Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

প্রান্তিক প্রেম নবম পর্ব

প্রান্তিক প্রেম নবম পর্ব

4 mins
216


পর্ব ৯

মেজবাবু জানতেন আসামী লক আপে নেই । সাহস দেখিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে গেলেন লক-আপের দিকে। গিয়ে দেখেন মদন পলাতক। চিৎকার করে বললেন - স্যার মদন পালিয়েছে !

নীলমণি রাউৎরায় আঁতকে উঠলেন - পালিয়েছে ?

- হাঁ স্যার। লক আপ ফাঁকা। কেউ নেই। অন্য আসামিরাও বোধ করি সুযোগ নিয়ে পালিয়েছে ।

- রামযতন !

হুংকার দিলেন নীলমণি। 

- গাড়ি রেডি কর । বেরোব।

মেজবাবু দেখলেন বিপদ ঘনিয়ে আসছে। অনুরোধ করলেন - স্যার আমিও কি যাব ?

- না ! আপনি গেলে থানায় কে থাকবে। চারটে কনস্টেবল ?

মেজোবাবু চুপ করে গেলেন । নীলমণি বেরিয়ে যেতেই থানা সংলগ্ন চায়ের দোকানে গিয়ে বসলেন। 

বনোয়ারীলাল পট্টবর্ধন - যে টাকাভর্তি স্যুটকেশ বড়বাবুকে উপহার দিয়েছিল সেই স্যুটকেশটি মেজোবাবুর হাতে তুলে দিল; তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার জন্য । খুশিমনে মেজোবাবু থানায় না যেয়ে কোয়ার্টারে চলে গেলেন। পট্টবর্ধন ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের জন্য পরিকল্পনা করতে লাগল।

এদিকে মদনমোহন, সুকুমার, কমলসাধন, বাগাড়িয়া, সায়ন্তিকা এবং পবিত্রবাবু স্কর্পিও নিয়ে বেগুনকোদরে পৌঁছে গেছেন । তখন দুপুর দুটো। স্টেশন বাড়ি এবং আশেপাশে কোন লোকজন নেই । 

সকলে দলবেঁধে ঘুরতে লাগলেন । কমলসাধন স্টেশনবাড়ির দক্ষিণদিকের বড় বটগাছটির প্রতি লক্ষ্য করতে লাগলেন । ঘন ডালপালা মেলে গাছটি এই দুপুর রোদেও কেমন যেন এক মায়াময় পরিবেশ তৈরি করেছে। সূর্য্যের আলো গাছের তলায় নেই বললেই চলে।

কমলবাবু সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। খুব ভালো করে কোনকিছু খুঁজছেন। 

সায়ন্তিকা মদনমোহনের সঙ্গে পাতকুয়োটার চাতালে বসে গল্প করছে। সুকুমার পবিত্রবাবু এবং বাগাড়িয়া রেললাইন বরাবর দৃষ্টি মেলে দেখছেন। কমলবাবুর চোখে তেমন কিছু পড়েনি। আর পবিত্রবাবুর দলও রেললাইনটুকু ব্যতীত অন্য কিছুর অস্তিত্ব টের পেলেন না।

মদনমোহনের মনে হল ঠিক যেন ওর ওঁর ঘাড়ের কাছে কেউ জোরে জোরে নি:শ্বাস ফেলছে। কানের কাছে চুলগুলোতে দুলুনি অনুভব করলেন। অমনি ভয়ে চাতাল থেকে নেমে সায়ন্তিকাকে বললেন - চল, ওইদিকটায় একবার ঘুরে আসি।

ওর অনুভবের কথা গোপন করে গেলেন। সায়ন্তিকা বলল - বেশ শীত শীত করছে , তাই না ?

মদনমোহনের কপালে তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। ওর মনে হচ্ছে শরীরের উত্তাপ যেন বেড়ে গেছে । শীতের দুপুরেও মিষ্টি রোদ যেন দাবদাহের মত মনে হচ্ছে। বললেন - চল একটু ঘোরাফেরা করি । কমল সুকুমার - ওরা কোনদিকে গেছে দেখি।

সায়ন্তিকার মনে হল স্যার যেন ভয় পেয়েছেন। বলল-

স্যার, আপনার কি কোন অনুভূতি জেগেছে ?

- তেমন কিছু না । তবে মনে হচ্ছে আমার জ্বর এসেছে। এই দেখ না বুকে মুখে ঘাম জমছে।

সায়ন্তিকা কপালে গায়ে হাত দিয়ে বলল - ও মা! জ্বর কোথায় ? শরীর তো দিব্যি ঠাণ্ডা আছে !

- তাহলে ঘামছি কেন ? 

- ঘামছেন ? কই, কোথাও তো ঘাম নেই ?

ততক্ষণে পবিত্রবাবু কাছাকাছি চলে এসেছেন । মদনমোহনের অস্থিরতা দেখে ওঁকে ধরাধরি করে গাড়িতে ওঠালেন । ফ্লাস্ক থেকে গরম চা বের করে পান করতে দিলেন । মদনমোহন একটু সুস্থ বোধ করলেন। সুকুমারবাবু বললেন - এই জন্যই প্রথম প্রথম বাধা দিয়েছিলাম। শুনলি না কথা। এখন কি হবে ?

বাগাড়িয়া বললেন - রুক! রুক! এখোন এ সোব কোথা থাক। আগে মানুষটাকে স্থির হোতে দে। 

পবিত্রবাবু সায়ন্তিকাকে বললেন - একটু ভয় পেয়েছেন মনে হচ্ছে। আপনাদের একা একা কুয়োর নিকট যাওয়া ঠিক হয়নি। আরে বাবা! এইটা সেই কুয়ো। যেখানে ৬৭ সালে স্টেশনমাস্টার আর তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ পাওয়া গেছল !

সায়ন্তিকার এবার ভয় হল । তবু সাহস এনে বলল - আমি তো কিছুই বুঝিনি। পুরোপুরি নর্মাল দেখেছি।

বাগাড়িয়া বললেন - আপ বিলকুল ঠিক হ্যায় তো ম্যাডামজী ?

সায়ন্তিকা ঘাড় নেড়ে হাঁ সূচক ইঙ্গিত করতেই মদনমোহন বলে উঠলেন - কিছুতেই না ! তুমি নর্মাল থাকতে পার না! এক যাত্রায় পৃথক ফল সম্ভব নয় । এখনি হয়তো বুঝতে পারছ না; পরে বুঝবে।

কমলবাবু বললেন - এখন কেমন লাগছে ?

মানে ? 

মদনমোহন বলতে লাগলেন - কেমন লাগছে মানেটা কি? আমি কি অসুস্থ না কি ?

পবিত্রবাবু বললেন - মোটেও না। আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ। আর নিরাপদও।

বাগাড়িয়া - কোমোল! চল আর এখেনে থাকতে হোবে না। সত্যিই মনে হচ্ছে এখেনে ভুতটুত থাকে।

- তোর আবার কি হল ? তোকেও কি ভুতে পেল নাকি ?

- আরে বুঝছিস না, মদনার দশা দেখে ?

- ওর কিছু হয়নি । কি রে মদন? পুরুলিয়া ফিরে যাবি না কি ?

মদন বললেন - তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে ? এতদূর এসে এমনিই ফিরে যাব? পরে তোরাই তো আমায় ক্ষ্যাপাবি !

পবিত্রবাবু বললেন - ভয়ের কিছু নেই। তেমন কিছু চোখে পড়ল না। রাত নামুক তখন দেখা যাবে। আর হ্যা, থানায় জানিয়ে দিয়েছি। সন্ধ্যার পরপরই ওনারা চলে আসবেন। ওদেরও কি যেন একটা কাজ রয়েছে বললেন। সামওয়ান পট্টবর্ধন নাকি এইদিকেই কোথাও নিখোঁজ হয়েছেন।

সকলে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। আর মদনমোহনও একটু উল্লসিত হলেন ।

সায়ন্তিকার মন কিন্তু খুঁত খুঁত করেই চলেছে। কি জানি বাবা! শেষে কোন বিপদ আপদ না জোটে।

মদনমোহনের কানের কাছে মুখ এনে সায়ন্তিকা চুপি চুপি বলল - কি স্যার! দম শেষ ?

মদনমোহন বললেন - সায়নী তুমি কি আমাকে এতই ভীতু ভাবো ?

- সায়নী ! আমার নাম সায়নী নয়, সায়ন্তিকা ! এটাও ভুলে গেলেন?

- ওই হোলো। সংক্ষেপ করে দিলাম।

( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror