প্রান্তিক প্রেম অষ্টাদশ পর্ব
প্রান্তিক প্রেম অষ্টাদশ পর্ব
পর্ব ১৮
বুঝিয়ে সুঝিয়ে সায়ন্তিকাকে তো আনা গেল। কিন্তু তার মনের অবস্থা দেখে মদনমোহনের মা কিছু বলার সাহস পেলেন না। কৃষ্ণা এতক্ষণ আড়চোখে ওকে লক্ষ্য করছিল । মদনমোহনকে বলল - দাদা, তুই ওকে হাসপাতালে না নিয়ে এখানে আনলি কেন ?
মদনমোহন বললেন - হাসপাতাল ঘুরে এসেছি। ডা. বল বলেছেন ওই একই অবস্থা আপনার মতই। মানসিক অস্থিরতাই এর মূল কারণ।
- তা হলে ? কি করবি ? দু'দুটো পাগলের সংসারে আমরা থাকব কি করে ? মায়ের ব্যাপার তো তুই জানিস। বাতের রোগী। ঠিকমত হাঁটা চলা করতে পারে না।
মদনমোহন এই কথায় ক্ষুণ্ণ হয়ে আর কিছু বললেন না।
এমন সময় হঠাৎ কমলসাধন, সুকুমার এবং বাগাড়িয়া এসে মদনমোহনকে নিয়ে গেলেন বাগাড়িয়ার আড়তে। বৈঠকে বসলেন সকলে মিলে। সায়ন্তিকাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হল ঘুমের বড়ি খাইয়ে।
কৃষ্ণা আর তার মা চিন্তায় পড়লেন। সত্যিই তো এমন অস্বাভাবিক মেয়ে নিয়ে হুজ্জোত বাড়িয়ে লাভ কি ? মদন ফিরে আসুক; ওকে বলা হবে সায়ন্তিকাকে ভুলে যেতে।
*********************************************************
বাগাড়িয়ার আড়তে বসে আলোচনা চলছে। কমলসাধন বলছেন - নীলমণি রাউৎরায়ের স্যুটকেশে কোন টাকাকড়ি পাওয়া যায়নি। বনোয়ারীলাল পট্টবর্ধন সরিয়েছে। মেজোবাবুকেও ঠকিয়েছে। কিন্তু নিজের কাজ হাসিল করে পালিয়েছে।
মদনমোহন - তবে তো আমাদের আরও সাবধান হতে হবে। কারণ ও নিশ্চয় আমাদের ফলো করছে।
বাগাড়িয়া - আরে ও কথা তো এদের বারবার বলছি। পট্টবর্ধন কোন ভুতটুত না ; এক আঁতেল দুষ্কৃতি। বড়জোড়া ( বাঁকুড়া) থেকে ফোন এসেছিল আমার কাছে। আড়তে ও বেশ কিছু চোরাই লোহা বিক্রি করবে বলেছে। আমি পাত্তা দেয়নি ।
- ভুল করেছিস। সুকুমার বলছেন - খুব বড় ভুলটা করেছিস। বমাল চোর ধরবার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। আচ্ছা, সায়ন্তিকা ওরফে মিনু বাউরী এখন কেমন আছে ?
- ও ঠিক আছে। আমার মতোই সুস্থ। শুধু মাঝেমধ্যে একটু আনমনা হয়ে পড়ছে।
কমলসাধন বলছেন - ওটা ওষুধের ডোজ। ডাক্তার সুবীর বল তো হাতেই রয়েছেন। আরও কিছুদিন ওকে ওভাবেই রাখতে বলেছি। হাতের পাঁচ। ছাড়লে চলবে না। তবে মদন তুই ঝানু অভিনেতা। এটা মানতেই হবে। সি বি আই অফিসে এমন দুর্ধর্ষ অফিসার হাতে গোনা কয়েকটিই আছে।
মদনমোহন নিজের প্রশংসা শুনে বললেন - তুই, সুকুমার, তোরাও কিছু কম যাস না রে। আর এই হরিয়া ! নিখুঁত ব্যবসায়ী। ভাবছে ফাঁক তালে যদি কিছু ভাগ বসাতে পারি। নাহ্ তোর বাগাড়িয়ার রোলটাও বেশ মানানসই।
**********************************************************
পাঠকগণ ভাবছেন কেমন যেন এলেবেলে কাহিনীটা। এই ভুত সেই রোগী তো সেই আবার সি বি আই । এবার একটু খোলসা করি।
চলুন যাই আবার বেগুনকোদরে। থুড়ি পুরুলিয়ায় । মিনু বাউরু পুরুলিয়া পুরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলর। খুবই গরীব ঘরের মেয়ে। পার্টি থেকে সহানুভূতি আদায় করে ভোটে দাঁড়ায়। জিতেও যায়। আর উপজাতি বর্গের বলে তাকে পুরবোর্ডের সদস্য করা হয়।
পুরবোর্ডের দুর্নীতির সন্ধান পেয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। বিভিন্ন অসামাজিক কাজে মদত দিতে শুরু করলে বেশ ওজনদার নেত্রী হয়ে যায় । কিন্তু দুষ্কৃতিদের সাহায্য এবং সমর্থন করে পার্টিতেও বেশ নাম কেনে। তবে ওর একটা গুন হল ও গরীব গুর্বোদের বরাতে হাত দেয় না। দুষ্কৃতিরা বেগুনকোদরে যেয়ে লোক ঠকানোর ব্যবসায় লেগে পড়ে। ভুত পিশাচ ইত্যাদি গুজব ছড়ানোর জন্য এলাকা জনশুন্য হয়ে গেলে ওয়াগন ব্রেকিং, ট্রেনে ডাকাতি ইত্যাদি শুরু করে। মাঝেসাঝে রেলের পাত, রেল কোয়ার্টারের কড়ি বরগা ইত্যাদিতেও বেশ হাত পাকায়। বানোয়ারীলাল এদের দলপতি। আর মিনু বাউরী আইন ও শাসনের দিকটা সামলানোর দায়িত্বে। নীলমণি রাউতরায় একজন বড় ধরণের ঘুষখোর অফিসার । টাকার লোভ দেখিয়ে মিনু ওকে হাত করেছিল। আর হাজতে মদনমোহনের প্রতি অত্যাচারটাও সাজানো। আসলে রামযতন নিজেই এক দুষ্কৃতী। বাকি রইল মেজোবাবু। লোকটা লোভী হলেও মোটামুটি ভালো। সেজন্য স্যুটকেশ হারিয়েও বেশী দাপাদাপি করেনি ।
কোন কারণে হোক মিনু চেয়েছিল এই জগত থেকে বেরিয়ে আসতে। আর সেটাই তার কাল হল । বানোয়ারীলালের সাথে যোগসাজশ করে নীলমণি মিনুকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয় । ইয়েস ব্যাঙ্কের লোভনীয় পদের চাকরি দেখিয়ে নতুন গল্প ফাঁদে। মর্গ থেকে লাশ চুরি করে বেগুনকোদরের পাতকুয়োতে ফেলে দেয়। নীলমণি প্রচার করে মিনুর লাশ পাওয়া গেছে । আর মদনমোহন নামের একজনকে যে নিজেও ওই জগতের বাসিন্দা - তাকে হাজতে ভরে। আসল মদনমোহন তো সম্পূর্ণ সুস্থ। সায়ন্তিকা নামের মিনুকে প্ররোচিত করার জন্যই মদনমোহনের এই নাটক ।
বাকিটা পরবর্তী পর্বে ।
( চলবে )
