Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

প্রান্তিক প্রেম দ্বিতীয় পর্ব

প্রান্তিক প্রেম দ্বিতীয় পর্ব

4 mins
210


পর্ব ২


মদনমোহন মুখার্জী একটি প্রাইভেট ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার । ডালহৌসি পাড়ায় অফিস । তার তিন বন্ধুও চাকুরে । কমলসাধন বাগচী টেলিফোন ভবনের ইঞ্জিনিয়ার। হরিপ্রসাদ বাগাড়িয়া চালের আড়তদার এবং সুকুমার প্রধান ম্যাকিনটস বার্ণের সিনিয়র ম্যানেজার । সবার অবস্থান কাছাকাছি বলে যোগাযোগ অটুট । এদের মধ্যে কমলবাবু একটু অভিযানপ্রিয় মানুষ । অবশ্য মি: বাগাড়িয়াও কিছু কম যান না। অঢেল অর্থসম্পত্তির মালিক। বাড়িতে বৃদ্ধা মা ছাড়া তিন কুলে কেউ নেই । চিরকুমার। ব্যবসার ক্ষতি হয়ে যাবে বলে সংসার পাতেননি। কমলবাবু অবশ্য বিবাহিত এবং তাঁর ভরাভর্তি সংসার । আর রইল বাকি মদনমোহন । তিনি দলমা দলের পাণ্ডা । যা কিছু কর্মকাণ্ড সবই তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। মদনমোহন অবিবাহিত। বাড়িতে মাথার উপর বিবাহযোগ্যা বোন এবং বিধবা মা । বলা বাহুল্য চারজনই এক বা একাধিক গাড়ির মালিক। 

এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় মদনমোহন সবে অফিস বন্ধ হবার পর বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন । সায়ন্তিকা তাঁরই অফিসের কর্মী পাশে এসে দাঁড়াল।

- কি ব্যাপার সায়ন্তিকা ? এখনও বাড়ি যাওনি ?

- না স্যার। বৃষ্টি পড়ছিল। বাস ধরতে পারিনি।

- ঠিক আছে, চল আমি পৌঁছে দি !

- না স্যার থাক । পরের বাসে চলে যাব।

- ততক্ষণ একা একা এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে ?

- দোকা আর পাই কই বলুন । বাড়িতেও তো একাই থাকি।

- সে কি ? তোমার বাড়ির লোকজন---

- কেউ নেই স্যার । ছোটবেলায় মা বাবাকে হারিয়েছি। মামার বাড়িতে বড় হয়েছি। এখন ওদের নিজেদেরই থাকার জায়গা নেই। তাই ওখান থেকে চলে এসেছি। মামবাবুই সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন ।

- এ কথা তো কোনদিন জানাওনি ?

- সুযোগ আর পেলাম কই ! আপনি যা ব্যস্ত মানুষ; কাজপাগল লোক। সাহস হয় না কিছু বলি।

মদনমোহন গাড়িতে উঠে সায়ন্তিকাকেও উঠতে বলেন।

কিন্তু কিন্তু করে শেষ পর্য্যন্ত সায়ন্তিকা গাড়িতে চাপে। তখন রাত আটটা। অফিসপাড়া ফাঁকা হতে শুরু করেছে। বাগাড়িয়ার চালের আড়ত তখনও খোলা দেখে মদধমোহন গাড়ি থামায়। সায়ন্তিকাকে বসতে বলে বাগাড়িয়ার আড়তে যান। কমলসাধনও সেখানে ছিলেন।

- কি রে হরিয়া ! 

মদনমোহন বলেন - এখনও ঝাঁপ ফেলিসনি ? গুলি খেতে ইচ্ছে করছে নাকি ?

বাগাড়িয়া হাসেন । 

- তুহার মাথায় বোদ্ধিশোদ্ধি নাহি রে মদনা । ইয়ে দেখ, কমলা ভি এসেছে। কি বলছে দেখ শোন !

- কি ব্যাপার কমল ?

মদনমোহন কমলসাধনের উদ্দেশ্যে বলেন - আজ আবার মাথার পোকাটা নড়েচড়েছে না কি !

কমলসাধন - আমার মাথায় একটা দুর্দান্ত আইডিয়া এসেছে। শুনলে তুইও না করতে পারবিনে। হরি তো শুনেই 'থ' ।

মদনের কৌতুহল চেপে বসে। কি এমন আইডিয়া শুনি !

এদিকে সায়ন্তিকা গাড়ির মধ্যে বসে অস্থির হয়ে উঠল। দেরী দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল এবং পায়চারি করতে লাগল । সন্ধ্যের বৃষ্টিটা একটু স্বস্তি দিয়েছে। নইলে যা গরম ছিল সারাদিন ! এতক্ষণ গাড়িতে এসি বন্ধ অবস্থায় প্রাণটাই যেত নিশ্চিত ।

মদনমোহনের খেয়াল ছিল সায়ন্তিকা রয়েছে গাড়িতে। সেজন্য বলল - ওয়েট এ বিট প্লীজ। এক্ষুণই আসছি।

ওদের দু'জনকে অবাক করে মদনমোহন গাড়ির কাছে এসে ডাকল - সায়ন্তিকা ! নেমে এস। তোমাকে কারও সাথে পরিচয় করিয়ে দি চল ।

কোথায় সায়ন্তিকা ? গাড়িতে এবং আশেপাশে কোথাও সায়ন্তিকাকে দেখতে না পেয়ে মদনের চিত্তচাঞ্চল্য দেখা দিল । উঁচু স্বরে সায়ন্তিকার নাম ধরে ডেকেও কোন সাড়া না পেয়ে বাগাড়িয়ার আড়তে খবর দিতে গেল ।

সায়ন্তিকা তখন বাড়ির পথে। ওরা তিনজনই তড়িঘড়ি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সায়ন্তিকার খোঁজে। 

কমল সাধন বললেন - কেমন উটকো বিপদ ডেকে আনিস বল তো ? এখন কি হবে ?

মদনমোহন বলেন - সেটাই তো রে ! এদিকে আবার ওর বাড়ি কোথায় তাও তো জানি না।

- ফোন কর ! 

বাগাড়িয়া বললেন - আজকালকার মাইয়া, সাথে ফোন থাকবেই নিশ্চয় !

- - ফোন ? এই যা ! ওর ফোন নং তো নেই আমার কাছে!

কমলসাধনবাবু বললেন - অফিসের কাউকে ফোন করে জেনে নে । কেউ না কেউ তো ফোন নং রাখবেই !

তখন একে তাকে জিজ্ঞেস করে গেটম্যানের কাছে নাম্বার পাওয়া গেল।

তৎক্ষণাৎ ফোন করে জানা গেল সায়ন্তিকা ওইখানেই অপেক্ষা করছে। গাড়িটা দেখতে না পেয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। 

মদনমোহন বললেন - ওখানেই থাকো। এক্ষুণই আসছি। কোথাও যাবে না ।

বাগাড়িয়া বললেন - তুর মাথায় বলেছি না কাউডাঙ আছে ! কি করে যে সি এম হয়েছিস জানি না।

মাইয়াটাকে একেলা গাড়িতে রেখে নামলি কেন ?

- আরে, ভাবলাম তোর সাথে দেখা করেই চলে যাব কিন্তু এমন সিচুয়েশন রেডি করলি সব গুবলেট হয়ে গেল। যাক পাওয়া গেছে যখন; চল সবাই মিলে কমলের আইডিয়াটা ভেবে দেখি।

বাগাড়িয়ার আড়তের সামনে এসে ওরা দেখল সায়ন্তিকা অস্থির পায়ে পদচারণা করছে। 

সকলেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সায়ন্তিকাকে নিয়ে বাগাড়িয়ার বাড়িতে উঠল । রাতের খাবার অনলাইনে অর্ডার করে ওরা আইডিয়া নিয়ে বসল ।

সুকুমার প্রধান বললেন - আজকের খরচ হরিয়ার।

বাগাড়িয়া বললেন - আইডিয়ার খরচও আমার। যত্তো টাকা লাগে আমি দিব।

( চলবে)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror