভুগছ। তোমার বাড়িতে কে কে আছেন ?

- আমার কোন বাড়ি নেই। জন্মের পর বাবা মা দু'জনেই গত হয়েছেন। মামার কাছে থেকে বড় হয়েছি। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে আজ সেখান থেকেও বহিষ্কৃত হয়ে একরকম রয়েছি। স্যারের বদান্যতায় চাকরিটা পেয়েছি তো! 

- বুঝলাম। এখন দাদা হিসেবে আমারও একটা কর্তব্য এসেই যায় তোমাকে নিয়ে ভাবার।

- কি রকম ?

- সেজন্যই তো বললাম মদনকে তোমার কেমন মনে হয়?

- তেমন ভাবে তো কিছু ভাবিনি। উনি আমার বস, আমি তাঁর অধস্তন কর্মচারী মাত্র ।

- ব্যস ! এটা তো অফিসিয়াল। আন- অফিসিয়ালি কেমন লাগে ?

- ওনার দরাজ দিল।

সুকুমার থামিয়ে দিয়ে বলেন - বেশ বেশ, আর কিছু জানতে চাই না। এরপর থেকে তোমার জীবনে সঙ্গীতের ধারা আনতে আমি তৎপর হব। শুধু একটিবার বল তুমি আমার সাথে মতৈক্য রাখবে।

সায়ন্তিকা আর কোন কথা বলে না। ধীরে ধীরে দরজায় এসে বলে - স্যারেরা আসুন খাবার রেডি।

খাওয়া দাওয়া সেরে আড়ত বন্ধ করে মদন, কমল সুকুমার সায়ন্তিকাকে নিয়ে উপরের সিঁড়ি বেয়ে চলল বাগাড়িয়ার সাথে ।

খাটের চারিদিকে গোল হয়ে বসে শুরু হল আলোচনা।

কমলবাবুই প্রথম কথা বললেন - তোরা সকলে হয়তো শুনেছিস বা জানিস আমাদের ভারতবর্ষে রেল যোগাযোগ টেলিফোন যোগাযোগের চেয়ে কোন অংশে কম নয় । বিশাল তার পরিব্যাপ্তি। প্রচুর মানুষ রেলে চেপে দূর-দূরান্তে যাতায়াত করে। কিছু কিছু মানুষ রেলের চাকায় প্রাণও দেয় - আত্মহত্যাই হোক বা রেল দুর্ঘটনায় হোক।

সকলে শুনতে থাকে তার কথা। মদনমোহন বলেন - ভূমিকা রেখে আসল কথা বল।

- সেটা বলার জন্যই তো এমন অবতরণিকা। তো মানুষ অপঘাতে মরলে প্রেতাত্মা হয় মানে হতেই পারে।

সবাই ঘাড় নাড়ল - তা হয়তো হতে পারে ।

তেমনই প্রেতাত্মার জন্য এই ভারতে দশ দশটি রেল স্টেশনকে ভুতুড়ে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

- হয়েছে তো কি এসে গেল ? 

সুকুমার বলে - এটা কি তোর এবস্ট্র্যাক্ট আইডিয়া ?

- তুই চুপ কর। শোন আগে পুরো কথাটা। তারপর মন্তব্য করিস।

কমল বাবু বলতে শুরু করলেন ।

এই দশটি ভুতুড়ে স্টেশনের নামগুলো বলি ?

- বল

- দশ নং স্টেশনটি হল বারোগ স্টেশন, সিমলায় অবস্থিত । এখানে কলোনেল বারোগের আত্মা ঘুরে বেড়ায় । তিনি ছিলেন ব্রিটিশ রেল ইঞ্জিনিয়ার। একপি পাহাড়ের মধ্যে রেলের টানেল বসাবার বরাত পেয়েছিলেন কিন্তু ত্রুটির জন্য তা' করতে পারেন নি। তখন রেলের কর্মচারীরা এমনকি বড় বড় অফিসারেরাও তাঁকে বিদ্রুপবাণে এমন বিপর্যস্ত করে তুলেছিল যে তিনি আত্মঘাতী হন। বলা হয় তাঁর আত্মা রেললাইন এবং স্টেশন চত্বরে এখনও ঘোরাঘুরি করে।

নবমতম স্টেশনটি হল চিত্তুর রেলওয়ে স্টেশন, অন্ধ্রপ্রদেশ । এখানে এক সি আর পি এফ জোয়ানের আত্মা রয়েছে। কথিত আছে হরি সিং নামে ঐজোয়ান রেলকর্মী ও টি টি ইদের দ্বারা লাঞ্ছিত এবং প্রহৃত হন ২০১৩ সালে। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ১০ দিনের মাথায় তিনি মারা যান। তাঁর আত্মা নাকি ঐ স্টেশনে ঘোরাফেরা করে।

আট নং ভুতুড়ে স্টেশন হল মুম্বাইয়ের মুলুন্দ রেলস্টেশন। ব্যস্ততম স্টেশনে রেলওয়ে ট্র্যাক অতিক্রম করতে গিয়ে যে সব মানুষ মারা গিয়েছেঞ ; বলা হয় তাদের আত্মা নাকি মাঝে মাঝে দেখা যায় ।

মদনমোহন সায়ন্তিকার পাশেই বসেছিলেন । হঠাৎ সায়ন্তিকা ভয়বশত মদনমোহনের হাত চেপে ধরে।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror