Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

প্রান্তিক প্রেম সপ্তম পর্ব

প্রান্তিক প্রেম সপ্তম পর্ব

3 mins
122


বাগাড়িয়ার কথায় সকলে একটু লজ্জিত হলেন। বিশেষত সায়ন্তিকা লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলল। বাগাড়িয়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন - কেয়া হুয়া ভাই? কুছ গলত বোল দিয়া কেয়া ?

কেউই এর কোন উত্তর দিল না। কমলসাধন বলতে লাগলেন - তারপর হঠাৎই বৈদ্যনাথের গৃহে প্রত্যাবর্তন এবং উভয়কে অশালীন অবস্থায় দেখে পুন:প্রস্থান করলেন। সায়নী পিছু পিছু দৌড়াতে লাগল। ঠিক যেখানে বাঁধানো পাতকুয়োটা আছে সেখানে যেয়ে বৈদ্যনাথকে ধরে ফেলল ।

বৈদ্যনাথ ক্ষোভে অপমানে জর্জরিত হয়ে সায়নীকে বাহুবন্ধনে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।

- কেন এমন করলে !

শুধু এই প্রশ্নটাই বারবার করতে লাগলেন। সায়নী অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল। এতে ওর কোন দোষ নেই; লোকটা যে অসীম বলবান যার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেও কিছু লাভ হয়নি। 

- কেন এমন করলে ? বারবার এই প্রশ্নের মুখে পড়ে ক্ষুব্ধ সায়নী বলেই ফেলল - তোমার মনোমত শাস্তি দাও আমায়। যা বলবে তাই করব।

- না । তোমাকে আমার কিছুই বলার নেই। শুধু একটিবার বল আমার কোথায় অক্ষমতা ছিল।

এইভাবে কথা বলতে বলতে একসময় দুজনই পাতকুয়োর উপরে চাতালে বসে পড়ল। হঠাৎ বৈদ্যনাথ বললেন - মৃত্যুই তোমার একমাত্র শাস্তি। 

কথাটা বলেই সজোরে সায়নীকে ধাক্কা দিয়ে আশি ফুট গভীর কুয়োয় ফেলে দিলেন। দুর্ভাগ্যবশত সায়নীর খোলা ব্লাউজের হুকটা বৈদ্যনাথের পকেটে গেঁথে গিয়েছিল এবং ফলস্বরূপ সায়নী মরণেপণ করে বৈদ্যনাথকে ধরে ফেলল এবং উভয়েই গভীর খাদে তলিয়ে গেল ।

সেই স্টেশন মাস্টার এবং তাঁর স্ত্রীর অতৃপ্ত আত্মা স্টেশন চত্বর এবং রেললাইনে দাপিয়ে বেড়ায়। এমনকি শোনা যায় নিকটবর্তী গাঁয়ের শিশু বউদের উপর ভর করে । অনেক শিশু এই কুয়োয় পড়ে মারা গেছে বলে জনশ্রুতি আছে। 

- বাপরে বাপ ! কি সাংঘাতিক ঘটনা।

বাগাড়িয়া বলেন - তাহলে তো ওই পাত কুঁয়াটা এখনও বেশ ভয়ঙ্কর নিশ্চয়।

সায়ন্তিকা বলে - তবে তো দারুন ব্যাপার স্যার! নিজের চোখে পরীক্ষা করার মহাসুযোগ এসেছে স্যার ।

সুকুমার প্রধান বলেন - আগামীকাল ভোরবেলায় আমরা রওনা দেব। 

বাগাড়িয়া বললেন - সব ব্যবস্থা পাক্কা। রাতের মধ্যে তোরা রেডি হয়ে নে। ভোর চারটেয় শুভক্ষণ আছে। তখন বেরিয়ে পড়ব।

মদনমোহন সায়ন্তিকা দু'জনে মৃদু আপত্তি করল। 

- অত ভোরবেলায় ঘুম ভাঙে না আমার। 

আজ পর্য্যন্ত আটটার আগে বিছানা ছাড়তে পারি না। তায় তো এখন আবার শীতকাল । ভোর চারটে মানে তো আদ্দেক রাত !

বাগাড়িয়ার উৎসাহ যেন খুব বেশিই। বললেন - এক কাজ কর। যে যার বাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে আমার এখানে চলে আয় । আমি খাবার অর্ডার করে দিচ্ছি। এখানে রাত কাটিয়ে ভোর ভোর রওনা দেব।

এরপর আর কেউ আপত্তি করল না। যে যার গৃহে চলে গেল । শুধু সায়ন্তিকা বলল -আমার তো তেমন কোন লগেজ নেই । আমি ঠিক চলে আসব।

না ম্যাডাম ! বাগাড়িয়া বলেন - আমার গাড়ি নিয়ে যান। ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি আপনাকে বাড়ি নিয়ে যাবে আবার এখানে নিয়ে আসবে।

মদনমোহনের গা জ্বালা করে উঠল । মনে মনে বাগাড়িয়াকে ' বাঞ্চোত' গালাগাল দিয়ে বললেন - ওর দায়িত্ব আমার। তোকে কিছু করতে হবে না। যা করার আমিই করব। তুই শুধু থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করিস - তাই যথেষ্ট।

কমলবাবু , সুকুমার একটু মুচকি হেসে চলে গেলেন। বাগাড়িয়া তখনকার মত সবাইকে বিদায় জানিয়ে খাবারের আয়োজন করতে লাগলেন। 

******************************************************* ভোরবেলায় ঠিক চারটের সময় বাগাড়িয়ার স্কর্পিও পাঁচ পাঁচটি প্রাণীকে নিয়ে রওনা দিল পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে। গন্তব্য যদিও বেগুনকোদর ; সকলে মিলে ঠিক করলেন কোটশীলা বা ধানবাদ দিয়ে না গিয়ে পুরুলিয়া যাওয়াই বেস্ট । প্রথমত ওখানকার রুক্ষ্ম মাটি তথা মালভূমি অঞ্চলের সাথে খানিকটা একাত্ম হওয়া যাবে এবং দ্বিতীয়ত পুরুলিয়া শহরটাকে চাক্ষুষ করা যাবে। এছাড়া যে প্রধান উদ্দেশ্য কমলবাবুর মনে উঁকি দিচ্ছিল তা' হল বন্ধুবর পবিত্র দৈবজ্ঞকে সঙ্গে নেওয়া। পবিত্র পুরুলিয়া টেলিকম বিভাগের অর্থাৎ বি এস এন এলের পদস্থ আধিকারিক। আদি নিবাস ঝালদায়। যেখান থেকে বেগুনকোদরের দূরত্ব কম বেশী সাত কিলোমিটার । সুতরাং দলের অন্যেরা কেউ এতে আপত্তি করেনি।


দুপুর একটা বেজে দশ মিনিটে স্কর্পিও যখন পুরুলিয়াস্থিত বি এস এন এল অফিসের মেনগেটে দাঁড়াল; পবিত্রবাবু ততক্ষণে লাঞ্চ সারছেন । আধ খাওয়া সেরে নীচে নেমে সবার সাথে আলাপ পরিচয় করে যখন অভ্যাগতদের অভ্যর্থনা পর্ব শেষ হল তখন ঘড়িতে বিকেল চারটে। এরপর সকলে মিলে পবিত্রবাবুর কোয়ার্টারে রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে চললেন।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror