প্রান্তিক প্রেম ষষ্ঠ পর্ব
প্রান্তিক প্রেম ষষ্ঠ পর্ব
মি: বাগাড়িয়ার ফোন পেয়ে ওনারা চার জন - মদনমোহন, কমলসাধন, সুকুমার এবং সায়ন্তিকা আবার হাজির হলেন বাগাড়িয়ার আড়তে। দিনটা ছিল রবিবার। সকলের ছুটির দিন।
বাগাড়িয়া বললেন - ছুট্টি মিল গয়া কি নেহি ? অগর মিল গয়া তো কিতনে দিনকে লিয়ে মঞ্জুর হুয়া ? বোলো।
তিন দিনের জন্য সকলের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে শুনে বাগাড়িয়া খুশি হলেন।
- যাক, তিন দিন হি সহি । জমিয়ে আড্ডা হবে।
মদনমোহন বললেন - সে আবার কি ? আমরা আড্ডা দিতে সেখানে যাচ্ছি না।
- তোবে ?
- একটা এক্সপিডিশনে যাচ্ছি। কি, কমল, তাই তো ? সুকুমার ?
কমল এবং সুকুমার দুজনই ঘাড় নেড়ে বললেন - হাঁ।
- এক্সপিডিশন ? আই মিন অভিইয়ান ? বাগাড়িয়া বললেন কিছুটা বিস্ময়ের সঙ্গে। অভিইয়ান মতলব?
কমলসাধন তখন ব্যাপারটা খোলসা করতে লাগলেন।
বেগুনকোদর রেলের মানচিত্রে এখনও একটি ভুতুড়ে স্টেশন। সেখানে নাকি বৈদ্যনাথ পাল এবং তাঁর স্ত্রীর আত্মা ঘুরে বেড়ায় ।
- বৈদনাথ পল? সে কে ?
- তাঁর কথা বলতে গেলে বেগুনকোদর রেল স্টেশনের ইতিহাস ঘাঁটতে হবে। আমি চেন্টা করব সংক্ষেপে পরিচয় দেবার । নইলে রাত কাবার হয়ে যাবে বিশদে বলতে গেলে । কমলসাধন বললেন।
মদনমোহন - ঠিক আছে সে ভাবেই বল শুনি।
সায়ন্তিকা একটু আগ বাড়িয়ে বলল - আমার খুব শখ ভুতের দেশে বেড়ানোর। তাদের সাথে দেখা করার।
মদনমোহন বললেন - সে তো তুমিও যাচ্ছ সায়ন্তিকা । তোমাকে নিশ্চয় তেনারা দেখা দেবেন।
বাগাড়িয়া তো ভীষণ খুশি। বললেন - তা'হলে আমার স্কর্পিও গাড়িটাই বেস্ট হোবে। পাহাড়ী পথে যেতে আসতে দারুন। তুরা বাপ চার পাঁচটা গাড়ির কথা বলবি না। একেলা মৌজ মস্তি হোবে না।
- সে তো না হয় হল। তোর স্কর্পিওতেই যাব। এখন বাগড়া দিস না তো ! কাহিনীটা শুনি আগে। দারুন এক্সাইটিং - তাই না কমল ?
- অবশ্যই এক্সাইটিং। তার উপর আবার নিজের চোখে দেখা ,নিজের কানে শোনা মানে তো আলাদা অনুভুতি।
সায়ন্তিকা মনে মনে মদনমোহনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় । তাকেও তো সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন । একলা কোন মেয়ে একপাল ছেলের সাথে বেড়াতে যাচ্ছে - এ যেন তার কল্পনাতীত ছিল ।
সুকুমার টিপ্পনী কেটে বলেন - কিন্তু কথায় আছে, পথে নারী বিবর্জিতা ।
সায়ন্তিকা মুখ ভেঙায়। কি যে বল সুকুমারদা ? তোমাদের ছোটখাটো বিষয়গুলো দেখার জন্যও তো কাউকে দরকার ।
মদনমোহন বলেন - ডোন্ট আণ্ডারএস্টিমেট উইমেন, সুকুমার। নারীরা অনেক সময় পুরুষের বিপদাপদের অবলম্বন হতেও পারে।
কমলসাধন বলেন - এক্জাক্টলি। কারণ যে কাহিনীটি বলতে চলেছি তা শুনলে বুঝতে পারবি।
- বল তবে শুনি। বাগাড়িয়ার ধৈর্য্য আর ধরে না।
- শোন তবে । রাঁচি -কোটশীলা-ধানবাদ রুটে ১৯৬০ সালে নির্মিত হয়েছিল এই ছোট্ট স্টেশনটি । আর তাকে ঘিরে বেশ জমে উঠেছিল স্টেশন সংলগ্ন হাট, বাজার ইত্যাদি। প্রায় দশ জোড়া লোকাল ট্রেন এই স্টেশনে থামত । যাত্রী সংখ্যাও নেহাত কম ছিল না।বেশ জমিয়ে রমরমিয়ে চলছিল সবকিছু। পাকা ইমারতের স্টেশন বাড়ি, রেল কোয়ার্টার, কর্মী, আর তাদের নিত্যনৈমিত্তিক জলের যোগান দিতে পিছনেই ছিল এক বিশাল বাঁধানো পাতকুয়ো। ১৯৬৬-৬৭ সাল নাগাদ বৈদ্যনাথ পাল স্টেশন মাস্টার হয়ে বদলী হলেন বেগুনকোদরে। সপরিবার কোয়ার্টারে থাকতে লাগলেন। ১৯৬৭ সাল নাগাদ কোন এক শীতের রাতে রাঁচি ডিভিশনের ডি টি এস মানে ডিভিসনাল ট্রাক্শন সুপারিন্টেণ্ডেন্ট সাম ওয়ান উপাধ্যায় সাহেব বেগুনকোদর পরিদর্শনে এসে মি: পালের আতিথ্য নিয়েছিলেন । বড় সাহেবের আপ্যায়নের জন্য পাল কোয়ার্টার সুসজ্জিত করা হয়েছে। সায়নী অর্থাৎ বৈদ্যনাথ পালের স্ত্রীর উপর দায়িত্ব পড়েছে সাহেবের যত্ন আত্তিরের। মি: পাল গেছেন বাজারে । এদিকে উপাধ্যায় সাহেব বসে আছেন। সায়নী তাঁকে চা-জলখাবার দিতে গিয়েই বিপত্তিতে পড়ল । উপাধ্যায় সাহেবের ছিল আলুর দোষ। দেখতে তো নটবরলাল । ফর্সা ধবধবে দোহারা চেহারা। চেয়ারে বসে আছেন সারা রুম আলোকিত করে।
সায়নীর বয়স কম। মুখের সামনে অমন সুপুরুষ বসে আছে দেখে একটু ভয়মিশ্রিত চিত্তে চা জলখাবার নিয়ে রুমে ঢুকল । সাহেব 'হ্যালো' বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন করমর্দনের জন্য । সায়নী ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে মাথা নুইয়ে প্রণাম জানাল । তারপর সাহেবের টেবিলে চা জলখাবার যেই নামাতে যাবে ; সাহেব হ্যাচকা মেরে সায়নীকে কাছে টেনে নিলেন । অসহায় ছাগশিশুটির মত সায়নী ভয়ে চোখ বন্ধ করল । পাঁজাকোলা করে সাহেব সায়নীকে বিছানায় ফেলে ........
- ফির কেয়া হুয়া ? বাগাড়িয়া উত্তেজিত হয়ে বললেন।